ছাত্রলীগের পরিচয়ে অপকর্ম, বিব্রত ক্ষমতাসীনরা
![ছবি: সংগৃহীত](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Feb/25/1708859705343.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী অনেকটাই লাগামহীন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেয়া বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা প্রায়ই নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হচ্ছে।
ছাত্রলীগ যখন গণমাধ্যমে নেতিবাচক শিরোনাম হচ্ছে তখন বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাও। ৭৬ বছরের পুরোনো এই সংগঠনটির ঐতিহ্য কোনোভাবেই যেন ম্লান না হয় তা নিয়ে সতর্ক জ্যেষ্ঠ নেতারা।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ধর্ষণ, মাদকসহ নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে প্রায়ই শিরোনাম হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনটি।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ সারা দেশে সমালোচনায় মুখে ফেলেছে ছাত্রলীগকে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। তার সঙ্গে ছিলেন তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনসহ আরও ছয়জন।
চায়ের দোকানে বসার মত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তিনটি গ্রুপ। গত বুধবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা তিনদিন সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ আহত হন প্রায় ৮০ জন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজার কনসার্টকে কেন্দ্র করে দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হন প্রায় ১৫ জন।
১৭ ফেব্রুয়ারি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির সামনে লুঙ্গি পরে চলাচল ও সালাম না দেওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের খবরও উঠে এসেছে গণমাধ্যমের খবরে।
ছাত্রলীগের এমন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এ ধরণের ঘটনায় কঠোর হওয়ার বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সংগঠনটির সাবেক কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারাও বিব্রত হচ্ছেন। বলছেন, অনেক ভাল কাজও একটি-দুটি মন্দ কাজের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই তারাও চান, ছাত্রলীগ যেন ভুলগুলো শুধরে নিয়ে ছাত্রদের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে কাজ করে।
শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতিবাচক ঘটনা এড়াতে ছাত্রলীগের কর্মী সংগ্রহ ও কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। এরপরেও যদি কোন ঘটনা ঘটে যায় সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি সংগঠনটি এই দুইটি ক্ষেত্রে সচেতন থাকে তাহলে অনেকক্ষেত্রেই অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। অভিভাবক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগেরও দায়িত্বের কথাও তুলে ধরেন তারা। ছাত্রলীগের যে কোন অন্যায় কাজ যেন প্রশ্রয় না পায় সে বিষয়ে নজর রাখার ওপর গুরুত্ব দেন তারা।
ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পথ বিচ্যুতির কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ছাত্রলীগে ছাত্র পরিচয়ে এমন কিছু ব্যক্তি ঢুকে গেছে তারা ছাত্র কি না সন্দেহ আছে। তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিন্দুমাত্র নেই। তারা এখানে ঢুকেছে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য। আওয়ামী লীগ যেহেতু এখন ক্ষমতায় এবং ছাত্রলীগ তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন তাই ক্ষমতার সুযোগ সুবিধাগুলো নেওয়ার জন্য এখানে ঢুকেছে।
ছাত্রলীগ পরিচয়ে অপকর্মরোধে কর্মী সংগ্রহে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যারা অপকর্মে জড়িত তারা বাণিজ্যিক স্বার্থে বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ছাত্রলীগে প্রবেশ করছে। ছাত্রলীগে ঢুকে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সুনামও ক্ষুন্ন করছে এরা।
ভবিষ্যতে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কেউ যেনো অপকর্ম না করতে পারে সেজন্য পরামর্শ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই হয় তাই নেতৃবৃন্দের উচিত হবে ছাত্রলীগকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যে ধরণের নেতৃত্বের প্রয়োজন হবে সে ধরণের নেতৃত্বকে দায়িত্ব দেয়া। নেতৃত্বে গিয়ে কেউ যদি বিচ্যুত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সে নেতৃত্বকে বহিষ্কার করা। ছাত্রলীগ ও তার প্রতিটি ইউনিটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব হবে সংগঠনে যে অনৈতিক কার্যকলাপ হচ্ছে সেগুলো যারা করে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
ছাত্রলীগ ছাত্রদের নিয়ে কাজ করুক এটাই প্রত্যাশা জানিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ছাত্রলীগ ভাল থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টা আমাদের না, পদক্ষেপ নেবে ছাত্রলীগ। আমরা পরামর্শ দিতে পারি। ওরা চেষ্টা করছে। আমাদের পরামর্শ থাকবে ভালভাবে চলবে। নিয়মনীতির মধ্যে থাকবে, দেশপ্রেমের মধ্যে থাকবে, শিক্ষাঙ্গন নিয়ে কথা বলবে, ছাত্রদের নিয়ে এগিয়ে যাবে।
ছাত্রলীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বার্তা২৪.কমকে বলেন, সংগঠনকে গতিশীল করতে, সবরকম নেতিবাচক বিষয় থেকে দূরে রাখার স্বার্থে আমরা সংগঠনের গঠনতন্ত্রকে কঠোরভাবে পালন করছি। নিজেদের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মুজিববাদের চেতনাকে আরও জাগ্রত করে যেন সুন্দর একটি বাংলাদেশ তৈরি করতে পারি সে লক্ষ্যে আমরা নিবেদিতভাবে কাজ করছি।