জাককানইবিতে র‌্যাগিংয়ের দায়ে ৩ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ম্যানার শেখানোর নামে র‌্যাগ দেওয়ার অপরাধে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তারা হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তোয়াবা নুশরাত মীম ও শায়েরা তাসনিম আনিকা এবং চারুকলা বিভাগের মৌমিতা পারভীন। তারা তিনজনই ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, র‍্যাগিং বিরোধী কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শৃঙ্খলা বোর্ড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই তিনজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং অন্যান্য সকল প্রকার কার্যক্রম থেকে বিরত রেখে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফারহানা রহমান লিয়োনা ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরানকে আচরণ শেখানোর নামে র‌্যাগিং করা হয়। এতে প্রচণ্ড মানসিক চাপে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়।

র‌্যাগিংয়ের প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানরা। দুই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে র‍্যাগিং বন্ধের দাবি জানায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শৃঙ্খলা কমিটি বিকেলে এক জরুরি বৈঠকে বসে। পরে সেখানে র‌্যাগিংয়ের দায়ে ওই তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জল কুমার ধর জানান, অসুস্থ ছাত্রীর সাথে কথা বলে ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে তিন ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডাকা হবে। সেই সভায় বহিষ্কৃত ছাত্রীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

   

টানা তাপদাহে ক্ষতিগ্রস্ত নরসিংদীর শাকসবজির আবাদ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম,নরসিংদী
টানা তাপদাহে ক্ষতিগ্রস্ত নরসিংদীর শাকসবজির আবাদ

টানা তাপদাহে ক্ষতিগ্রস্ত নরসিংদীর শাকসবজির আবাদ

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শাকসবজি অধ্যুসিত নরসিংদীর কৃষি ফসলের মাঠ। টানা রোদে নেতিয়ে পড়ছে ফসলের মাঠ, ঝরে পড়ছে লিচু, আম, লটকনসহ অপরিপক্ক বিভিন্ন মৌসুমী ফল। সেচ দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না এসব ফসল। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়ে ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে দাবি কৃষকদের।

এদিকে ফসল রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সেচ দেয়াসহ কৃষকদের বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা জানায়, টানা গরমের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাকরোল, বেগুন, শসা, লাউ, চিচিংগা, করলা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া ও ডাটাসহ বিভিন্ন শাকসবজির মাঠ। প্রচন্ড রোদের কারণে সবজির জমি শুকিয়ে যাওয়ায় নেতিয়ে পড়ছে সবজিগাছ, পাতা, ঝড়ে পড়ছে ফুল ও অপরিপক্ক ফসল। সেচ দিয়ে ফসলের ক্ষতি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। চলতি সপ্তাহে বৃষ্টি না হলে এবং টানা দাবদাহ চলতে থাকলে শাকসবজি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা কৃষকদের।

এছাড়া রোদের প্রভাবে আম, জাম, লিচু, লটকন, কাঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ক্ষতি হচ্ছে। যথাসময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়াসহ প্রচন্ড খরতাপে সবধরনের মৌসুমী ফল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কথা ব্যক্ত করেন কৃষকরা। একইভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মনোহরদীর পানের বরজের।

পলাশ উপজেলার মাঝেরচর গ্রামের কৃষক তারা মিয়া বলেন, বেগুন, শসাসহ বিভিন্ন সবজির মৌসুম চলছে। এসব ফসলে প্রয়োজনীয় পানিসহ নিয়মিত পরিচর্যার দরকার পড়ে। এবার প্রচন্ড খরতাপের কারণে জমিতে কাজ করা যাচ্ছে না। এছাড়া রোদে পুড়ে নেতিয়ে পড়ছে এসব ফসলের গাছ।

শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের কারারচর গ্রামের কলা চাষি তোফাজ্জল প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে কলা চাষ করেন। কিন্তু কিছুদিন আগে শিলাবৃষ্টিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার প্রচন্ড তাপদাহ ও খরায় কলা পাতা লাল হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। শিলাবৃষ্টির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় যখন তারা ক্লান্ত, ঠিক সেই সময়ে প্রচন্ড খরা ও তাপদাহের কারণে এখন তারা দ্বিগুন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের পারুলিয়া গ্রামের কৃষক ফেলাল সরকার জানান, প্রচন্ড তাপদাহের কারণে তার আবাদকৃত দুই বিঘা ফসলের ক্ষতি হয়েছে। অনেক ধানের গাছ পুড়ে গেছে।

রায়পুরা উপজেলার জয়নগর এলাকার লটকন চাষি কলিম উদ্দিন জানান, লটকন গাছে ফলন এসেছে। প্রচন্ড গরমে ঝরে যাচ্ছে। এছাড়া লোডশেডিং এর কারণে সেচ দেয়াও যাচ্ছে না।

একই এলাকার ফল চাষি শাহদাত বলেন, লটকন, লিচু ও আম গাছের ফুলসহ অপরিপক্ক ফসল ঝরে পড়ছে। সেচ দিয়েও আটকানো যাচ্ছে না। তাপ না কমলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে আমাদের।

বারৈচা গ্রামের কৃষক সুমন দাস জানান, বৃষ্টির অভাবে সবজি ক্ষেত শুকিয়ে পড়ছে। গাছগুলো শুকিয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। গাছ মরে যাওয়ার ভয়ে পানিও দিচ্ছি না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নরসিংদীর উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, প্রচন্ড দাবদাহের ক্ষতি হতে শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল, মৌসুমী ফল রক্ষার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এসময়ে শাকসবজি ও ধানের জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। বিশেষ করে ধানের জমিতে পানি জমা রাখতে হবে। সবজির চারা দিনের বেলা পলিথিন দিয়ে না ঢেকে রেখে অন্যান্য ধরনের যেমন বস্তা, চট বা কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে তাপ না লাগে। শুধুমাত্র বৃষ্টি/শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনার সময় পলিথিন দিয়ে সবজির চারা ঢেকে রাখতে হবে।

চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৬ হাজার ৫৪২ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। সবজির আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৩ শত হেক্টর। এছাড়া খরিপ মৌসুমে আরও ৭ হাজার ১ শত হেক্টর শাকসবজির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে ৭ হাজার ৭ শত ৩৫ হেক্টর আবাদ হয়েছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

;

মহাখালী লেকে শিশু নিখোঁজ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর মহাখালীর টিবি গেট এলাকায় লেকের পানিতে পড়ে গতকাল রাতে রিয়া নামের ৬ বছরের শিশু নিখোঁজ হয়। সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল আবারও অভিযান শুরু করে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য।

তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, যেখান বলা হচ্ছে শিশুটি নিখোঁজ হয়েছে সেখানে পানি অনেক কম এবং সমতল। আদৌ শিশুটি পানিতে পড়েছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত শিশুটির আত্মীয়-স্বজন কাউকে পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক বলেন, গতকাল রোববার সন্ধ্যা রাত ৭টা ৫০ মিনিটে শিশুটির নিখোঁজের খবর আসে। পরে রাত ১২টা পর্যন্ত অভিযান চলে। অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় রাত ১২টায় অভিযান স্থগিত করা হয়। এরপর সোমবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিট থেকে দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু হয়।

তিনি বলেন, তবে এখন পর্যন্ত ডুবুরি দল জানিয়েছে লেকে পানি অনেক কম এবং সমতল। শিশুটি পানিতে পড়লে এতোক্ষণে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হতো। এদিকে শিশুটির আত্মীয়-স্বজন এমন পরিচয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ আসেনি।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে শিশুটি আদৌ পানিতে পড়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুল ইসলাম বলেন, ফাতেমা নামে আরেক শিশুর কাছে জানতে পারি তার সঙ্গে রিয়া নামের এক শিশু ছিল। তারা দুইজনেই ভিক্ষাবৃত্তি করে। রিয়া ব্রিজের ওপর থেকে লেকের পানিতে পড়ে যায়। রিয়ার বয়স আনুমানিক ৬ বছর।

;

কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যবসায়ী নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়ার মিরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় শাহজাহান কবিরাজ (৪৮) নামে এক সবজি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

সোমবার সকালে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মশান বাজারের কাছে চেয়ারম্যান রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহত শাহজাহান মিরপুর পৌরসভার যুগিপোল মহল্লার মৃত আব্দুর রাজ্জাক কবিরাজের ছেলে। তিনি মিরপুর পৌর বাজারের একজন সবজি ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে মিরপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) তুহিন জানান, সোমবার সকালে জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে ফোন কল পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। গুরুতর আহত অবস্থায় শাহজাহান কবিরাজকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বজনেরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, তিনি কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুরের দিকে যাচ্ছিলেন।

তবে কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনাটি হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারেননি।

;

৩০ বছর চাকরি করেও শিক্ষিকার বেতন সাড়ে ৬ হাজার, পাচ্ছেন না এমপিও



আল-আমিন রাজু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
৩০ বছর চাকরি করেও শিক্ষিকার বেতন সাড়ে ৬ হাজার, পাচ্ছেন না এমপিও

৩০ বছর চাকরি করেও শিক্ষিকার বেতন সাড়ে ৬ হাজার, পাচ্ছেন না এমপিও

  • Font increase
  • Font Decrease

 

রাজধানীর রাজউক উত্তরা আইডিয়াল হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষিকা শাহানা সুলতানা। প্রায় ৩০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন তিনি। দীর্ঘ চাকরিজীবনে শতশত শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দেওয়া শাহানা সুলতানার জীবনে সঙ্গী না পাওয়ার আক্ষেপ। মানুষ গড়ার এই কারিগরের তিন দশকে মাসিক বেতন মাত্র সাড়ে ৬ হাজার টাকা।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে একজন সাধারণ শ্রমিকের মাসিক আয় যেখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, সেখানে নামমাত্র বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বিদ্যালয় মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিও পেলেও তিনি পাচ্ছেন না সেটা। তাকে বঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠেছে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে। তবে প্রধান শিক্ষক নিজেকে ‘নিরীহ’ দাবি করে সব অভিযোগ করছেন অস্বীকার।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর বাবা নওয়াব আলী মাস্টার ‘রাজউক উত্তরা আইডিয়াল হাইস্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছর সুলতানাসহ পাঁচজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সুলতানা ছিলেন ওই সময়ে নিয়োগ পাওয়া একমাত্র নারী শিক্ষিকা। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯৫ সালে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে অদ্যাবধি পাঠদান করছেন তিনি। প্রতিষ্ঠাকালে সকল শিক্ষকদের আশ্বস্ত করা হয় এমপিও হলে সবাইকে দেওয়া হবে। কিন্তু বারবার বাদ পড়ছেন নারী শিক্ষিকা শাহানা সুলতানা।

অভিযোগ ওঠেছে, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সুলতানার ২০ বছর পরে নিয়োগ পাওয়া অন্য এক জুনিয়র শিক্ষককে এমপিও পাইয়ে দেওয়ার জন্য বারবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে আসছেন। যদিও এমপিও দেওয়ার শর্ত অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠান শুরুর সময়ে যথাযথ নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এমপিও পাওয়ার যোগ্য হবেন।

২০২২ সালে এমপিওভুক্ত হয় রাজউক উত্তরা আইডিয়াল হাইস্কুল। এরপর স্কুলের পিওনও এমপিও পেলেও কেবল বাদ পড়েছেন সুলতানা। ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নানাভাবে সুলতানার এমপিও পাওয়ার আবেদনের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টির অভিযোগ ওঠেছে প্রধান শিক্ষক শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে।

 

স্কুল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আর্থিক সুবিধা ও স্থানীয় হওয়ায় সহকারী এক জুনিয়র শিক্ষককে এমপিও পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। অথচ সহকারী শিক্ষিকা সুলতানা ও প্রধান শিক্ষক শহীদুল্লাহ একই বছর নিয়োগ পান। ১৯৯৫ সালে স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির বোর্ড সভায় তাদের নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। এমপিওভুক্তি শুরু হওয়ায় সুলতানার নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে, যদিও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের তদন্তে ওঠে এসেছে সুলতানার নিয়োগ যথাযথ ও নিয়ম মেনেই হয়েছে।

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালকের কাছে এমপিওভুক্ত না হওয়া ও ইচ্ছাকৃতভাবে নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন শাহানা সুলতানা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে রাজউক উত্তরা আইডিয়াল হাইস্কুলে বিরতিহীনভাবে সহকারী শিক্ষক পদে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০২২ সালে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক শাহানা সুলতানাকে বাদ দিয়ে চাকরিতে তার থেকে প্রায় ১৯ বছরের জুনিয়র একজন শিক্ষককে এমপিও ভুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের এমপিও ভুক্তির পর সরকার নির্ধারিত জনবল কাঠামো বিধান অনুযায়ী এমপিও যাচাইবাছাই কমিটি এমপিওভুক্তির যোগ্য হিসাবে প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনের পর ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রথমবার প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও আবেদন পাঠান। কিন্তু সেখানে বাদ দেওয়া হয় সুলতানার নাম। এভাবে একে একে ২০২৩ সালেই তিন বার এই শিক্ষিকার নাম বাদ দিয়ে আবেদন পাঠানো হয়। আর প্রতিবারই আবেদন ফিরিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়।

দীর্ঘ ২৯ বছর চাকরি করলেও এখনো নামমাত্র পারিশ্রমিক পাচ্ছেন শাহানা সুলতানা। চাকরি করলেও পরিবারের সহায়তায় চলতে হচ্ছে জানিয়ে এই শিক্ষিকা বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে আমি চাকরি করছি। প্রধান শিক্ষক ও আমি একই সঙ্গে ১৯৯৫ সালের বোর্ড সভায় নিয়োগ পাই। কিন্তু ২০২২ সালে এমপিও চালু হওয়ায় আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। বারবার আবেদন করেও আমার এমপিও পাচ্ছি না। কারণ প্রধান শিক্ষক আমার নাম বাদ দিয়ে আমার ২০ বছর পরে নিয়োগ পাওয়া অন্য এক শিক্ষকের নাম পাঠাচ্ছেন।

শিশু-কিশোরদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিলেও নিজের ঘরে আলো নেই মন্তব্য করে এই শিক্ষিকা বলেন, ১৯৯৩ সালে আমি অনার্স পাস করি। সেই সময়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আলী মাস্টার আমাকে ডেকে এনে চাকরি দেন। কারণ সেই সময়ে অনার্স পাস কোনো নারী শিক্ষিকা পাচ্ছিলেন না। মাত্র ২২ বছর বয়সে শিক্ষকতা শুরু করি। এখন আমি একজন মধ্যবয়স্ক নারী। সেই সময়ে আমিসহ পাঁচজন নিয়োগ পেয়েছিলাম। তখন থেকে নামমাত্র পারিশ্রমিকে চাকরি করে এসেছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল যে, এমপিওভুক্ত হলে বেতন বাড়বে। কিন্তু এখনো আমি মাত্র সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতন পাই। এই টাকা দিয়ে কী হয়? আমি চাকরিজীবী হলেও চলতে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের টাকায়। এরচেয়ে কষ্টের কী আছে!

এদিকে সুলতানাকে এমপিওভুক্তিতে সুযোগ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেকে ‘নিরীহ’ দাবি করে রাজউক উত্তরা আইডিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, এটা নিয়ে অনেক কথা। অনেক বিধি, মন্ত্রণালয়, থানা শিক্ষা অফিস আছে। তাদের প্রশ্ন করেন। আমি নিরীহ মানুষ আমাকে করেন কেন? স্কুল সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে, তাদের কাছে প্রশ্ন করেন।

সুলতানার কাগজ না পাঠিয়ে এক জুনিয়র শিক্ষকের আবেদনের কাগজ বারবার পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমাকে এই প্রশ্ন কোইরেন না। আমি তাকে নিয়োগও দিইনি। এরমধ্যে আমি নাই। আমাকে মাফ করেন। আমি নিরীহ মানুষ। মাফ চাই।’

এদিকে সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে জুনিয়র শিক্ষকের এমপিও ভুক্তির একই আবেদন বারবার পাঠানোর কারণে বিরক্ত সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ঢাকা অঞ্চল কার্যালয়।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা অঞ্চলের জেলা শিক্ষা অফিসের  উপ-পরিচালক আব্দুল খালেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমার যথাযথ কারণ জানতে থানা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে একটি কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছি। তারা ব্যাখ্যা দিলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারব।

;