যৌন হয়রানি: বাদীর সাক্ষীরা বলছেন অভিযোগ ‘মিথ্যা’



হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক ড. আমিরুল মোমেনীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার এজহারে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য’ ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন খোদ মামলার বাদীর পাঁচ সাক্ষী।

এজাহারে বর্ণিত ঘটনা দেখেননি এবং তাদের অবগত না করেই সাক্ষী করা হয়েছে দাবি করে আদালতে এফিডেভিট জমা দিয়েছেন তারা। সাক্ষীর তালিকা থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহারের জন্যও আবেদন করেছেন সাক্ষীরা।

অন্যদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সব সাক্ষীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করেননি। পাঁচ সাক্ষীর মধ্যে একজনের সঙ্গে ‘আলাপ’ করলেও এজাহারে যে অভিযোগ করা হয়েছে- সেই বিষয়ে তাকে অবগত করা হয়নি বলে দাবি তদন্ত কর্মকর্তার মুখোমুখি হওয়া একমাত্র সাক্ষীর।

ছাত্রীর এজাহারের কপি

তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার এসআই রাজু আহমেদ বলেন, অভিযোগ দায়েরের পর আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে মামলার বাদী তার সহপাঠী ও সাক্ষী হিসেবে নাম দেওয়া মাহবুব হাবিব হিমেলের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। তার সঙ্গে অল্প কিছু কথা হয়। অন্য সাক্ষীদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মামলার এজাহারে বর্ণিত ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনার দিনে (১২ ফেব্রুয়ারি) অভিযুক্ত অধ্যাপক আমিরুল ক্যাম্পাসেই ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর থেকে ভিজিলেন্স টিমের সদস্য হিসেবে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী নগরের সপুরায় অবস্থিত উদয়ন নার্সিং কলেজে।

কলেজটিতে ওই দিন দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের বিএসসি ইন নার্সিংয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। যেখানে তিনি সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবস্থান করেন। তার সঙ্গে কেন্দ্রে দায়িত্বে ছিলেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ।

ঘটনার দিন ওই কেন্দ্রে অধ্যাপক আমিরুলের উপস্থিত থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উদয়ন নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ নওশীন বানু। কিন্তু মামলার এজাহারে শ্লীলতাহানির ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে— একই দিন বেলা সাড়ে ১১টায়। এ সংক্রান্ত সকল নথিপত্র প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।

সাক্ষীদের এফিডেভিট

রাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আব্দুস সালাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ভিজিলেন্স টিমের সদস্যের উপস্থিতিতে প্রশ্নপত্র খোলা এবং পরীক্ষা শেষে তার উপস্থিতিতেই উত্তরপত্র জমা নিয়ে সিলগালা করা হয়। সেগুলো নিয়ম মতোই সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে কেন্দ্রে শিক্ষক আমিরুলের উপস্থিত না থাকার কোনো তথ্য নেই।

কলেজ পরিদর্শক দফতরের দু’জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যতদূর জানি- তিনি সেদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রে ছিলেন। ডিউটি করেছেন এবং উত্তরপত্র সংগ্রহ করে তবেই ফিরেছেন। কিভাবে একই সময়ে বিভাগে এসে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করলেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

মামলার এজাহার, বাদী, সাক্ষী, তদন্ত কর্মকর্তা ও আসামি পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসেছে মামলার এজাহারের আরও অনেক অসামঞ্জস্যতার তথ্য। অভিযোগ উঠেছে- চারুকলা অনুষদে আসন্ন ডিন নির্বাচন ও বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরির ইজারা পাওয়া নিয়েও শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট। বাদী পক্ষকে উস্কানি দিয়ে মামলা করিয়ে প্রতিপক্ষ শিক্ষকদের গ্রুপ অধ্যাপক আমিরুলকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে। চারুকলা অনুষদের অন্তত পাঁচজন সিনিয়র-জুনিয়র অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলেও মিলেছে শিক্ষকদের অন্তর্কোন্দলের সত্যতা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর চন্দ্রিমা থানায় রাবির গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল মোমেনীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন একই বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী।

শিক্ষক আমিরুলের ভিজিলেন্স টিমের সদস্য থাকার নথি

মামলায় অভিযোগ করা হয়— চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি চারুকলার মেইন বিল্ডিংয়ে বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ফ্যাশন অ্যান্ড কস্টিউম ডিজাইন পরীক্ষা চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহিলা বাথরুমের সামনে পথরোধ করে ছাত্রীর শরীরে হাত দেন এবং পরনের জামা ধরে টানাটানি করেন শিক্ষক আমিরুল মোমেনীন। সে সময় ছাত্রী চিৎকার দিলে তার সহপাঠী মিঠুন কুমার মোহন্ত (২৩), মাহাবুব হাবিব হিমেল (২৩), উম্মে সালমা বৃষ্টি (২২), সংঘ মিত্রা রায় (২৩) ও মোসা. সুরভীসহ তৃতীয় বর্ষের সকল শিক্ষার্থী ও আশেপাশের লোকজন সেখানে জড়ো হন। কিন্তু বিবাদী ঘটনা কাউকে জানাতে নিষেধ করে ‘মৃত্যুর’ ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে চলে যান। এছাড়া বিভাগে ভর্তির পর থেকে তাকে ক্লাসের ভেতরে ও যাওয়া-আসার সময়ে কুপ্রস্তাব দেন তিনি।

মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী করা হয়- শিক্ষার্থী মিঠুন, মাহাবুব, উম্মে সালমা, সংঘ মিত্রা ও মোসা. সুরভীকে। তবে খোদ সাক্ষীদেরই দাবি- ঘটনার দিন বিভাগে শিক্ষক আমিরুল মোমেনীনকেই দেখেননি তারা। কিভাবে তাদের ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী করা হলো তাও জানেন না তারা। মামলা রুজু করার পর গত ৪ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে বাদীর পাঁচজন সাক্ষীই একশত টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্পে নিজেদের ছবি ও স্বাক্ষর সম্বলিত এফিডেভিট জমা দেন। ওই দিনই আদালত থেকে জামিন নেন অধ্যাপক আমিরুল মোমেনীনও।

সাক্ষী মিঠুন মোহন্ত বলেন, সেদিন আমরা আমিরুল স্যারকে দেখিনি। চিৎকার শুনে সেখানে ছুটে যাওয়ার কোনো ঘটনাও ঘটেনি। বানোয়াট একটি এজাহারে কিভাবে আমাদের সাক্ষী করা হয়েছে, তাও জানি না। যখন জেনেছি, তখনি মামলার বাদী আমাদের সহপাঠীকে কয়েক দফা কল করলেও সে রিসিভ করেনি। পরে বাধ্য হয়ে আদালতে এফিডেভিট করে সাক্ষীর তালিকা থেকে আমি ও অপর চারজন সাক্ষী নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছি।

মাহবুব হাবিব হিমেল বলেন, ‘ওই দিন আমাদের পরীক্ষা ছিল। আমিরুল স্যারকে আমি দেখিনি। কোনো চিৎকারের শব্দও শুনিনি।’ মোসা. সুরভী বলেন, ‘মামলায় যা লেখা হয়েছে তা ঘটতেও দেখিনি, শুনিওনি। কিভাবে সাক্ষী হলাম তাও জানি না।’

আরেক সাক্ষী উম্মে সালমা বৃষ্টি বলেন, ‘মামলায় যা লেখা হয়েছে, তেমন ঘটনার কথা আমি জানি না। এমন অভিযোগের কথাও শুনিনি।’ বাদীর অপর সাক্ষী সংঘ মিত্রা রায়ও বলেন একই কথা। তারা মামলায় তাদের না জানিয়ে সাক্ষী করায় বাদী ও তার স্বামীর প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ঘটনার দিন অভিযুক্ত যে কলেজে কর্তব্যরত ছিলেন সেই কলেজের অধ্যক্ষের প্রত্যয়নপত্র

বাদীর পাঁচ সাক্ষী ছাড়াও ওই দিন কস্টিউম ডিজাইন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আরও চারজন শিক্ষার্থী, ভবনের দায়িত্বে থাকা প্রহরী এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেও এজাহারে বর্ণিত ঘটনার ন্যূনতম সত্যতাও মেলেনি। বরং কেউ কেউ বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন।

খোদ মামলার সাক্ষীদেরই এমন বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়ার পর বাদী গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের ওই ছাত্রীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। আমার স্বামী সব জানে, তার সাথে কথা বলেন। বলেই কল কেটে দেন তিনি।

কিছুক্ষণ পর ছাত্রীর স্বামী ফেরদৌস হোসেন প্রতিবেদককে নিজেই কল করেন। সশরীরে দেখা করে তিনি দাবি করেন, ঘটনার পর তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিষয়টি জেনে ওই শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। শিক্ষক তার স্ত্রী ও তার কাছে মাফও চেয়েছেন। তবে শিক্ষককে উচিত শিক্ষা দিতে মামলা করেছেন তার স্ত্রী।

অভিযুক্ত শিক্ষক আমিরুল মোমেনীন মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনা মিথ্যা দাবি করে বলেন, ঘটনার দিন সকালে আমি বিভাগে যাইনি। বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ওরা আমার কাছ থেকে একাডেমিক কাজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফিগার আঁকার জন্য ছবি চাইতো। মাঝেমধ্যে আমি ওদের আমার মোবাইলও দিয়ে দিতাম। নিজেরা বেছে বেছে নিজেদের ইনবক্সে বিভিন্ন ছবির ফিগার সেন্ড করে নিতো। সেগুলোকে হাতিয়ার করে এবং কতিপয় শিক্ষকের প্ররোচণায় পড়ে তারা এগুলো করছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক অভিযোগ করেন, ঘটনার পর ওই ছাত্রীর স্বামী তার সঙ্গে দেখা করে ফেসবুকে কিছু কনভারসেশন নিয়ে ব্লাকমেইল করার হুমকি দেন। ভয়-ভীতি দেখান এবং ‘সম্মান’ বাঁচাতে চাইলে তার স্ত্রীকে শিক্ষক বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি চান। একই সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থও দাবি করেন।

টাকা চাওয়া ও স্ত্রীকে শিক্ষক বানিয়ে দেওয়ার অনৈতিক দাবির অভিযোগ বিষয়ে ছাত্রীর স্বামী ফেরদৌস বলেন, অপরাধ করে বাঁচার জন্য তিনি এখন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা বলছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর চন্দ্রিমা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ বলেন, সাক্ষীদের সঙ্গে আমার বিস্তারিত কথা হয়নি। একজনের সঙ্গে একেবারে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়। ঘটনার সময় শিক্ষক অন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে ছিলেন মর্মে কাগজপত্র আমিও পেয়েছি। মামলার তদন্তে সেগুলোও ডকুমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তদন্ত শেষে জানা যাবে— আসল ঘটনা কী। এর বেশি এখন আর কিছু বলা সম্ভব নয়।

রাবির চারুকলার শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

   

ঝালকাঠির সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন

লাইসেন্সবিহীন চালক, ওভারলোডিং, অবকাঠামোর ত্রুটিই দায়ী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঝালকাঠি
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝালকাঠির গাবখান টোলপ্লাজায় ট্রাকচাপায় ১৪ জন নিহতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চালকদের লাইসেন্স ও ট্রাকের ফিটনেস না থাকা, ওভারটেকিং করা, সড়কে অবৈধ যান, সড়কের অবকাঠামোয় ত্রুটি, ট্রাকে ওভারলোড, অতিরিক্ত গতি এবং গতিরোধের জন্য নির্দেশনা না-থাকা দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

১৭ এপ্রিল ঝালকাঠির গাবখান সেতু টোলপ্লাজায় সিমেন্ট বোঝাই একটিড ট্রাক সামনে থাকা একটি মিনি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার এবং ৩টি ইজিবাইককে চাপা দেওয়ায় ১৪ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৭ জন। এ দুর্ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়। ঈদযাত্রার আলোচিত এ দুর্ঘটনার কারণ জানাতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গাবখান সেতুসংলগ্ন দুর্ঘটনার জন্য ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরোজকে প্রধান করে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিতুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঝালকাঠি জোনের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. মাহবুবুর রহমান ও বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হককে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ বিষয়ে কথা হলে তদন্ত কমিটির সদস্য বুয়েটের এআরআই’র সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, অনেক সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত করেছি। কিছু বিষয় ছাড়া সড়কের অবকাঠামো ত্রুটি চিহ্নিত করা হয় না। এ ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই চালককে দোষারোপ করি। কিন্তু সড়কের অবকাঠামো ত্রুটির বিষয়টি সামনে আনেন না কেউ।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনা কমাতে হলে শুধু সড়কের উন্নয়ন করলেই হবে না; অবকাঠামোগত ত্রুটিও দূর করতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান কারণ হিসেবে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের ওভারলোড এবং অতিরিক্ত গতি দায়ী করা হয়েছে। ট্রাকটির ধারণ ক্ষমতা ১৫ টন হলেও সিমেন্টের পরিমাণ ছিল ২০ টন।

সড়কটিতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০ কিলোমিটার হলেও ট্রাকটি ৬৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলছিল। এ ছাড়া ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। তিনি ছিলেন বদলি ড্রাইভার। মূল চালক ঈদের ছুটিতে ছিলেন।

সাধারণত বদলি চালকদের দ্রুততম সময়ে ট্রিপ শেষ করার তাগিদ থাকে। সে কারণে এ দুর্ঘটনায় চালকের গাফিলতিও রয়েছে। অন্যদিকে, যেকোনো টোলপ্লাজা ও সড়ক জংশনের ৫শ মিটার আগেই গতি কমানোর নির্দেশনা থাকে। ‘সামনে টোলপ্লাজা, গতি কমান’ এ ধরনের সাইনবোর্ড থাকে।

কিন্তু গাবখান সেতুর ১শ ৩০ ফুট আগে সেই নির্দেশনা ছিল। সে নির্দেশিকাও (সাইনবোর্ড) চোখে পড়ার মতো নয়। টোলপ্লাজায় গতি নিয়ন্ত্রণে ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও সেখানে তা ছিল না। কাজেই এত অল্প দূরত্বের সাইনবোর্ড দেখে চালক গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি আর সেতু থেকে নামার পর স্বভাবতই গাড়ির গতি বেশি থাকে, যার ফলেই ঘটে এ দুর্ঘটনা।

ড. আরমানা আরো বলেন, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের সড়কে কিছুটা দূরত্ব পরপর ভয়াবহ বাঁক রয়েছে। গাবখান ব্রিজটিও স্পাইরাল কার্ভের মতো। সেতু থেকে নামার পরে সড়কের দুই পাশে ১২ ফুট করে গভীর খাদ রয়েছে। নিয়মানুযায়ী সেখানে প্রতিবন্ধক থাকার কথা থাকলেও এর দেখা মেলেনি।

সড়কের দুই পাশে ১০ মিটার ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন থাকার কথা। কোনো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তা সড়কের পাশে থেকে সেই ক্লিয়ারিং জোনে চলে যাবে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে এলে আবার মূল সড়কে এসে চলবে। ঝালকাঠির ওই সড়কের পাশে ক্লিয়ারিং জোন দূরে থাক, সেখানে গড়ে উঠেছে নানা অবকাঠামো।

গাবখানে যে অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার খুব কাছে ছিল চায়ের দোকান। ট্রাক আরেকটু এগিয়ে গেলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারতো। এ ছাড়া নিয়মানুযায়ী, সড়কের প্রশস্ত অংশে টোলপ্লাজা হওয়ার কথা। কিন্তু সড়কের সরু অংশে টোলপ্লাজা করা হয়েছে। এটিও ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি সেতু এলাকায় মূল সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক ছিল।

এ ছাড়া ঝালকাঠির সড়কে থ্রি-হুইলার, নছিমন-করিমন, অটোরিকশাসহ নানা অবৈধ যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব বাহনের চালকেরা হুট করেই আঞ্চলিক মহাসড়কে চলে আসেন। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব যানবাহনে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে বেশি প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

ঝালকাঠির দুর্ঘটনার পরে তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকটি সুপারিশ প্রস্তাব করেছে।

এতে সড়কের যেসব অংশে দুইপাশে গভীর খাদ রয়েছে, সেখানে ভরাট করা; আঞ্চলিক সড়কগুলোর দুইপাশে ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন তৈরি করা করা; পাশাপাশি যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাংশ (স্পিড ওয়ার্নিং ডিভাইস) বসাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া সিমেন্টবোঝাই ট্রাকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সিমেন্ট পরিবহনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। ওই সুপারিশমালায় সড়কে থ্রি-হুইলার বা অনিবন্ধিত যানবাহন চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এগুলো চলাচল বন্ধের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, গাবখান সেতু এলাকায় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি প্রবলেম ছিল। এখানে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের পাশাপাশি বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জনবল সংকট রয়েছে, কিন্তু যে জনবল রয়েছে, তাদের দক্ষতাও কম। সড়ক আইন কার্যকরের বিষয়টি পুলিশের ওপরও বর্তায়। গাবখানে হাইওয়ে পুলিশের কাছে স্পিড রাডার গান ছিল না।

জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম জানান, দুঘটনা রোধে তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো সংশ্লষ্ট দপ্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হচ্ছে।

 

;

চলমান তাপদাহ নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

তাপদাহ নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাজশাহীর লক্ষ্মীপুরে বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের এই কর্মসূচি দেশজুড়ে হচ্ছে। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা। সেই নির্দেশনা মেনেই আমরা কাজ করছি। তবে এই যে তাপদাহ এটি নিয়ে যাতে কেউ রাজনীতি না করে। এখানে আমরা সবাই সামাজিকভাবে কাজ করি। এই অনুরোধটি আজকের এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি থেকে সমস্ত রাজনৈতিক বন্ধুদের কাছে রাখলাম।

আসাদ বলেন, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের জীবনী শক্তি। শুধু তাপদাহের কারণে বৃক্ষরোপণ করছে তা নয়। এটি ছাত্রলীগের প্রতিবছরের কর্মসূচির অংশ। এই তাপদাহ আমাদের জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। গোটা পৃথিবীর পরিবেশ বিপর্যয়ের ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। একদিকে আমাদের যেমন সামাজিক ভাবে সচেতন হতে হবে, রাজনৈতিক ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি পরম করুণাময়ের কাছেও প্রার্থনা করতে হবে যেন তিনি আমাদের এই তাপদাহ থেকে রক্ষা করেন।

এদিন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সাগরের আয়োজনে ৫ হাজার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস.এম তৌহিল আল তুহিন, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবু, সহ-সভাপতি শাহরিয়ার শিমুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মেরাজ প্রমুখ।

;

ঝিনাইদহ উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন হিরো আলম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঝিনাইদহ-১ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) গণমাধ্যমকে এতথ্য তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।

উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে হিরো আলম বলেন, আমি সৎ ও সাহসী মানুষ। সবাই চায় আমি যেন সংসদ সদস্য হয়ে সবার কথা বলি। সবার পাশে থাকি। তাই ঝিনাইদহ-১ আসনের উপ-নির্বাচনে স্থানীয়রা আমাকে চাচ্ছে। তারা বলেছে, দু-একদিনের মধ্যেই মনোনয়নপত্র তুলবেন। আমি আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখে সেখানে উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হয়েছি। সেইভাবে প্রস্তুতি চলছে।

তবে শেষপর্যন্ত মাঠে থাকতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন আলোচিত এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর।

ঝিনাইদহ-১ আসনের ভোট হবে আগামী ৫ জুন। এ উপ-নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ ৭ মে, মনোনয়নপত্র বাছাই ৯ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ মে। প্রতীক বরাদ্দ ১৭ মে ও ভোট হবে ৫ জুন।

এর আগে, জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন হিরো আলম। চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) মারা যাওয়ার পর শূন্য হওয়া ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনেও অংশ নেন তিনি। এই আসনটি রাজধানীর গুলশান, বনানী, ভাষানটেক থানা ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত। তবে কোনো নির্বাচনেই তিনি জিততে পারেননি।

;

ছাত্রলীগ নেতা সজিব হত্যা মামলার আসামি দুলাল অস্ত্রসহ গ্রেফতার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জে এম সজিব হত্যা মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন দুলাল ওরফে বামহাতি দুলালকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পরে তার দেওয়া তথ্যে একটি দেশীয় তৈরি এলজি ও দুটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

দুলাল সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের মান্দারের দিঘির পাড়া এলাকার মৃত আবদুল আজিজের ছেলে। সে সজিব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৮ নম্বর আসামি।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে জেলা পুলিশ এক প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পর পাহাড়ি দুলালকে গ্রেফতার করতে ঝিনাইদহ এবং খুলনা জেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হয়। পরে তাকে খুলনার ডুমুরিয়া থানাধীন শরাপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। সেখান থেকে তাকে লক্ষ্মীপুরে নিয়ে আসা হয়।

পুলিশ আরও জানায়, দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সোমবার (২৯ এপ্রিল) ভোররাতে তার বসতবাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি দেশীয় তৈরি এলজি ও দুই রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

প্রেস বিফ্রিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারেক বিন রশীদ বলেন, আসামি দুলাল জিজ্ঞাসাবাদে অন্য আসামিদের নামও বলেছে। তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। মামলার প্রধান আসামি কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুকেও গ্রেফটতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, ১২ এপ্রিল রাতে চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন পাঁচপাড়া গ্রামের যৈদের পুকুরপাড় এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী সজীব, সাইফুল পাটোয়ারী, মো. রাফি ও সাইফুল ইসলাম জয়ের উপর অতর্কিত হামলা চালায় অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে সজিবকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এ সময় তাকে বাঁচাতে গেলে অন্যদের
উপরও গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সোমবার রাতে সজিবের মা বুলি বেগম বাদি হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাজী বাবলুসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছে। এতে ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। ১৬ এপ্রিল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় এম সজিব। এ মামলায় বিভিন্ন সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তাজু ভূঁইয়াসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

;