আজও শীতে কাঁপছে সারা দেশ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে দেশ

হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে দেশ

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’ প্রবাদটি এবার বদলে হয়ে যেতে পারে। কারণ আজ কেবল ৬ পৌষ। এরই মধ্যে সারা দেশে জেঁকে বেসেছে শীত। পৌষ মাস যেন সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

গত চার দিন ধরে দেশের কোথাও সূর্যের দেখা মেলেনি। কাঁপন ধরানো শীতের মাত্রা তুলনামূলক বেশি উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয়। উত্তরের এ জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে রাতের বেলায় আকাশ থেকে ঝরছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা।

হেডলাইট ও ফগ লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন

রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলেও রয়েছে শীতের তীব্রতা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন কুয়াশার কারণে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়। হাইওয়ে পুলিশের হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর হায়দার চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা অনেকাংশে কমে আসছে। যার ফলে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সামনের পথচারী ও বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

এ অবস্থায়, মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের চালকদের কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় ফগলাইট ব্যবহার ও গতিসীমা সীমিত রেখে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হল।

ঢাকায় ঘন কুয়াশা

ঘন কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয় পড়েছে। খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেককে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। শহরেও মানুষের চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। তবে শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম বেকায়দায়। ঘন কুয়াশা আর উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস শীতের তীব্রতাকে আরও বৃদ্ধি করেছে।

তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে

শনিবারও (২১ ডিসেম্বর) শীতের তীব্রতায় নাকাল পুরো দেশ। দমকা বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ফরিদপুরে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঘন কুয়াশার কারণে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ৫ ঘন্টা বন্ধ রাখা হয় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

শীতের তীব্রতায় রাস্তাঘাটে কমে গেছে মানুষের আনাগোনা

একই কারণে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটের ফেরি চলাচলও প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ ছিলো। পরে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফেরি চলাচল শুরু হয়।

বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে:

ঢাকা:

ঘন কুয়াশার কারণে শনিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ দুটি বিমানবন্দরের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুকূলে আসলে বিমান ওঠানামা স্বাভাবিক হবে।

ঘাসগুলো কুয়াশায় ভিজে আছে

চুয়াডাঙ্গা:

চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক সামাদুল হক জানান, কিছুদিন পর চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা আরো নিচে নেমে আসতে পারে।

ভোর থেকে ঘন কুয়াশা আর দমকা হাওয়ায় রাস্তাঘাট এবং বাজারে মানুষের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। সকাল ১১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে মাঠে লাগানো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এদিকে এলাকার মোড়ে মোড়ে মানুষ শীত থেকে বাঁচতে কাগজের টুকরো আর খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা

পঞ্চগড়:

হিমালয়ের হিম বাতাসের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ঘন কুয়াশার কারণে গত দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। ফলে নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছে চরম বিপাকে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) পাঁচটি উপজেলা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কনকনে শীতে বড় অসহায়ত্বে মাঝে জীবন যাপন করছে খেটে খাওয়া মানুষরা। অনেকেই খড়খুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আজ সকালে পঞ্চগড়ে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল থেকে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। হিমালয়ের হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারনে আজ শীতের তীব্রতা বেড়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৮ হাজার শীতবস্ত্র জেলার ৫টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও দেখা নেই সূর্যের।

জয়পুরহাট:

গত চারদিন ধরে এ জেলার আকাশে সূর্যের দেখা মেলেনি। আজ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবারও (২১ ডিসেম্বর) জেলার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে লোকজনের আনাগোনা ছিল কম। ঠাণ্ডা জনিত সমস্যায় আজ সকালেও বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা ছিলো বেশি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আজ জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সময় গড়ানোর সঙ্গে সাঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। শীতার্ত মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায়ও কম্বল পাঠানো হয়েছে।

কুড়িগ্রাম:

কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) জেলায় ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে।

সারা দেশের মতো এ জেলাতেও গত চারদিন ধরে নেই সূর্যের দেখা। রাতের শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার চর এলাকার মানুষ।

খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম বেকায়দায়

খুলনা:

ঘন কুয়াশার কারণে খুলনা থেকে বিভিন্ন রুটের ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ ট্রেনই গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা দেরি করে ছাড়ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সহস্রাধিক যাত্রী।

চিত্রা এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন, পার্বতীপুরের রকেট এক্সপ্রেস ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা এক্সপ্রেসও শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের বিষয়ে খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আমিরুল আজাদ বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে গতি কমিয়ে ট্রেন চালানো হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাতিল করা হচ্ছে ট্রেন যাত্রা। কুয়াশা কেটে গেলে শিডিউল বিপর্যয় অনেকটাই কমে আসবে বলে জানালেন তিনি।

শীতের কারণে কষ্ট পাচ্ছেন বৃদ্ধরা।

মেহেরপুর:

শনিবার সকালে মেহেরপুরে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজকে সকালেও সূর্যের দেখা নেই।

ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে গোটা জেলা। রোদ না থাকায় এবং উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাসে শীতের প্রকোপ বাড়ছে।

গাইবান্ধা:

গত চারদিন ধরে গোটা গাইবান্ধা জেলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। শীতের দাপটে সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি কাতর হয়ে পড়েছেন জেলার চরাঞ্চলসহ সাত উপজেলার ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ।

শীতের তীব্রতায় বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। প্রতিদিন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালগুলোয় ভিড় করছে মানুষ। এসব রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু আর বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারি পরিচালক মাসুদুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঘন কুয়ার কারণে কৃষকের সবজি ক্ষেত, বোরো বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এসব ফসল রক্ষায় কৃষকদের নানা পরামশ দেওয়া হচ্ছে।

   

পটুয়াখালীতে বালিচাপা দেওয়া অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার 



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পটুয়াখালী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পটুয়াখালীতে বালির স্তুপ থেকে এক ৪০ বছর বয়সী অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (১ মে) রাত ৭ টায় সদর উপজেলার শিয়ালি এস এস ফিলিং স্টেশনের পাশে বালির স্তুপ থেকে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

স্থানীয়রা জানান, বুধবার বিকেলে দোকান খোলার পরে পচা দূর গন্ধে বসা যাচ্ছিলো না। পরে চৌকিদারকে কল দিলে চৌকিদার খোঁজ করতে করতে বালির স্তুপের ভিতরে থেকে একটি হাত দেখতে পায়। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে। 

পটুয়াখালী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল বলেন, বালির স্তুপ সরিয়ে অজ্ঞাত এক পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে দুই দিন আগে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে বালিচাপা দেওয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

;

শুধু মে দিবসই নয়, ঈদেও ছুটি মেলে না চাতাল শ্রমিকদের



আল মামুন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মহান মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস কি জানে না জেলার চাতাল শ্রমিকরা। মে দিবসে সরকারিভাবে বন্ধ থাকলেও কাজ চালিয়ে যেতে হয় তাদের। জীবনের সাথে যুদ্ধ ও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কোনোরকমে বেঁচে আছেন তারা। চাতাল শ্রমিকরা দিন রাত বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে ধান থেকে চাল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি মানুষের চালের দাহিদার যোগান দেন। সেই চাতালের নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে যুগের পর যুগ বঞ্চিত হয়ে আসছেন। শুধু মে দিবসই নয় ঈদেও মেলেনা ছুটি।

সরেজমিনে জেলার চাতাল কলগুলোতে গিয়ে জানা যায়, ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে জেলার আশুগঞ্জে চাতাল কলের গোড়াপত্তন শুরু হয়। ধীরে ধীরে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে যোগাযোগ সহজ ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার কারণে এখানে এ শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটে। এছাড়াও এখানে দেশের অন্যতম বৃহত্তম আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্যাসের সহজলভ্যতার কারনে চাতাল কল স্থাপন দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বৃহত্তর ধান ও চাউলের মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে প্রায় ৩’শতাধিক চাতালকল। আর এখানে নিয়োজিত আছে প্রায় ১০ সহস্রাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক। যারা দিনে রাতে কাজ করছেন ধান থেকে চাল উৎপাদন কাজে। এ চাতাল কলগুলো থেকে প্রতিদিন ৩০/৩৫ হাজার টন চাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এই চাতাল কলগুলোতে ধান সিদ্ধ করা থেকে শুরু করে চাউল বস্তাবন্দী করা পর্যন্ত সকল কাজ করতে হয় নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নওগাঁ ও ময়মনসিংহ সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস বা মে দিবস কি তারা জানেন না। এই দিনে সরকারিভাবে ছুটির কথা থাকলেও কাজ করতে হয় চাতাল শ্রমিকদের।

শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে যুগের পর যুগ বঞ্চিত হয়ে আসছেন

ভাই ভাই অটো রাইস মিলের শ্রমিক কালা মিয়া বলেন, প্রায় ৮ বছর যাবত চাতাল মিলে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোনদিন মে দিবসের ছুটি আমাদের মালিকরা দেন নাই। সরকারিভাবেও এমন নির্দেশনা আছে কিনা আমার জানা নাই।

খান মোহাম্মদ অটো রাইস মিলের চাতাল শ্রমিক মো. হানিফ মিয়া বলেন, মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের কথা কখনো শুনি নাই। এই দিনে আমরা কখনও কোনদিন কাজ বন্ধ রাখি নাই। কাজ না করলেতো পেটে খাবার মিলবে না। তাই কাজ করে যাই; ছুটির চিন্তা করি না।

চাতাল কন্যা মরিয়ম বেগম আক্ষেপ করে বলেন, মানুষের ঘুরাঘুড়ি করার অনেক ইচ্ছা থাকে। তারা তা করতেও পারে। আমাদেরও ইচ্ছা করে অন্য মানুষদের মত বিভিন্ন উৎসবে একটু বেড়ানোর। কিন্তু আমাদের দ্বারা তা আর সম্ভব হয় না।

আরেক চাতাল কন্যা রুমা বেগম  বার্তা২৪.কমকে বলেন, মানুষ যখন বিভিন্ন দিবসে ঘোরাঘুড়ি করে তখন আমার অনেক খারাপ লাগে। কারন প্রায় ৭ বছর যাবত আমি কাজের কারনে স্বশুর বাড়িতে যেতে পারি না। কোন ভাবেই কয়েকটা দিন বন্ধ করতে পারি না। ছুটি চাইলেও আমাদের ছুটি দেওয়া হয়না। আর আমাদের বেতন হয় উৎপাদন অনুযায়ী। তাই ইচ্ছা করলেই পেটের খাবার জোগার করার কথা চিন্তা করে যেতে পারি না।

এদিকে ভাই ভাই অটো রাইস মিলের মো. অলিউল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আসলে মালিকের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ও উৎপাদন অনুসারে তাদের কাজ হয়। তাই বন্ধ করা না করা এটা তাদের ব্যাপার। আর চাতাল শ্রমিকরা অনেককেই শিক্ষিত নয়। তাই তারা মে দিবস সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। তবে তারা যদি এই দিন কাজ না করতে চান এই ক্ষেত্রে মালিকের পক্ষ থেকে কোন বাধা নিষেধ নেই।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ এর আশুগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তানশেন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, অনেক চেষ্টা করেছি মালিক ও শ্রমিকদের বুঝানোর জন্য। রাইস মিল মালিক ও সরদারের জন্য আমরা পারি না। শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি কিন্তু সরদার এই জিনিসটা তারা বুঝাতে দেয় না। মালিকরা তাদের দিয়ে কাজ করায়।

কাজ করে যান; ছুটির চিন্তা করেন না

বিভিন্ন সময়ে এসব দাবি নিয়ে আমরা মালিকেদের সাথে আলোচনা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো দাবিই তারা মানেনি। তাই মে দিবসে সরকারি বন্ধ পালনসহ চাতাল শ্রমিকদের নূন্যতম মাসিক মজুরি প্রদানের জন্য চাতাল মালিকদের সমন্বয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানাচ্ছি।

জেলা রাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. বাবুল আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও এ অবহেলিত ও বঞ্চিত শ্রমিকদের পাশে তাদের কাউকেই দেখা যায়নি। জেলার রাইস মিল গুলোতে শ্রমিক দিবসে কোন বন্ধ থাকে না। সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ নিলে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেব। অবশ্যই এই দিনে শ্রমিকদের বন্ধ থাকা দরকার।

এই বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, জেলার চাতালকলগুলোতে শ্রমিকদের মে দিবসে কোন বন্ধ থাকে না বিষয়টি আমার জানা নাই। যেহেতু জেনেছি তাদের যেন মে দিবসে কাজ বন্ধ থাকে সেই বিষয়ে চাতাল মালিকদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

;

হাসপাতালের এক্সরে মেশিন নষ্ট, ভোগান্তিতে রোগীরা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী 
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নীলফামারীর সৈয়দপুরের ১০০ শস্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে হাত এক্সরে করাতে এসে মমতা বেগম শুনেন, সরকারি হাসপাতালে এক্সরে মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। বাইরের হাসপাতালে এক্সরে করাতে বেশি টাকা লাগে যা বহন করা কষ্টসাধ্য।

হাসপাতালটিতে এক্সরে মেশিন টানা ২০ দিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় সেবা-বঞ্চিত হচ্ছেন কয়েকশত মানুষ৷ বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ফি দিয়ে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করছেন রোগীরা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন শহর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ২০০ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন এ হাসপাতালে। একদিনে দুর্ঘটনাসহ হাত-পা ভাঙা নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসেন গড়ে ২০-২৫ জন। গত ১৬ এপ্রিল হঠাৎ এক্সরে মেশিনের ইউপিএস নষ্ট হওয়ার কারণে অচল হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত মেশিনটি অচল হয়ে আছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক্সরে করতে আসা রোগীরা মেশিন নষ্ট হওয়ায় ফেরত যাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রুমের দরজায় একটি চিরকুটে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাময়িক সময়ের জন্য এক্সরে বন্ধ আছে লিখে রেখেছেন। বিশেষ করে দূর থেকে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।  

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী হালিম বলেন, আমার ছোট বাচ্চা অসুস্থ। বাসায় খেলার সময়ে পড়ে গিয়েছিলো খুব কান্নাকাটি করছে। হাসপাতালে ডাক্তারের পরামর্শে এক্সরে করাতে আসলাম  এসে শুনি মেশিন নষ্ট এখন বাইরে বেশি টাকা দিয়ে এক্সরে করাতে হবে। 

আরেক রোগী জিয়ারুল হক বলেন, এখানে এক্সরে করতে আসলাম এসে শুনি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। পরশুদিন এসেও আমি ঘুরে গেছি; আজকেও মেশিন ঠিক হয়নি ৷ এখানে করলে আমারা সুবিধা পাই। বাইরে করাতে গেলে বেশি টাকাও লাগে কষ্টও হয়।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর ১০০ শস্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নাজমুল হুদা বলেন, এক্সরে মেশিন নষ্ট হয়েছে। আমরা এটি দ্রুত চালু করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। 

;

শ্রমিক দিবসে স্বামীর হাতে নারী শ্রমিকের মৃত্যু



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মহান মে দিবসে পারিবারিক কলহের জেরে সাভারের আশুলিয়ায় স্বামীর বেধরক মারধরে পোশাক শ্রমিক স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। 

বুধবার(০১ মে) সন্ধ্যায় আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতাল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

নিহত ময়না বেগম(৬০) আশুলিয়ার উত্তর গাজীরচট এলাকায় পরিবারের সাথে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি স্থানীয় গ্রামীণ নিটওয়্যার লি. পোশাক কারখানায় ক্লিনার পদে চাকরি করতেন ।

গ্রেফতারকৃত স্বামী তৈমুর রহমান(৬৫) পেশায় দিনমজুর। তাদের গ্রামের বাড়ি নওগা জেলার নিয়ামতপুর থানার নিরাপাড়া গ্রামে।

নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বিকালে পারিবারিক কলহের জেরে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ময়না বেগমকে মারধর করে তার স্বামী। পরে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের শরীরে কিল-ঘুষির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানায় পুলিশ।

আশুলিয়া থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বদিউজ্জামান বার্তা ২৪.কমকে বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরিবারে আর্থিক অনটন নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ চলে আসছিল। নিহতের পরিবার বাদি হয়ে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।



;