বিএনপিকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা সমাবেশের অনুমতি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
বিএনপিকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা সমাবেশের অনুমতি

বিএনপিকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা সমাবেশের অনুমতি

  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপিকে ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ওই দিন ২৬ শর্তে গোলাপবাগ মাঠে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সমাবেশ করতে পারবে দলটি।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এই অনুমতি দেয়। ডিএমপি কমিশনারের স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. তানভীর সালেহীন ইমন স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্রে দেখা গেছে, সমাবেশের জন্য ২৬টি শর্ত দেওয়া হয়েছে বিএনপিকে।

শর্তগুলো হলো- অনুমতিপ্রাপ্ত স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে, স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে, গোলাপবাগ মাঠের ভেতরেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে উন্নত রেজুলেশনযুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে এবং সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, নিজস্ব ব্যবস্থায় ভেহিক্যাল স্ক্যানারের মাধ্যমে সমাবেশস্থলে আসা সব যানবাহন তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে।

নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে, গোলাপবাগ মাঠের বাইরে বা সড়কের পাশে মাইক সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না, গোলাপবাগ মাঠের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না, গোলাপবাগ মাঠের বাইরে রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না, আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক ব্যবহার করা যাবে না, ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনও বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য দেওয়া বা প্রচার করা যাবে না, অনুমোদিত সময়ের মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে, সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে, সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনও অবস্থাতেই সমবেত হওয়া, যান ও জন চলাচলে কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না, পতাকা-ব্যানার-ফেস্টুন বহনের আড়ালে কোনও ধরনের লাঠিসোঁটা-রড ব্যবহার করা যাবে না, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা বিকৃত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না, রাষ্ট্রবিরোধী কোনও কার্যকলাপ ও বক্তব্য দেওয়া যাবে না, উসকানিমূলক কোনও বক্তব্য বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না, জনদুর্ভোগ তৈরি করে মিছিল সহকারে সমাবেশ স্থলে আসা যাবে না, পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। মূল সড়কে কোনও গাড়ি পার্কিং করা যাবে না, সমাবেশস্থলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে সমাবেশ পরিচালনা করতে হবে, উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে ও জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনও কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।

শত্রু-মিত্র চিনতে ভুল করেছে আওয়ামীলীগ: বিচারপতি মানিক



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিগত দিনে ‘শত্রু-মিত্র’ চিনতে ভুল করেছে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, দলটিতে আমূল সংস্কার দরকার। দলে ভেতরে থাকা আগাছাদের বের করে দেওয়া প্রয়োজন।

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে নজিরবিহীন নাশকতা ও হতাহতের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ্যে আসার সমালোচনায় এই মন্তব্য করেন তিনি। অবসর জীবনে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবিধানিক আইন বিষয়ে অধ্যাপনা ছাড়াও বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন তিনি।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি মানিক সমাকালীন বিষয়ে গণমাধ্যমে আলোচক ও কলামিস্ট হিসেবেও সরব রয়েছেন। সাম্প্রতিক বিষয়াবলী নিয়ে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বার্তা২৪.কম এর পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম

বার্তা২৪.কম: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে নজিরবিহীন নাশকতা ও হতাহতের ঘটনার পর এটি প্রতিরোধে ব্যর্থতা প্রশ্নে কাঠগড়ায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সাংগঠনিক বিস্তার সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলটির নেতারা সেইভাবে মাঠে থাকেননি-এমন অভিযোগও উঠছে। আত্মসমালোচনার জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ হিসেবে আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখেন?

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক: এ বিষয়ে বলতে হবে, শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করতে ভুল হয়েছে। কারা শত্রু, কারা মিত্র-এটা হয় আইডেন্টিফাই করতে ব্যর্থ হয়েছি, অথবা ইচ্ছা করে আইডেন্টিফাই করিনি। দলের (আওয়ামীলীগ) ভেতরে সেইসব মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হযেছে যারা আসলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে। যাদের বংশ পরিচয় ঘাটলে দেখা যাবে এদের পূর্বপূরুষরা আসলেই রাজাকার-আলবদর ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ছিল। যারা মূলতঃ শিবির-জামায়াত এবং বিএনপির পক্ষের মানুষ। তাদের আমরা ফ্রি এন্ট্রি দিয়ে দিয়েছি...যে যেমন ইচ্ছা আমাদের দলে ঢুকো। এখানে কিন্তু দুর্নীতিও কাজ করেছে। অনেকে কিন্তু পয়সার বিনিময়েও পদবী দেওয়া হয়েছে। এগুলো অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে তাদের আওয়ামীলীগের নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। আমরা বাছ-বিচার করিনি। তারপরে প্রশাসনে ও পুলিশে এমন অনেক লোক রয়েছেন যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে। সেগুলো আমরা খেয়াল করিনি। আমরা ঢালাও ভাবে তাদের ক্ষমতা প্রদান করেছি। যারা মজ্জাগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ...দুঃখজনকভাবে পূর্বপুরুষদের খোঁজখবর কিন্তু যেভাবে করা উচিত ছিল সেভাবে করা হয়নি। কিছু কিছু প্রজন্ম আছে যারা মনে করেছে, তাদের পূর্বপুরুষরা ভুল করেছে। নতুন যারা, যাদের পূর্বপুরুষরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, তাদেরও কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলো সেভাবে ব্যক্ত করতে পারিনি। পাকিস্তানিরা কি ধরণের যুদ্ধাপরাধ করেছে, কি অত্যাচার করেছে সাধারণ মানুষ ও নারীদের উপর।

বার্তা২৪.কম: মতাদর্শেরতো নবায়নের প্রয়োজনীয়তা আছে? আওয়ামীলীগ কি তা অনুভব করেনি?

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক: তা তো আছেই। কিন্তু তাদের (মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মকে) তো বলতে হবে। তাদের ডকুমেন্টসহ বলতে হবে, শুধু মুখে বললেই হবে না। ডকুমেন্ট দিয়ে দেখাতে হবে যে একাত্তরে পাকিস্তানি সৈন্যরা এবং তাদের সমর্থক আল-বদর, আল-শামস-রাজাকাররা কিভাবে আমাদের দেশে গণমানুষের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, এগুলো তাদের বোঝাতে হবে। গত তিন দিন আগে ইতিহাসের এক অধ্যাপিকা, তিনি আমাকে একটি মেইল পাঠিয়ে জানিয়েছেন, তাদের সময়ে কখনো একাত্তরের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। অন্যদিকে জামায়াত-শিবিরের লোকেরা কিন্তু কন্টিনিউয়াস সেই একাত্তর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তাদের আদর্শের কথা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে আসছে। তাদের নারীরা বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে জামায়াতের আদর্শ প্রচার করে আসছে। যার ফলে এদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তারা কখনো চায়নি পাকিস্তান নামক একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ভেঙে একটি ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক। সেখানে আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে। আমরা (মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষরা) ভেবেছি মানুষ এমনিতেই সব জেনে যাবে। কিন্তু সেটি তো কথা নয়। আমাদের মধ্যেও এমন অনেকে ঢুকে আছে, যারা আছেন তারাও যে পুতপবিত্র তা কিন্তু নয়। এমন মানুষ অনেক আছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যারা রাজাকারদের আদর্শই বহন করে। সেই সংখ্যাও কম নয় কিন্তু। ওরা বিভিন্ন জায়গায়..শক্তিশালী অবস্থানে থেকে তাদের যে মতাদর্শ তা কাজে লাগাচ্ছে।

বার্তা২৪.কম: কিন্তু দেড় দশক টানা সরকার ক্ষমতায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব আওয়ামীলীগ কেন এই আদর্শ ও চেতনাকে সাধারণের মাঝে বিকশিত করতে পারলো না?

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক: কারণ, তারা ভুলে গেছে। তারা এখন নিজেদের স্বার্থ নিয়েই বেশি ব্যস্ত বলে আমি মনে করি। যে আদর্শ নিয়ে তারা একাত্তরে যুদ্ধ করেছিল সে আদর্শ তারা ভুলেই গেছে। তারা ভাবছে যে, এটা এমনিতেই চলবে। তারা অনেকে তাদের সন্তানদেরও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে খুব বেশি একটা শিখিয়েছে বলে মনে হয় না। মনে হলে এ ধরণের ঘটনা ঘটতো না।

বার্তা২৪.কম: আন্দোলনটি শুরুতেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত আলোচনার মাধ্যমে এই আলোচনাটিও বিভিন্ন মহলে গুরুত্ব পাচ্ছে। আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন...

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক: যারা এটা বলছেন, তারা রাবিশ কথা বলছেন। বলছি এজন্য যে, দেখুন ওরা (কোটা আন্দোলনকারীরা) যেটা চায়- সরকার তো সেটাই চেয়ে আসছে। সরকার কোটা সংস্কার চায় বলেই তো হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করল। সুতরাং সেই অর্থে এদের পথে নামাটা প্রয়োজনই ছিল না। তারা কিন্তু অন্য উদ্দেশ্যে নেমেছে। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী বুঝতে পারেনি বিষয়টা। তাদের চালানো হয়েছে। আসলে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি কিন্তু প্রথম থেকেই এর পেছনে ছিল। তারাই পরিচালিত করেছে। জামায়াত ও শিবিরের নীলনকশা, অবশ্য নতুন কিছু নয়-বহু পুরনো। প্রথম কয়েক দিন চুপিসারে ছিল, আত্মপ্রকাশ করেনি। দেখেছে ছাত্রদের আন্দোলন, সুযোগমত তারা ঢুকে পড়েছে। সময় মতো তারা মুখোশ খুলেছে। তারা পেছনে না থাকলে ছাত্রদের আন্দোলন এমন পরিণতি পেত না। যেখানে সরকার তাদের পক্ষে কথা বলছে। আন্দোলন যে দিন নামলো সেদিন থেকেই কোন প্রয়োজনই ছিল না। সরকার পরিষ্কারভাবে বলেছে, বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারে। এটা সত্য। দেশ তো সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। সরকারের কোন ক্ষমতা ছিল না আপিল বিভাগের রায় উপেক্ষা করে অন্য কিছু করার। তাহলে সেটা তো সংবিধান নষ্ট করে দেওয়া একটি সরকার হয়ে যেত। সেটা তো গণতান্ত্রিক সরকার হতো না।

বার্তা২৪.কম: শুরুতে আন্দোলনটি শান্তিপূর্ণই ছিল। সেটি সহিংসতায় গড়াল কিভাবে? 

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক: সহিংসতা ছাত্র-ছাত্রীরা বোঝেনি, তাদের উল্টা বোঝানো হয়েছে। শিবির-বিএনপি-জামায়াত, এরাই বুঝিয়েছে। কোটার বিষয়ে তাদের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না, তাদের একটাই উদ্দেশ্য রাস্তায় নেমে এই সরকারের পতন ঘটানো। এটা প্রথম দিন থেকেই তারা করে আসছে। যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হতো তাহলে তো এটা হতো না। দু’দিন পর থেকেই তো অশান্তির আন্দোলন হয়ে গেছে এটা। রাস্তা ব্লক করে দেওয়াকে কি আপনি শান্তিপূর্ণ বলবেন? গাড়ি চলাচল বন্ধ..কোন ব্যাখ্যাতেই এটাকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বলা যায় না। আমি তো বলব, পুলিশ অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। শান্তি রক্ষা করা, মানুষের জীবন-সম্পদ রক্ষা করা তো পুলিশের নৈতিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পুরোপুরি পালনের অর্থ তো এদেরকে প্রতিহত করা। কিন্তু পুলিশ ও র‌্যাব বাহিনী অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। প্রথম দিকে তো তারা তেমন অ্যাকশনে যায়নি। যেখানে রাস্তা বন্ধ করে সমস্ত দেশ অচল করে দিল। সেখানে পুলিশ যদি অ্যাকশনে যেত তা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য হতো। ব্যাপারটা হলো যারা এগুলো করছে তারা জানতো তারা কি চায়? মোটেও কোটা বিষয়ে তাদের কোন ব্যাপার না, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথা, ‘সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত হবে না’।-অর্থাৎ উদ্দেশ্য পরিষ্কার। কি চায় তারা। রিজভী, সাকী, যাদু মিয়ার মেয়েরা-সব রাজাকারের বংশধরেরা যা বলে যাচ্ছে তা অত্যন্ত পরিষ্কার। কত বড় নির্লজ্জ কথা, ‘তুমি কে আমি, রাজাকার রাজাকার/বাংলাদেশের মাটি রাজাকারের ঘাঁটি’। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে অসহনীয় কথা তারা বলে যাচ্ছে তা কোন অবস্থায় আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষ সহ্য করতে পারি না।

বার্তা২৪.কম: চলমান এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কি? জনগণের মাঝেও পুরো বিষয় নিয়ে এক ধরণের বিভ্রান্তি দেখছি...

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক: বিভ্রান্তি শুরু হয়েছিল, আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়ে তা কেটে গেছে। আপিল বিভাগের রায়ের পর সবাই বুঝতে পারছে, এটা সরকারের কাছে ছিল না। জনগণ কিন্তু অসচেতন নয়। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আমরা মেট্রো রেলের দিকে তাকিয়ে ছিলাম কত বছর ধরে। মেট্রো রেল হবে, ঢাকা শহরের যানজট দূর হবে। সব ধ্বংস করে দিল। বিটিভিকে ধ্বংস করে দিল। আরও কত কিছু ধ্বংস করলো। এই ক্ষতি কিভাবে পোষাবে, মানুষ কিন্তু বুঝতে শুরু করেছে। সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও বিজিবির অ্যাকশনকে কিন্তু ওয়েলকাম করছে মানুষ। তারা এখন বুঝতে পেরেছে, দেশের শত্রু কারা? তাদেরই দাবি কিন্তু এদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে বিচার করা হোক। সাধারণ মানুষ কিন্তু এই দিকেই এগুচ্ছে। সুতরাং সাধারণ মানুষকে যে ভুলটা বোঝানো হয়েছিল সেগুলো আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে এবং কেটে যাবে। সাধারণ ছাত্ররাও কিন্তু ঘরে ফিরে গেছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে তাদের ব্যবহার করেছেন নেতারা। যাদের পকেট ফুলে গেছে। বিদেশ থেকে বহু টাকা এসেছে। কোটি কোটি টাকা এসেছে। এদেশেরও কিছু ব্যবসায়ী টাকা দিয়েছে। এই টাকা পেয়ে কিছু পয়সা তারা আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের পেছনে খরচ করেছে। বাকীটা কিন্তু তাদের পকেটেই গেছে।

বার্তা২৪.কম: তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বের এক ধরণের দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবারে ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের একটি সভাতেও তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অরাজকতা সৃষ্টির পেছনে কি এই শূন্যতা কোন ভূমিকা রেখেছে?

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক: আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের সর্বপুরাতন রাজনৈতিক দল। বিএনপি’র যেমন সামরিক ছাউনী থেকে জন্ম আওয়ামীলীগের কিন্তু তা নয়। জামায়ত তো একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী, ধর্মান্ধদের দল। শিবিরও তাই। কিন্তু আওয়ামীলীগের যে ঐতিহ্য জনগণের দল হিসাবে সেটি কিন্তু অনেকখানি অবক্ষয়ের দিকে চলে গেছে। এখন বহু লোক আছে যাদের সঙ্গে জনগণের কোন সম্পৃক্ততাই নেই। অনেক রাজনীতিবিদ আছেন। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে আওয়ামীলীগের আমূল সংস্কার; সোজা কথা, দলে ভেতরে থাকা আগাছাদের বের করে দেওয়া।

;

বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবে অনেক নিরীহ মানুষ মারা গেছে: কাদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবে অনেক নিরীহ মানুষ মারা গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলে কাদের বলেন, ‘আমরা মৃত্যুর তালিকা..পত্র-পত্রিকায় দু’শোর মতো বা দু’শো চেয়ে একটু বেশি। আমরা এটার খোঁজ খবর নিচ্ছি। অনেক জায়গায়.. জাহাঙ্গীরের (গাজীপুরের সাবেক মেয়র) সঙ্গে জুয়েল নামে একটি ছেলে সবসময় থাকত, তাকে উত্তরায় মেরে লাশ লটকিয়ে রাখা হয়েছে। কি বর্বর, নৃশংসতা। পুলিশকে মেরে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক নিরহ মানুষ মারা গেছে। জানালায় দিয়ে বাইরের দৃশ্যপট দেখতেছিল..বাচ্চা যখন তাকালো, সেই বাচ্চা গুলি খেয়ে মারা গেল। তারপরে এ ধরণের ঘটনা আরও অনেক ঘটেছে। রাস্তায় বেরিয়েছে, নিষ্পাপ, নির্বোধ শিশু, কিছুক্ষণ পর দেখা গেল সেও লাশ হয়ে পড়েছিল। এরকম ঘটনা অনেক আছে। এগুলো জামায়াত-শিবিরের তান্ডব। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। সময়মতো সাংবাদিকেরাও নিচ্ছেন। সব সত্য বেরিয়ে আসবে।’

আপনি বলেছেন অনেকেই রাস্তায় বের হয়ে, জানালা দিয়ে দেখার সময় গুলি খেয়ে মারা গেছে। মৃতদের বেশিরভাগই গানশর্টে মারা গেছে। তাহলে আপনি কি বলেছেন জামায়াত-শিবিরের হাতে অস্ত্র ছিল। থাকলে সেই অস্ত্র কি উদ্ধার করা হয়েছে?  সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের হাতে অস্ত্র ছিল। কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এখনো চলছে (উদ্ধার অভিযান)। উদ্ধার হবেই। এদের নির্দেশ দাতা ও হোতারা কিন্তু গ্রেপ্তার হয়েছে। রিমান্ডে আছে। অনেক সত্য বেরিয়ে আসবে।’  

এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘আমরাতো রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করছি। প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলা করছি। আপনাদেরও আমরা সহযোগিতা চায়। এ অপশক্তি সকলেরই শত্রু। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’

কাদের বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে যখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রে নৈরাজ্য-নাশকতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নির্দেশদাতা ও অর্থদাতাদের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। মির্জা ফখরুল..থলের বিড়াল বের হতে শুরু করছে। তখন তিনি আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করছেন। তারা সবসময় জনগণের আস্থা না রেখে বিদেশী প্রভুদের উপর ভর করে রাজনীতি করে। এক্ষেত্রেও তাদের সন্ত্রাসী চরিত্র উম্মোচিত হওয়া থেকে দায়মুক্তির জন্য বিদেশী হস্তক্ষেপের দাবি করছে।’

বিএনপি-জামায়াত-উগ্রবামপন্থী-জঙ্গিগোষ্ঠি কুচক্রি মহল এখনো সক্রিয় আছে বলে দাবি করে কাদের বলেন, ‘তাদের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে প্রস্তুত হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। তারা আবারও বিভিন্নভাবে হামলা চালাতে পারে। দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান যেখানে অস্ত্রধারী ক্যাডারদের খোঁজ পাবেন, তাদের তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে সহযোগিতা করবেন ।’

নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-শিবির, জঙ্গিগোষ্ঠির সন্ত্রাসীরা আর যাতে সহিংসতা ছড়াতে না পারে সে জন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’ এছাড়া নেতাকর্মীদের কারফিউ মেনে চলার অনুরোধ করেন কাদের।

;

অরাজকতা রুখতে মাঠে ছিলাম-আছি-থাকবো: লিটন



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন

  • Font increase
  • Font Decrease

জনগণের জানমাল রক্ষার্থে ও যে কোনো অরাজকতা রুখতে আমরা মাঠে ছিলাম, এখনো আছি ও ভবিষ্যতেও থাকবো বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বাদ জুম্মা রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদে আয়োজিত দোয়া ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী মহানগরীরের সকল মসজিদে এই দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

সম্প্রতি সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় নিহত শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়।

এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমরা শুরু থেকে লক্ষ্য রাখছিলাম। আমাদের কাছে মনেই হচ্ছিলো, এটা হয়তো ভিন্নখাতে প্রবাহিত হবে এবং কয়েকদিন যেতে না যেতেই সেটা প্রমাণিত হতে শুরু করলো। তখন থেকে আমরা সতর্ক হয়ে যাই এবং রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরে নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা রাজপথে থাকি। জনগণের জানমাল রক্ষার্থে ও যাতে কেউ অরাজকতা করতে না পারে সেজন্য আমরা মাঠে ছিলাম। আমরা এতে সফল হয়েছি। রাজশাহীর শান্তিপ্রিয় মানুষ আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, সাধুবাদ জানিয়েছেন।

মেয়র লিটন বলেন, বিছিন্নভাবে আমাদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করা হয়নি; তা নয়, বিভিন্ন অলি-গলি থেকে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে তারা সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে ছিলেন। আমরা মাঠে আছি, সেভাবে আমরা এ পর্যন্ত রাজশাহীকে নিরাপদ রেখেছি। জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কারফিউ উঠে হলে আরো স্বাভাবিক হবে।

এরআগে সাহেববাজার বড় মসজিদে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে পবিত্র জুম্মার নামাজ আদায় করেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। জুম্মার নামাজ শেষে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কুমারপাড়াস্থ মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যান এবং সেখানে অবস্থান নেন।

কর্মসূচিতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, ডা. তবিবুর রহমান শেখ, নাইমুল হুদা রানা, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, সাংগঠনিক এ্যাড. আসলাম সরকারসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

;

‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা সকল স্বৈরাচারের নির্মম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়ে ইতিহাসে হতাহতের যে বর্বরোচিত নজীর স্থাপন করেছে তা দেশ-বিদেশের সকল স্বৈরাচারের নির্মম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার, কারান্তরীণ ও জুলুম-নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অবৈধ সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেফতার করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বরিশাল মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজকে গ্রেফতার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র গ্রেফতারকৃত সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন খোকনকে ৩ দিন পর আদালতে তোলা হয়েছে। অব্যাহত গতিতে দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতাকর্মী বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হচ্ছে, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসাসহ অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দকে গুম করে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তিন/চার কিংবা পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের নাগরিকদেরকে গুম করে রাখার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু রেখে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করা হচ্ছে। সরকারকে এ ধরণের লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশে সরকারের দায়িত্ব হলো-রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া, গত কিছুদিন যাবত কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনরত তখন সেই মুহূর্তে সরকার প্রধানসহ সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীরা তাদেরকে তাচ্ছিল্য করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরকে নির্দেশ দেয় তাদেরকে নির্মূল করার। সরকারি দলের সন্ত্রাসী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে জনগণের টাকার কেনা গুলি, টিয়ারসেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদেরকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপের মাধ্যমে শত শত নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীকে গণহারে হত্যা এবং হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে আহত করেছে যা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী অবলক্ষণ করেছে।

নির্মম অত্যাচারে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ হতবাক ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং সারা দেশে কর্মসূচীও পালন করেছে। কিন্তু অবৈধ সরকার মরিয়া হয়ে রাষ্ট্রের সকল বাহিনীসহ দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে সাধারণ মানুষ, বিএনপি নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ব্লক রেড দিয়ে গ্রেফতার করছে। এখন পর্যন্ত তাদের হিসাবে প্রায় ৩ হাজার গ্রেফতার করছে। যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার।

তিনি বলেন, ছাত্র জনতার ন্যায় সংগত আন্দোলনকে দমন করার জন্য সেনা বাহিনীকে ব্যবহার কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনা বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বরাবরই আওয়ামী লীগ লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গত কয়ক দিন যে পরিমাণ নিরীহ ছাত্র-মানুষকে গুলি চালিয়ে পাখির মতো হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে তা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দেয়।

গত কয়েকদিনে কতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে জনগণ তার সঠিক পরিসংখ্যান জানতে চায়। এছাড়া জনগণের টাকায় কেনা কি পরিমান গোলাবারুদ, টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসাবও জনগণ জানতে চায়। রাষ্ট্রের টাকায় কেনা হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নিবে।

সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ কারার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্মমভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে পারে না সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন নৈতিক অধিকার নেই। তাই এই অবৈধ সরকারকে বলবো-অবিলম্বে পদত্যাগ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন।”

;