সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে নজিরবিহীন বাংলাদেশ
রামু থেকে ফিরে: আজ (২৯ সেপ্টেম্বর) রামু ট্রাজেডির ৬ বছর। এই দিন রাতে ফেসবুকে গুজবের জের ধরে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে চালানো হয় ভয়াবহ হামলা। পুড়িয়ে দেয়া হয় শত বছরের বুদ্ধমূর্তি, আরাধনার মন্দির আর আঘাত আসে ঐতিহ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে। তবে ছয় বছর পর বাংলাদেশ সরকার রামুতে শৈল্পিক মন্দির তৈরির পাশাপাশি সম্প্রীতির জায়গাটি মসৃণ করতে পেরেছে।
জানা যায়, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে গুজবের জেরে রামুর ঘুমন্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। ভাঙচুর করা হয় শত বছরের মূর্তি ও মন্দির। আগুনের লেলিহান শিখায় চাপা পড়ে যায় রামুর ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।
এ সহিংসতার পর পরই শৈল্পিক মন্দির গড়ে দেয়ার পাশাপাশি সরকার হাত দেয় রামুর ঐতিহ্যগত ধর্মীয় সম্প্রীতি ফিরিয়ে দেয়ার। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৩টি বৌদ্ধ বিহার এবং ৩০টি বসত বাড়ি নির্মাণ করে দেয় নান্দনিক নির্মাণ শৈলী দিয়ে।
দেশের ও বাইরের বিশিষ্টজনরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের পক্ষেই সম্ভব। যেটা হয়েছে সেটা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বাংলাদেশের এই নজিরবিহীন ভূমিকা তারই প্রমাণ বলেও আখ্যা দেন তারা।
রামুতে বৌদ্ধপল্লী দেখতে আসা ভারতের কবি ও ‘অ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক দেবাঞ্জন চক্রবর্তী বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘মানুষের উপর আসলে কিছুই নেই। যেদিন আমাদের সকলের মনে মানুষবোধটা আসবে সেদিন এসব দুর্বৃত্তরা আর মাথাচাড়া দিতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন,‘এতো বড় একটা ঘটনা বাংলাদেশ যেভাবে প্রতিহত করেছে এটা নজিরবিহীন। আমি পুড়ে যাওয়ার ঘটনার পরপরই এসেছিলাম। কিন্তু এখন সেই পোড়া গন্ধ আর নেই। বাংলাদেশ যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে অনেক বেশি ভূমিকা রাখে এটি তারই একটি অংশ।’
তারই সঙ্গে আসা কলকাতার মোরালিয়া গার্লস কলেজের শিক্ষক শুকলা চক্রবর্তী বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘ধর্ম আর কর্ম কিন্তু এক নয়। ধর্মীয় জায়গাটা কিন্তু আলাদা। তাই এতো ঘটনার পর আমরা আবারো দেখতে পেয়েছি রামুবাসীর সম্প্রীতি। আশা করব আগামী দিনে এই সম্প্রীতি বজায় থাকবে।’
রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় বলছে, রামুতে এখন মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। তারা সবাই ভালো আছে, এক সঙ্গে মিলেমিশে আছে।
রামুর বৌদ্ধদের ধর্মীয় গুরু প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘আমাদের এখন কোনো ভেদাভেদ নেই। বাংলাদেশ সরকার আমাদের সবকিছু ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা এখন ভালো আছি। এভাবে থাকতে চাই। তবে এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সু-বিচার পাওয়া নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে।’
রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম জানান, সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি-ঘরসহ মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছে। বর্তমানে রামুবাসী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আবদ্ধ হয়েছে। এটা আজীবন ধরে রাখতে হবে।
এ বিষয়ে সদর রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বার্তা২৪.কমকে জানান, রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে এখন কোনো কষ্ট নেই। তারা নির্বিঘ্নে চলাচলসহ সবকিছু করতে পারছে। রামুর মানুষের মধ্যে এখন কোনো ভেদাভেদ নেই।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবি এম মাসুদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘রামু বৌদ্ধ পল্লীতে নিরাপত্তার চাদরে ডেকে রাখা হয়েছে। তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এখন সেখানকার মানুষ সম্প্রীতি সৃষ্টি করেছে। আমরা তা অটুট রাখার চেষ্টা করছি।’