জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দেশে পৌঁছেছে। জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকের মধ্যে ছিলেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ইব্রাহিম খলিল উল্ল্যাহ বিপ্লব। দীর্ঘ দুইমাসের অপেক্ষার পর বিপ্লবের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন তার স্বজনরা। পরিবারের সদস্য নিরাপদে ফিরে আসার খবরে আনন্দে প্রহর গুনছেন তার মা, স্ত্রী ও সন্তানরা।
বিপ্লব ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের মোমারিজপুর গ্রামের আবুল হোসেনের বড় ছেলে। পরিবারে তার দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। তিনি জাহাজের ইলেক্ট্রিশিয়ান পদে কর্মরত ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকালে দীর্ঘ দুইমাস পর জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিকরা ছোট জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি-১) জেটিতে পৌঁছেছেন।
বিপ্লবের স্ত্রী উম্মে সালমা সোনিয়া বলেন, এর আগে ৮ মাস পর্যন্তও তিনি জাহাজে ছিলেন। বাড়ি আসার সুযোগ পাননি। তবে এবারের ঘরে ফেরা অন্য সময়ের চেয়ে একদম ভিন্ন। এতোদিন নানা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন পার করেছি। আজ আমাদের জন্য ঈদের আনন্দের চেয়েও বেশি।
তিনি বলেন, এ দুমাসের পুরোটা সময় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কেটেছে। শুরু থেকে জাহাজ মালিকপক্ষ, সরকার এবং গণমাধ্যম আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।
বিপ্লবের বয়োবৃদ্ধ মা রৌশনারা বলেন, গত দুই মাস কান্নাকাটি আর খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়েছি। আজকে ছেলেকে কাছে পাব। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
বিপ্লবের বড় ছেলে রেদোয়ান বিন ইব্রাহিম বলেন, রাতে আব্বু বাসায় আসবে বলেছে। অনেকদিন আব্বুর সঙ্গে দেখা হয়নি। আজকে অনেক ভালো লাগতেছে আমার। আব্বু আমার জন্য চকলেট-খেলনা নিয়ে আসবে বলেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আবুল হোসেনের চার ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে বিপ্লব সবার বড়। ৮ বছর আগে তিনি জাহাজের চাকরিতে যান। বর্তমানে বিপ্লবের স্ত্রী তার দুই ছেলেকে নিয়ে ফেনী শহরে নাজির রোডে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
এর আগে মার্চ মাসের ১২ তারিখ কার্গো নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে দুপুরে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে।
গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এর আগে একই দিন বিকেলে দস্যুরা তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ বুঝে নেয়। একটি বিশেষ উড়োজাহাজে মুক্তিপণ বাবদ ৩ ব্যাগ ডলার এমভি আবদুল্লাহর পাশে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। স্পিড বোট দিয়ে দস্যুরা ব্যাগ ৩টি কুড়িয়ে নেয়। দস্যুমুক্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে সোমালিয়ার উপকূল থেকে আরব আমিরাতের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ। ২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়াহ পৌঁছে। সেখানে কার্গো খালাস করে জাহাজটি একই দেশের মিনা সাকার থেকে কার্গো লোড করে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।