নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ?



ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৪ জুলাই শুরু হবে হজ ফ্লাইট। বাংলাদেশ থেকে এবার প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলামান হজপালনের জন্যে সৌদি আরব গমন করবেন। এবার যারা হজে যাচ্ছেন, তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। হজ পালনেচ্ছুদের সুবিধার্থে বার্তা২৪.কম ধারাবাহিকভাবে হজের নিয়ম-কানুন, মাসয়ালা, আমল ও প্রয়োজনীয় দোয়া প্রকাশ করবে। আজ থাকছে তৃতীয় পর্ব

নারীদের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ইসলামি শরীয়ত বেশ কিছু বিধি-নিষেধ দিয়েছে। এর অন্যতম হলো- শরয়ী সফরের দূরত্বে যাতায়াত করতে হলে তার সঙ্গে স্বামী বা মাহরাম থাকতে হবে।

শরয়ী সফর হলো- ৪৮ শরয়ী মাইল বা ৫৪ মাইল বা ৮৭ কিলোমিটার পথ সফর করা। তা পায়ে হেঁটে হোক, রেল, বাস বা প্লেনে হোক। একদিন বা পাঁচদিন যত সময়ের জন্যই হোক নারীরা ৮৭ কিলোমিটার পথ মাহরাম ছাড়া একা চলবে না। পার্থিব প্রয়োজনেও একা যাবে না। হজ-উমরা ইত্যাদির মতো শরীয়তের প্রয়োজনেও একা চলাফেরা করবে না।

মনে রাখতে হবে, হজ-উমরা হলো আল্লাহর বিধান। তা আল্লাহর বিধান মতো পালন করলেই এতে সওয়াব ও মুক্তি আছে। মনগড়া নিয়মে তা পালন করলে উল্টো গোনাহগার হতে হবে।

মাহরাম কারা?
মাহরাম বলতে বুঝায় যাদের সঙ্গে শরীয়তের দৃষ্টিতে বিয়ে বৈধ নয়। যেমন- ছেলে, পিতা, আপন চাচা, আপন মামা, ভাই, নাতী, শ্বশুর ও মেয়ের জামাই।

মাসয়ালা : খালাতো ভাই, মামাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, চাচাতো ভাই মাহরাম নয়। তাদের সঙ্গে বিয়ে জায়েজ। এমনিভাবে মুখে মুখে ডাকা বাপ, ছেলে বা ভাই, পালক পুত্র মাহরাম হিসেবে গণ্য হবে না।

নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ?
নারীদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হলো- নারী নিজে ও তার সঙ্গের মাহরামের হজের খরচের ব্যবস্থা হতে হবে। তাহলেই তার ওপর হজ ফরজ হবে।

এক কথায়-
ক. যদি নারীর নিজের হজের খরচের ব্যবস্থা থাকে।
খ. তার সঙ্গে যাতায়াতের জন্য মাহরামের ব্যবস্থা হয়।
গ. মাহরামের হজের খরচের ব্যবস্থা তার কাছে থাকে।
ঘ. নারীদের ঘর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যকোনো নিষেধ না থাকে (যেমন তালাকের ইদ্দত বা স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দতকালীন সময় না হয়)। তাহলে নারীদের ওপর হজ করা ফরজ হবে এবং তা আদায় করতে হবে।

মাসয়ালা : নারীদের ওপর হজ ফরজ হলে তা আদায়ের ক্ষেত্রে স্বামী বাধা দিলেও তা মানা যাবে না। তবে নফল হজের ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি নেওয়া জরুরি।

মাসয়ালা : কোনো নারীর টাকার ব্যবস্থা আছে কিন্তু উপযুক্ত মাহরাম বা স্বামী না থাকায় হজ করতে না পারলে বদদি হজের অসিয়ত করে যাবে। তার মৃত্যুর পর তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দ্বারা তা আদায় করা হবে।

মাসয়ালা : নারীরা অন্য নারীর সঙ্গে মিশে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া হজ করতে পারবে না। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত যেন হজ না করে।’ -সাঈদ আব্দুল কাদের, আল মুগনি ফি ফিকহিল হজ ওয়াল উমরা, পৃ. ২২ সূত্রে হজ উমরা ও যিয়ারত গাইড, শামসুল হক সিদ্দিক পৃ. ১৫২

নারী-পুরুষের হজে পার্থক্য
হজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের খুব বেশি পার্থক্য নেই। হজে পুরুষদের যে সব কাজ করতে হয়, নারীদেরও সেসব কাজ করতে হয়। অল্প কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে তা আলোচনা করা হলো-

১. পুরুষ সঙ্গী : পুরুষরা একা হজ করতে পারলেও নারীদের হজ-উমরার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে স্বামী বা মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে। মাহরাম পুরুষ না পাওয়া গেলে হজ স্থগিত রাখবে।

/uploads/files/f3lxZHMm5PSkTi7oHuMcdvOrBjvv2AtjcA3BJnE9.jpeg
২. পোশাক : হজের ইহরাম অবস্থায় পুরুষরা সেলাইবিহীন লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করেন। অপরদিকে নারীরা স্বাভাবিক পর্দা করবেন। নারীরা মুখের সঙ্গে কোনো কাপড় লাগিয়ে রাখবেন না। মুখের পর্দার জন্য মাথার সামনে ক্যাপ দিয়ে, ক্যাপের সামনে বাড়তি কাপড় ঝুলিয়ে দিতে পারেন। তাছাড়া নারীরা সেলাইযুক্ত সাধারণ কাপড় পরিধান করার পাশাপাশি মাথা ঢেকে রাখার কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইহরাম ছাড়া অন্য সময়ে নারী-পুরুষ সবাই স্বাভাবিক কাপড় পরিধান করবেন।

৩. তালবিয়া পাঠ : ইহরাম বাঁধার পর তালবিয়া- লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক... পড়তে হয়। পুরুষরা উচ্চস্বরে তা পড়বে আর নারীরা হালকা আওয়াজে পড়বে। নারীদের উচ্চ আওয়াজে তালবিয়া পড়া নিষেধ।

৪. ইদ্দত পালন : নারী যদি তালাক বা স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত পালন করতে থাকে তাহলে নারীরা হজ করতে পারবে না। হজ শুরুর পূর্বে ইদ্দত শেষ হলে হজের জন্য বের হতে পারবে। অন্যথা পরবর্তী বছর হজ করবে।

আরও পড়ুন: দানবাক্স থেকে পাগলা মসজিদের দৈনিক আয় লাখ টাকা!

৫. তাওয়াফ : তাওয়াফ করার ক্ষেত্রে নারীরা যথাসম্ভব পুরুষদের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলবে। নারীদের জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। অদূর ভবিষ্যতে আলাদা লাইন বা সময় হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাওয়াফের ক্ষেত্রে পুরুষরা যখন ইজতিবা করবে তখন নারীদের ইজতিবা করার প্রয়োজন নেই। পুরুষরা যখন বীরের মতো হেলেদুলে রমল করে নারীরা তখন স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করবে।

কাবা শরীফের হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ বা চুম্বনের জন্য পুরুষদের সঙ্গে ঠেলাঠেলি জায়েজ নয়। ভিড় ছাড়া, পুরুষদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি ছাড়া যদি হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া যায় তাহলে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। নারীদের জন্য আলাদা সময় করার পরিকল্পনা করছে হারামাইন কর্তৃপক্ষ।

৬. সায়ী অবস্থায় : সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সায়ী বা দৌঁড়ানোর আমলটি একজন নারী থেকেই এসেছে। নারীরাও সায়ী করবে তবে দু’সবুজ বাতির এলাকায় দৌঁড়াতে হবে না নারীদের।

৭. হজ অবস্থায় ঋতুস্রাব হলে : নারীরা ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে তাওয়াফ ছাড়া সব কিছুই করতে পারবে। হজের ফরজ তাওয়াফ বা তাওয়াফে জিয়ারত করার পূর্বে মাসিক শুরু হলে স্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। স্রাব বন্ধ হবার পর তাওয়াফে জিয়ারত করে যথারীতি হজ শেষ করবে। স্রাব ১২ তারিখের পর বন্ধ হলেও এতে কোনো দম বা জরিমানা দিতে হবে না।

যদি ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার কারণে কিংবা অন্যকোনো কারণে কিছুতেই স্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত মক্কায় থাকা সম্ভব না হয়, তাহলে পরবর্তীতে আবার মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফ আদায় করতে হবে। তাওয়াফ আদায় না করা পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর মিলন বৈধ হবে না। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হলো- সেনেটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করে নেওয়া। সেক্ষেত্রে দম বা জরিমানা দিতে হবে।

মাসয়ালা : যদি তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করার পর স্রাব শুরু হয় তাহলে তার জন্য তাওয়াফে বিদা (বিদায়ী তাওয়াফ) মাফ। তাওয়াফে বিদা ছাড়াই হজ শেষ করতে পারবে। তবে অপেক্ষা করে সুস্থ হবার পর তাওয়াফে বিদা করতে চাইলে তাও করতে পারবে।

মাসয়ালা : হজ অবস্থায় স্রাবের সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য ঔষধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করতে চাইলে এর অনুমতি আছে। -জাদিদ ফিকহি মাসায়েল: খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি, পৃ. ১৯১

লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন

** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা

** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!

** শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত

   

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদে নূর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটি কাছে টানছে দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মুসল্লিরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে।

শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদটিতে আসা মুসুল্লিদের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর নান্দনিক মসজিদ আর নেই।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম জানান, মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের কাঠামো। যা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, হজে যাওয়ার পর মদিনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী (ওরফে বাবুল চিশতী)। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। আর চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সাতটি গম্বুজসহ চারটি বড় মিনার। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

বকশীগঞ্জের শহরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য ভরা মসজিদে নূর। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। এই মসজিদে দুই হাজার ৫০০ মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেরপুর থেকে শাউন মোল্লা নামের এক দর্শনার্থী পরিবারকে নিয়ে এই মসজিদ দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছে। আসবো আসবো করে আসা হয় না। এবা সুযোগ বের করে পরিবার নিয়ে এসেছি, নামাজও পরলাম।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মণ্ডল জানান, মাহবুবল হক চিশতী অনেক সময় ধরে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই মসজিদের মূল ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। ফুলের বাগানে ঘেরা এই মসজিদের পাশে বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদরাসাসহ দৃষ্টিনন্দন একটি অজুখানা রয়েছে। অজুখানাটিও দেখতে বেশ সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন।

মসজিদের নূরের ইমাম মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই মসজিদে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় করা শুরু হয়।

;

গরমে কোরবানির পশু নিয়েও ভাবতে হবে



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিতে পশু লাগতে পারে এক কোটি ত্রিশ লাখের মতো। অন্যদিকে এবার চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ত্রিশ লাখ। কাজেই কোরবানিতে পশুর কোনো অভাব হবে না। অতএব কোরবানির পশু নিয়ে দুর্ভাবনার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে খামারিদের গরু-ছাগলের প্রাণহানি কিংবা ওজন কমে যাওয়ার বিষয়টিকে নিছক গোষ্ঠীবিশেষের বিড়ম্বনারূপে দেখার সুযোগে নেই। যখন খামারিরা আসন্ন কোরবানির জন্য তাদের পশু প্রস্তুত করছেন, তখন এরূপ ক্ষয়ক্ষতির জেরে ভোক্তাসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আক্রান্ত হতে বাধ্য।

সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গরুকে বারবার গোসল করিয়ে, টিনের চালে পাটের ভিজা বস্তা বিছিয়ে, স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাইয়ে এবং বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ খামারিরা। এ রকম দুর্দিনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর শুধু পরামর্শ দিয়ে দায় সারতে পারে না।

রিপোর্টে প্রকাশ, গরমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে দুগ্ধ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আসলে সারাদেশের চিত্র এমনই হতাশাজনক। তাপপ্রবাহে পশুর নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে দুধের উৎপাদন ব্যাহত হবার মাধ্যমেও খামারিদের সংকটের অবস্থা স্পষ্ট। বিশেষত ঈদুল আজহায় নিজস্ব পশু দিয়ে কোরবানি করার যে সক্ষমতা দেশ অর্জন করেছে, সেখানে তাপপ্রবাহের চোখ রাঙানি লক্ষণীয়। যেহেতু খামারিদের হাতে সময় কম, সেহেতু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহসৃষ্ট ক্ষতিরোধ করা সম্ভব।

খবরে আরও বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে কোরবানির গরু-ছাগল অজ্ঞাত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনির লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার পর পশুগুলো ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু-ছাগল আক্রান্ত হওয়ায় লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন বিপদে খামারিদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। এ সময় যেখানে আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো খামারিরা অভিযোগ করেছেন, আগে গরু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসক মোটরসাইকেলে খামারে আসতেন। তাকে তখন যত অর্থ দিতে হতো, এখন ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের বড় গাড়ি আসার কারণে কয়েক গুণ ফি পরিশোধ করতে হয়। এ চিত্র কেবল হতাশাজনক নয়; বরং নিকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিস্থিতির আলোকে আধুনিক খামারিরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সক্ষম হলেও প্রান্তিক খামারি অধিকাংশই জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। তাই খামারিদের ক্ষতি পোষানো, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা প্রদানসহ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকেই সবার আগে তৎপর হতে হবে। গবাদি পশু রক্ষা করতে পরিস্থিতির আলোকে পদক্ষেপ নিতে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা খামারিদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

চলমান তাপপ্রবাহে আক্রান্ত পশুর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংকটকালীন বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয় বিবেচনাযোগ্য। খামারিদের সহায়তায় বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয়রাও পাশে দাঁড়ালে সংকট দূর হবে এবং কোরবানির সক্ষমতায় কোনো ছেদ পড়বে না। বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যেসব পদক্ষেপ নিল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুধুমাত্র হজ ভিসায়ই পবিত্র হজপালন করা যাবে, এছাড়া হজযাত্রীদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সেই সঙ্গে নিবন্ধন ও যথাযথ অনুমতি ছাড়া কেউ মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে নতুন ব্যবস্থাপনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। নতুন এসব বিধান-প্রবিধানের মাধ্যমে পবিত্র স্থানগুলোতে হজযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও তাদের নিরাপত্তা সুসংহত করাই কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (৪ মে) সৌদি আরবের জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ পাবলিক সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রিবিহীন হজপালন কমাতে মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আইনটি শনিবার (৪ মে) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে, মক্কার প্রবেশপথে থাকা চেকপয়েন্টগুলোতে সৌদি নিরাপত্তা কর্মীরা যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। শুধুমাত্র হজ ও উমরার ভিসাধারী, আবাসিক বাসিন্দা এবং ওয়ার্ক পারমিটধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারেবেন।

উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না
উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না মর্মে আইন পাস করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় বলেছে, উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না। বরং হজের জন্য আলাদা ভিসা করতে হবে। এ ছাড়া টুরিস্ট ভিসা, ট্রানজিট ভিসায়ও হজপালন করা যাবে না- মর্মে জানানো হয়েছে।

ইসলামিক ইনফরমেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের উমরার ভিসা রয়েছে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। উমরার ভিসায় হজযাত্রীরা হজ করতে পারবেন না। তাদের অবশ্যই আলাদাভাবে হজের ভিসা গ্রহণ হবে।

সৌদি আরবে যারা আছেন তাদেরও হজপালনের অনুমতি নিতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয় হজ ২০২৪-এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের অবশ্যই হজ পারমিট নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তারা নুসুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে। বৈধ হজযাত্রার জন্য তা অপরিহার্য। একইসঙ্গে হজযাত্রীদের সেহাত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি বাসিন্দাদের গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

বিধিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য মক্কা পৌঁছানোর কমপক্ষে ১০ দিন আগে ওই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করা উচিত।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ দেশ থেকে একটি স্বাস্থ্য শংসাপত্র আনতে হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত কিনা, তা যাচাই করা হবে।

সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থাপনা হজের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করবে। সবার জন্য একটি নিরাপদ ও অর্থবহ হজ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;