শালীহর গণহত্যা দিবস

৪৮ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি শহীদ পরিবারগুলো



রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
শহীদ নবর আলীর কবর পরিষ্কার করছেন স্ত্রী আছিয়া খাতুন,  ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

শহীদ নবর আলীর কবর পরিষ্কার করছেন স্ত্রী আছিয়া খাতুন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ ২১ আগস্ট শালীহর গণহত্যা দিবস। স্বাধীনতার পর কেটে গেছে ৪৮ বছর। সুদীর্ঘ এ সময়ে সরকারের পালা বদল হয়েছে অনেকবার। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শালীহর গ্রামে পাকবাহিনীর গণহত্যায় শহীদ হওয়া ১৪ পরিবার আজও স্বীকৃতি পায়নি। সেদিন শালীহর গ্রামে পাকবাহিনীর গণহত্যায় ১ জন মুসলমান ও ১৩ জন হিন্দু শহীদ হয়। পাকবাহিনীর ভয়ে হিন্দু শহীদ পরিবারের মৃতদেহ সৎকার করতে না পেরে মাটিতে পুঁতে রাখে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এসব স্মৃতিচিহ্ন। শহীদ পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করলেও কেউ তাদের খোঁজ নেয় না এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/21/1566374327657.jpg

 

শহীদ মধু সূদন ধরের ছেলে সুপ্রিয় ধর বাচ্চু জানান, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও স্বজন হারানো পরিবারগুলো শহীদ পরিবারের রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি পাননি। ২০১১ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব) মজিবুর রহমান ফকির শালীহর বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। কিন্তু সীমানা প্রাচীর নির্মাণ না করায় বধ্যভূমিটি গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/21/1566374270053.jpg

 

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সদস্য এইচ এম খায়রুল বাসার বলেন, জেলা পরিষদের অর্থায়নে আমরা গত বছর বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ সংস্কার করে শহীদদের নামফলক স্থাপন করেছি। আগামী অর্থবছরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯৭১ সালের ১৬ মে  মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মধুসূদন ধরকে শালীহর গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। এরপর তার আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট পাক বাহিনী একটি বিশেষ ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিসকা রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পড়ে। এরপর বিসকার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সলিম উদ্দিন এবং আল বদর কমান্ডার আব্দুল মান্নান ফকিরের নেতৃত্বে উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত শালীহর গ্রামে হানা দিয়ে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তাণ্ডব চালায় পাকবাহিনী। গুলির মুখ থেকে কলেমা পাঠ করে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান নগেন্দ্র চৌকিদার। তবে পাকবাহিনী ধরে নিয়ে যায় গ্রামের বাসিন্দা ছাবেদ আলী বেপারীকে। এরপর দীর্ঘ ৪৮ বছরে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেদিন গ্রামে ঢুকেই পাকবাহিনী প্রথমেই গুলি করে হত্যা করে নিরীহ কৃষক নবর আলীকে। এরপর একে একে হত্যা করে মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনীকান্ত বিশ্বাস, দেবেন্দ্র চন্দ্র নম দাস, খৈলাস চন্দ্র নম দাস, শত্রগ্ন নম দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, কামিনী কান্ত বিশ্বাস, রায় চরণ বিশ্বাসকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/21/1566374142287.jpg

 

শহীদ পরিবারের সদস্য গীরিবালা বলেন, পাঞ্জাবিরা আমার শ্বশুর কামিনী কান্ত বিশ্বাস, কাকা শ্বশুর তারিনীকান্ত বিশ্বাস, কাকী শাশুড়ি কিরদা সুন্দরীকে চোখের সামনে গুলি হত্যা করে। কিন্তু আমার স্বামী জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে ঘুরে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পায়নি। কার্ড পায়নি আমার চাচী শাশুড়ি শহীদ কিরদা সুন্দরীর ছেলে অনিল কান্ত বিশ্বাসও।

শহীদ জ্ঞানেন্দ্র করের ছেলের বউ শীবানী কর বলেন, আমরা মাটির ঘরে থাকি। বাড়িতে নলকূপ ও শৌচাগার না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারের লোকজন আমাদের কোনো খবর নেয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফারহানা করিম বলেন, মানবেতর জীবনযাপন করা শহীদ পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

   

সাগরে লঘুচাপের আভাস, ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বুধবারের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২১ মে) আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তার কাছাকাছি এলাকায় দুদিনের মধ্যে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি পরবর্তীকালে ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনই গতিপথ বলা যাচ্ছে না।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য সাগরের পানির তাপমাত্রা যে পর্যায়ে থাকতে হয়, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতি তেমনই রয়েছে।

এদিকে রোববার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।

এই সময়ে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বর্ধিত পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময়ে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।

এছাড়া আজ ভোর পাঁচটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে ১২ অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

;

২৭শ ভোটারের কেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১২৭টি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রংপুরের মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল থেকেই অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে ধারণা করছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে।

সরজমিনে দেখা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার বালার হাট ইউনিয়নের খোর্দ্দ শেরপুড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১২৭টি। এখানে মোট ভোটার ২৭০৪ জন।

শেরুডাঙ্গ স্কুল এন্ড কলেজ, মাঝগ্রাম দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা, আরিফপুড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমড়া পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

রংপুর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল্যাহ্ আল মোতাহসিম জানান, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে তার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি, বিজিবি, আনসার ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিই বড় চ্যালেঞ্জ। প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ হওয়ায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই উপজেলায় মোট ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৩৫। চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামরুজ্জামান কামরু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোতাহার হোসেন মন্ডল মাওলা ও সাবেক এমপি শাহ সোলায়মান আলমের ছেলে সাদমান ইশরাক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অপরদিকে পীরগঞ্জ উপজেলায চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলায় এবার মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭২ জন।

তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে দু’জন আওয়ামী লীগের ও একজন জাতীয় পার্টির। তারা হলেন- বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর মোহাম্মদ মণ্ডল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোকাররম হোসেন চৌধুরী জাহাঙ্গীর এবং জাতীয় পার্টির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম যাদু মিয়া।

তবে দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। কাকে ভোট দেবেন সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। তবে প্রার্থীরা বলছেন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের পক্ষে কাজ করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

কৃষি অঞ্চল হওয়ায় অনেক ভোটারই ব্যস্ত ধান কাটতে বলে দাবি করেছে মিঠাপুকুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহার হোসেন মন্ডল মাওলা ও কামরুজ্জামান কামরু। তবে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে কাজ করছেন বলে তারা জানান।

এদিকে পীরগঞ্জের প্রার্থী নূর মোহাম্মদ মন্ডল বলেন, ১০ বছর সংসদ সদস্য এবং ১০ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি মানুষের সেবা করার। আশাবাদী জনগণ আমাকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী করবে।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসিবুল হাসান রুমি জানান, দুই উপজেলায় রয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার বাহিনী নিয়োজিত করার পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং র‌্যাব ও বিজিবির টহল রয়েছে।

;

সংকট-সমস্যায় জর্জরিত সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল



রাজু আহম্মেদ ও গুলশান জাহান সারিকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর কয়েক কোটি মানুষের স্বল্প মূল্যে চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান এটি। প্রতিদিন দিন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ চিকিৎসা নেয় হাসপাতালটিতে। শুধুমাত্র বহির্বিভাগেই চিকিৎসা নেয় অন্তত ২০ হাজার মানুষ।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ কম খরচে চিকিৎসা সেবা নিতে আসলেও এ হাসপাতালে নানা ভোগান্তিতে পড়েন রোগী ও স্বজনরা। হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ ওষুধ সংকট, ডাক্তার সংকটের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষায় পোহাতে হয় ভোগান্তি। অতিরিক্ত টাকা নেওয়া, পর্যাপ্ত ওষুধ না দেওয়া, স্যানিটেশন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভিযোগ আছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ।

এছাড়া দালাল ও সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। পাশাপাশি সিট বাণিজ্য, রোগীর সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ ও অর্থের বিনিময়ে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্যে সহযোগিতা করার অভিযোগ আছে সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে। আনসারদের সাথে সিন্ডিকেটে জড়িয়ে আছে আউটসোর্সিং ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বলেও অভিযোগ আছে সেখানে।

অভিযোগগুলোর বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করে টিম বার্তা২৪। খোঁজ নিয়ে মেলে হাসপাতালটির বিভিন্ন সংকট ও সমস্যার চিত্র। সাথে সিন্ডিকেট ও দালালের দৌরাত্ম্যের চিত্রও ওঠে আসে অনুসন্ধানে।

সংকটে জর্জরিত সোহরাওয়ার্দী

দেশব্যাপী চিকিৎসা জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া ও দক্ষ ডাক্তার গড়ে তোলার জন্য ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় হাসপাতালটি। গেল বছরে ৮৭৫ শয্যা থেকে উন্নীত হয়ে ১৩৫০ শয্যার সেবা দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালটিতে।

ঢাকা ও আশপাশের বেশিরভাগ জেলার কয়েক কোটি মানুষের বিপরীতে ১৩৫০ সিট হওয়ায় সব সময় সিট সংকট থাকে হাসপাতালটিতে। এছাড়া চিকিৎসার ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ওষুধই মেলে না হাসপাতালে। ফলে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে রোগীদের। অ্যান্টিবায়োটিক, স্যালাইন, ইনজেকশনসহ বেশ কয়েক ধরনের ওষুধ সংকট আছে হাসপাতালটিতে।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, প্যারাসিটামল, নাপা, গ্যাসের ওষুধ ছাড়া বেশিরভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে বাঁচা তো দূর, এমন সংকটে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে তাদের।

মায়ের অপারেশনের জন্য ১০ দিন ধরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আছেন নোয়াখালীর জিসান। প্রথমদিন ভর্তির পরেই প্রায় ১৮ হাজার টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে তাকে।

জিসান বলেন, আমার মায়ের অপারেশন। কম খরচ হবে ভেবে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছি চিকিৎসা নিতে। এখানে এসে আরও বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। সব জায়গায় দুর্নীতি। টাকা দিলে সেবা মেলে। ওষুধ শুধু নাপা দেয়। যে ওষুধের দাম বেশি সেটাই স্লিপ ধরায় দিয়ে বলে বাইরে থেকে আনতে। প্রথম দিন এসেই আমার ১৮ হাজার টাকার ওষুধ কেনা লাগছে। আমরা তো অসহায়।

ফাতেমা নামের এক নারী জানান, বাবাকে নিয়ে ১৬ দিন ধরে আছি হাসপাতালে। বেশিরভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। প্যারাসিটামল ও গ্যাসের ট্যাবলেট দিচ্ছে এখান থেকে। ওষুধ নাকি সাপ্লাই নেই বলে। থাকলেও দেয় না, নাকি জানি না।

এদিকে, কাগজেকলমে হাসপাতালটিতে ৩২৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে ২৯৮ জন। ডাক্তার সংকট আছে হাসপাতালটিতে। এতে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে হাসপাতালের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ বলছে বিপুল জুনিয়র ডাক্তার প্রয়োজন হাসপাতালে।

নন-মেডিকেল কর্মকর্তা ৩ জন, উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক ১ জন, নার্সিং সুপারভাইজার ৩ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১২ জন, স্টাফ নার্স ৪ জনসহ মোট ২৩ জন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ১০১ জন কর্মচারীর সংকট রয়েছে হাসপাতালটিতে।

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট থাকায় টয়লেট ও বহির্ভাগের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। নোংরা আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে হাসপাতালের নিচতলার বেশিরভাগ টয়লেট। পুরুষ ও মহিলার ওয়ার্ডের কিছু টয়লেটেও দেখা গেছে একই চিত্র। এছাড়া বাহিরে রোগী অপেক্ষার বেঞ্চের পাশেই রাখা হয়েছে ডাস্টবিন। ডাস্টবিনগুলো পরিষ্কার না করায় গন্ধ ছড়াচ্ছে। তবে ওয়ার্ডগুলোতে স্বাভাবিক পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে।

অন্যদিকে হাসপাতালে ভিতর ও বাহিরের বেশিরভাগ ড্রেনের অবস্থা নাজুক। ময়লা পানি ও আবর্জনা জমে গেছে। এতে ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের বেডের কাপড় অপরিষ্কার ও ছারপোকার উপদ্রব আছে হাসপাতালে এমন অভিযোগও করেছেন রোগীরা।

আবু বক্কর নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, হাসপাতালের টয়লেটের অবস্থা খুব খারাপ। ওয়ার্ডের পরিবেশ ভালো থাকলেও টয়লেট ব্যবহার করা যায় না। এছাড়া বিছানায় ছারপোকার জন্য রাতে রোগীরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। মাসে অন্তত একবার বিছানাপত্র পরিষ্কার করা উচিত।

টাকা দিলে মেলে সিট, টাকা ছাড়া মেলে না হুইল চেয়ার ও স্ট্রেচার সেবা

বহু চাহিদার বিপরীতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালে মাত্র ১৩৫০ সিট থাকায় সব সময় পূর্ণ থাকে বরাদ্দের সিট। তবে দালাল মারফতে টাকা দিলে সংকটের মধ্যেও ব্যবস্থা হয় সিটের। এছাড়া টাকা ছাড়া হাসপাতালে মেলে না ট্রলি, স্ট্রেচার ও হুইল চেয়ার সেবা।

রোগীর স্বজন সেজে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে টিম বার্তা২৪। মূলত সিট বাণিজ্য ও সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের সহযোগিতা করেন ট্রলি ও হুইল চেয়ারের দায়িত্বে থাকারা। আড়াল থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করে আনসার সদস্যরা। তাদের সাথে জড়িত হয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব থাকা কর্মচারীরা।

হাসপাতালে বিনামূল্যে স্ট্রেচার ও হুইল চেয়ার সেবা মেলার কথা থাকলেও। হাসপাতালের বাহিরে মেলে না সে সেবা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জেবিসি ও অন্বেষা নামের দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব সেবা নিশ্চিত করছেন তারা। তবে হুইল চেয়ারধারী ও স্ট্রেচার মালিকরা বলছেন রোগী বহনের সামগ্রী তাদের নিজস্ব কেনা। কোনো বেতন পান না হাসপাতাল কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে। অথচ হাসপাতালে হুইল চেয়ার ব্যবসার জন্য সকাল-বিকাল ও রাতে ৩ ধাপে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করতে হয় তাদের। আর এ সুযোগ নাকি তাদের দিয়েছেন খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে জানান হুইল চেয়ারধারী নারী হ্যাপি বেগম।

রোগীর স্বজন সেজে জানতে চাইলে হ্যাপি বেগম জানান, তার মতো ৩০ জন হুইল চেয়ারধারী আছেন হাসপাতালে। তিন ধাপে ১০ জন করে হুইল চেয়ারের রোগী বহনের কাজ করেন তারা। বিনিময়ে ১৫০-২৫০ টাকা নেন। তবে ৫০০ টাকা দিলে কোন ঝামেলা ছাড়াই ‍সিট ম্যানেজ করে দেবেন তিনি। আমাদের (রোগীর স্বজনদের) কোনো কাজই করতে হবে না। ৫০০ টাকার বিনিময়ে রোগী বেডে তোলা পর্যন্ত সব দায়িত্ব তার।

তবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই ও ওষুধ সংকট অভিযোগ মিথ্যা জানিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাফিউর রহমান বলেন, হাসপাতালের কোন স্টাফ বা কর্মচারী হোক আর আউটসোর্সিং হোক রোগীর কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নাই। এক সময় এমন পরিস্থিতি ছিল। আমরা অভিযান চালিয়ে সেটা বন্ধ করেছি। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সার্ভিস দিয়ে কেউ টাকা নেবে এটা আমরা কখনোই বরদাস্ত করব না। আমরা ইতিপূর্বে ব্যবস্থা নিয়েছি, আগামীতেও নেবো।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট আছে। এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আসে। প্রায় ১ হাজার টয়লেট আছে। সেগুলো পরিষ্কার করে রাখার মতো জনবল আমাদের নেই। জনবলে ব্যাপক ঘাটতি আছে।

ডাক্তার সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্যাপক ডাক্তার সংকট আছে। বিশেষ করে মিড লেভেলের ডাক্তার সংকট আছে। জুনিয়র ডাক্তারের সংকটের কারণ পদ সৃষ্টি না করেই ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়েছে। ফলে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেখানে একটা গ্যাপ রয়ে গেছে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সংকট নিরসনে সার্বক্ষণিকভাবে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রাখছি।

;

প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৭-৮ শতাংশ: ইসি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোট শুরুর প্রথম ২ ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল পৌনে ১১টার দিকে ইসির অতিরিক্ত সচিব এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলায় সকাল ৮টায় সুষ্ঠুভাবে ভোট শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটনা ঘটেনি। তবে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় এক আনসার সদস্য শারীরিক অসুস্থতায় হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়।

অশোক কুমার বলেন, ভোট শুরু হয়েছে মাত্র দু'ঘণ্টা। বিভিন্ন জেলার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একেক অঞ্চলে বিভিন্ন হারে ভোট পড়ছে। কোথাও বেশি কোথাও কম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই হার আরও বাড়বে।

১৫৬ উপজেলায় মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩ হাজার ১৬টি। ভোট কক্ষ রয়েছে ৯১ হাজার ৫৮৯। অস্থায়ী ভোট কক্ষ রয়েছে আট হাজার ৮৪১টি। এই ধাপের মোট ভোটার তিন কোটি ৫২ লাখ চার হাজার ৭৪৮ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন এক কোটি ৭৯ লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৪ জন। নারী ভোটার রয়েছে এক কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ২৩৭ জন।

দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে চার ধাপে ৪৭৬টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এর মধ্য কিছু উপজেলায় তফশিল ঘোষণায় মামলা জটিলতা ও বৈধ প্রার্থীর মৃত্যু ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ১৯টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের সময় হয়নি, পরবর্তীতে সে সব পরিষদে ভোট নেওয়া হবে জানান সংস্থাটি।

;