আল নাসরে চলতি মৌসুমটাও দারুণ কাটছে পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। সৌদি ক্লাবটির হয়ে চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৫ ম্যাচে ৪৪টি গোল করেছেন তিনি। যার মধ্যে হ্যাটট্রিকই আছে চারটা। তবে তার দল আল নাসরকে মৌসুমটা শেষ করতে হলো খালি হাতেই। সৌদি প্রো লিগের কাছে আল হিলালের থেকে বেশ বড় ব্যবধানেই শিরোপা হাতছাড়া হয় তাদের। এবার নেইমার-ম্যালকমদের আল হিলালের কাছেই হাতছাড়া হলো সৌদি কিং কাপের শিরোপাটাও। ম্যাচজুড়ে আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ১-১ সমতার ম্যাচটি টাইব্রেকারে ৫-৪ ব্যবধানে হেরে যায় রোনালদো-মানেরা।
পুরো দুই যুগ পর কিং কাপের শিরোপা জয়ের একদম কাছাকাছি ছিল আল নাসর। তবে টাইব্রেকারের তাদের শেষ দুই শট হিলালের গোলরক্ষক ইয়াসির বোনু ঠেকিয়ে দিলে সেই স্বপ্নভঙ্গ হয়ে নাসরের। এতেই ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের ত্যাগের সময় অঝোরে কাঁদতে দেখা যায় রোনালদো। তার অর্জনের খাতাটা চওড়া হলেও যেই ক্লাব ২৪ বছর পর শিরোপা এতো কাছে এসেও হারল, সেখানে আবেগটা এমন হওয়াটাই যেন স্বাভাবিক। সবশেষ ১৯৯০ সালে কিং কাপের শিরোপা জিতেছিল আল নাসর।
এদিকে লিগ শিরোপা জয়ের দিন মাঠে থাকলেও ‘ডাবল’ শিরোপার দিন দলের সঙ্গে মাঠে ছিলেন না নেইমার। তবে উৎসবে মেতেছেন ঘর থেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন একাধিক ছবি। সেই পোস্টে নেইমার লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য এক বছরের জন্য দলকে অভিনন্দন। আজ আবারও তোমরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছ।’ এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো কিং কাপ শিরোপা জিতল আল হিলাল। টুর্নামেন্টটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১টি শিরোপাও তাদেরই। এই তালিকার শীর্ষে আল আহলি, ১৩টি শিরোপা নিয়ে।
কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে গত রাতের ফাইনাল ম্যাচটির উত্তেজনা ছিল একদম তুঙ্গে। দুই দল মিলিয়ে হলুদ কার্ড দেখেছে ১০টি এবং লাল কার্ড ৩টি। দুুই দল মিলিয়ে শট ৩১টি! এসব পরিসংখ্যানই বলে দেয় শিরোপা লড়াইয়ের ম্যাচটির আবহাওয়া ছিল কেমন।
ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ম্যালকমের ক্রস থেকে দারুণ এক হেডে দলকে সপ্তম মিনিটেই এগিয়ে নেন আলেকসান্দার মিত্রোভিচ। পরক্ষণেই সমতায় ফিরতে মরিয়া উঠে রোনালদোরা। ম্যাচের ৩৪তম মিনিটে অবশ্য ভালো একটি সুযোগও পেয়েছিল নাসর। তবে রোনালদোর নিচু এক শট ঠেকিয়ে দেন হিলালের গোলরক্ষক ইয়াসির বোনু। এদিকে বিরতির পর রোনালদোর দারুণ এক বাইসাইকেল কিক এবার ফিরে আসে পোস্টে লেগে। যদিও এই পর্তুগিজ মহাতারকা সেখানে ছিলেন অফ-সাইডে। পরে ৫৬তম মিনিটে নাসর পরিণত হয় ১০ জনের দলে। ফাঁকা ডি-বক্সের দিকে এগিয়ে আসা ম্যালকমকে রুখতে ডি-বক্সের বাইরে এসে হাত দিয়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন নাসরের গোলরক্ষক ডেভিড অসপিনা। এতেই সরাসরি লাল কার্ড দেখেন তিনি। পরে সাদিও মানেকে তুলে বদলি গোলরক্ষক হিসেবে ওয়ালিদ আবদুল্লাহকে নামান নাসরের কোচ লুইস কাস্ত্রো।
তবে ম্যাচের মূল নাটক শুরু হয় ৮৭তম মিনিটে এসে। ১০ সেকেন্ডের মধ্যে জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন আল হিলালের ডিফেন্ডার আদি আলবুলাইহি। এর মিনিট দুয়েক পর আগের আসরের চ্যাম্পিয়নরা এবার পরিণত হয় ৯ জনের দলে। ম্যাচের শেষ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন আরেক ডিফেন্ডার কালিদু কুলিবালিও। এর মাঝে আবার সমতায় ফিরে যায় আল নাসর ৮৮তম মিনিটে সমতাসূচক গোলটি করেন আয়মান ইয়াহিয়া।
ম্যাচের একদম শেষ দিকে এসে ১-১ সমতা দাঁড়ালে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেখানে ১০ জনের রোনালদোরা রক্ষণ ভাঙতে পারেনি ৯ জনের আল হিলালের। পরে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে এবং সেখানে মিশরীয় গোলরক্ষক বোনুর নৈপুণ্যে ৫-৪ ব্যবধানে টাইব্রেকার জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন আল হিলাল।