থাইল্যান্ডের খাও খিও ওপেন জু'তে এক বেলা



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাংকক আর পাতায়ার মাঝামাঝি চনবুড়ির আমফুর শ্রী রাচা শহর। তাই পাতায়া থেকে ব্যাংককে ফেরার সময়ই এখানকার 'খাও খিও ওপেন জু' ঘুরে আসতে পারেন পর্যটকরা।

থাইল্যান্ডে ঘুরতে আসা বাংলাদেশি ও ভারতীয় পর্যটকদের পছন্দের জায়গা ব্যাংককের সাফারি পার্ক। সেখানে ডলফিন, হাতি, ওরাং ওটাং, শুশুক, কাউবয়, সাই-ফাই এমন শোগুলো শিশুরা খুবই উপভোগ করে। তবে খরচ কিছুটা বেশি এবং প্রায় পুরো একদিন সময় ব্যয় করতে হয় সেখানে। এছাড়াও বন্য প্রাণিকে প্রদর্শনের স্থানটিও অনেক বেশি কৃত্রিম।

তাই কোলাহল এড়িয়ে যারা মুক্ত চিড়িয়াখানা বা ওপেন জু ঘুরতে চান, তাদের জন্য উপযুক্ত খাও খিও।

মুক্তভাবে ঘুরে বেরাচ্ছে হরিণের পাল

গত রোববার (২০ আগস্ট) আমরা গিয়েছিলাম খাও খিও ওপেন জু দেখতে। বিদেশিদের জন্য ২২০ বাথে প্রবেশের টিকেট মেলে। সাফারি পার্কের মতো হট্টগোল নেই এখানে। আর পরিবেশটাও অনেকটা শান্ত। চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই আমাদের স্বাগত জানালো হরিণের দল। একেবারেই মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করছে এই হরিণেরা। সব বয়সের মানুষেরা উপভোগ করছেন তাদের সান্নিধ্য। ২০ বাথে দীর্ঘাকার ঘাস কিনে হরিণদের গায়ে হাত বুলিয়ে খাওয়ানো যায়। শিশুদের জন্য হরিণের সঙ্গে খেলা করাটা খুবই উপভোগ্য। শিশুরা হয়তো এতো বেশি খাওয়াচ্ছিল যে হরিণের পেটে আর জায়গা নেই। অবশ্য শিশুদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতে কোন কার্পণ্য নেই ওদের।

এখানে সকাল ১০টায় পেঙ্গুইন প্যারেড দেখতে যাই আমরা। সারি বেঁধে পেঙ্গুইনরা এসে জলাশয়ের ধারে দাঁড়ায়। এরপর ফ্যাশনোর মতো করে আবার হাঁটা দেয়। পেঙ্গুইনদের খেলা উপভোগ করে সকলে। একসঙ্গে প্রায় ১০০ জন এই প্যারেড উপভোগ করতে পারেন। এরপর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব। মাত্র ৫০ বাথে ছোট মাছ কিনে খাওয়ানো যায় পেঙ্গুইনদের। আমাদের হাতের মাছগুলো ছিনিয়ে নিতে পেছন পেছন হাঁটা দেয়। এটা সত্যিই অপূর্ব দৃশ্য৷ এরপর পেঙ্গুইনদের ঝাঁকে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগতো পাওয়া যাবেই।

থাইল্যান্ডের খাও খিও ওপেন জু

খাও খিও ওপেন জু শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়। বরং মানুষকে বন্য প্রাণির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া, বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্য কাজ করে। তাই চিড়িয়াখানার মূল ৪টি বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা হয়েছে, জ্ঞান, বন্য প্রাণি সংরক্ষণ, প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও বিনোদন।

এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় ফ্লেমিঙ্গো পাখির প্যারেড দেখতে যাই আমরা। দুধ রাঙ্গা শরীরে ওপর আবছা লাল ডানার পাখিগুলোকে প্রথমে বক ভেবে ভুল করি আমি। তবে সৌন্দর্যে এরা বককে তো ছাড়িয়ে গেছে। সবুজ ঘাসের ওপর ফ্লেমিঙ্গোর প্যারেড শিশুরা উপভোগ করে। এরপর সেখানে ফ্লেমিঙ্গোদের লাইনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার আকর্ষণীয় পর্ব।

পেঙ্গুইনের প্যারেড শো

প্রায় ২ হাজার একরের ওপর স্থাপিত এই চিড়িয়াখানা দেখতে হলে গলফ কার্ট ভাড়া নেওয়া যায়। ২০০ বাথে ৪ ঘণ্টার জন্য গলফ কার্ট ভাড়া নিয়ে নিজেরাই চালানো শুরু করলাম। না হলে পা ব্যথা হয়ে যাবে। ইউরোপিয়ান পর্যটকদের বড় কয়েকটি দল ট্রেন কার্ট নিয়ে ঘুরছিল। এক একটা কার্টে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন যাত্রী বসতে পারেন।

সকাল ১১টায় রয়েছে এলিফ্যান্ট শাওয়ার শো। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে বিশালকার কাঁচের একুরিয়ামে হাতির গোসল আর খেলা উপভোগ করা যায়। এসময় উপস্থাপিকা জানান, এটাই হাতির স্বাভাবিক গোসল প্রক্রিয়া। এর জন্য হাতিকে কোন জোরপূর্বক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে এই কথার পুরোটা বিশ্বাস হয়নি আমাদের।

আমরা মাটির নিচ থেকে উপভোগ করলাম হাতির প্রদর্শনী। পুকুরের সমান গভীর আর বিস্তৃত একুরিয়ামে যখন হাতি নামলো এবং পরে এপাশ ওপাশ করে সাঁতারনো শুরু করলো, শিশুরা চিৎকার করে আনন্দ প্রকাশ করলো।

এখানে হাতির সঙ্গে ছবি তোলা এবং পরে হাতিদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। যা সব বয়সীরা উপভোগ করছিল।

বিশালকার কাঁচের একুরিয়ামে হাতির গোসল

সাফারির সঙ্গে এই প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানার বড় একটি পার্থক্য হচ্ছে এখানে অ্যালকোহল পান নিষিদ্ধ এবং উচ্চ স্বরের গান বাজনা নেই। তাই শান্ত পরিবেশে বেড়ানো যায়। শিশু ও বয়স্কদের জন্য খুবই উপযোগী।

সকাল সাড়ে ১১টায় এখানে রয়েছে শুশুকের প্রদর্শনী। বল এবং রিং নিয়ে নানা খেলা প্রদর্শন করে শুশুক।

প্রদর্শনীগুলো শেষ করে আমরা গেলাম অন্য প্রাণিদের দেখতে। এর মধ্যে জিরাফ এবং হিপ্পোকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে। পানি থেকে বিশাল হা করে ছুড়ে দেওয়া সবজি গিলে নিচ্ছিল হিপ্পোরা৷

খাও খিও ওপেন জু'তে প্রায় ৮ হাজার বন্য প্রাণি রয়েছে। নানা জাতের বাঘ, ভালুক, পাখি, বানর, দেখে দুপুর নাগাদ আমরা বের হলাম চিড়িয়াখানা থেকে।

ব্যক্তিগত এবং দলগতভাবে ভ্রমণ করা যায় ষাট বছরের পুরনো এই চিড়িয়াখানায়। দলীয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে পূর্বে অবহিত করলে বিশেষ ডিসকাউন্ট এবং ট্রেন কার্টের সুবিধা উপভোগ করা যায়।

   

পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে চর বিজয়



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,পটুয়াখালী
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে নীল জলরাশি, হাজারও অতিথি পাখির আগমন ও লাল কাকড়ার ছোটাছুটির জন্য বিখ্যাত চর বিজয়।  

গভীর সাগরে নীল জলরাশির মাঝে জেগে উঠা মনোমুগ্ধকর এই দ্বীপটি, সূর্যোদয় সূর্যাস্তের লীলাভূমি সাগরকন্যাখ্যাত কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নতুন পালক যোগ করেছে। প্রতি বছর শীতের আগমনের সাথে সাথে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয় এই চরে।

তবে বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল ও অবরোধ এর প্রভাবে পর্যটকদের আগমনে কিছুটা ভাটা পরলেও ইতিমধ্যে চরে আসা যাওয়া শুরু করেছে পর্যটকরা।


২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এই চরের সন্ধ্যান পাওয়ায় চর/ দ্বীপটির নামকরণ করা হয় চর বিজয়। স্থানীয়দের কাছে যা হাইরের চর নামেও পরিচিত। চরটি  কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের গঙ্গামতী থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। দ্বীপটির আয়তন আনুমানিক ৫ হাজার একর। লাল কাঁকড়া আর হাজারও অতিথি পাখির বিচরণে আকাশ আর চর মিলে একাকার হয়ে থাকে এই দ্বীপ। কুয়াকাটার ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে অন্যতম একটি আকর্ষণীয় জায়গায় রূপ নিয়েছে।

বছরের ৬ মাস জেগে থাকে এই চর। মূলত এ চরে জেলেরা অস্থায়ী বসবাস করেন। তিন মাসের জন্য চরে আসা জেলেরা এখানে মাছ শিকার করেন এবং মাছের শুঁটকি প্রস্তুত করেন।

চরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের সেবায় কাজ করছে টুরিস্ট বোট ও স্পিড বোটসহ বেশ কয়েকটি টুরিস্ট গাইড এজেন্সি। মৌসুমের শুরুতে এসব ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত থাকলেও কাঙ্খিত পর্যটক না থাকায় হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা।

স্পিড বোট চালক রুহুল আমীন জানান, “যে রকম টুরিস্ট এর আসা করেছিলাম সে রকম ট্যুরিস্ট এখন ও আসা শুরু করেনি। ট্রিপ ও কম আমাদের। তাই আমাদের ইনকামও কম।  আর ইনকাম কম থাকায় সংসার সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।“ 


কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাচ্চু খলিফা বার্তা ২৪ ডট কমকে বলেন, “চর বিজয় এ অতিথি পাখির আগমন কয়েকদিন  আগে থেকে শুরু হয়েছে, কিন্তু বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমরা আশানরূপ ট্যুরিস্ট পাচ্ছি না।  আশা করছি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অসংখ্য পর্যটকদের আগমন ঘটবে চর বিজয়ে। আবার চরের সৌন্দর্য উপভোগ করাতে আমরাও টুরিস্টদের চরে নিয়ে যেতে পারবো”।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, “চর বিজয় একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এখানে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। সেখানে যারা যায় তাদের তাদের সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম আমাদের রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করি এবং সংরক্ষণ করি। এছাড়া কুয়াকাটা ঘুরতে আসা পর্যটকদের সার্বক্ষণিক সুবিধা, অসুবিধা ও নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে ”।

;

শীতে ঘুরতে যাবেন ভাবছেন?



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
শীতকাল মানেই ভ্রমণের মৌসুম

শীতকাল মানেই ভ্রমণের মৌসুম

  • Font increase
  • Font Decrease

শীতকাল মানেই ভ্রমণের মৌসুম। শীতে প্রকৃতি তার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ফিরে পায়। বছরের শেষ আর ঘোরাঘুরির শুরুর এই শীতে কুয়াশাঘেরা ভোরে নতুন কোনো স্থানে জেগে উঠার অনুভূতি শুধু ভ্রমণ পিপাসুরাই জানে।

দেশের আনাচেকানাচের জনপ্রিয় কিছু টুরিস্ট স্পট হয়ে উঠতে পারে শীতে অবসর কাটানোর জন্য উপর্যুপরি। বন্ধু-বান্ধব, পরিবারসহ দলবলে অনেকেই এই সময়টায় বের হয়ে পড়েন ঘুরতে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক এই শীতে ভ্রমণের জন্য দেশের ৫টি জনপ্রিয় স্থান।

সেন্টমার্টিন
সুন্দর মিষ্টি একটি কুয়াশাঘেরা ভোরে ঢেউ খেলানো সাগরের তীর ধরে হাঁটার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা সেন্টমার্টিন। যেখানে নেই কোনো কোলাহল নেই কোনো ব্যস্ততার হাতছানি। ভ্রমণের কথা উঠলে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে আমাদের মাথায় আসে সেন্টমার্টিনের কথা।  

সাজেক
শীতের ভ্রমণের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানের মধ্যে একটি খাগড়াছড়ির সাজেক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮’শ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই উপত্যকা যা রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। চারপাশে সবুজ পাহাড়ের সমারোহ। ঠান্ডা বাতাস, পাহাড়ি মানুষ, হঠাৎ বৃষ্টি, হঠাৎ রোদ। এ যেন প্রকৃতির এক লীলাখেলা। শীতে সাজেক তাই ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত একটি স্থান। 


শ্রীমঙ্গল
শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানীও বলা হয়। কুয়াশাঘন শীতে চায়ের রাজ্যে বসে এক ধোঁয়া ওঠা চা আপনার মন জুড়িয়ে দেবে। চা–পাতার ডগায় শিশির বিন্দুর অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে রয়েছে পাহাড় ও নদী। যা ভ্রমণ পিপাসুদের মনকে ভরিয়ে তুলবে নিমিষেই। 

চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গল

সুন্দরবন
বাগেরহাট, খুলনা আর সাতক্ষীরা তিনটি জেলার বিস্তৃত পৃথিবীর অন্যতম দুর্লভ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণের জায়গা এটি। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা সবসময় না পাওয়া গেলেও এর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নীরবতা ও জীববৈচিত্র্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। 

কুয়াকাটা
সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান। যারা সমুদ্রের নীরব রূপ উপভোগ করতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য আদর্শ হতে পারে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। 

সাগরকন্যা কুয়াকাটা 

 

;

ইতিহাস-ঐতিহ্যের শালবন বিহারে একদিন



মুহাম্মাদ মুনতাজ আলী, চবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
শালবন বিহারে চবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা

শালবন বিহারে চবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা

  • Font increase
  • Font Decrease

'বার্ষিক শিক্ষাসফর' শব্দটার সাথে ছোট থেকেই পরিচিত। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বয়স, পরিবর্তন হয়েছে শিক্ষার স্তর। তবুও পরিবর্তন হয়নি অতীতে শব্দটার সাথে কাটানো কৌতূহল। ক্লাস প্রতিনিধির কাছে বার্ষিক সফরের কথাটা শুনতেই মনটা নেচে উঠলো এক পরিচিত আনন্দে। তাই দেরি না করেই চাঁদা জমা দিয়ে নিশ্চিত করলাম নিজের আসনটি।

প্রতিক্ষিত দিনটি চলে এলো। পূবের সূর্যিমামার স্বরুপ ধারণের আগেই শেষ হলো প্রস্তুতি। ভোর ছয়টায় চলে এলাম স্পটে। সাথে বন্ধু, বড় ভাই ও বোন মিলে সর্বমোট ২২০ জন। এবং আরও আছেন ডিপার্টমেন্টের বশির আহমেদ স্যার ও সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম স্যার।

পাহাড় ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে এক সারিতে চারটি গাড়ি ছুটে চলছে বিরামহীনভাবে। গন্তব্য তার ইতিহাস ঐতিহ্যে মোড়ানো কুমিল্লার শালবহন বিহার ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)।

বাস চালু হওয়ার সাথে সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিভিন্ন গান ও বন্ধুদের নাচে সৃষ্টি হলো এক আনন্দ মুখর পরিবেশ। আমাদের মাঝে প্রশিক্ষিত কোন ড্যান্সার না থাকলেও আজ সকলে নেচে গেয়ে উপভোগ করছেন দিনটি। কেউবা হাতের ফোনটি দিয়ে মুহূর্তটুকু স্মরণীয় করে রাখতে তুলে রাখছেন কিছু ছবি। এভাবে নেচে গেয়ে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে যেন খুব দ্রুতই বার্ডের গেটে পৌঁছালাম আমরা। 

বাস  থেকে নেমে বার্ডের মুখে একটা গ্রুপ ফটো তুললাম। এ সময় শোভা পাচ্ছিল সকলের গায়ে একই রঙের টি-শার্ট। যেন মনে হচ্ছে কোন মায়ের জমজ সন্তান!

সবুজ গাছ গাছালি ও নিপুণ স্থাপত্য শৈলির সংমিশ্রণে শান্ত অথচ অসম্ভব সুন্দর বার্ড এলাকাটি। ধুলো-ধুঁয়োর শহর ছেড়ে স্বস্তির বাতাস নিতে আসা যে কারোর জায়গাটি ভালো লাগবে। আমরা কয়েজন বন্ধু মিলে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ফিরে দেখলাম আর ছবি তুললাম। এর মধ্যেই দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেলো তাই দেরি না করে চললাম বার্ডের ক্যাফেটেরিয়াতে। এখানে পূর্ব অর্ডার অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করা হলো। খাবারের পর্বটি শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাসে উঠে বসলাম। গন্তব্য এবার শালবন বিহার!

শালবনে পৌঁছে প্রথমেই ঢুকলাম ময়নামতি জাদুঘর। এর পর গেলাম শালবন বিহারে। দেখতে পেলাম শত শত প্রাচীন স্থাপনা। যেগুলো এতদিন বইয়ের পাতায় কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে দেখেছি তা আজ চোখের  সামনে দেখতে পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো।

শালবন বিহারটি বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জানা যায়, প্রায় ১২শ বছর আগে বৌদ্ধরা এটি নির্মাণ করে। সারি সারি কক্ষ ও শক্তিশালী পাচীর গুলো দেখে সে সময়ের স্থাপত্যশৈলী কতটা উন্নত ছিল তা সহজেই অনুমেয়। আর আমরাও ইতিহাসের শিক্ষার্থী হওয়ায় খুটে খুটে সব দেখছিলাম, যেন ফিরে গেছি নয়শত শতাব্দির বৌদ্ধ রাজাদের আমলে।

এভাবে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ মাহবুব ভাইয়ার বাশিঁর সুর কানে আসল তার মানে সবাইকে একত্রিত হতে হবে। এবার পালা ফটোসেশন ও র‍্যাফেল ড্র। আনন্দপূর্ণ ভাবে পর্বটা শেষ হতে না হতেই দেখি সূর্যিমামা জানান দিচ্ছে সে আর বেশিক্ষণ ধরণীতে থাকবে না। তাই আমাদেরও আর বেশিক্ষণ থাকা হলো না। রওনা দিলাম বাসের দিকে। নিজর সিটট খুঁজে ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দিলাম সিটের মধ্যে। চালু হলো বাস! এভাবে ইতিহাস ঐতিহ্যে ঢাকা কুমিল্লা শালবন বিহারকে পেছনে ফেলে  ক্ষণিকের সফর শেষে এগিয়ে চললাম নীড়ের উদ্দেশ্যে।

;

হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা

হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা

  • Font increase
  • Font Decrease

হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের ক্লাব বিএমটিসির দুই অভিযাত্রী এম এ মুহিত এবং কাজী বিপ্লব। হিমালয়ের ২০ হাজার ৩০০ ফুট উঁচু দুর্গম চূড়া ‘ফার্চামো’তে সফলভাবে আরোহণ করেছেন তারা। 

৩ নভেম্বর সকাল ৯টায় ‘ফার্চামো’র পর্বত চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন। দলের আরেক সদস্য নুরুননাহার নিম্নি অসুস্থতাজনিত কারণে সামিট সম্পন্ন করতে পারেনি। 

অভিযানের দলনেতা এম এ মুহিত জানান, ২৬ অক্টোবর আমরা রামেছাপ এয়ারপোর্ট থেকে লুকলার উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ি। ওইদিনই আমরা পৌঁছাই এভারেস্ট অঞ্চলের প্রবেশ দ্বার খ্যাত হিলারি তেনজিং এয়ারপোর্টে। যেটি একই সাথে বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক বিমানরবন্দর হিসেবেও পরিচিত। ওইদিন আমরা ট্রেকিং শুরু করি, বিকেলে পৌঁছাই মঞ্জো। ২৭ তারিখ আমরা যাই নামচে বাজার। ২৮ তারিখে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন পৌঁছাই থামে। পরের দিন বিশ্রাম নিয়ে ৩১ তারিখে পৌঁছাই থ্যাংবোতে। পরদিন আমরা ৪ হাজার ৮০০ মিটার উচুঁ বেসক্যাম্প পৌঁছাই। ২ তারিখে ৫ হাজার ৭০০ মিটার উচু তাশি ফুক হাই ক্যাম্পে যাই। 

হাইক্যাম্প থেকে ১০০ মিটার নিচে দলের এক সদস্য নিম্নির শরীর খারাপ লাগা শুরু হয়। প্রধান শেরপা দাওয়া তেনজিং তাকে নিয়ে ফিরে যায়। চিরিং ওয়াংচু শেরপা, ফুর কাঞ্চা শেরপা আমাদের সাথে হাই ক্যাম্পে যান। হাইক্যাম্প পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যায়। দিবাগত রাতে অর্থাৎ তিন নভেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় হেডটর্চের আলোয় আমরা চূড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আধা ঘণ্টা পরে ক্র্যাম্পন পয়েন্টে পৌঁছি। ওই সময় তেমন বাতাস ছিল না। মেইন রোপে দেড় ঘণ্টা থাকি। 

তাশি লাপচা পাসকে ডানে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি। দীগন্তে ভোরের লাল আভা দেখার সময় ফ্রিক্সড রোপে আমরা জুমার লাগিয়ে আরোহণ শুরু করি। তিনটি কঠিন জায়গায় ১০০ মিটার দড়ি লাগানো ছিল। সে জায়গাগুলো ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রি খাড়া ছিল। ছয়টার সময় জুমার শুরু করি যা শেষ হয় সকাল নয়টার দিকে সামিটে পৌঁছে। আমরা উড়িয়ে দেই বাংলাদেশের লাল সবুজ চূড়ায়। 

পা রাখার আগেই প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়, চূড়ায় ১৫ মিনিটের মতো ছিলাম। মনে হচ্ছিল সব জমে যাবে। হাইক্যাম্পে আসতে আসতে পৌনে এগারোটা বেজে যায়। ওইদনই বেসক্যাম্প হয়ে বিকেল পাঁচটার থ্যাংবো চলে আসি।

এর আগে বাংলাদেশের পর্বতারোহী দল গত ২৪ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করে। ২০ হাজার ৩০০ ফুট উঁচু ‘ফার্চামো’ পর্বতশিখর এভারেস্ট-এর দক্ষিণ-পশ্চিমে নেপালের রোলওয়ালিং হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত।

এ অভিযানের দলনেতা এম এ মুহিত দুই বার এভারেস্ট আরোহণ করেছেন। ‘ফার্চামো’ পর্বতশিখর অভিযানটি পরিচালনা করছে বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব এবং স্পনসর করছে ইস্পাহানী টি লিমিটেড। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড ২০ শতাংশ ছাড়ে অভিযাত্রীদের ঢাকা-কাঠমুন্ডু-ঢাকা বিমান টিকেট দেয়।

;