চট্টগ্রাম ওয়াসা: অক্টোবরে দিনে ৯ কোটি লিটার পানি নিয়ে আসছে মদুনাঘাট
প্রকল্পের শোধনাগারের নাম ‘শেখ রাসেল পানি শোধনাগার’ রাখার প্রস্তাবনা সিটি কর্পোরেশনের
অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে ওয়াসার মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের শোধানাগারটির নাম ‘শেখ রাসেল পানি শোধনাগার’ নামকরণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে। হালদা নদীর পানি পরিশোধন করে দিনে ৯ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতার প্রকল্পটি আগামী মাসে চালু হতে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পের সব ধরনের টেস্টিং কার্যক্রম চলছে।
প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ। গত ১৩ আগস্ট পরীক্ষামূলকভাবে পানি সরবরাহের সময় বিভিন্ন স্থানে লিকেজ পাওয়া গেছে। এখন সেসব লিকেজ মেরামত ও প্ল্যান্টের ভেতরে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে সমস্যা শনাক্ত করে তা সমাধানের কাজও প্রায় শেষ। আগামী মাসে তা চালু হতে পারে।
চালু হলে কি পরিমাণ পানি পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাটহাজারির মদুনঘাটে হালদা নদীর পানি পরিশোধন করে ১৯৯৮ সালে এ প্রকল্পটি থেকে দৈনিক সাড়ে চার কোটি লিটার পানি উৎপাদনের কথা থাকলেও ২০ বছর পরে এসে তা রুপান্তুরিত হচ্ছে ৯ কোটি লিটারে। প্রকল্পটি চালু হলে নগরীর পূর্বাংশ ( চান্দগাঁও-বাকলিয়া) ও দক্ষিনাংশের (বন্দর-পতেঙ্গা) এলাকার বাসিন্দাদের আর আয়রনযুক্ত পানি পান করতে হবে না। পানযোগ্য পানি পাবে এসব এলাকার বাসিন্দারা। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট এন্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়ীত হচ্ছে প্রকল্পটি।
প্রকল্পটি ঘুরে দেখা যায়, হালদা নদী থেকে চারটি পাম্পের মাধ্যমে সংগ্রহ করা পানি গিয়ে মিশবে একটি চেম্বারে। সেখানে পানির সাথে চুন, ফিটকিরি, ক্লোরিন মেশানো হবে এবং সেখান থেকে যাবে পলিজমার বেসিনে। সেই বেসিনে ঢেউ খেলার মাধ্যমে ৩২টি চেম্বার দিয়ে প্রবাহিত হবে পানি। আর এই ঢেউয়ের মাধ্যমে পানির মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের পলি জমা হবে এবং সেখান থেকে যাবে পরবর্তী ধাপে। সেই ধাপে গিয়ে পানির মধ্যে থাকা পলি জমা নিচে জমার ব্যবস্থা রয়েছে। এসবের মাধ্যমে পরিস্কার পানি যাবে পরের ধাপে। সেই ধাপে গিয়ে বালির ফিল্টারের মাধ্যমে পরিবাহিত পানি গিয়ে মিশবে একটি চৌবাচ্চায়। সেখান পানি বিশুদ্ধকরনের উপকরণ মেশানের পর পাইপের মাধ্যমে চলে যাবে পানির রিজার্ভারে। আর সেই রিজার্ভার থেকেই পানি আসবে মদুনাঘাটের সামনের রাস্তায় মূল সার্ভিস লাইনে।
জানা যায়, নগরীর চান্দগাঁও, বাকলিয়া এবং বন্দর-পতেঙ্গা এলাকার মানুষ পানির কষ্টে রয়েছে। এসব এলাকায় আয়রনযুক্ত পানি ব্যবহার করছে লোকজন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি পাবে।
উল্লেখ্য, হালদা নদীর পানি পরিশোধন করে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এক হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট এন্ড স্যানিটেশন প্রকল্পটি। এই প্রকল্পের একটি অংশ হলো মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। এছাড়া নগরীতে পাইপ লাইন স্থাপন ও স্যানিটেশন প্রকল্পও রয়েছে এর আওতায়। মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ১৯৯৮ সালের দিকে কোরিয়ান সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়নের কথা ছিল, কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দেয়া এবং পরবর্তীতে মামলা করার কারণে সেইসময় তা বাতিল হয়ে যায়। আর তা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ২০১১ সালে নতুন করে এপ্রকল্পে অর্থায়ন করে বিশ্বব্যাংক।