তীব্র গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শাক-সবজি অধ্যুসিত নরসিংদীর কৃষি ফসলের মাঠ। টানা রোদে নেতিয়ে পড়ছে ফসলের মাঠ, ঝরে পড়ছে লিচু, আম, লটকনসহ অপরিপক্ক বিভিন্ন মৌসুমী ফল। সেচ দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না এসব ফসল। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়ে ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে দাবি কৃষকদের।
এদিকে ফসল রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সেচ দেয়াসহ কৃষকদের বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
কৃষকরা জানায়, টানা গরমের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাকরোল, বেগুন, শসা, লাউ, চিচিংগা, করলা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া ও ডাটাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির মাঠ। প্রচন্ড রোদের কারণে সবজির জমি শুকিয়ে যাওয়ায় নেতিয়ে পড়ছে সবজিগাছ, পাতা, ঝড়ে পড়ছে ফুল ও অপরিপক্ক ফসল। সেচ দিয়ে ফসলের ক্ষতি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। চলতি সপ্তাহে বৃষ্টি না হলে এবং টানা দাবদাহ চলতে থাকলে শাক-সবজি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা কৃষকদের।
এছাড়া রোদের প্রভাবে আম, জাম, লিচু, লটকন, কাঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ক্ষতি হচ্ছে। যথাসময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়াসহ প্রচন্ড খরতাপে সবধরনের মৌসুমী ফল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কথা ব্যক্ত করেন কৃষকরা। একইভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মনোহরদীর পানের বরজের।
পলাশ উপজেলার মাঝেরচর গ্রামের কৃষক তারা মিয়া বলেন, বেগুন, শসাসহ বিভিন্ন সবজির মৌসুম চলছে। এসব ফসলে প্রয়োজনীয় পানিসহ নিয়মিত পরিচর্যার দরকার পড়ে। এবার প্রচন্ড খরতাপের কারণে জমিতে কাজ করা যাচ্ছে না। এছাড়া রোদে পুড়ে নেতিয়ে পড়ছে এসব ফসলের গাছ।
শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের কারারচর গ্রামের কলা চাষি তোফাজ্জল প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে কলা চাষ করেন। কিন্তু কিছুদিন আগে শিলাবৃষ্টিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার প্রচন্ড তাপদাহ ও খরায় কলা পাতা লাল হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। শিলাবৃষ্টির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় যখন তারা ক্লান্ত, ঠিক সেই সময়ে প্রচণ্ড খরা ও তাপদাহের কারণে এখন তারা দ্বিগুন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের পারুলিয়া গ্রামের কৃষক ফেলাল সরকার জানান, প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে তার আবাদকৃত দুই বিঘা ফসলের ক্ষতি হয়েছেন। অনেক ধানের গাছ পুড়ে গেছে।
রায়পুরা উপজেলার জয়নগর এলাকার লটকন চাষি কলিম উদ্দিন জানান, লটকন গাছে ফলন এসেছে। প্রচন্ড গরমে ঝরে যাচ্ছে। এছাড়া লোডশেডিং এর কারণে সেচ দেয়াও যাচ্ছে না।
একই এলাকার ফল চাষি শাহদাত বলেন, লটকন, লিচু ও আম গাছের ফুলসহ অপরিপক্ক ফসল ঝরে পড়ছে। সেচ দিয়েও আটকানো যাচ্ছে না। তাপ না কমলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
বারৈচা গ্রামের কৃষক সুমন দাস জানান, বৃষ্টির অভাবে সবজি ক্ষেত শুকিয়ে পড়ছে। গাছগুলো শুকিয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। গাছ মরে যাওয়ার ভয়ে পানিও দিচ্ছি না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নরসিংদীর উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, প্রচণ্ড দাবদাহের ক্ষতি হতে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল, মৌসুমী ফল রক্ষার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এসময়ে শাক-সবজি ও ধানের জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। বিশেষ করে ধানের জমিতে পানি জমা রাখতে হবে। সবজির চারা দিনের বেলা পলিথিন দিয়ে না ঢেকে রেখে অন্যান্য ধরনের যেমন বস্তা, চট বা কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে তাপ না লাগে। শুধুমাত্র বৃষ্টি/শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনার সময় পলিথিন দিয়ে সবজির চারা ঢেকে রাখতে হবে।
চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৬ হাজার ৫৪২ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। সবজির আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৩ শত হেক্টর। এছাড়া খরিপ মৌসুমে আরও ৭ হাজার ১ শত হেক্টর শাক-সবজির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে ৭ হাজার ৭ শত ৩৫ হেক্টর আবাদ হয়েছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।