৪৯ বছর পর রাজশাহী পুলিশ লাইন্স গণকবরে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, ছবি: বার্তা২৪.কম

শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা ২৮ মার্চ। দুপুরে খেতে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাজশাহী পুলিশ লাইন্সের কর্মরত পুলিশ সদস্যরা। হঠাৎ মর্টার ও ভারী মেশিনগান নিয়ে লাইন্সের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে অতর্কিত হামলা শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েন পুলিশ সদস্যরা।

যারা বাংকারে ছিলেন, তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ অস্ত্র-গুলি নিয়ে শুকনা ড্রেনে অবস্থান নেন। নেতৃত্ব শূণ্যতা এবং আকস্মিক আক্রমণে দিশেহারা পড়েন ট্রেনিংপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরাও। আগের দু-তিন দফার মতো আর সেদিন প্রতিরোধ করতে পারেনি।

হিংস্র হানাদার বাহিনীর নৃশংসতায় সেদিন শহীদ হন ১৯ জন পুলিশ সদস্য। তাদের মরদেহ সারি সারি করে পুলিশ লাইন্সের পূর্ব অংশে সমাহিত করা হয়। যা রাজশাহী পুলিশ লাইন্সের গণকবর বলে পরিচিত। দেশ স্বাধীনের ৪৯ বছর পার হলেও সেখানে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি।

তবে এবার সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পুলিশ। শহীদদের স্মৃতিতে সেখানে নির্মাণ করা হবে স্মৃতিস্তম্ভ। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শুরু হবে কাজ।

কয়েকবছর আগেও স্থানটি ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ ছিলো বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে সোমবার সেখানে গিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা যায়। তিনজন পুলিশ সদস্যও ২৪ ঘণ্টা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। জঙ্গল কেটে মাটিভরাট করে জায়গাটি উঁচু করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে সীমানা প্রাচীরও।

রাজশাহী পুলিশ লাইন্স গণকবরে নির্মিত হবে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ

প্রাচীরের পাশে রয়েছে শহীদ পুলিশ সদস্যদের নামফলক। এতে ১৭ জনের নাম লেখা রয়েছে। তারা হলেন- শহীদ আর্মড এসআই এনায়েত খান, কনস্টেবল আবদুল আজিজ, ওসমান খান, আবদুর রহমান, আককাস আলী, রইছ উদ্দীন, জয়নাল আবেদীন, আলাউদ্দীন, আলীমুদ্দিন, আবদুল হামিদ, সাদেকুল ইসলাম, মেছের উদ্দিন, আবু ইলিয়াছ, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মালেক, সিরাজুল ইসলাম ও আবদুল আজিজ মোল্লা।

তবে এই গণকবরে ১৯ জনের মরদেহ সমাহিত করা হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ২৮ মার্চের সম্মুখ সমরের পর ২৯ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বোয়ালিয়া থানার ওসি দৌলত খানের কাছে ১৮ জন পুলিশ সদস্যের লাশ হস্তান্তর করে। আর একজনের লাশ পুলিশ লাইন্সে থেকে যায়। পরে পুলিশ লাইন্সের মধ্যেই আম ও বাবলাগাছে ঘেরা বাগানের মধ্যে ১৯ জন শহীদ পুলিশকে সমাহিত করা হয়।

রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘পুলিশ লাইনের পাশে শহীদ মামুন মাহমুদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। সেখানে ১৯ জন শহীদের নামই লেখা আছে। গণকবরের স্থানে যখন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে, তখন এখানেও ১৯ জনের নাম-পরিচয় রাখা হবে।’

   

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে আগ্রহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে আগ্রহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সফরত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে এ কথা বলেছেন।

বাংলাদেশে সফররত সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সালমান এফ রহমান বলেন, র‍্যাবের স্যাংশন নিয়ে আমরা কথা বলেছি। লু জানিয়েছেন এটা আমাদের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের ব্যাপার।

ঢাকা সফরের প্রথম দিন মঙ্গলবার রাতে গুলশানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর চিফ অফ স্টাফ ন্যাথানিয়াল হাফটসহ আরও তিন কর্মকর্তা।

সালমান এফ রহমান ছাড়াও নৈশভোজে আরও উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, তথ্যমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী আলী আরাফাত, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবাহান, ঢাকা স্কুল অব বিজনেসের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ।

বিএনপি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী আলী আরাফাত বলেন, রাজনীতি, হিউমান রাইটস নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। মূলত বাংলাদেশের সঙ্গে তারা কাজ করতে চায় সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে নৈশভোজ শেষে সালমান এফ রহমানের বাসা ত্যাগ করেন মার্কিন প্রতিনিধি দল। পরে সাংবাদিকদের মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় দুই দেশ সম্মত হয়েছে।

;

গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তিন প্রার্থী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন একে একে সরে দাঁড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। তিন দিনে তিনজন চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এরা হচ্ছেন- মেহেরপুর- ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকনের স্ত্রী লায়লা আরজুমান বানু, গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম শফিকুল আলম।

ব্যক্তিগত ও ভোট সিন্ডিকেটের কারণ দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে জানান তারা।

গেল রবিবার (১২ মে) নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় শেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন লায়লা আরজুমান বানু। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। দিন না পেরোতেই সোমবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মোশাররফ হোসেন। নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়ছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) আবারও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন কাপ পিরিচ প্রতীকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উঠে আসে ভিন্ন কথা।

ঘোষণা দানকালে লায়লা আরজুমান বানুর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, পরবর্তীতে রাজনীতি করার স্বার্থেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এসময় লাইলা আরজুমান বানুর চোখে ছিল জল। তিনি দাবী করেছেন- রাজনৈতিক কোন চাপে নয়, ব্যাক্তিগত কারনেই নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানো।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একেএম শফিকুল আলম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান ভোটযুদ্ধ ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি। তবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ অব্যহত থাকবে বলেরও ঘোষণা দেন তিনি। তবে সিন্ডিকেট সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুন্তাজ আলী, আওয়ামী লীগ নেতা ইছার উদ্দীন, সাংস্কৃতিক সংগঠক মোরাদ হোসেনসহ একেএম শফিকুল আলমের ঘনিষ্টজনেরা।

প্রসঙ্গত, গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির এক প্রার্থীসহ আট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। বর্তমানে গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঠে থাকলেন

পাঁচজন প্রার্থী। পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের তিনজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

;

জিম্মিদশার দিনগুলো আর মনে করতে চান না আতিক



সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'আমাদের জিম্মিদশার দিনগুলা ভাল ছিল না, এসব দিনের কথা আমরা আর মনে করতে চাই না। সবাই আজকের এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। সবাইকে একসঙ্গে দেখে আরও বেশি ভালো লাগছে। সারা বাংলাদেশের মানুষজন আমাদের জন্য দোয়া করেছেন। সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা, বলার মত আর কিছু নেই। আমাদের এই মুক্তির বিষয়ে যারা কাজ করেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিশেষ কৃতজ্ঞতা আমাদের কোম্পানি কেএসআরএম, সরকারপক্ষ ও মিডিয়া কর্তৃপক্ষসহ পুরো বাংলাদেশ এর যারা আমাদের জন্য দোয়া করেছেন।'

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসে কেএসআরএমের মালিকানাধীন লাইটার জাহাজ এমভি জাহান মনিতে দাঁড়িয়ে বার্তা২৪.কমকে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন সোমালিয়ান জলদস্যু কর্তৃক জিম্মি হওয়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ খান।
এরপর জাহাজ থেকে মাটিতে পা রাখতেই প্রথমে নিজের দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেন তিনি। অনুভূতির কথা জানতে চাইলে আতিক উল্লাহ খান বলেন, 'অনেক ভালো লাগছে, যা বলে প্রকাশ করার মতো না। দ্বিতীয়বার জীবন পেলে মানুষের যে অনুভূতি জন্মায়, সেই অনুভূতিই এখন কাজ করছে। বড় একটি গর্বের বিষয় ছিল, যখন জলদস্যুদের থেকে লুকিয়ে জাহাজে ফেসবুক চালাতাম। তখন দেখতাম, সারা বাংলাদেশের মানুষ আমাদের জন্য দোয়া করছে। যেটি আমাদের মনোবল অনেক অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমরা এটাই ভেবে তখন মনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম যে, আমাদের পরিবারের সঙ্গে সারা বাংলাদেশের মানুষ আছে।'


জিম্মি অবস্থায় জীবনের নিশ্চয়তা নিয়ে কতটুক শঙ্কিত ছিলেন?- এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, 'ওরকম তেমন বেশি অনিশ্চয়তা ছিল না। আমরা আগে থেকে জানতাম, আমাদের কোম্পানিতে আগেও একবার এরকম জাহাজে জলদস্যুর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। সে সময় ওই নাবিকদের কোপাম্পানি ছাড়িয়ে এনেছে। সেটির অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের একটি আশা ছিল, কোম্পানিও আমাদেরকে ছাড়িয়ে নিবে। আমাদের মধ্যে এই আস্থাটা ছিল। কিন্তু কবে দেশে ফিরব সেটি নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা ছিল। তারপরও সবার প্রচেষ্টা এবং দোয়াতে আল্লাহর রহমতে মাত্র এক মাসের মধ্যে আমরা মুক্ত হয়েছি। তবে এত তাড়াতাড়ি যে ফিরতে পারব সেটি আশা করিনি।'

জিম্মি অবস্থার পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান বলেন, 'আমরা একে-৪৭ এর নাম শুনেছি, অথবা টিভিতে দেখেছি। কিন্তু সরাসরি কখনো দেখিনি। জিম্মি অবস্থায় দেখলাম, জাহাজে সেই একে-৪৭ আমার দিকে তাক করে আছে। পরিস্থিতিটা অবশ্যই অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ছিল। সে সময়ে আমরা মনে মনে দোয়া করেছি, ধৈর্য ধরেছি এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখেছি। এভাবেই জাহাজের দিনগুলো কেটেছে। অনেক ভয়ঙ্কর ছিল। এসব দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। জলদস্যুরা অনেক বড় বড় মেশিনগানও এনেছিল। তবে মাঝেমধ্যে তারা যখন ফায়ার করতো, আমরা অনেকে ঘুম থেকে সজাগ হয়ে যেতাম। ওই সময়টিতে অনেক ভয় লাগতো।

ছোট্ট দুইমেয়ে কোলে নিয়ে আতিক উল্লাহ বলেন, 'আমার দুই মেয়ে প্রথমে আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরেছে। ওরা দুইজনেই খুবই আনন্দিত। এর আগেও আমি যদি জাহাজে যেতাম, তখন থেকে তারা- বলে বাবা কখন আসবে। এখানে সবাই আসতে পারেনি, বাসায় পরিবারের অনেকজন অপেক্ষা করছে। আমরাও তাদের দিকে মুখিয়ে আছি।'


এদিকে দীর্য়দিন পর বাবাকে কাছে পেয়ে খুশি আতিক উল্লাহর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ইয়াশরা ফাতেমা বলে, 'বাবাকে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। সামনে ২৩ তারিখ থেকে আমাদের পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হলে বাবাকে নিয়ে ঘুরতে যাব। ঈদের সময় তেমন বেড়াতে পারিনি। এবার বাবাকে নিয়ে বেড়াবো।'

এদিন বিকেল চারটায় ২৩ নাবিককে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে ভিড়ে লাইটার জাহার এমভি জাহান মনি। এর কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই নাবিকদের এক নজর দেখতে বন্দর জেটিতে ভিড় করেছেন নাবিকের স্বজনরাসহ শতশত মানুষ।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে ২৩ নাবিক নিয়ে রওনা দেয় এমভি জাহান মনি-৩। বিকেল চারটায় অবসান হয় অপেক্ষার দীর্ঘ দুমাসের অপেক্ষার। এর মধ্যেই শুরু হয় নাবিকদের বরণের উৎসব। লাল রঙের জাহাজটি বন্দরে ভিড়ার কয়েক মিনিট আগে থেকেই নাবিকরা দূর থেকে হাত নেড়ে জানান দেন, আমরা এসেছি! এদিকে জেটিতে থাকা স্বজনরাসহ সকলে তাদেরকে হাত উঁচিয়ে স্বাগত জানায়। এরপর ৪টা ১৮ মিনিটের দিকে জাহাজ থেকে একে একে নেমে আসেন ২৩ নাবিক। নাবিকদের বরণ করে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করেছিলেন নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা। নাবিকদের কাছে পেয়ে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয় জেটি এলাকায়।

এর আগে সোমবার (১৩ মে) বিকেল ৬টায় বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে ২৩ নাবিকসহ নোঙর করে এমভি আব্দুল্লাহ।

এমভি আব্দুল্লাহতে ছিলেন যে ২৩ নাবিক:

জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।

আগে ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন জাহাজটি ৩২ দিন জলদস্যুর কাছে জিম্মি থাকে। এরপর ১৪ এপ্রিল মুক্তিপণ দেওয়ায় জাহাজ থেকে নেমে যায় জলদস্যুরা।

;

গাইবান্ধায় নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, গ্রেফতার ৪



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, গ্রেফতার ৪

গাইবান্ধায় নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, গ্রেফতার ৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এক নারী তার সাবেক স্বামীকে নিয়ে ঘরে অবস্থান করার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ওই নারীকে নির্যাতন ও মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় হওয়া মামলার প্রধান আসামি মোনারুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুর ২টার দিকে পালিয়ে থাকা মোনারুলকে (৩৫) উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রধান আসামি মোনারুল ইসলাম ওই গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে এবং এই নারীর প্রথম স্বামী।

এছাড়া একই ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকালে শাহজাহান আলী (৪৮), আব্দুর ছাত্তার (৫৫) ও চামেলি বেগম (৪০) নামের আরো তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এর আগে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ৩৫ বছর বয়সী ওই নারীর নাম ছকিনা বেগম। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও মামলার এজাহার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। অসুস্থজনিত কারণে প্রায় ১৫ দিন আগে গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। প্রতিপক্ষরা তাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর উদ্দেশে দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করে আসছিল। সর্বশেষ গত রোববার রাতে পরিকল্পিতভাবে নারীর প্রথম স্বামী মোনারুল ইসলামকে তার শোয়ার ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। মোনারুল নারীর খাটের নিচে লুকিয়ে থাকেন। পরে সুযোগ বুঝে মোনারুল ইসলাম ওই নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন এগিয়ে আসায় মোনারুল পালানোর চেষ্টা করলেও ওই নারী তাকে জাপটে ধরে আটক করেন। ফলে মোনারুল আটক পড়ে। কিন্তু এঘটনার পরিকল্পনাকারী প্রতিপক্ষরা ওই নারীর কাছ থেকে মোনারুল ইসলাম ছিনিয়ে নেয়। পরে সাবেক স্বামীকে ঘরে ঢোকানোর অপবাদ দিয়ে ওই নারীকে দুষ্চরিত্রের প্রশ্ন তুলে তার বাড়ির সামনের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারপিট করা হয় এবং মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়।

এঘটনায় পরদিন সোমবার ছকিনা বেগম নিজেই বাদি হয়ে মোনারুলকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নামে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গতকাল তিনজন এবং আজ প্রধান আসামি মোনারুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম শাহ মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্থানীয়দের খবরে ওই রাতেই নারীকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরদিন এ ঘটনায় ওই নারী নিজে বাদি হয়ে সাতজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ মামলার প্রধান আসামি মোনারুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যান্যদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করি তারা দ্রুতই গ্রেফতার হবেন।

;