রূপগঞ্জকে উড়িয়ে শিরোপায় এক হাত আবাহনীর
এই ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়ে যায় মুলত প্রথম ইনিংস শেষেই। আবাহনীর স্কোরবোর্ডে জমা ৭ উইকেটে ৩৭৭ রান! ব্যস এই ম্যাচের জয়ী দল কে-সেটা জানা হয়ে গেলো! শুধু অপেক্ষা ছিলো সেই জয়টা কতো রানের হয়? সেটা জানার জন্য লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকলো হলো। জানা গেলো আবাহনী এই ম্যাচ জিতেছে ১০২ রানের বিশাল ব্যবধানে।
আর এই বড় জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেলো আবাহনী। রূপগঞ্জের সমান ২৪ পয়েন্ট আবাহনীর। তবে রান রেটে যে আবাহনী অনেক উপরে।
এবারের লিগের চ্যাম্পিয়ন কে-সেটা জানার জন্য অবশ্য লিগের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। তবে শিরোপা জেতার পথ আবাহনীর জন্য একটু বেশি কাছের মনে হচ্ছে। লিগের শেষ ম্যাচে যদি আবাহনী না হারে তাহলেই তারা চ্যাম্পিয়ন। আর তখন শেষ ম্যাচে রূপগঞ্জ তাদের প্রতিপক্ষ প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট একাডেমির বিপক্ষে জিতলেও কোন লাভ হবে না। পয়েন্টে হয়তো রূপগঞ্জ ছুঁতে পারে আবাহনীকে। কিন্তু রান রেটের উচ্চতায় আবাহনী নিজেদেরকে অনেক নিরাপদ অবস্থানে নিয়ে গেছে।
বড় কোন বিস্ময় না ঘটলে ২৩ এপ্রিল ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের শেষ ম্যাচে শিরোপা জয়ের উল্লাস আবাহনী লিমিটেডই করছে।
সাভারের বিকেএসপিতে রোববার সকালে টসে জিতে আবাহনী ব্যাটিং বেছে নেয়। আবাহনীর ইনিংসের শুরুটাই হলো বুম বুম ষ্টাইলে! পাওয়ার প্লে’তে কোন ক্ষতি ছাড়া এলো ৬৭ রান। দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে অর্থাৎ ১১ থেকে ৩০ ওভার-এই ৩০ ওভারে আবাহনীর স্কোরে জমা হলো আরো ২০৮ রান। হারায় তারা তখন মাত্র ৪ উইকেট। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আদায় করলেন সৌম্য সরকার। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ফ্লপ থাকা সৌম্য সরকার এই সেঞ্চুরি দিয়েই জানান দিলেন ক্রিকেটের সেই বহু পুরানো প্রবাদ-‘ফর্ম ইজ টেম্পোরোরি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট!’
১১২ বলে সৌম্য সরকার করলেন ১০৬ রান। জহুরুল ইসলামের ব্যাট হাসলো ৮৩ বলে ৭৫ রানেই ইনিংসে। ওয়াসিম জাফর করলেন ৪৬ রান। সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ মিঠুন টি-টুয়েন্টি ষ্টাইলে ব্যাট চালালেন। সাব্বির করেন ২৪ বলে ৩৩ রান। মোহাম্মদ মিঠুন ২ ছক্কা ও ৭ বাউন্ডারিতে মাত্র ৩৪ বলে অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংসে রূপগঞ্জের বোলারদের বেধড়ক পেটালেন।
৭ উইকেটে ৩৭৭ রানের বিশাল সঞ্চয় নিয়ে আবাহনী বেশ আমুদে এবং স্বস্তি নিয়ে লাঞ্চে গেলো। চলতি টুর্নামেন্টে এটি যে কোন দলের সর্বোচ্চ স্কোর। ঢাকা লিগে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডও আবাহনীরই কব্জায়। গেল মৌসুমে তারা প্রাইম দোলেশ্বরের বিপক্ষে ৩৯৭ রানের রেকর্ড রান সংগ্রহ করেছিলো।
রূপগঞ্জের প্রায় বোলারই রান খরচায় ছিলেন ভীষণ উদারহস্ত! শুভাশীষ রায় ৭৪ রানে ১ উইকেট। মোহাম্মদ শহীদ ২ উইকেট পান ৬২ রান খরচায়। ঋৃষি ধাওয়ান ১০ ওভারে ব্যয় করেন ৮১ রান। আগের ম্যাচে একই মাঠে ৪ উইকেট শিকারি তাসকিন এই ম্যাচে ভীষণ ব্যয়বহুল-৫ ওভারে ৫৭ রানে ২ উইকেট। মুমিনুল ১ ওভারে ১৪ রান খরচ করায় রূপগঞ্জ অধিনায়ক তাকে আর বোলিংয়েই আনেননি!
রান তাড়ায় নামা রূপগঞ্জ এই ম্যাচ জিততে পারে-এমন সম্ভাবনা কোনো সময় তৈরি হয়নি। ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শুধু শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান। ১৩৫ বল খেলে অপরাজিত থাকেন ১২৩ রানে। আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা মোহাম্মদ শহীদ সমান ৪ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ৪৭ বলে ৫৩ রান করেন।
রূপগঞ্জের কষ্টকর ইনিংস শেষ হয় ২৭৫ রানে।
এদিকে দিনের অন্য দুই গুরুত্বহীন ম্যাচে মোহামেডান ও দোলেশ্বর জয় পেয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: আবাহনী ৩৭৭/৭ (৫০ ওভারে, জহুরুল ৭৫, সৌম্য ১০৬, শান্ত ২৪, জাফর ৪৬, সাব্বির ৩৩, মিঠুন ৬৪*, শহীদ ২/৬২, তাসকিন ২/৫৭)। রূপগঞ্জ: ২৭৫/৭ (৫০ ওভারে, নাঈম ১২৩*, শহীদ ৫৩, তাসকিন ২৫*, মিরাজ ৩/৬৫, মাশরাফি ২/২০)।
ফল: আবাহনী ১০২ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা: সৌম্য সরকার।