বাংলার মুসলিম মেয়েদের কণ্ঠস্বর   



সুমন ভট্টাচার্য
কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সম্পাদক ও প্রচ্ছদ

কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সম্পাদক ও প্রচ্ছদ

  • Font increase
  • Font Decrease

'উসনে বাত কি কুছ অ্যায়সে ঢং সে

স্বপ্নে দে গ্যায়ে ওহ হাজারো রং কে'

'পহেলা নেশা' নামে যে গান তার এই লাইনগুলো, আজ থেকে তিরিশ বছর আগের সুপারহিট ছবি 'জো জিতা ওহি সিকান্দর' ছবির| আমির খান, আয়েষা জুলেখা এবং পুজা বেদির উপর চিত্রায়িত গানটির কোরিওগ্রাফ করেছিলেন ফারহা খান| পরবর্তী কালে বলিউডের বহু ব্লকবাস্টার ছবির পরিচালক ফারহা খান প্রথম প্রচারের আলোয় এসেছিলেন ওই অসামান্য রোম্যান্টিক গানের কোরিওগ্রাফি করে| কিন্তু আসলে গানের পুরো আকর্ষণটাই ছিল অন্য কারণে, চিত্রায়িত হয়েছিল স্লো মোশনে, মায়াবী আবহে, স্বপ্নের মতো।

আমি যে দুটো লাইন দিয়ে এই লেখাটা শুরু করেছি, সেটা আসে নায়িকার গলায়, বা যখন নায়িকার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গানটি পর্দায় আসে| বিশিষ্ট উর্দু কবি মজরুহ সুলতানপুরীর লেখা লাইনগুলো এক ভীরু, নিজেকে প্রকাশ করতে না পারা নারীর কথা|

তিরিশ বছর বাদে মুসলিম মহিলাদের লেখার সংকলন 'কণ্ঠস্বর'-এর ঈদ সংখ্যা নিয়ে লিখতে বসে আমার ওই দুটি লাইনই মাথায় এল| এবং মনে পড়ল স্লো মোশনে কি ভাবে অনুভূতির প্রকাশ দেখানো হয়েছিল| 'কণ্ঠস্বর'-এর পাতা উল্টে গেলেও আপনার একই অনুভূতি হতে পারে, একটু ধীর লয়ে কারা যেন হৃদয়ের ঝাঁপি খুলে ধরছে|

বইয়ের একেবারে শেষ থেকে, শালিমা হালদার, আনজুমান আরা কিংবা কাজী লাবণ্যর গল্পগুলো পড়তে শুরু করলেই এই অনুভূতিটা তীব্র হতে থাকে| চার বছরে পা দেওয়া 'কন্ঠস্বর'-এর এবারের সংকলনে দুই বাংলার প্রায় ৮০ জন মুসলিম মহিলা লিখেছেন, তার মধ্যে বাংলাদেশেরও অনেকে আছেন| যেমন আমি যে গল্পলেখিকাদের তালিকা দিয়ে শুরু করলাম, তার মধ্যে বড় অংশই বাংলাদেশের| ময়মনসিংহের আনজুমান আরা, রংপুরের কাজী লাবণ্য, ঢাকার রোকেয়া ইসলাম, মাদারীপুরে তাহমিনা শিল্পী বা ঢাকারই নুর কামরুন নাহার|

পশ্চিম বাংলার রেজিনা খাতুন, লায়লা নাজনীন, নাদিয়া হোসেন,শাহমিদা সুলতানা, কাজী আমরীণ কবীর কিংবা সাবিয়া খাতুনের পাশাপাশি এই বাংলাদেশের লেখিকাদের লেখাও আস্তে আস্তেই আমাদের মুসলিম মেয়েদের মন এবং মননের সঙ্গে পরিচয় করায়| আমরা বুঝতে থাকি অনেক লেখাতেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বা উপলব্ধির ছাপটা কতটা প্রগাঢ়| শাহমিদা সুলতানার গল্পের নায়িকার মতোই সেই উপলব্ধিও আসলে ঢাকার বুড়িগঙ্গা ছুঁয়ে কলকাতার গঙ্গার পাড়ে গিয়ে জল স্পর্শ করার মতো, এক অবশ ভালোলাগায় মন ভরে যায়।

যে সংকলনে ৮০ জনের লেখা রয়েছে, সেই সংকলন সম্পর্কে কিছু লিখতে গেলে আলাদা করে প্রতিটি লেখা সম্পর্কে উল্লেখ করা খুব কঠিন কাজ| বিশেষ করে যেহেতু গল্প, কবিতা বা নিবন্ধের পাশাপাশি স্মৃতিকথা, গবেষণার দলিলও 'কন্ঠস্বর'-এর এই সংকলনে জায়গা করে নিয়েছে| এবং সব লেখাই আমার কাছে এক অর্থে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মপ্রকাশ এর মতো, একটা নবীন, সতেজ অনুভূতির কথা বলে| জীবনকে অন্য আঙ্গিকে দেখার সোচ্চার ঘোষণা| সেটা ঢাকার শিক্ষিকা সাহিন আরা সুলতানার কাঙ্খিত পুরুষকে চিঠি লেখাতেই হোক বা সেই শহরেরই সামাজিক আন্দোলনের নেত্রী রোখসানা ফেরদৌস রাখীর অতিমারির সময়ে দাঁড়িয়ে উৎসবকে দেখার চেষ্টা, সবেতেই স্পষ্ট|

আমি যদি পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে 'কন্ঠস্বর' নামে একটি পত্রিকার চারবছর ধরে শুধু মুসলিম মহিলাদের লেখা নিয়ে ঈদ সংকলন প্রকাশের ধারাবাহিকতাকে বিচার করি, তাহলে সেটাকে মাইলফলকই বলব| এবং সব ব্যক্তিগত ভাল লাগা না লাগাকে সরিয়ে রেখেই বলব| কারণ যে সমাজে একটা দলিত সাহিত্য একাডেমি তৈরি করলে এবং সেই একাডেমির শীর্ষে মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে বসালে হুলুস্থুলু লেগে যায়, সাহিত্য জগতের ব্রাহ্মণরা সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো খাপ পঞ্চায়েত বসিয়ে দেন, সেই সমাজ এবং দেশে চারবছর ধরে শুধু মুসলিম মহিলাদের লেখাই ছাপব বলাটা সাহসের পরিচয়| সেটাই আদতে মনুবাদী সমাজের চোখে চোখ রেখে কথা বলার চেষ্টা|

এবং মনোরঞ্জন ব্যাপারীর যা সমস্যা, 'কন্ঠস্বর'-এর ঈদ সংখ্যারও সেই প্রতিবন্ধকতা| কলকাতার সাহিত্য সমাজের কেষ্টবিষ্টুরা, যাঁরা নিজেদের নিয়ে বেশি আপ্লুত, তাঁরা যেমন দলিত সাহিত্য নিয়ে মাথা ঘামান না, তেমনই মুসলিম মহিলাদের লেখালেখি নিয়েও উদাসীন|

কলকাতা শহরের এই সেলিব্রিটি ম্যানেজমেন্ট-এর বাইরে পা রাখলে, কোন মুসলিম হিরোইনের ব্যক্তিগত জীবনের কেচ্ছাকে অতিক্রম করে জীবনের হাজারো হাসি-কান্নার প্রিজমে 'কন্ঠস্বর'-এর লেখিকাদের সৃজনকে বিচার করলে অবাক হতে হয়| মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান কিংবা পশ্চিম মেদিনীপুরের এই লেখিকাদের লেখাই সমাজের আয়না হতে পারে, রাজনীতি বোঝার মানদন্ড হতে পারে| কিন্তু যেহেতু শহুরে এলিট মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে চেনে না, কন্ঠস্বর এর মুসলিম মহিলা লেখিকারা কি বলতে চাইছেন,তা জানেন না, তাই নির্বাচনের ফলাফলই হোক কিংবা কনজ্যুমারের প্রেফারেন্স বদলে যাওয়া তাঁদেরকে একেবারে রানআউট করে দেয়|

জো জিতা ওহি সিকান্দর, পপুলার কালচার-এর একটা ব্লকবাস্টার সিনেমা এবং সাধারণের পছন্দের একটা গান দিয়ে শুরু করেছিলাম, সেটা দিয়েই শেষ করি| স্লো মোশনে ছবির নায়িকাকে দিয়ে যা বলানো হয়েছিল, সেটাই সিনেমার শেষে গিয়ে জেতে| সফল হয়| সমস্ত চাকচিক্যকে পিছনে ফেলে নিজের পতাকাকে গেঁথে দেয়| হয়তো ধীরে, হয়তো ভীরু স্বরে মুসলিম মহিলারা যে কথাগুলো বলছেন, প্রকাশ করতে চাইছেন,সেইগুলো যে কাল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে না, তা কে জানে?

কণ্ঠস্বর

প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক: সৈয়দ তানভীর নাসরীন

সম্পাদক: সৈয়দ কীর্তিকা তাবাসসুম

প্রচ্ছদ: কৌশিক মিত্র

প্রকাশকাল: ২০২১

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;

ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন

ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানি তরুণী মাহ্সা আমিনি’র মৃত্যুর ঘটনায় উপযুক্ত বিচার এবং দেশটিতে চলমান নারী নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকরা।

রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। একই সাথে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ ওই দেশে বিভিন্ন শহর ও বিশ্বব্যাপী চলমান আন্দোলনের সাথে তারা একাত্মতা পোষণ করেন।

ইরানে আন্দোলনরত নারী সমাজ ও জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করে সংগঠনের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘সঠিক উপায়ে হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানি তরুণী মাহ্সা আমিনীকে সম্প্রতি গ্রেফতার ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পুরো ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে অজুহাতে ইরানে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা এরকম নৃশংস জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, শত শত নারী কারাগারে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। ইরানের নারীরা ইরানের জনগণ এই জুলুম নির্যাতনের অবসান চায়। বাংলাদেশেও একটি গোষ্ঠী ধর্মের নামে মেয়েদের ওপর বিরাট বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এই বিষয়গুলোকে এভাবেই শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে।’

মানববন্ধনে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের দপ্তর সম্পাদক দিলরুবা খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহনাজ পারভীন এলিস, সদস্য আফরোজা সরকারসহ নারী সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।

এসময় তারা পোশাকের জন্য নারীর ওপর খবরদাবি নারীর মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মানববন্ধন থেকে নারী ওপর এ ধরনের খবরদারি ও জুলুম-নির্যাতন বন্ধসহ মাসা আমিনী হত্যা ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়।

;

'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'

'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'

  • Font increase
  • Font Decrease

"প্রথম বা আগের পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবেন না মুসলমান পুরুষরা।"

বুধবার (১২ অক্টোবর) এ রায় জানিয়ে দিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট। যুগান্তকারী রায়ের প্রসঙ্গে পবিত্র কোরানেরও উল্লেখ করেছে হাই কোর্ট।

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে জানায়, "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ।" এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি প্রকাশ কেশরওয়ানি এবং রাজেন্দ্র কুমার তাঁদের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, “যদি কোনও মুসলমান পুরুষ বুঝতে পারেন যে, তিনি আগের পক্ষের স্ত্রী সন্তানদের দায়িত্ব নিতে অক্ষম, তবে তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ করার ভাবনা থেকে সরে আসা উচিত।"

অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ধর্মীয় দিক থেকে উত্তেজক এই রায়ের প্রসঙ্গে আদালতের সাফ পর্যবেক্ষণ হলো, "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না।"

কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশ নিবাসী আজিজুর রহমান প্রথম পক্ষের স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে প্রদত্ত রায়ে আদালত জানায়, "প্রথম পক্ষের স্ত্রীর অজান্তেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ওই ব্যক্তি। তাই ওই ব্যক্তি প্রথম স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে কিংবা প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করতে পারেন না।"

ভারতের বিচারালয় আগেও তিন তালাক, খোরপোশ ও হিজাব সম্পর্কে বিভিন্ন রায় দিয়েছে, যা নিয়ে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতণ্ডা ও বাদানুবাদ হয়েছে। তবে দ্বিতীয় বিয়ে প্রসঙ্গে দেওয়া আদালতের রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কোনও প্রতিক্রিয়া জানায় নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায়ের এক অংশে "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না" মর্মে উল্লেখ করায় তা কেবল মাত্র মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করে দেওয়া হয়েছে বলা যায় না। তদুপরি, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ" উল্লেখ করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। সবকিছু মিলিয়ে নারীর অধিকার ও আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো সামনে চলে আসায় রায়ের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আবেগের চেয়ে নারীর ক্ষমতায়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোই প্রাধান্য পেয়েছে।

;