ধান বিক্রির ডিজিটাল পদ্ধতি জানেন না কৃষকরা
সারাদেশে সরকারিভাবে আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহ শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ। বুধবার (২০ নভেম্বর) থেকে দেশের সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এবার ধান সংগ্রহে ডিজিটাল পদ্ধতি ‘কৃষকের অ্যাপ’ নতুন মাত্রা যোগ এনেছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের আট বিভাগের ১৬ উপজেলা থেকে প্রথমবারের মতো ধান কেনাবেচায় থাকছে ডিজিটাল পদ্ধতি।
স্মার্টফোন ব্যবহার করে কৃষক চাইলে মাঠ থেকেই ‘কৃষকের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে ধান বিক্রি করতে পারবেন। নিবন্ধন, বিক্রয়ের আবেদন, বরাদ্দের আদেশ ও মূল্য পরিশোধের সনদ-সব তথ্যই এসএমএসের মাধ্যমে। ‘কৃষকের অ্যাপ’-এ রংপুর বিভাগের মধ্যে রংপুর সদর উপজেলা ও দিনাজপুর সদর উপজেলা ধান কেনা হবে।
‘কৃষকের অ্যাপ’ এর মাধ্যমে ধান সংগ্রহে সরকারের সিদ্ধান্তে সচেতন মহল খুশি হলেও ধোঁয়াশায় আছেন আমন চাষিরা। এর প্রক্রিয়া কী হবে, সে প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ হবে এবং ন্যায্যমূল্য পাবেন কি-না এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কৃষকদের মনে। কারণ অধিকাংশ কৃষকই জানে না কৃষকের অ্যাপ কি? তবে খাদ্য বিভাগ বলছে কৃষকদের ধোঁয়াশা কাটাতে শিগগিরই ‘কৃষকের অ্যাপ’ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
রংপুর সদর উপজেলার হরিদেবপুর ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামের কৃষক শামছুল হক এবার দুই একর জমিতে আবাদ করেছেন আমন ধান। অর্ধেক ধানও কাটা হয়েছে। এখন খোলা বাজারে ধান বিক্রি না করে একটু লাভের আশায় সরকারি গুদামে বিক্রি করবার কথা ভাবছেন। কিন্তু খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন ‘কৃষকের অ্যাপ’ পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করবে খাদ্য গুদাম। এতে বেশ হতাশ এই কৃষক। কারণ তিনি জানেন না ‘কৃষকের অ্যাপ’ কি?-সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রির আশা পূরণ হবে কিনা এনিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।
শামছুল হকের মতো হাজারো কৃষক জানে না ‘কৃষকের অ্যাপ’ কি। এই পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ধান কেনার কথা থাকলেও কৃষকদের ধারণা না থাকায় এখনো তেমন সাড়া মিলেনি।
খলেয়া ইউনিয়ন খারুয়াবাধা গ্রামের কৃষক ওসমান আলী, সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়নের পালিচড়ার আমন চাষি ইব্রাহিম মিয়া জানান, গত বোরো মৌসুমে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ধান বিক্রি করেন নি। এবার আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান বিক্রির ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু নতুন সিস্টেম সম্পর্কে ‘কৃষকের অ্যাপ’ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় চিন্তিত তারা।
এদিকে বুধবার থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও রংপুর বিভাগের দিনাজপুর ও গাইবান্ধায় নাম মাত্র সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন হয়েছে। এখনো বিভাগের কোথাও পুরোপুরিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। বেশির ভাগ জেলায় পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি না হওয়াতে ধান সংগ্রহে বিলম্ব হচ্ছে।
অন্যদিকে কৃষকের অ্যাপ সম্পর্কে জানতে সাধারণ কৃষকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।
এ ব্যাপারে রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রায়হানুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় ‘কৃষকের অ্যাপ’ বিষয়টি নিয়ে সাধারণ কৃষকরা সমস্যা মনে করছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। প্রশিক্ষণের পর এই সমস্যা থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, দু’একদিনের মধ্যে উপজেলা পর্যায় থেকে কৃষকদের তৈরি তালিকা পাওয়া যাবে। এরপরই পুরোদমে ধান সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে। রংপুর বিভাগের মোট ৮৯টি সরকারি খাদ্য গুদামে কৃষকরা সরাসরি ধান বিক্রি করতে পারবে। ২৬ টাকা দরে একেকজন কৃষকের কাছ থেকে কমপক্ষে চারশ কেজি ধান কেনা হবে। পুরো বিভাগের আট জেলা থেকে এবার ১ লাখ ৮৮৩ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করবে সরকার।
উল্লেখ্য, সময়, খরচ ও হয়রানি রোধসহ প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যে ডিজিটাল পদ্ধতির ‘কৃষকের অ্যাপ’ মাধ্যমটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে ১৬ জেলার ১৬টি উপজেলাতে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
কৃষকের অ্যাপ ব্যবহারের জন্য শুরুতেই এটি স্মার্টফোনে ডাউনলোড করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রির আবেদন করা যাবে। নিবন্ধনের দিন থেকেই কৃষক ধান বিক্রির আবেদন করতে পারবেন। প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া ডিজিটাল মাধ্যম ‘কৃষকের অ্যাপ’-এ নিবন্ধনের শেষ তারিখ ৭ ডিসেম্বর। ধান বিক্রির আবেদনের শেষ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর।
প্রসঙ্গত, আমনে অ্যাপের মাধ্যমে সাভার, গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, কুমিলস্না সদর দক্ষিণ, বরিশাল সদর, ভোলা সদর, নওগাঁ সদর, বগুড়া সদর, রংপুর সদর, দিনাজপুর সদর, ঝিনাইদহ সদর, যশোর সদর, হবিগঞ্জ সদর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে।