ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান মেয়র টিটুর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ময়মনসিংহ
মতবিনিময় সভায় মসিক মেয়র, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

মতবিনিময় সভায় মসিক মেয়র, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু।

তিনি বলেছেন, 'আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের বাড়ির আঙিনা সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। মশার যে সমস্ত প্রজননস্থল রয়েছে সেগুলো যেন আমরা নির্মূল করতে পারি, সেজন্য সকলকে একযোগে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার সহযোগিতা ছাড়া ইচ্ছে করলেই হাজার হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েও এই কাজটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।'

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে এক মত বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীর সকল পেশাজীবী, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদারকরণ বিষয়ক এ মতবিনিময় সভা করেন মেয়র।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান মেয়র টিটুর

সবার আগে নিজেদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইকরামুল হক টিটু বলেন, 'সিটি করপোরেশন যদি সর্বশক্তি দিয়ে ৩৩ ওয়ার্ডে একযোগে কাজ করে তবুও পার্শ্ববর্তী যে ইউনিয়নগুলো রয়েছে সেই জায়গাগুলো কিন্তু অরক্ষিত থেকেই যাচ্ছে। সেজন্য আমাদের সকলের দায়িত্ব নিয়ে কাজগুলো করতে হবে। একে অপরকে সচেতন করতে হবে।'

যারা রাস্তায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দেন মেয়র টিটু।

তিনি বলেন, 'যারা রাস্তায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ও নির্মাণ সামগ্রী ফেলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে তাদেরকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রথমে সচেতন করা হবে। এরপরও কাজ না হলে আগামী ২০ আগস্টের পর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।'

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় এ মতবিনিময় সভায় এডিস মশা নিধনে ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও এনজিও প্রতিনিধিদের কাছ থেকে নানা পরামর্শ গ্রহণ করেন সিটি মেয়র।

   

সংসদ ভবনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
সংসদ ভবনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

সংসদ ভবনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় সংসদ ভবনে পবিত্র পবিত্র ঈদ-উল-আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাতের পরে খুতবা শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

সোমবার (১৭ জুন) সকাল ৮টায় সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ঈদের জামাতে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম এমপি, জাতীয় সংসদের স্পীকারের স্বামী বিশিষ্ট ফার্মাসিউটিক্যাল বিশেষজ্ঞ সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেন এবং সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে. এম. আব্দুস সালামসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ জামাতে অংশগ্রহণ করেন।

;

দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় চট্টগ্রামের ঈদ জামাতে দোয়া 



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদ প্রাঙ্গণে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছেন হাজারো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। ঈদের নামাজ আদায় শেষে সকলে দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় মহান আল্লাহর কাছে দু'হাতে তোলে দোয়া করেন।

সোমবার (১৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় নগরীর ওয়াসা মোড়স্থ জমিয়তুল ফালাহ প্রাঙ্গণে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে ঈদ জামাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব হযরতুল আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী।

সাধারণ মুসল্লিদের পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, জাতীয় পার্টির মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ও সোলায়মান আলম শেঠসহ রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদুল আজহার প্রধান জামাতে অংশ নেন।

একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সোয়া ৮টায়। এই জামাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মৌলানা আহমুদুল হক।

নামাজ শেষে দোয়া ও মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানায় হাজারও হাত। গুনাহ থেকে মুক্তি এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করা হয়। সব মৃত ব্যক্তির কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া করা হয়েছে। যেকোনো বিপদ থেকে দেশকে হেফাজতের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। খতিব ও ইমাম বাংলাদেশকে সব ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দোয়া করেন। ফিলিস্তিনসহ গোটা বিশ্বের নিপীড়িত মুসলমানদের জন্য প্রার্থনা করা হয়। এসময় ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয় জমিয়তুল ফালাহ প্রাঙ্গণ।

এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির ব্যবস্থাপনায় ঈদুল আজহার জামাত স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন বায়তুশ শরফ আদর্শ সিনিয়র কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা ড. সাইয়েদ আবু নোমান।

এর আগে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য আতর মেখে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আসেন মুসল্লীরা। খতিব এ সময় খুতবা পাঠ করেন। খুতবা পড়ার সময় কিভাবে কোরবানি করতে হবে, কোরবানির মাংস কিভাবে বিলিবন্টন করতে হবে ইত্যাদি সম্পর্কে বয়ান করেন।

এছাড়া সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ৯টি মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

মসজিদগুলো হলো- লালদিঘী সিটি করপোরেশন শাহী জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ এবং মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদ (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন)। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে একটি করে প্রধান ঈদ জামাত স্ব স্ব মসজিদ ও ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঈদ জামাত শেষে শুরু হয় পশু কোরবানির তোড়জোড়। ভোরেই কোরবানি করার জন্য পশুকে গোসল করিয়ে প্রস্তুত করে রাখা হয়। অনেকে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করতে ছুটে গেছেন গ্রামে। অনেকে যেতে পারেননি বা যাননি। যারা শহরে রয়ে গেছেন, তারা নিজেদের ও প্রিয়জনের নামে পশু কোরবানি দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ে সচেষ্ট হয়েছেন।

;

সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করার আহ্বান কাদেরের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরবানির তাৎপর্য এবং মর্মার্থ অনুবাধন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার (১৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেওয়া এক শুভেচ্ছা ভিডিও বার্তায় এ আহবান জানান তিনি।

শুভেচ্ছা বার্তায় ওবায়দুল কাদের বলেন, বছর ঘুরে আবার এল ঈদ-উল-আজহা। ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। মহান আল্লাহ পাকের প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের নিদর্শনে ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। আমাদেরকে কোরবানির তাৎপর্য এবং মর্মার্থ অনুবাধন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করতে হবে। আর এ জন্য সকলকে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অর্জনের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভারসাম্যপূর্ণ, শোষণহীন, ন্যায়নিষ্ঠ এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন- তা সফল করতে প্রয়োজন নিষ্ঠা, সততা এবং ত্যাগ।

অকৃত্রিম ভালোবাসা ও ত্যাগের আদর্শ আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হলে প্রতিষ্ঠিত হবে প্রত্যাশিত শান্তি ও সৌহার্দ্য।

তিনি বলেন, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে একটি অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে কর্ম ও চিন্তায় ত্যাগ, আনুগত্য এবং সততা চর্চায় নিবেদিত হওয়ার আহবান জানাই। আহবান জানাই, ঐক্যের মন্ত্রে উজ্জ্বীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা অভিমুখে এগিয়ে যাওয়ার।

এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে পবিত্র ঈদে আমি দেশবাসী জনগণ, প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি সবাইকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা- ঈদ মোবারক।

;

রিমালে বিধ্বস্ত রেখামারীর বাসিন্দাদের ঈদ বলে কিছু নেই



সাদিকুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: নূর এ আলম

ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ২৬ মে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত রেখামারী গ্রামবাসীর জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে খরস্রোতা পশুর নদী প্রবল প্লাবনে ভাসিয়ে নিয়ে যায় দাকোপ উপজেলার অধীন বানিশান্তা ইউনিয়নের রেখামারী গ্রামের ঘরবসতি। তারপরে কেটে গেছে তিন সপ্তাহ। কিন্তু শেষ হয়নি রেখামারীবাসীর ভোগান্তি।

সরেজমিন ঘুরে বার্তা২৪.কমের প্রতিনিধি দেখেছেন লবণাক্ততা-প্রবণ এই এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তীব্র পানীয়জলের সংকটে ভুগছে। তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার নেই। নেই পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা। তারা হারিয়েছেন মাথাগোজার ঠাঁইটুকুও। ঘূর্ণিঝড় রিমাল অতিক্রমের তিন সপ্তাহ পরেও পরিস্থিতির নেই সামান্য উন্নতি।

এরই মধ্যে এসেছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ-উল-আজহা। অথচ ৫৮ বছর বয়সী ইনসান ব্যাপারীর কোনো উৎসাহ নেই তা নিয়ে। রিমালে নিঃস্ব জেলে ইনসান বলেন, “আগে থেকেই আমরা অতি দরিদ্র। আমাদের নিজেদের ঈদ বলে কিছু্ নেই! তবে আগের ঈদে এ গ্রামের পুরুষরা খুলনা শহরে ঘুরে ঘুরে কোরবানির পশুর মাংস সংগ্রহ করতো। কিন্তু এ বছর আমাদের ঘরের মাটির চুলাও তলিয়ে গেছে। কোথায় এবং কিভাবে আমরা মাংস রান্না করব?"


ঘূর্ণিঝড় রিমালে ইনসান ব্যাপারীর ঘরের ছাদ উড়ে গেছে। প্রবল স্রোতে তলিয়ে গেছে তার ঘরের মেঝের মাটি। ভেসে গেছে ঘরের সকল জিনিসপত্র।

ইনসানের মতো, রেখামারী গ্রামের ৬৫টি পরিবার ঘূর্ণিঝড় রিমালে কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে। পরিবারগুলো অতি-দরিদ্র এবং সুন্দরবনের মাছ এবং কাঁকড়া আহরণ ছাড়া তাদের বিকল্প আয়ের সংস্থানও নেই। এসব পরিবার যখন ঘূর্ণিঝড় এবং নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুর্যোগকালীন ত্রাণের প্রাপ্যতা তখন তাদের কাছে মৌলিক চাহিদা পূরণের সমতুল্য। দুর্ভাগ্যক্রমে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত রেখামারী গ্রামবাসীর কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছেনি।

“এখন পর্যন্ত আমাদের দেওয়া হয়েছে ১ কেজি মুড়ি, ১ কেজি চিড়া, আধা লিটার রান্নার তেল এবং আধা কেজি লবণ। গত কয়েকদিন ধরে একটি এনজিও আমাদের এক বেলা খাবার দিয়ে আসছে,” বলেন রেখামারী গ্রামের গৃহবধু রোকসানা বেগম।


খরস্রোতা পশুর নদীর তীরে দাঁড়িয়ে, ৪৬ বছর বয়সী রোকসানা নদীর তীরে ভেঙ্গে যাওয়া একটি অংশের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন সেখানে তার পরিবারের থাকার একটি ঘর ছিল।

যেদিন ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়ে সেদিন রোকসানা এবং তার স্বামী নজরুল সিকদার নিজেদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র আগলে রাখতে ঘরের ভিতরেই থেকে যান। যদিও তারা তাদের সন্তানদের পাঠিয়েছিলেন কাছের এই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে।

“আমাদের বাড়ির গোলপাতার ছাদ ইতিমধ্যেই উড়ে গেছে। নদীর জলের উচ্চতা তখন আমার বুক পর্যন্ত উঠে গেল। আমাদের বিছানাসহ সব জিনিসপত্র জলে ভাসমান। জোয়ারের প্রবল স্রোত যখন বাড়তে থাকলো, তখন আর সেই ঘরে থাকতে পারিনি। সাঁতরে কাছাকাছি এক উঁচু জমিতে গিয়ে আশ্রয় নিই। কারণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে আর কোন ফাঁকা জায়গা ছিলনা। পরের দিন (২৭শে মে) যখন আমরা এই জায়গায় ফিরে আসি ততক্ষণে আমাদের সহায় সম্বল সব ভেসে গেছে।” এভাবেই রোকসানা সেই কঠিন সময়ের কথা বর্ণনা করছিলেন।

জানালেন, গৃহস্থালীর সামগ্রীর মধ্যে ছিল একটি বিছানা, একটি ৮০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার সিস্টেম, একটি মাটির চুলা এবং একটি আধা-পাকা পায়খানা। সব ভেসে চলে গেছে।


ঘূর্ণিঝড়ের পরে রোকসানার পরিবারের একটি ৫০০ লিটারের প্লাস্টিকের পানির ট্যাঙ্ক [বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য] খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে একদিন পর কয়েকজন প্রতিবেশী নদীতে ভাসমান অবস্থায় তা উদ্ধার করে। পানির ট্যাঙ্কটি পুনঃস্থাপন করা ব্যয়বহুল। তাই রোকসানার পরিবার সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছে।

বাস্তুহীন রোকসানা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে এখন বাবা আনোয়ার মুন্সীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে আনোয়ারের টিনশেড ঘরের মাটির মেঝেও ভেঙে গিয়েছে। একই সাথে ঘরে থাকা বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখার পাত্রগুলোরও কোন খোঁজ নেই।

যেদিন আমরা আনোয়ারের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম, সেদিন সেই আঙ্গিনায় নদীর লবনাক্ত পানি ভর্তি কিছু পুরানো প্লাস্টিকের পাত্র দেখতে পাই।

আনোয়ারের স্ত্রী রাজিয়া বেগম জানালেন যে, এই পানি ব্যবহার করলে হাত পা ও মুখ জ্বালা করে।

তবুও, রেখামারী গ্রামের পরিবারগুলো লবনাক্ত নদীর পানি পাত্রে জমা করে রেখেছে এই মনে করে যে হয়তো কোন সংস্থা তাদের পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে সাহায্য করবে।

এমনিতেই পয়ঃপরিষ্কার এবং কাপড় ধোয়ার জন্য গ্রামবাসী সরাসরি নদীর পানিই ব্যবহার করেন। বর্তমানে তীব্র পানির সংকটে গ্রামবাসীরা, বিশেষ করে নারীরা তাদের ঘর থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন।

নূর এ আলম

“আমাদের পায়খানাটি ভেসে গেছে। এখন আমরা বাঁশের উঁচু মাচা পুরানো কাপড় দিয়ে ঘিরে সেটিকে খোলা পায়খানা হিসেবে ব্যবহার করছি। আমরা এই অসহনীয় নোনা পানি দিয়ে নিজেদের ধুই। আমাদের এই জীবন খুব দুর্বিষহ,” রাজিয়া ব্যাখ্যা করে করে বলেন।

রেখামারী গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনে সংকট আরো ঘণীভূত হয়ে পড়ে যখন বন বিভাগ সুন্দরবনে প্রবেশে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উল্লেখ্য যে সুন্দরবনই এই গ্রামবাসীর আয়ের প্রধান উৎস।

রোকসানা এবং রাজিয়ার মতো গ্রাম্যবধু কুলসুম খাতুন জানান কীভাবে তার পরিবার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

কোন চিহ্ন অবশিষ্ট না রেখে ঘূর্ণিঝড় রিমাল কুলসুমের নদীর ধারের ঘরটি সম্পূর্ণভাবে ভেসে নিয়ে গেছে। এখন নতুন করে ঘর বানাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। অথচ সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধ। টাকাও নেই আয়ের পথও বন্ধ।

“আমার স্বামীর জাইল্যা (জেলেদের) কার্ড না থাকায় আমরা কোন খাদ্য সহায়তা পাইনি। একারণে এখন আমার স্বামী দিনমজুরি দিতে খুলনা শহরে যায়, বললেন ২৬ বছর বয়সী এই গৃহবধু।"

সচরাচর ইউনিয়ন পরিষদই তৃণমূল পর্যায়ে দুর্গত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে। রেখামারী গ্রামের পরিস্থিতি নিয়ে বানিশান্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায়কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানালেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

“প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। আমরা ঈদের আগেই সেই চাল বিতরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি,”

ঈদের দুই দিন আগে ১৫ জুন বিকেলে সুদেবের সাথে কথা বার্তা২৪ এর এই প্রতিবেদককের।

তিনি আরও বলেন, রেখামারী গ্রামবাসী অতিদরিদ্র এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ পর্যাপ্ত নয়। তিনি এনজিও এবং অন্যান্য সমাজসেবীদের ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ঘূর্ণিঝরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকার অনুরোধ জানান ।

;