‘ভিক্ষা করি না, বেলুন বিক্রি করে খাই’
সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে একটি ব্যস্ততম রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে বেলুন বিক্রি করছিলেন সত্তরোর্ধ্ব নূরজাহান বেগম। কাছে গিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভিক্ষা করি না বাবা, বেলুন বিক্রি করে খাই।’
কথা বলে জানা যায়, নগরীর বাদামবাগিচা এলাকার বাসিন্দা নূরজাহান। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে জানালেন, তার একটা ভাতার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বলেন, ‘শুনেছি সরকার কত রকম ভাতা দেয়, আমারে একটা ব্যবস্থা করে দিন বাবা।’
সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে ভোজনবাড়ি বা পানসি রেষ্টুরেন্টে খাবার খেতে শিশু সন্তান নিয়ে আসেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। মা-বাবার সঙ্গে শিশু সন্তান দেখলেই রঙ্গিন বেলুন নিয়ে এগিয়ে যান নূরজাহান বেগম। কেউ পাঁচ টাকা, কেউ ১০ টাকায় বেলুন কিনে নেন।
আবার কোনো বাচ্ছা সবগুলো বেলুন নিয়ে যেতে বায়না ধরে। তখন মা-বাবারা অনেক সময় অল্প ঝাড়িও মারেন তাকে। রঙ্গিন বেলুন বিক্রি করে প্রতিদিন ১০০/১৫০ টাকা পান নূরজাহান। সেই টাকা দিয়ে সংসার চলে তার।
চোখের কালো চশমা দেখিয়ে নূরজাহান বেগম বলেন, ‘কিছু দিন আগে চোখে অপারেশন করেছি, অনেকেই সাহায্য করেছেন। ভাবলাম নিজে কিছু করি। দেখলাম কয়েক শিশু শহরের বিভিন্ন জায়গায় রঙ্গিন বেলুন বিক্রি করে, নিজেও বেলুন বিক্রির কাজ শুরু করি।’
নূরজাহান আরো জানান, সংগ্রামের বছর সিলেট শহরে এসেছিলেন। স্বামী লেবু মিয়া প্যারালাইজড, কোনোরকম হাঁটতে পারেন। এক ছেলে আছে মৃগি রোগী। সে সবসময় ঘরে থাকে, তেমন বের হয়না।
প্রতিদিন স্বামী একটি রিক্সায় করে এনে জিন্দাবাজারে ভোজন বাড়ি ও পানসি হোটেলের সামনে দিয়ে যান নূরজাহানকে। আবার বিকেলে এসে নিয়ে যান তিনি। এভাবে রুটিন করে চলে তার রঙ্গিন বেলুন বিক্রি। এরপর যে টাকা পান সেই টাকা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলছে তার।
জাতীয় পরিচয়পত্র বের করে দেখান নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৭০ এর বেশি হবে। আইডি কার্ডে লিখে দিয়েছে ৫৫ বছর। আমার বয়স যতই হউক, একটা ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দাও বাবা।’
নূরজাহান জানান, অনেকেই রঙ্গিন বেলুন না নিয়ে, মজা করে টাকা দিয়ে যান। তাদের মুল বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামির গ্রামে। স্বাধীনতা সংগ্রামের বছর সিলেট নগরীতে এসেছিলেন, সেই থেকে শহরে অবস্থান করছেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে নূরজাহান বেগমের কথা জানলাম। অফিসে এসে যোগাযোগ করলে উপযুক্ত হলে অবশ্য ভাতা প্রদানের করে ব্যবস্থা দেব।’