সংক্ষিপ্ত হজ গাইড: পর্ব- ১

হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা



ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৪ জুলাই শুরু হবে হজ ফ্লাইট। বাংলাদেশ থেকে এবার প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলামান হজপালনের জন্যে সৌদি আরব গমন করবেন।এবার যারা হজে যাচ্ছেন, তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। হজ পালনেচ্ছুদের সুবিধার্থে বার্তা২৪.কম ধারাবাহিকভাবে হজের নিয়ম-কানুন, মাসয়ালা, আমল ও প্রয়োজনীয় দোয়া প্রকাশ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ থাকছে প্রথম পর্ব।


হজ পরিচিতি
আল্লাহতায়ালা মানুষকে অনেক ভালোবেসে তৈরি করেছেন। মানুষ আল্লাহকে ভালোবেসে আল্লাহর আনুগত্য করবে, ইবাদত করবে এ উদ্দেশে মানবজাতিকে পাঠানো হয়েছে পৃথিবীর বুকে। আল্লাহর ইবাদত করতে যেয়ে কোনো কোনো ইবাদত শুধুমাত্র কায়িক শ্রমের মাধ্যমে করতে হয়- যেমন নামাজ, রোজা ইত্যাদি। আবার কিছু ইবাদত আছে যাতে টাকা-পয়সা সম্পদের ব্যবহার করতে হয়- যেমন জাকাত, সদকা ইত্যাদি। আর কিছু ইবাদত আছে যাতে শারীরিক পরিশ্রম ও সম্পদের ব্যবহার দু’টোই করতে হয়। এ ধরণের ইবাদতের অন্যতম হলো- হজ। যাতে বান্দা তার কষ্টের উপার্জিত টাকা খরচ করে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়িঘর ছেড়ে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসায় সাড়া দেয়। উপস্থিত হয় মক্কা ও মদিনায়। আল্লাহর ঘর কাবা শরিফকে কেন্দ্র করে মহান রবের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ঘুরতে থাকে। আল্লাহর বন্ধু হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তার পরিবার পরিজনদের কিছু স্মৃতির স্মরণে, তাদের অনুকরণ করে মক্কার স্থানে স্থানে।

এক কথায়, বছরের নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর ঘর কাবা জিয়ারত করার ইচ্ছায় ইহরাম বেঁধে মক্কায় উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত নিয়মে তাওয়াফ, সাঈ, জামারায় পাথর নিক্ষেপ, আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান করা ও মাথার চুল কাটা, একইসঙ্গে কিছু নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকাই হলো- হজ।

কোরআনে কারিমের ভাষায় হজ হলো- নির্ধারিত মাসে কাবা জিয়ারতের ইচ্ছা করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হজ হলো নির্ধারিত (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) মাসে।’ -সূরা আল বাকারা: ১৯৭

আরও পড়ুন: কাবা প্রাঙ্গণের অমলিন ভালোবাসা

হজ যেভাবে এলো
সর্বপ্রথম হজরত আদম আলাইহিস সালাম ভারতবর্ষ থেকে মক্কায় পৌঁছে হজ করেন। ফেরেশতারা তাকে কাবা দেখিয়ে দেন যা তারা তৈরি করেছিল।

পরবর্তীতে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম কাবাঘর পুন:নির্মাণ করার পর আল্লাহর হুকুমে কাবা ঘর জিয়ারত করার জন্য পাহাড়ের ওপর থেকে ঘোষণা দেন। এ আওয়াজ আল্লাহর কুদরতে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে আবার নতুন উদ্যোমে হজ পালন চলতে থাকে।

পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ হজ করার জন্য মক্কায় সমবেত হতো। সকল ধর্মেই, সকল নবী-রাসূলদের কাছে এ স্থানটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি মক্কার পাথর পূজারীরাও কাবা ঘরে তাওয়াফ করা, হজ করাকে পূণ্যের কাজ মনে করতো। এর দ্বারা তাদের সকল অপরাধ ক্ষমার আশা করতো।

আল্লাহতায়ালা তার শেষ নবীকে মক্কার কাবা ঘরের পাশেই জন্ম দিলেন। কাবা ঘরের সেবা করতে করতে বেড়ে উঠেন তিনি। কাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদ প্রতিস্থাপন নিয়ে বিরোধের অবসান ঘটিয়ে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ।

ইসলামে হজের নির্দেশ আসে নবম হিজরিতে। কোরআনে কারিমে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘আল্লাহর ঘরে পৌঁছা যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হজ করা ফরজ।’ -সূরা আলে ইমরান: ৯৭

এ নির্দেশের পর হজরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে নবম হিজরিতে সর্বপ্রথম হজ পালন করা হয়। দশম হিজরিতে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ পালন করেন। এটিই তার জীবনের প্রথম ও শেষ হজ। এ হজই আমাদের জন্য নমুনা।

হজের গুরুত্ব
আল্লাহ প্রেমিক বিশ্ব মানবতার মিলনমেলা হলো- হজ। হজের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ একই সময়ে এক আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে মক্কায় উপস্থিত হয়ে আল্লাহর আনুগত্যের শিক্ষা হাতে কলমে লাভ করে। আল্লাহর আনুগত্যে আল্লাহর বন্ধু হজরত ইবরাহিম আলাইহিম তার নবজাতক হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম ও হজরত হাজেরাকে মক্কায় রেখে চলে যান। আবার বালক ইসমাঈলকে আল্লাহর হুকুমের সামনে কোরবানি দিতে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করেন। এ সব আনুগত্যের স্মৃতি স্মরণে পালিত হয় হজ।

হজের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য শেখা যায়। নবী-রাসূলদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে চলাফেরা করার কারণে তাদের জীবনের চেষ্টা-সাধনা, ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা, চারিত্রিক ও আত্মিক উৎকর্ষতার বিষয়গুলো আমাদের সামনে চলে আসে। ব্যক্তিজীবনে এর প্রভাব দৃঢ়ভাবে পড়ে। বিশেষত কাবা ঘরকে যখন নিজের হাতে ছুঁয়ে দেখা হয় তখনকার অনুভূতি অন্যতম। সরাসরি কাবাকে সামনে রেখে নামাজ পড়া, কাবার হাতিমে নামাজ পড়ার অনুভূতিই আলাদা। আল্লাহ, আল্লাহর কুদরত ও মুহাব্বত এতো নিবিড়ভাবে আর কোনো ইবাদতে পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই মুসলিম জীবনে হজের গুরুত্ব অপরিসীম।

কেউ যদি এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে না পারে, হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও অবহেলা করে হজ আদায় না করে তাহলে আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, হজ পরিত্যাগ করে মারা গেলে আর দেখার বিষয় থাকে না সে কি মুসলিম? না কি ইহুদি? না কি খ্রিস্টান?

অারও পড়ুন: জেনেভার মসজিদে জুমার খুতবা দিলেন কাবার ইমাম

হজরত আবু উমামা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গ্রহণযোগ্য জরুরি প্রয়োজন বা অত্যাচারী শাসক কিংবা মারাত্মক অসুস্থতা যার হজ করায় বাঁধা হয়নি আর সে হজ আদায় না করে মারা যায়। তাহলে সে ইহুদি কিংবা খ্রিস্টান হয়ে মারা যাক। (কিংবা মুসলিম হয়ে এতে কোনো পার্থক্য হবে না)। -আদদারামি

যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে সে যদি হজ অস্বীকার করে তা এড়িয়ে যায় তাহলে সে অমুসলিম হিসেবে গণ্য হয়। হজ আদায় করার ব্যাপারে আপত্তি নেই তবে অলসতা কিংবা পার্থিব প্রয়োজনগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে যদি হজ করতে দেরি করে তা-ও অমুসলিমদের মতো কাজ করার শামিল বলে গণ্য হবে।

অনেকে হজ করার ক্ষেত্রে এ অজুহাতে দেরি করে, হজ করে একবারে তওবা করে নিব, তাই আগে আগে হজ করলে তো তওবা ঠিক রাখতে পারব না, তা-ই শেষ বয়সেই হজ করব। এ ধরণের মানসিকতা নানা ধরণের ক্ষতি করে।

প্রথমত: আমরা কতদিন বাঁচব তা জানি না। দেরি করতে যেয়ে হজ করা নাও হতে পারে। দ্বিতীয়ত: সত্তর বছর বয়সে হজ করার পরই কী মারা যাওয়া নিশ্চিত? এমনও তো হতে পারে আরও ১০/২০ বছর বাঁচিয়ে রাখবেন আল্লাহ। এ সময়ে শয়তান কী গোনাহ করিয়ে নিতে পারবে না? বস্তুত গোনাহ হয়ে যেতেই পারে, তওবার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা তো প্রতিদিন চাইতে হবে। হজ করায় কোনো দেরি করতে নেই। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ তো তা-ই। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে হজ করার ইচ্ছা রাখে সে যেন তাড়াতাড়ি করে।’ -আবু দাউদ

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজকে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

হজরত ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি- ১. আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এ সাক্ষ্য দেওয়া (ঈমান আনা), ২. নামাজ কায়েম করা, ৩. জাকাত প্রদান করা, ৪. বাইতুল্লাহর হজ, ৫. রমজানে রোজা রাখা।

লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

   

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যেসব পদক্ষেপ নিল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুধুমাত্র হজ ভিসায়ই পবিত্র হজপালন করা যাবে, এছাড়া হজযাত্রীদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সেই সঙ্গে নিবন্ধন ও যথাযথ অনুমতি ছাড়া কেউ মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে নতুন ব্যবস্থাপনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। নতুন এসব বিধান-প্রবিধানের মাধ্যমে পবিত্র স্থানগুলোতে হজযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও তাদের নিরাপত্তা সুসংহত করাই কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (৪ মে) সৌদি আরবের জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ পাবলিক সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রিবিহীন হজপালন কমাতে মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আইনটি শনিবার (৪ মে) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে, মক্কার প্রবেশপথে থাকা চেকপয়েন্টগুলোতে সৌদি নিরাপত্তা কর্মীরা যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। শুধুমাত্র হজ ও উমরার ভিসাধারী, আবাসিক বাসিন্দা এবং ওয়ার্ক পারমিটধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারেবেন।

উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না
উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না মর্মে আইন পাস করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় বলেছে, উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না। বরং হজের জন্য আলাদা ভিসা করতে হবে। এ ছাড়া টুরিস্ট ভিসা, ট্রানজিট ভিসায়ও হজপালন করা যাবে না- মর্মে জানানো হয়েছে।

ইসলামিক ইনফরমেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের উমরার ভিসা রয়েছে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। উমরার ভিসায় হজযাত্রীরা হজ করতে পারবেন না। তাদের অবশ্যই আলাদাভাবে হজের ভিসা গ্রহণ হবে।

সৌদি আরবে যারা আছেন তাদেরও হজপালনের অনুমতি নিতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয় হজ ২০২৪-এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের অবশ্যই হজ পারমিট নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তারা নুসুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে। বৈধ হজযাত্রার জন্য তা অপরিহার্য। একইসঙ্গে হজযাত্রীদের সেহাত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি বাসিন্দাদের গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

বিধিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য মক্কা পৌঁছানোর কমপক্ষে ১০ দিন আগে ওই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করা উচিত।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ দেশ থেকে একটি স্বাস্থ্য শংসাপত্র আনতে হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত কিনা, তা যাচাই করা হবে।

সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থাপনা হজের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করবে। সবার জন্য একটি নিরাপদ ও অর্থবহ হজ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাশিয়ার সরকার হিজাব সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা শিথিল করেছে। ফলে এখন থেকে বিদেশি নাগরিকরা রাশিয়ার নাগরিকত্ব আবেদন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সরকারি নথিতে হিজাব পরা ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় এই সংবাদ নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরটি জানিয়েছে, আগামী ৫ মে থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর দশ দিন আগে এই আইনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, যেসব মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অপরিচতদের সামনে মাথা খোলা রেখে আসতে পারেন না, তারা শুধুমাত্র মুখমন্ডলের ছবি দিলেই চলবে।

তবে রাশিয়ায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় মুসলিম নারীরা ওয়ার্ক পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা অন্যান্য সরকারি নথিতে হিজাব পরিহিত ছবি ব্যবহার করতে পারেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিইসুলতান খামাজেইভ বলেন, এই নতুন আইনের মাধ্যমে বিশ্বাসীরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন সহজেই মানতে পারবেন। সেই সঙ্গে মুখমন্ডলের ছবির মাধ্যমেই মনিটরিং সিস্টেমে তাদের তথ্য রাখতে পারবে সরকার।

ইউরোপের সব দেশের বিবেচনায় রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমানের বসবাস। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে ইহুদি, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি ইসলামকেও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি রুশ নাগরিকের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। শুধু মস্কোতেই ১০ লাখ মুসলমানের বসবাস। বর্তমানে ‘ইসলাম’ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।

বিগত দুই দশক রাশিয়ায় নতুন করে প্রায় আট হাজার মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে চারটি বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স। মস্কো ক্যাথিডাল মসজিদ তো এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এতে রয়েছে গ্রন্থাগার, হল রুম, মুসলিম মিউজিয়াম ও প্রদর্শনী গ্যালারি, যাতে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে ঈদের নামাজে প্রায় তিন লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

;

অবৈধ হজযাত্রী ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈধ ও অবৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবারের হজ মৌসুমে প্রত্যেককে আলাদা করে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। মূলত, অনুমোদন ছাড়া হজপালন নিরুৎসাহিত করতেই দেশটির এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

অত্যাধুনিক এ কার্ড ছাড়া হজের পবিত্র স্থানগুলোতে চলাফেরায় কঠোর নিয়ম করা হচ্ছে। মক্কার হজের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রবেশকালে কার্ডটি বহন করা বাধ্যতামূলক। হজবিষয়ক জরুরি দুটি অ্যাপ ‘নুসুক’ ও ‘তাওয়াক্কালনা’-এর মধ্যে কার্ডটির ডিজিটাল ভার্সন পাওয়া যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি হজযাত্রীদের প্রথম দলটি সৌদি আরবে পৌঁছাবে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। ঠিক তার আগেই অবৈধ বিদেশি হজযাত্রীদের রুখতে এই উদ্যোগ নিল দেশটি।

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া গত ৩০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নুসুক’ কার্ড দেওয়ার প্রকল্প শুরু করেন। এ সময় তিনি ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত কালিল কওমাসকে ‘নুসুক’ কার্ডের একটি কপি তুলে দেন।

এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ৪১ হাজারের বেশি হজযাত্রী হজপালন করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও দেশটির হজযাত্রীরা প্রথম হজ কাফেলা হিসেবে সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন।

ডিজিটাল এই নুসুক কার্ডে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে এবং হজের জন্য পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে চাইলে এই ডিজিটাল কার্ড অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনেও বিভিন্ন জায়গায় এই ডিজিটাল কার্ড দেখাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট দেশের হজযাত্রীদের জন্য ভিসা ইস্যুর পর কার্ডটি সংশ্লিষ্ট হজ অফিস বিদেশি হজযাত্রীদের কাছে হস্তান্তর করবেন এবং হজ পারমিট ইস্যুর পর স্থানীয় সৌদি হজযাত্রীরা দেশটির সংশ্লিষ্ট সরকারি কার্যালয় থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে হজ করার ক্ষেত্রে অনুমোদনকে বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের একটি সংগঠন। ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ নামে সংগঠনটি জানিয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এরমাধ্যমে পাপ করবেন।

এ ছাড়া সৌদি সরকার দেশটির সব হজ পালনকারীদের জন্য ‘সেহাতি’ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিসের টিকার রেকর্ড উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেছে।

সরকারি আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালে এই সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ ও গত ৫ বছরের মধ্যে মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিনের একটি ডোজের রেকর্ড উল্লেখ করতে বলেছে।

আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৬ জুনের (২৯ জিলকদ) মধ্যে উমরা যাত্রীদের সৌদি আরব ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষণা অনুসারে, দেশটি গত ১ মার্চ থেকে হজের ভিসা ইস্যু করা শুরু করে গত ২৯ এপ্রিল (২০ শাওয়াল) এ কার্যক্রম শেষ করেছে।

আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;