করোনায় থমকে গেছে পদ্মা সেতুসহ সরকারের মেগা প্রকল্প



মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ সরকারের মেগা প্রকল্প

পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ সরকারের মেগা প্রকল্প

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে বিশ্বের সকল দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। আর এ থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। কারণ বাংলাদেশের মেগাপ্রকল্পের সরঞ্জামসমূহ সবই আসে চীন থেকে। করোনার প্রভাবে দেশের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আর তাতে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ সরকারের মেগা প্রকল্পের কার্যক্রমে। ১ লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি তৈরি পোশাক, চামড়া খাত, নিত্যপণ্য এবং ফলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা আমদানি-রফতানি। আর তাতে কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। চলমান এই অবস্থা নিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়েছে এফবিসিসিআই। সারাদেশের ২৫টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতামতের প্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

প্রায় ২ মাস ধরে করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি বন্ধ থাকায় চীন থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় তার বিকল্প উৎস জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে বের করার সুপারিশ জানিয়েছে। সংগঠনটি বলছে, বিকল্প সূত্র থেকে এলসি খোলার মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে সমন্বয় বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের বাইরের মিশনগুলোতে আউট সোর্সিং সেল খুলে স্বল্প ও দীর্ঘকালীন যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে আগামী দিনে যাতে আর কখনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারিভাবে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়, চীনের সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বর্তমান সরকার কর্তৃক চলমান ১ লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার ফলে এসব প্রকল্পের সময় ও ব্যয় দু’টোই বৃদ্ধি পাবার কারণে দেশের অর্থনীতির উপর বাড়তি চাপ পড়বে বলে আশঙ্কা করছে। চীন থেকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও ইকুইপমেন্ট আসতে না থাকলে অবকাঠামো উন্নয়নের এসব প্রকল্পের কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তাই কর্ণফুলী টানেলসহ অনেক মেগা প্রকল্প সম্পন্ন করতে দেরি হওয়ার কারণে প্রকল্প ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি পাবে।

সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দেশের ব্যবসায় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান অংশীদার হলো চীন।২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্য প্রায় ১৪.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ ৮৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের মত। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য ছিল ১১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রফতানি বাণিজ্য ছিল ৬৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর যে আমদানি করে তার প্রায় ৩৫ শতাংশ চীনের সঙ্গে। শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক দ্রব্য, ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট, ইলেকট্রনিক্সসহ সকল ধরনের তৈরি পণ্যই চীন থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। দেশের প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক খাতের ফেব্রিক্স ও সিনথেটিক ইয়ার্নের প্রধানতম উৎস্য হচ্ছে চীন। পোশাক খাতে বিশেষ করে ওভেন খাতের কাঁচামাল যোগানের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ এবং নীট খাতে ১৫-২০ শতাংশের উৎস হচ্ছে চীন। এছাড়া অন্যান্য অনেক শিল্প খাতের প্রধান কাঁচামালের উৎস হচ্ছে চীন।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্রবন্দর, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়ালসড়ক), চট্টগ্রামের দোহাজারী-রামু-গুমদুম পর্যন্ত দ্বৈতগেজ রেলপথ, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের জন্য কর্ডলাইন, পদ্মা সেতু থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল সুড়ং পথ, চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল নির্মাণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন, ঢাকা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির (ডিপিডিসি) আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন।

এফবিসিসিআইয়ের প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের কারণে দেশের শিল্প উৎপাদন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থায় ও সেবাখাতে প্রভাব পড়ছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর ব্যাখ্যায় বলা হয় সরবরাহ ব্যবস্থায় কাঁচামালের সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। এর ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও প্রভাব দেখা দিবে। কাঁচামালের সংকটের কারণে রফতানি খাতেও বিরাট প্রভাব পড়বে। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতার অর্থই হচ্ছে সেবা খাতেও সংকট দেখা দিবে। দেশের আর্থিক খাত বিশেষ করে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রেও সংকট দেখা দিবে। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থায় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে প্রভাব পড়বে।

   

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতামূলক নেতৃত্বের আহ্বান সায়মা ওয়াজেদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশিয়া বিভাগের প্রধান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে ডব্লিউএইচওর এক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নে সায়মা ওয়াজেদ বলেন, এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের জন্য কোন কোন কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সে সম্পর্কিত একটি নতুন রোডম্যাপ তৈরি করা প্রয়োজন। এই ভৌগলিক অঞ্চলের সব দেশের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে যদি তা তৈরি হয়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যাগুলো শনাক্ত করা সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, নারী, শিশু, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার এবং প্রান্তিক লোকজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রস্তাবিত নতুন কর্ম পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং যদি তা ঘটে তাহলে একদিকে যেমন ডব্লিউএইচওর কার্যকলাপের সঙ্গে নতুন অংশীদারদের সংযোগ ঘটবে, অন্যদিকে সব দেশের সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি সমন্বিত নেতৃত্বও গঠন হবে, যা সংস্থার কর্মসূচিক এগিয়ে নিয়ে যাবে।

নয়াদিল্লির সম্মেলনে ডব্লিউএইচও’র দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচির রোডম্যাপ এখন আপনাদের হাতে। আপনারা সবাই এসব কর্মসূচির অংশীদার। এটা আমার একার রোডম্যাপ নয়, বরং আমাদের। তাই ডব্লিউএইচও’র পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ সদিচ্ছা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।

সূত্র : ইউএনবি

;

দুই জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

কক্সবাজার এবং সিলেটে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য দেয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে বুধবার (১ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

;

পটুয়াখালীতে বালিচাপা দেওয়া অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার 



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পটুয়াখালী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পটুয়াখালীতে বালির স্তুপ থেকে এক ৪০ বছর বয়সী অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (১ মে) রাত ৭ টায় সদর উপজেলার শিয়ালি এস এস ফিলিং স্টেশনের পাশে বালির স্তুপ থেকে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

স্থানীয়রা জানান, বুধবার বিকেলে দোকান খোলার পরে পচা দূর গন্ধে বসা যাচ্ছিলো না। পরে চৌকিদারকে কল দিলে চৌকিদার খোঁজ করতে করতে বালির স্তুপের ভিতরে থেকে একটি হাত দেখতে পায়। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে। 

পটুয়াখালী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল বলেন, বালির স্তুপ সরিয়ে অজ্ঞাত এক পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে দুই দিন আগে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে বালিচাপা দেওয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

;

শুধু মে দিবসই নয়, ঈদেও ছুটি মেলে না চাতাল শ্রমিকদের



আল মামুন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মহান মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস কি জানে না জেলার চাতাল শ্রমিকরা। মে দিবসে সরকারিভাবে বন্ধ থাকলেও কাজ চালিয়ে যেতে হয় তাদের। জীবনের সাথে যুদ্ধ ও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কোনোরকমে বেঁচে আছেন তারা। চাতাল শ্রমিকরা দিন রাত বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে ধান থেকে চাল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি মানুষের চালের দাহিদার যোগান দেন। সেই চাতালের নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে যুগের পর যুগ বঞ্চিত হয়ে আসছেন। শুধু মে দিবসই নয় ঈদেও মেলেনা ছুটি।

সরেজমিনে জেলার চাতাল কলগুলোতে গিয়ে জানা যায়, ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে জেলার আশুগঞ্জে চাতাল কলের গোড়াপত্তন শুরু হয়। ধীরে ধীরে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে যোগাযোগ সহজ ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার কারণে এখানে এ শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটে। এছাড়াও এখানে দেশের অন্যতম বৃহত্তম আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্যাসের সহজলভ্যতার কারনে চাতাল কল স্থাপন দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বৃহত্তর ধান ও চাউলের মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে প্রায় ৩’শতাধিক চাতালকল। আর এখানে নিয়োজিত আছে প্রায় ১০ সহস্রাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক। যারা দিনে রাতে কাজ করছেন ধান থেকে চাল উৎপাদন কাজে। এ চাতাল কলগুলো থেকে প্রতিদিন ৩০/৩৫ হাজার টন চাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এই চাতাল কলগুলোতে ধান সিদ্ধ করা থেকে শুরু করে চাউল বস্তাবন্দী করা পর্যন্ত সকল কাজ করতে হয় নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নওগাঁ ও ময়মনসিংহ সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস বা মে দিবস কি তারা জানেন না। এই দিনে সরকারিভাবে ছুটির কথা থাকলেও কাজ করতে হয় চাতাল শ্রমিকদের।

শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে যুগের পর যুগ বঞ্চিত হয়ে আসছেন

ভাই ভাই অটো রাইস মিলের শ্রমিক কালা মিয়া বলেন, প্রায় ৮ বছর যাবত চাতাল মিলে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোনদিন মে দিবসের ছুটি আমাদের মালিকরা দেন নাই। সরকারিভাবেও এমন নির্দেশনা আছে কিনা আমার জানা নাই।

খান মোহাম্মদ অটো রাইস মিলের চাতাল শ্রমিক মো. হানিফ মিয়া বলেন, মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের কথা কখনো শুনি নাই। এই দিনে আমরা কখনও কোনদিন কাজ বন্ধ রাখি নাই। কাজ না করলেতো পেটে খাবার মিলবে না। তাই কাজ করে যাই; ছুটির চিন্তা করি না।

চাতাল কন্যা মরিয়ম বেগম আক্ষেপ করে বলেন, মানুষের ঘুরাঘুড়ি করার অনেক ইচ্ছা থাকে। তারা তা করতেও পারে। আমাদেরও ইচ্ছা করে অন্য মানুষদের মত বিভিন্ন উৎসবে একটু বেড়ানোর। কিন্তু আমাদের দ্বারা তা আর সম্ভব হয় না।

আরেক চাতাল কন্যা রুমা বেগম  বার্তা২৪.কমকে বলেন, মানুষ যখন বিভিন্ন দিবসে ঘোরাঘুড়ি করে তখন আমার অনেক খারাপ লাগে। কারন প্রায় ৭ বছর যাবত আমি কাজের কারনে স্বশুর বাড়িতে যেতে পারি না। কোন ভাবেই কয়েকটা দিন বন্ধ করতে পারি না। ছুটি চাইলেও আমাদের ছুটি দেওয়া হয়না। আর আমাদের বেতন হয় উৎপাদন অনুযায়ী। তাই ইচ্ছা করলেই পেটের খাবার জোগার করার কথা চিন্তা করে যেতে পারি না।

এদিকে ভাই ভাই অটো রাইস মিলের মো. অলিউল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আসলে মালিকের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ও উৎপাদন অনুসারে তাদের কাজ হয়। তাই বন্ধ করা না করা এটা তাদের ব্যাপার। আর চাতাল শ্রমিকরা অনেককেই শিক্ষিত নয়। তাই তারা মে দিবস সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। তবে তারা যদি এই দিন কাজ না করতে চান এই ক্ষেত্রে মালিকের পক্ষ থেকে কোন বাধা নিষেধ নেই।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ এর আশুগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তানশেন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, অনেক চেষ্টা করেছি মালিক ও শ্রমিকদের বুঝানোর জন্য। রাইস মিল মালিক ও সরদারের জন্য আমরা পারি না। শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি কিন্তু সরদার এই জিনিসটা তারা বুঝাতে দেয় না। মালিকরা তাদের দিয়ে কাজ করায়।

কাজ করে যান; ছুটির চিন্তা করেন না

বিভিন্ন সময়ে এসব দাবি নিয়ে আমরা মালিকেদের সাথে আলোচনা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো দাবিই তারা মানেনি। তাই মে দিবসে সরকারি বন্ধ পালনসহ চাতাল শ্রমিকদের নূন্যতম মাসিক মজুরি প্রদানের জন্য চাতাল মালিকদের সমন্বয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানাচ্ছি।

জেলা রাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. বাবুল আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও এ অবহেলিত ও বঞ্চিত শ্রমিকদের পাশে তাদের কাউকেই দেখা যায়নি। জেলার রাইস মিল গুলোতে শ্রমিক দিবসে কোন বন্ধ থাকে না। সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ নিলে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেব। অবশ্যই এই দিনে শ্রমিকদের বন্ধ থাকা দরকার।

এই বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, জেলার চাতালকলগুলোতে শ্রমিকদের মে দিবসে কোন বন্ধ থাকে না বিষয়টি আমার জানা নাই। যেহেতু জেনেছি তাদের যেন মে দিবসে কাজ বন্ধ থাকে সেই বিষয়ে চাতাল মালিকদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

;