চুল মানুষের সৌন্দর্য প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাহারি ডিজাইনের চুল কাটতে মানুষ ছুটে যায় সেলুন বা পার্লারে। তবে রাজধানী, শহর, উপশহর ও গ্রামে চুলের কাটিং মূল্যের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। স্থান, কাল, ও পাত্র ভেদে নির্ধারিত হয় নাপিতের পারিশ্রমিক। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতর সাধারণ মানের সেলুনে দাঁড়ি-গোফ কাটার মূল্য দিতে হয় শত টাকা, আর চুলের ডিজাইন করতে গুণতে হয় কয়েক’শ টাকা। এ সময়ে এসেও মাত্র ৩০ টাকায় মাথার চুলের নান্দনিক ডিজাইন করে দেন লব শীল।
সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে সামান্য পারিশ্রমিকে খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বসে মানুষের মাথার চুল, গোফ, দাঁড়ি সেফ করেন তিনি। তার ভ্রাম্যমাণ সেলুনে চুল কাটার মূল্য ৩০ টাকা, গোফ ও দাঁড়ি সেফ করা হয় মাত্র ২০ টাকায়।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সকালে কলাগাছি গ্রামের রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে ভ্রাম্যমাণ সেলুনে কাজ করতে দেখা যায় লব শীলকে।
দাঁড়ি সেফ করতে করতে লব শীল বার্তা২৪.কম’কে বলেন, আমরা পেশায় নাপিত। আমার বাপ দাদারাও এই কাজ করে গেছে, এখন আমিও করছি। আমার দুই ছেলে তারাও এই কাজ বেছে নিয়েছে। বংশ পরস্পরায় আমাদের সবাই এই কাজ বেছে নিয়েছে।
তিনি বলেন, সব পেশাতেই আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগায় এখন আর কেউ খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বসে, টুলের উপর বসে দাঁড়ি, গোফ, চুল কাটাতে চায় না। এসবের জন্য গ্রামের মানুষ এখন শহরে ছুটে যান। আগের মতো আমাদের আর কাজ হয় না। দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের পূর্বপুরুষদের এ পেশা। তাই বাপ দাদার আমলের পেশা ধরে রাখতে এখনো কাজ করছি। আধুনিকায়নের যুগে এসে আমাদের পেশা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
তিনি বলেন, এখর আর আগের মতো আমাদের আয় রোজগার হয় না। সারাদিনে যা আয় হয় তা দিয়ে পেট চলে না। আমরা খোলা আকাশের নিচে চুল কাটি বলে আমাদের মজুরি মাত্র ৩০ টাকা। গোফ ও দাঁড়ি সেফ করা হয় মাত্র ২০ টাকায়। কিন্তু যখন বাজারে চেয়ারে বসে একই ভাবে চুল কাটে তখন তাদের মজুরি হয় ৭০ টাকা। শুধু পার্থক্য আমরা খোলা আকাশের নিচে আর তারা দোকানের ভেতরে চেয়ারে বসিয়ে চুল কাটে।
তার ছেলেদের এ পেশায় নিয়ে আসছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বার্তা২৪.কম’কে বলেন, আমার ২ ছেলে। আমাদের পূর্বপুরুষদের পেশা ধরে রাখতে আমি তাদেরও এ পেশায় নিয়ে এসেছি। আমার দাদু এ কাজ করেছে, আমার বাবাও করেছে, এখন আমি করছি আর আমার দুই ছেলেও এ পেশায় কাজ করছে। তবে আয় কম হওয়ায় ছেলেরা এভাবে কাজ করতে চায় না বলেও জানান তিনি।
লব শীলের ছেলে গোলক শীলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে দেখছি বাবা সব মানুষের চুল কেটে আসছে। তাই আমরা দুই ভাই ও বাবার পেশা মাথাই তুলে নিয়েছি। আমরা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসেছি, সেখানে দোকান ভাড়া নিয়ে এ পেশা বহাল রাখেছি। আমরা গ্রামে গ্রামে ঘুরি না। গ্রামে কাটলে ভালো মজুরি পাওয়া যায় না কিন্তু শহরে একটা চুল, দাঁড়ি কাটলে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পাওয়া যায়।