ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি মামলায় আটকা ২ লাখ ১০৭ কোটি টাকা
বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পর তা পরিশোধ না করায় বিভিন্ন আদালতে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর করা মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭০৫টি। আর এসব মামলার ফাঁদে আটকে আছে ২ লাখ ১০৭ কোটি টাকা, যা ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের ৪৩.০৭ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরে বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ঋণ কেলেঙ্কারির মামলার একটি পরিসংখ্যান তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ওই পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নির্বাচনের আগে মামলার ভারে জর্জরিত দেশের ব্যাংকিং খাত। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন, কিন্তু তা ফেরত দিচ্ছেন না। ফলে বছরের পর বছর ঋণ আদায়ের ব্যর্থ চেষ্টা করে আদালতে মামলা করছে ব্যাংকগুলো। তবে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় বছরের পর বছর তা ঝুলে থাকছে।
পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের করা এমন ঋণ কেলেঙ্কারি মামলা বিচারাধীন আছে প্রায় এক লাখ। যার মধ্যে বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করা মামলার সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৬টি। আর এসব মামলায় আটকে আছে প্রায় ৮৮ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সাধারণত ঋণ খেলাপিরা নতুন করে ঋণ নিতে পারেন না। এমনকি তারা জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু বড় বড় ঋণখেলাপিরা নতুন করে ঋণ নিতে বা নির্বাচনে অংশ নিতে উচ্চ আদালতে রিট করেন, যাতে তাদের ঋণখেলাপি বলা না হয়। উচ্চ আদালতে রিট করে তারা নতুন ঋণের আবেদন করেন। প্রভাবশালী হওয়ায় তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। কিন্তু বছরের পর বছর তারা পরিশোধ করেন না। পরে অনেকটা নিরুপায় হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু আদালত স্বল্পতার কারণে মামলার পাহাড় জমে গেছে।
গত জুন মাসে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে মামলার হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন আদালতে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আছে মোট এক লাখ ৭০৫টি। যার মধ্যে রিটকারী আদালতে বিচারাধীন ৫ হাজার ৪৩৪টি মামলার বিপরীতে আটকে আছে ৫৭ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।
আর দেউলিয়া, অর্থ ঋণ ও অন্যান্য আদালতে ৯৫ হাজার ২৭১টি মামলার বিপরীতে আটকে আছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের করা ৬২ হাজার ৮০০টি মামলার বিপরীতে ৭১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা এবং সরকারি ব্যাংকের করা ৩২ হাজার ৪৭১টি মামলার বিপরীতে ৭১ হাজার ৪২ কোটি টাকা আটকে আছে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মামলা করেছে বেসরকারি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ৬৫ হাজার ৬৭৬টি মামলার বিপরীতে আটকে আছে ৮৮ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা এবং সরকারি ব্যাংকের করা ৩৫ হাজার ২৯টি মামলার বিপরীতে আটকে আছে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা।