তীব্র খরতাপে পুড়ছে সারা দেশ, জারি রয়েছে হিট অ্যালার্ট। রোদের প্রখরতা এতই প্রখর যে বাইরে গরমের মধ্যে টেকা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। গরমে হাসফাঁস অবস্থা সকল বয়সী মানুষের। গরম থেকে রক্ষা পেতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে স্কুল কলেজ। সপ্তাহের ২য় কর্মব্যস্ততার দিনেও শহরে নেই তেমন কোন কোলাহল। ফেনী শহরের বিভিন্ন সড়কে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশ কম লোকসমাগম দেখা গেছে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে ফেনী শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কে মানুষের আনাগোনা নেই। চায়ের দোকানে ভিড় নেই, রাস্তায় গাড়ির সংখ্যাও কম। পথচারীরাও তেমন প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় যাচ্ছেন না। অন্যদিকে স্কুল কলেজ খুললেও অন্যান্য দিনের মতো শ্রেণিকক্ষে তেমন একটা উপস্থিতি ছিলনা ।
শহরের নাজির রোডের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, এই রোদে বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যায় না। একটা কাজ ছিল তাই বের হয়েছি, শেষ করেই বাসায় চলে যাব।
আব্দুর রহিম নামে একজন বলেন, তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। এ রোদের মধ্যে টিকে থাকা মুশকিল। শহরের মানুষের চলাচল কম। দরকার ছাড়া কেউ তেমন বের হয়নি।
বাইরে লোকজন কম বের হওয়ায় বেচাবিক্রি কমেছে এলাকাভিত্তিক দোকানগুলোতে। ট্রাংক রোডের চা বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, এই গরমে কেউ চা খেতে আসে না। দু-একজন আসে নাস্তা করে। যারা আসে বেশিরভাগই ঠান্ডা পানি বা কোক খায়।
মুদি দোকানিরা বলছেন, ভরদুপুরে ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই কম। মূলত সন্ধ্যার পর ক্রেতাদের সমাগম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
বড় বাজারের রমনী সাহা স্টোরের সত্ত্বাধিকারী হিরা লাল বলেন, প্রচণ্ড রোদে মানুষজন বা কাস্টমাররা খুব একটা বের হয় না। আগে এ সময়ে যে বিক্রিটা হতো, সেটি কমে গেছে। তবে, সন্ধ্যার পর বেচাবিক্রি কিছুটা বাড়ে।
গরমের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে পরিবহনেও। সড়কে অন্যান্য সময়ের তুলনায় দিনের বেলা গাড়ির পরিমাণও কম দেখা যায়। গাড়িতে সাধারণত যাত্রীর আধিক্য দেখা যায়। তবে দুপুরের দিকে বেশিরভাগ গাড়ি প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে। শহরের রিকশার পরিমাণ ও কম ছিল।
যাত্রীরা বলছেন, গরমে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই বিকল্প উপায়ে বা রোদ চড়া হওয়ার আগেই গন্তব্যে পৌঁছান। দুপুরের সময় প্রয়োজন ব্যতীত কেউ বের হচ্ছেন না।
শহরের টাউন সার্ভিসের চালক শামসুল বলেন, গরমে অনেক যাত্রী বাসে উঠতে চায়না। গরমের কারণেই বাসে যাত্রীর পরিমাণ কমে গেছে। ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই বাসে না চড়ে সিএনজি বা মোটরসাইকেলে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ফলে যাত্রীর সংখ্যা কম। এতে আমাদের আয় রোজগারেও প্রভাব পড়েছে।
শহরের রিকশা চালক মতিন মিয়া বলেন, গরমে বের হওয়া অনেক কষ্টকর। তাই অনেক চালক রাতে বের হয়। তবে আমাদের পেটের দায়ে বের হতে হয়। নাইলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। তবে এ গরমে সহ্য হয়না।
গরমে কয়েকটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভালো উপস্থিতি দেখা গেলেও বেশ কয়েকটি স্কুলের অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
নাদিরা আঞ্জুম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, তীব্র গরমে অবস্থা নাজেহাল। প্রাইভেট পড়ে স্কুলের কয়েকটি ক্লাস করে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি। এ গরমে ক্লাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত নাথ বলেন, স্কুল অনেকদিন পর খুলেছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি মোটামুটি ভালো ছিল। শিক্ষার্থীদের বেশি করে পানি পান করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে যাতে করে গরমে তাদের কোন অসুবিধা না হয়।
এদিকে চলমান দাবদাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানান আবহাওয়া অফিস। ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, ফেনীতে ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। বাতাসের আর্দ্রতা ৫০ শতাংশেত মধ্যে । আরও কয়েকদিন তাপপ্রবাহ স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।