সাক্ষাৎকারে শিমূল ইউসুফ

“নারী হ্যারেসমেন্টের পেছনে পুরুষদের অবদমন একটি কারণ”



ক্যামেলিয়া আলম, বিভাগীয় সম্পাদক, নারীশক্তি
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মঞ্চকুসুম’ শিমূল ইউসুফ, বিক্রমপুরের স্বনামধন্য বাড়িতে জন্ম। বাবা মেহতার বিল্লাহ ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং সুফিবাদে বিশ্বাসী। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ছেলেবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন। শিমূল ইউসুফ একাধারে একজন অভিনয় শিল্পী, নির্দেশক, কস্টিউম ডিজাইনার ও সংগীত শিল্পী। রেডিও-টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে দীর্ঘদিন শিল্পাঙ্গনে তাঁর চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। শিমূল ইউসুফের জীবনসঙ্গী নাসিরউদ্দীন ইউসুফ একজন মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র নির্দেশক।

মুক্তিযুদ্ধে আর্থিক সহযোগিতার জন্য প্রথম আবদুল্লাহ আল মামুনের নাটক দিয়ে নাট্যজগতে শিমূল ইউসুফের পদচারণা শুরু। ঢাকা থিয়েটারে ১৯৭৪ থেকে কাজ করছেন। ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কসাই’, ‘শকুন্তলা’, ‘ফণি মণসা’, ‘কিত্তন খোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘হাত হদাই’, ‘চাকা’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘বন পাংশুল’, ‘বিনোদিনী’ ইত্যাদি তাঁর অভিনীত মঞ্চনাটক।

দেবশ্রী পদক, লোকনাথ পদক, রুদ্র পদক, জাহাঙ্গীর পুরস্কারসহ ২০০৯-এ ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে পুরস্কৃত হন। বার্তা২৪.কমের পক্ষ থেকে শিমূল ইউসুফের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিভাগীয় সম্পাদক-নারীশক্তি, ক্যামেলিয়া আলম


বার্তা২৪: শিমূল আপা, নারীশক্তি বলতে যদি সমাজে তার অবস্থানের ক্ষেত্র বলি, সেই অবস্থানের একজন মানুষ হিসেবে আপনাকে ভাবা যায়। আপনার আজকের এই অবস্থানের পেছনে প্রধানত কার ভূমিকা ছিল?
শিমূল ইউসুফ: আমার পরিবার হয়তো ওইভাবে সলভেন্ট ছিল না, কিন্তু তারা সাংস্কৃতিক দিক থেকে খুব উদার ছিল। আট ভাইবোনের সবার ছোট আমি। আমার বাবা মারা গেছে খুব ছোট বেলায়। যখন আমার চার বছর। কিন্তু বাবার কিছু নির্দেশনা ছিল, সেই নির্দেশনাগুলো আমার মা সারাজীবন পালন করেছেন। আমার মাও খুব দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। আমায় যদি কেউ প্রশ্ন করে আমার জীবনের আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তবে অবশ্যই আমি আমার মায়ের কথা বলব। আমি আমার মাকে দেখেই সব শিখেছি। উনার থেকে সাহস, প্রেরণা পেতাম। সবসময়ই উনি আমায় এগিয়ে যাবার কথাগুলো বলতেন। আর বারেবারেই শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতেন। বলতেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি তোমাকে একজন মানুষ হতে হবে। আর আমার মায়ের একটা আশা ছিল যে, আমরা তিন বোন পাঁচ ভাই, তিন বোনই যেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করি। মায়ের বক্তব্য ছিল এরকম, ছেলেরা যা কিছু করে খেতে পারবে, কিন্তু আমার মেয়েরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেই শিক্ষাটি যেন ওদের থাকে। তো আমাদের প্রমিজ করিয়েছিল, তোমরা আমাদের কথা দাও তোমরা তিনবোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করবে। মায়ের জীবদ্দশাতেই আমরা তা পালন করতে পেরেছিলাম আর কি।

বার্তা২৪: আপনার মায়ের মেন্টাল স্ট্রেন্থ যা ছিল, তা কি সমাজের কাছে বাধা হয়নি? তৎকালীন সমাজে মেয়েদের শিক্ষার হার খুব কম ছিল, সেই সমাজকে তিনি কী করে মোকাবেলা করেছিলেন?
শিমূল ইউসুফ: মা না এসব ভাবতোই না। আমরা আজকে যে ভাবনাটা ভাবছি বাচ্চাদের জন্য বা ইয়ংদের জন্য। আমাদের সময়ে কিন্তু এই এখনকার মতোন পরিবেশ ছিল না, সত্যি কথা। এই ধরনের সমাজ আমরা দেখিইনি। কাজেই আমার মা নির্দ্বিধায় ছেড়ে দিতেন সব জায়গায়। আমি তো তখন অনেক ছোট। আমার ভাইরা হয়তো সাইকেল করে আমায় রেডিও তে নামিয়ে দিত, রিহার্সেল শেষ হলে আবার সাইকেল করে নিয়ে আসত। আমার মা কোনোদিন রেডিও, টেলিভিশন কোথাও আমাকে নিয়ে যায়নি বা যাবেনই না। বলত, তোমার কাজ তুমি করবে, সেখানে আমি কেন গিয়ে বসে থাকব। এই ধরনের ছিলেন উনি।

বার্তা২৪: কখনো সামাজিক কোনো বাধাই পেতেন না?
শিমূল ইউসুফ: না, না, না, আমরা যে পাড়ায় থাকতাম সে ছিল ঠাকুরপাড়া (বর্তমান সবুজবাগ)। কমলাপুর বৌদ্ধমন্দিরের ওই এরিয়াতে থাকতাম তো। সেখানে থাকতেন জব্বার খান, মুখ ও মুখোশ যিনি করেছিলেন, ওই ফ্যামিলি এরপর সাইফুদ্দীন মামাদের ফ্যামিলি, সাইফুদ্দীন আহমেদ তারপর গাজী মাযহারুল আনোয়ার, জহিরুল হক, পরিচালক ছিলেন চলচ্চিত্রের। আব্দুল আলীম থাকতেন আমাদের পাড়ায়। আমাদের পুরো পরিবেশটাই ছিল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের। আমরা অন্যভাবে বেড়েই উঠিনি। সংস্কৃতি যেমন সংগীত, নৃত্য ছাড়া কোনোদিন বাঁচা যায়, তা ভাবতেও পারিনি।

বার্তা২৪: আপনার কি মনে হয় আগের চেয়ে সমাজ এখন বেশি রক্ষণশীল?
শিমূল ইউসুফ: এখন তো মানুষ অনেক বেশি রক্ষণশীল। তোমাকে আমি বলি, এই পরিবর্তনটা আমি দেখছি ৯০-এর দশক থেকে। প্রথম প্রথম তখন দেখতাম একটা চাদর গায়ে জড়ানো কালচার। এরপর হাত অবধি ঢাকা চাদর, এরপর ওড়না প্যাঁচানো, এরপর হিজাব। দেখো, আমার মাও গায়ে চাদর জড়াতেন, কিন্তু স্বাভাবিক স্বতস্ফূর্ত এক সামাজিক অবস্থান থেকে। তবে বোরখা হিসেবে নয়। আমি সুফিয়া কামালের কাছে বড় হয়েছি। উনিও ঘোমটা দিতেন, কিন্তু ওই ধরনের কখনো কিছু দেখিনি। আমার কাছ থেকে দেখা তো মা আর সুফিয়া খালা। তারা দাপটের সাথে সমাজে প্রতিষ্ঠিত। সম্ভ্রম রক্ষা করেই চলতেন, কিন্তু রক্ষণশীলতা ছিল না তাতে। আমার মা তো আজীবন ঘোমটা দিতেন, সাদা শাড়ি লাল পাড় এক প্যাঁচ দিয়ে পরতে দেখেছি, কুঁচি দিয়েও পরেননি। আমার বাবা যতদিন বেঁচেও ছিলেন, এই রঙের বাইরে তাকে অন্য রঙের শাড়ি কখনো পরতে দেখিনি। বাবা মারা যাবার পরেও সাদা শাড়ি কালো পাড়। আমি মাকে দেখেছি সাধারণ বেশভূষায়, অথচ রক্ষণশীলতা সেখানে ছিল না।

বার্তা২৪: তারমানে সমাজ আগের চেয়ে বেশি রক্ষণশীল মানসিকতা ধারণ করছে, আবার সেই সাথে বাহ্যিক চাকচিক্যের চেহারাও তো বেড়েছে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
শিমূল ইউসুফ: আমাদের জীবনে বিলাসিতা করা, টাকা নষ্ট করা, এই করা ওই করার মূল্যবোধটাই ছিল না। শিক্ষা আর সুস্থ সংস্কৃতিচর্চার বাইরে আমরা বাহুল্য চাকচিক্যময় জগতই কাটাইনি। যা ছিল আমাদের শিল্পের ভেতরে থাকা, পড়াশোনার ভেতরে থাকা। কিন্তু এই প্রজন্মে সেই শিক্ষা আর শিল্পচর্চার বড়ই অভাব। তারা বেছে নিয়েছে চাকচিক্যময় বহিরাবরণকে। কিন্তু অন্তর্গত মূল শিক্ষা বা সুস্থ সংস্কৃতিচর্চায় তারা অধিকাংশই আর নাই। ফলে সুস্থ শিক্ষার অভাবেই তারা রক্ষণশীল হচ্ছে। ধর্ম মানুষকে ভীত করে দিচ্ছে। দেখো, এই যে ৯০ থেকে বদলানো শুরু হয়ে ২০১০ অবধি সমাজ আমূল পাল্টে গেল। যদি ধর্ম বা এই হিজাবই সমাজ পাল্টে দিত তাহলে কি সমাজে এত ধর্ষণ হতো? আমি তো বলব, বর্তমান সমাজ প্রবৃত্তির দাসে পরিণত।

বার্তা২৪: প্রবৃত্তির এই অধোগমনের পেছনে কিসের ভূমিকা থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
শিমূল ইউসুফ: আমি আসলে সঠিক কারণ বলতে পারব না। তবে ফেসবুক একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে বলে আমার মনে হয়। দেখো, আমাদের সময়ে আমরা বন্ধুর সাথেই রেডিও থেকে টেলিভিশনে যাচ্ছি, সেখান থেকে আরেক জায়গায়, কিন্তু আমাদের কাছে বন্ধু মানেই বন্ধু। ছেলে মেয়ে বন্ধু মানেই সাধারণ বন্ধুতাই ছিল। সেখানে কোনো অসভ্যতা ছিল না। আর এই যুগের প্রবৃত্তির সাথে আমাদের যুগের প্রবৃত্তি অনেক আলাদা ছিল। যারা সমাজের কিছু পরিবর্তনে বিশ্বাসী তারা এতটাই বেশি দেখাবার চেষ্টা করছে আবার অন্যদিকে কট্টরপন্থীরা তাদের ক্রমাগত হেয় করার চেষ্টায় আছে, কেমন যেন ডিভিশন হয়ে গেছে সোসাইটিতে। যা আমাদের যুগে ছিলই না। আমরা ছোটবেলায় তা পাইনি। আমাদের ছোট বেলায় আমরা সব উৎসবে সমানভাবে গিয়েছি। কখনো কাউকে আলাদা চোখেই দেখিনি। খুব সূক্ষ্মভাবে আমাদের এখন অসামাজিক করে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক নিয়ে দেখা যায় পরিবারের সবাই যার যার মতো ব্যস্ত। কে সামনে এলো, কে গেল কোনো খবর নাই। অথচ আগে পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ সামনে এলে মা শেখাতেন, আগে সালাম দাও। এরপর পানি নিয়ে যাওয়া। এরপর জলখাবারের ব্যবস্থা করা। না খেয়ে বাসা থেকে কেউ বের হতেই পারত না। এ তো আমাদের কালচারে ছিল। আগে দুপুরে কেউ এলে না খেয়ে কেউ যেতে পারত না। এখন তো কেউ বাসায় এলে, কতক্ষণে সে যাবে, তাকে সমাদর করা দূরে থাক, যাবার চিন্তা নিয়ে থাকা হয়। যা আমাদের কালচারে কখনো ছিল না। আমাদের পাড়াতেই তো আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ একসাথে থাকতাম। ওদের উৎসবে যেমন আমাদের যাওয়া হতো, আবার ঈদ হলে ওরা আসত আমাদের বাড়িতে সেমাই খেতে। এই কমিউনাল চিন্তাই নষ্ট হয়ে গেছে এখন। সবাই আইসোলেটেড।

বার্তা২৪: আপনার প্রথম অভিনীত নাটক কোনটি? আর আপনার নাটকে সবসময়ই নারী মূল অবস্থানে থাকে। আমি উল্লেখ করতে পারি ‘যৈবতী কইন্যার মন’ বা ‘বিনোদিনী’ নাটকের কথা। সাধারণত অধিকাংশ নাটক বা চলচ্চিত্রে দেখা যায় নারী কেবল পার্শ্বচরিত্র, কিন্তু আপনার অভিনীত নাটক তা থেকে ব্যতিক্রম। এটা কি আপনার ইচ্ছাপ্রসূত?
শিমূল ইউসুফ: আমার প্রথম অভিনীত নাটক ‘বিদায় মোনালিসা’, ঢাকা থিয়েটার থেকে আর শেষে করলাম ‘টেমপেস্ট’। আমার নাটকগুলোতে নারী প্রমিনেন্ট হবার পেছনে আমি পারফরমেন্সের কথাই বলব। কখনো পার্শ্বচরিত্র হলেও তাকে আমি এমনভাবে উপস্থাপন করি যে, নারী তখন পার্শ্ব অবস্থান নিয়ে থাকতে পারে না। দর্শক তাকে নিয়ে আলাদা করেই ভাবতে থাকে। আর ঢাকা থিয়েটারের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় যে, সেখানে অধিকাংশ নাটকই সেলিম আল দীনের। আর সেলিম আল দীন তো সেই লেখক, যিনি অসামান্য জিনিস নিয়ে অসামান্যভাবে তার বর্ননা করে গেছেন। কাজেই আমরা তৈরি হয়েছি ভিন্নভাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমি পারফরমেন্সের কথা আবারও বলব। আমরা যখন ‘হাতহদাই’ নাটকটা করলাম, তা ছিল পুরো নোয়াখালির ভাষায়। আমি করতাম ‘ছুকড়ি’ নামের চরিত্র, যা অনেক বড় ছিল আর প্রচুর প্যাচাল ছিল। আমি তার পরিধি কমিয়ে নিয়ে এলাম। আর সেলিম আল দীন স্যারের এক বিশ্বাসের জায়গা ছিল যে, তার নাটক এতে নষ্ট হবে না। ফলে আমি চরিত্রটিকে কমিয়ে মাত্র দুইটি সিকোয়েন্সে এনেছিলাম। আমি ঠিকই করে নিয়েছিলাম যে, আমাকে এভয়েড করতে পারবে না দর্শক। আর তা ঠিকই দর্শকযোগ্যতা পেল। ফলে একটা নাটকে একজন নারী যেই চরিত্রই করে না কেন, তার পরিধি যত ছোটই হোক না কেন, তা যদি সে শক্তিমত্তার সাথে উপস্থাপন করতে পারে, তখন অবশ্যই তা মূল অবস্থানে আসতে বাধ্য। এই চ্যালেঞ্জগুলো আসলে নিতে হয় মেয়েদের। আমাদের জন্য পথ কেউ তৈরি করে দেয় না।

বার্তা২৪: থিয়েটারে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নারীর উপস্থিতি চোখে পড়ে, কিন্তু দেখা যায় তারা অধিকাংশই পারফরম্যান্স বেইজড অর্থাৎ অন স্টেইজে তারা যতটা সংখ্যায় ভারী ততটা তারা ব্যাক স্টেজে, যেমন নাট্যকার, সেট ডিজাইনিং, লাইটিং, মিউজিক কম্পোজিশনে না—এর কারণ কী?
শিমূল ইউসুফ: হুম নির্দেশনা ও রাইটার হিসেবে নারী খুবই কম। আসলে নারীরা এখনো এই জায়গাতে দক্ষতা সৃষ্টি করতে পারেনি। সবকিছুই আসলে চর্চার ব্যাপার। নারীরা মেইন স্ট্রিমে এখনো তেমনভাবে আসতে পারেনি। মেয়েদের আসলে এই সেক্টরে প্রচুর কাজ আছে। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন মেয়েদের এই অভাব পূরণ করতে পারত। কিন্তু তারা কখনো এগিয়ে আসেনি। মেয়েদের জন্য আলাদা প্লাটফর্ম করে তাদের নির্দেশনা, লেখালেখি, ডিজাইনিংয়ে উৎসাহ সৃষ্টি করেনি, দক্ষতা বাড়াতে সহযোগিতা করেনি। ফলে মেয়েদের আগ্রহ অন স্টেজে যত বেশি, ব্যাক স্টেজে ততটা তৈরি হয়নি।

বার্তা২৪: নারী আর পুরুষের সমাজে যে বৈষম্য এখনো আছে তা কেন আছে?
শিমূল ইউসুফ: আমি জোরালোভাবে বলতে পারি, থিয়েটারে নারী পুরুষের বৈষম্য তেমনভাবে পাইনি। যেখানেই গেছি। কিন্তু যদি জেনারেলি দেখি, সেখানে নারী পুরুষের বৈষম্য বিশাল। আগে কোনো পুরুষ যদি পুশ করত, ঘুরেই পিটাতাম। আর রাস্তায় তখন দোকানপাট থেকে লোকেরা এসে সহযোগিতা করত। যা এখন করে না। বরং মনে করে, মেয়েটারই সমস্যা।

বার্তা২৪: এই মানসিকতা পাল্টে কেন গেল?
শিমূল ইউসুফ: অবদমন। পুরুষদের জন্য কোনো রেড এরিয়া নেই। আমাদের সময় তো ছিল। এখন সব এরিয়া থেকে তুলে দৌলতদিয়াই কেবল আছে। এখন মনে করো, একজন পুরুষ মেসে থাকে, তার বউ বাচ্চা সব বাড়িতে থাকে। তার যে কোনো সময় প্রয়োজনে সে কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে। তখন সে সামনে যাকে পাবে তাকেই তো বিরক্ত করবে। বাড়ির কাজের লোক থেকে শুরু করে রাস্তা। তাই না?

বার্তা২৪: মানে, মেয়েদের এখনকার হ্যারাসমেন্টের পেছনে এই ইস্যুটি মুখ্য?
শিমূল ইউসুফ: হ্যাঁ, আমি একে এক কারণ মনে করি। যদি কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকত, তাহলে তারা জেনারেলি এই হ্যারাসগুলো করত না। ধর্ষণ করত না। আর মেয়েরা মান সম্মানের ভয়ে অনেকসময় চুপ করে মেনে নিতে বাধ্য হয়। এখন শ্রেণিভেদ নাই, ভারসাম্য নাই সমাজে। যে কোনো পুরুষ যে কোনো নারীর প্রতি সহিংস হয়ে উঠছে। যা আসলে ভয়ের। আর আরেকটা কথা, আমি কিন্তু জীবনে প্রচুর মার মেরেছি। পুরুষের অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি একদম সবল হয়ে। একবার তো এক পুলিশও মার খেয়েছিল আমার কাছে। দুইঘণ্টার জন্য ওর ব্যাচ আমি নিয়ে এসেছিলাম। আর আমি একাই লড়েছি তখন। আমি মনে করি, আমি যদি এই সমাজেও থাকতাম তবু আমি এই মনোবল রেখে চলতাম। আমি সারভাইভ করেছি এইভাবে। ভয় দেখাতে হবে। আমি এখনো এই শক্তি নিয়ে চলি। আমার ভেতরে যে শক্তি আছে নারীশক্তি, তা নিয়ে চলব। পুতুপুতু করে চলব না। এজন্য মনে করি, মেয়েদের সাহসও তাদের হ্যারাসমেন্ট কমাতে পারে। তবে আমাদের সমাজে মেয়েদের সাহস খুবই কম। এখন যেমন, মেয়েরা চন্দ্রিমা উদ্যানে হিজাব পরে বসেই প্রেম করে। একদিকে ধার্মিক বেশ অন্যদিকে ভিন্ন চেহারা নিয়ে থাকে। আমি তো বলব, মেয়েরা তাদের মেরুদণ্ডই এখন আর রাখতে শেখেনি। ফলে সেও এক কারণ। তবে মায়ের বলিষ্ঠতা একজন মেয়ের মানসিক গঠনের জন্য বিশাল প্রয়োজনীয়। আমি আমার মেয়েকেও এই প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছি। আমার মেয়ে জানে তার মা প্রতিবাদী, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা, ফলে সে সেই মনোবল নিয়ে এই যুগেও ব্যক্তিত্ববান হয়েই কিন্তু চলতে পারছে। এতে অনেক সময় ওর হাতের অনেক কাজ ছুটে যায়, কিন্তু তবু সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার অবস্থান পাল্টায় না।

বার্তা২৪: মুক্তিযুদ্ধে আপনার ভাই শহীদ হয়েছেন, আপনার স্বামী নাসিরউদ্দীন ইউসুফ একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমরা জানি। আমার প্রশ্ন হলো, মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধা পরিচয়ে পুরুষদের পরিচিতি যতটা আমাদের সামনে ফোকাসড হচ্ছে, নারীদের অবস্থানকে তেমনভাবে আমরা দেখি না। তারামন বিবি, সেতারা বেগম, ফোরকান বেগম বা খুব বাড়িয়ে বললে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের কথা ‘বীরাঙ্গনা’ হিসেবে যতটা আসে ততটা মুক্তিযুদ্ধে পরোক্ষ অবস্থানে থাকা নারীরা কখনো আলোচনায় আসেন না। অথচ যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে গৃহী সদস্য হিসেবে নারীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু তাদের কোনো মূল্যায়ন নাই।
শিমূল ইউসুফ: হ্যাঁ, আমার মা প্রতিদিন তিনচারজনের ভাত আর ডাল রান্না করে রাখত। যাতে মুক্তিযোদ্ধারা যে কোনো সময়ে এলেই খাওয়া পায়। পরের দিকে আমরা বাজারেও যেতে পারতাম না। তখন খিচুড়ি রান্না করে রাখত। কিন্তু নারীর এই ভূমিকাটা আজীবন অপ্রকাশিত থেকেই গেছে।

বার্তা২৪: মেয়েদের জন্য আপনার শেষ কথা কী?
শিমূল ইউসুফ: মেয়েদের যুগ এখন কোচিং আর বাসার বাইরে তেমন নেই। তাদের সংগঠন করবার স্পেসটাও নাই। আগে পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি থাকত, তখন মায়ের জন্য প্রতি সপ্তাহে বই নিয়ে আসতাম। এখন সংগঠন নাই, কোথাও খেলার মাঠ নাই, পড়ার পরিবেশ নেই। ফলে তাদের জীবন অনেক বেশি জটিল। তবু আমি বলব, শিক্ষা অর্জনের কথা । শিক্ষা আর শিল্পচর্চার বিকল্প পথ নাই। মেয়েদের সেই জায়গাটুকু নিয়ে ভাববার প্রয়োজন।

   

নারীরাই সমাজের স্থপতি



ফাহমিদা নবী
নারীরাই সমাজের স্থপতি

নারীরাই সমাজের স্থপতি

  • Font increase
  • Font Decrease

নারীর জাগরণে অনেক পিছিয়ে আছি বললে ভুল হবে। যদি বলি, তবে প্রযুক্তির যুগে এসে সে কথা বলার কোন মানে হয় না। নারীও তাঁর অধিকারে এগিয়ে যাচ্ছে সাহস এবং শক্তিশালী মানসিকতার বদৌলতে। কেন পিছিয়ে থাকবে?

১৯০৮ সালের শ্রম আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি। বাংলাদেশে বেগম রোকেয়া আমাদের নারীদের জাগরণের জন্য যখন পথ দেখালেন তখন থেকে অদ্যাবধি অবস্থানকে শক্ত এবং শক্তিশালী করবার দুর্নিবার পথ চলা কিন্তু থেমে নেই। তবুও আমরা আজো পিছিয়ে কেন? যে জাতি নারীদের সম্মান করতে পারে না, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব।

নারীরাই সমাজের প্রকৃত স্থপতি। নারীকে চিন্তা চেতনার শর্তে জীবনযাপন করার জন্য যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। আমাদের দেশে আত্মসচেতনতার অভাব রয়েছে বলেই নারীদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে; সবসময় এবং বারংবার। নারী সমাজকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। এ শক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজসেবার সুযোগ করে দিতে হবে। নারীদের মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে। আর তা করতে হলে সমাজ সম্পর্কে তাঁর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন।

নারী দিবস মানেই আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া সৃষ্টিতে-কৃষ্টিতে সমতায় সেরা নারী যেন কোনভাবেই ভেঙে না পড়ে।

আমার তো মনে হয় নারী ফিনিক্স পাখি! সে যেভাবে বারবার পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাড়ায়। নিজের কিশোরবেলা থেকে শুরু করে সংসার, বিয়ে, সন্তান থেকে পরিবার পুরো সমাজ সংসারে তার চলাচল ভীষণ ইতিবাচক। তাঁর তো সময় নেই নেতিবাচকতায় চোখ রাখবার! থাকুক যতই বাধা তার ধৈর্যের কমতি নাই। হাসিমুখে সব কিছুতে তাঁর অংশগ্রহণ এক বিস্ময়।

সত্যি বলতে কী নারী মানেই “মা”। তাই নারী সব কিছুরই উদাহরণ। মাকে কখনো কঠিন হতে হয়, কখনো কোমল, কখনো বা সংসার কৌশলী, বুদ্ধিমত্তায় পারদর্শী।

নারীদের বলতে চাই জীবনে সংগ্রাম থাকবেই কিন্তু পিছিয়ে পড়া যাবে না। এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে কথা বলতে, না বলতে, সাহসে পথ চলতে শিখতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে।

আমাদের দেশে নারীদের অংশগ্রহণ এখন সর্বত্র। শুধু সাহস আর মানবিকতা পথটাকে আরেকটু চিনে চলতে হবে। কারণ অমানবিকতা আনাচেকানাচে চিরকালই দেখি।

আরেকটা বিষয়কে প্রাধান্য দিতেই হবে যা মানবিক আচরণ। কিছু সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যদি সবাই এক সমতায় তবে এখনো পিতার সম্পত্তি বণ্টনে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না কেন? বিশাল সমস্যা এখানেই রয়ে গ্যাছে। এই সমঅধিকারের প্রতিকার যতদিন না হবে বৈষম্যের ফাঁকটা রয়েই যাবে। এবং মেয়েদের উপর অত্যাচার কখনোই কমবে না।

পৃথিবীর কোন দেশে এই বৈষম্যতা নেই বলেই নারীরা অনেক সাহসে এবং সমতার অংশগ্রহণের নিশ্চিত থাকতে পারে।

আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। সমবণ্টন নিশ্চিত হোক। নারীর এগিয়ে যাওয়া আর রুদ্ধ হবে না।

আমি সব সময় মুগ্ধ হই আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে। কী প্রাণবন্ত হয়ে নারীদের অগ্রগতিতে তিনি কতটা ভূমিকা রাখছেন! প্রতি মুহূর্তে তিনি চান মেয়েরা এগিয়ে আসুক সাহসী হোক। তিনি এ ব্যাপারেও কাজ করছেন শুনেছি। আশা করি অবশ্যই পিতার সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ের সমঅধিকার হবে। কাজেকর্মে, শিক্ষায় সমাজ সংসার জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখুক সমতায়। সেজন্য সুযোগ সুবিধায় নারীদের সম্মানকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?

সকল নারীদের জন্য শুভ কামনা; আত্মবিশ্বাসে পথ চলা সফল হোক।

ফাহমিদা নবী: সংগীত শিল্পী

;

‘নারীবাদী’ শব্দের উৎপত্তি এবং এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক



নারীশক্তি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

‘নারীবাদী কিনা?’ প্রশ্নে পুরুষ কিংবা নারী- অনেককেই অপ্রস্তুত হতে দেখা যায়। কারো উত্তরে থাকে দ্বিধা। হাস্যকর হলেও সত্য, কেউ কেউ উত্তর দেয়,‘আমি নারীবাদী নই, তবে আমি সমতায় বিশ্বাসী।’ সমাজে অধিকাংশ মানুষের কাছে ‘নারীবাদী’ শব্দটার অর্থ সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। বর্তমান সমাজে মানুষ নারীদের সমান অধিকারের দাবীর কথা শুনে হাসে। কিছু মানুষের মতে, নারীরা বরং বেশিই পাচ্ছে। বর্তমান সমাজচিত্র দেখে অনেকে মনে করেন, নারীবাদের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে বরফখণ্ড ভাসতে দেখে, পানির নিচে তার আকার বোঝা যায় না। নারীবাদী  শব্দের সূচনা যখন হয়েছিল, তখন সমাজের চিত্র একদম ভিন্ন ছিল।

নারীবাদ মানেই পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের মানসিকতা। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে-মানুষ হিসেবে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার প্রাপ্য, সেই নারীবাদী। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সময়ের অনেক নারীবাদীদের মধ্যে পুরুষ বিদ্বেষী ভাব ফুটে ওটে। এই আচরণ কোনোভাবেই নারীবাদী হওয়ার প্রমাণ নয়!    

উনবিংশ শতাব্দীতে প্রথমবার ফেমিনিজম বা নারীবাদ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিল। ফ্রান্সের দার্শনিক চার্লস ফুরিয়ে ১৮৩৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শব্দটির ব্যবহার শুরু করেন। এরপর ১৮৭২ সালে  ফ্রান্স এবং ১৮৯০ সালে নেদারল্যান্ডসে ফেমিনিজম এবং ফেমিনিস্ট শব্দ দু’টির ব্যবহার হয়। পরবর্তীতে যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়।

বিংশ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা ভোটের অধিকার আদায়ে এবং নারী-পুরুষ সমান ক্ষমতায়নের আন্দোলন শুরু করে। এই  আন্দোলন হয়েছিল কারণ, কর্মক্ষেত্রে সম্মান এবং আয়ের দিকে নারীরা ছিল পুরুষদের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে।  সমান অধিকার ছিল না বলেই, তা ছিনিয়ে নিতে বার বার আন্দোলনে নামতে হয়েছে নারীদের ।

স্রষ্টা পৃথিবীতে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ-কে পাঠিয়েছেন। অথচ বিবেক-বুদ্ধিবান মানব সমাজেই একপক্ষকে অপর পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। ব্যাপারটা কেমন বেখাপ্পা নয় কি?

একটা সময় নারীদের নিজ ইচ্ছায় ঘর থেকে বের হওয়ার অধিকারও ছিল না। শিক্ষাগ্রহণ বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ছিল স্বপ্নাতীত। ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময় স্বামীর মৃত্যু হলে, জীবিত নারীদের তাদের সাথে পুড়িয়ে মারা হতো। নারীর ইচ্ছা না থাকলেও পরিবারের সকলে মিলে তাকে এই নিয়ম মানতে বাধ্য করতো। সম্রাট আকবর তার রাজত্বকালে, নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এছাড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চালু হয়ে বিধবা বিবাহ আইন। ১৮৫৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা নারীদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার ছেলেকে এক বিধবা কন্যার সাথে বিয়ে দিয়ে।

তৎৎকালীন এই অসমতার চিত্র, ইউরোপের অনেক লেখকের কলমে ফুটে উঠেছিল প্রাচ্যের বর্বরতা হিসেবে। তারা নারীদের প্রতি আচরণের কারণে, প্রাচ্যকে অনুন্নত বিবেচনা করতো। অথচ পশ্চিমের আচরণ যে নারীদের প্রতি খুব সম্মানজনক ছিল, নাও কিন্তু নয়!

ইংল্যান্ডের বাজারে একসময় বউ বিক্রি হতো। নারীদের লাল লিপস্টিক দিয়ে সাজ ছিল নিষিদ্ধ। কেবল দেহ ব্যবসায়ী নারীরাই লাল লিপস্টিকের ব্যবহার স্বাধীনভাবে করতে পারতেন। ১৮০০ সালের দিকে ঝগড়া করার অপরাধে এক ইউরোপীয়ান তার স্ত্রীর মুখে বেড়ি পড়িয়ে রাস্তায় হাঁটিয়েছিলেন। এমনকি নারী আন্দোলন এবং জাগরণের শুরুই হয়েছিল খোদ পশ্চিমের দেশগুলোতেই।  

সব মানুষেই নিজের জীবন স্বাধীনভাবে কাটাতে চায়। কেউই  পরাধীন থাকতে চায়না বিধায়, কালের বিবর্তনে বিশ্বজুড়ে বার বার বিদ্রোহ এবং আন্দোলন হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েও লড়ে গেছে স্বাধীনতার জন্য। বর্তমান সমাজ নারীর প্রতি যথেষ্ট নমনীয় হলেও, শুরু থেকে এমনটা ছিল না। সেই কারণেই নারীরা আন্দোলন করে অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে।    

;

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;