ব্যাংক-আর্থিক খাতকে এনবিআর চেয়ারম্যানের হুঁশিয়ারি
ঢাকা: ২০১৮-১৯ অর্থবছরে করপোরেট কর হার কমানোর সুফল যেন জনগণ পায় সে বিষয় নিশ্চিত করতে ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
শনিবার ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) এ সেমিনারের আয়োজন করে। আইসিএসবির সাবেক সভাপতি আসাদ উল্লাহ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন করনীতির সদস্য কানন কুমার রায়।
অনুষ্ঠানে আইসিএসবির সদস্যদের আইসিএমএবি ও আইসিএবির মতো আয়কর পেশাজীবী হিসেবে কাজের স্বীকৃতি দেয়ার দাবি করা হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “এবার বাজেটে শুধু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করহার কমানোর হয়েছে। এতে ব্যাংকিং খাত লাভবান হয়েছে। অন্য খাতেও এর সুফল পড়তে পারে। যদি দেখা যায়, কর্পোরেট কর কমানোর সুফল জনগণ পাচ্ছে তাহলে ভবিষ্যতে এটি নিয়ে আরো চিন্তা করা হবে। আর না পেলে এই সুবিধা যে সারাজীবন বহাল থাকবে তা ঠিক নয়।”
তিনি বলেন, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখার যুক্তি দেখিয়ে বলেন, উন্নত বিশ্বে জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে মিল রেখে করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় আয়ের ২৫ শতাংশ করমুক্ত থাকে। এটি আমাদের দেশে ১৯৮ শতাংশ। এছাড়া করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হলে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে যারা কর দেন তারা করের আওতার বাইরে চলে যাবে। করজাল বাড়ানোর অংশ হিসেবে করমুক্ত আয়েরসীমা বাড়ানো হয়নি।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেন, নতুন ভ্যাট আইন ব্যবসাবান্ধব। ১৫ শতাংশ একক হার থাকলেও রেয়াত নেয়ার ব্যবস্থা ছিল। যদিও ব্যবসায়ীরা ব্যবসার ধরন বুঝে ভ্যাট দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। সে অনুযায়ী একাধিক হার করার চিন্তা ভাবনা আছে। জনকল্যাণমুখী করেই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে।
আইসিএসবির সদস্যদের আইসিএমএবি ও আইসিএবির মতো আয়কর পেশাজীবী হিসেবে কাজের স্বীকৃতি দেয়ার দাবির বিষয়ে বলেন, এটা করতে হলে আয়কর অধ্যাদেশ পরিবর্তন করতে হবে, যা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সম্ভব নয়। আইসিএসবির সদস্যরা যাতে আয়কর পেশাজীবী হিসেবে কাজ করতে পারেন সে জন্য আগামী বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে আইসিএসবিকে যুক্ত করা যেতে পারে।
রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাসী স্বীকার করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাজেট থেকে রাজস্ব আয়ের উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা এসেছে। অর্থনীতির জন্য এটির প্রয়োজন আছে। কোন কাজে উচ্চাকাক্সক্ষা না থাকলে তা যেমন অর্জন হয় না, রাজস্বের ক্ষেত্রেও তেমন। বড় বাজেট বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আবার বিদেশি অর্থায়ন প্রকল্পেও সরকারি অংশিদারিত্ব থাকছে। এসব সম্ভব হয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বৃদ্ধির কারণে।
বাজেটে গৃহীত বাজেট পদক্ষেপ উল্লেখ করে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এ বাজেটে বিনিয়োগ বাড়াতে এবং আমদানি বিকল্প পণ্য তৈরিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। আবার স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ক্ষেত্র বিশেষে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিএসবির ফেলো সদস্য সাধন চন্দ্র দাস। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন আইসিএসবির সদস্য আজিজুর রহমান ও অধ্যাপক ড. ফিরোজ ইকবাল ফারুকী প্রমুখ।
