রাজশাহী জুটমিলের গুদামে পচছে ৫০ কোটি টাকার পণ্য
রাজশাহীর জুটমিলে গত তিন বছরে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য গুদামে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। কারণ রাষ্ট্রায়াত্ব এ পাটকলে উৎপাদন চলমান থাকলেও নেই বিক্রি।
আর ‘পণ্য বিক্রি হয়নি’ অজুহাতে প্রায়ই শ্রমিকদের বেতন বন্ধ রাখার ঘটনাও ঘটে। ফলে কাজ ফেলে আন্দোলনে নেমে পড়ে শ্রমিকরা। সৃষ্টি হয় অচলাবস্থার। ফলে ক্রমে বাড়ছে সরকারের লোকসান ও ভর্তুকির হার।
দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদিত এসব পণ্য বিক্রি না হওয়ার পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতাকে বেশি দায়ী করছেন কর্তৃপক্ষ। তবে দায়ী যেই হোক না কেনো, দ্রুত উৎপাদিত পণ্য বিক্রির উদ্যোগ না নেওয়া হলে সব পণ্যই গুদামে পচে নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা পাটকলের প্রকল্প প্রধান ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউল হকের।
পাটকল সূত্র জানায়, ২০১৬ সাল থেকে রাজশাহী পাটকলে উৎপাদিত সব পাটজাত পণ্য গুদামে ফেলে রাখা হয়েছে। যা হিসেবের খাতায় ১০ হাজার বেল। পাটকলটিতে ২৬০ লুমের প্রতিদিনের উৎপাদন ক্ষমতা ২১ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন। এখানে মূলত তৈরি হয় চিকন ও মোটা বস্তা। প্রতি মেট্রিকটন চিকন বস্তা উৎপাদনে খরচ পড়ে দেড় লাখ টাকার কাছাকাছি। তবে মোটা বস্তা উৎপাদনে খরচ খানিকটা কম।
দেশে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য বিক্রির প্রধান বাজার বহির্বিশ্ব। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে সেই বাজার হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। রফতানিমুখী দেশগুলোতে নানা সংকট এখনো অব্যাহত থাকায় কমে গেছে চাহিদাও। এ কারণে পাটকলের গুদামে জমা পড়েছে উৎপাদিত পণ্যের স্তূপ।
পাটকলের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০১৬ সাল থেকে উৎপাদিত পাটজাত পণ্যের ১০ হাজার বেল গুদামে ফেলে রাখা হয়েছে। এসব পণ্য বিক্রি করতে না পারায় হতাশায় পড়েছে পাটকল সংশ্লিষ্টরা। নতুন সরকার পাটজাত পণ্যের বাজার পুনরুদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে প্রত্যাশা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নেতাদের।
পাটকলের শ্রমিকলীগের সভাপতি জিল্লু রহমান বলেন, 'প্রায় তিন বছর ধরে উৎপাদিত মালামাল বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তাই ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার পণ্য জমা পড়েছে গুদামে। পণ্য বিক্রি না হওয়ার কারণে মাঝে মাঝে কর্মচারীদের বেতনও আটকে রাখা হয়। এগুলোর বিক্রির জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।'
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সাদরুল ইসলাম বলেন, 'দেশে পাটের উৎপাদন বেশি। তবে মানসম্মত উৎপাদন নিয়ে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। বিশ্বে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু মানসম্মত পণ্য রফতানিতে পদক্ষেপ জরুরি।'
তিনি আরও বলেন, 'দেশে পাটের বস্তা ব্যবহারের কথা বলা হলেও তা কাজে আসেনি। কারণ পলিথিন জাতীয় বস্তাগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলেও তা টেকসই ও দামে কম। তাই এর ব্যবহার চলমান রয়েছে। ফলে পাটের উৎপাদিত পণ্য দেশ ও বিদেশ কোথাও চালানোর সম্ভব হচ্ছে না।'
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে চাইলে রাজশাহী পাটকলের প্রকল্প প্রধান ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউল হক বলেন, 'পাটকলের কোনো বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট নিষেধ করা আছে। এজন্য আমি কিছুই বলতে পারবো না। তবে এখানে যা হচ্ছে, তা আমি সঠিকভাবে প্রতিবেদন আকারে নিয়মিত মন্ত্রণালয়কে অবগত করে থাকি।'