২১ দিনের পাসপোর্ট মেলেনি ৭ মাসে, লাগতে পারে ২ বছর



রাকিবুল ইসলাম, স্টাফ ক‌রেসপ‌ন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
যাত্রাবাড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

যাত্রাবাড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

  • Font increase
  • Font Decrease

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জা‌হিদুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক শিক্ষাসফরে যাবেন বলে গত বছরের নভেম্বরে যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে দেন। জাহিদুলের ভাগ্য এতটাই মন্দ, যে পাসপোর্ট ২১ দিনে পাওয়ার কথা তা ৭ মাসেও মেলেনি। উপরোন্তু তাকে শুনতে হচ্ছে পাসপোর্টটি পেতে লেগে যেতে পারে দুই বছর।

সাধারণ পাসপোর্ট করতে সময় লাগার কথা ২১ দিন, বড় জোর এক কিংবা দুই মা‌স। কিন্তু কেরানীগ‌ঞ্জের যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবাগ্রহীতাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে মাসের পর মাস। জাহিদুলের মতোই এমন অভিযোগ করেছেন পাসপোর্ট অফিসে আসা অন্যান্যরাও।

আঞ্চলিক এই পাসপোর্ট অফিসে এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী। পাসপোর্ট পেতে দুই বছরও লাগতে পারে-এমন কথা বলেছেন অ‌ফিসের কর্মকর্তারা, অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/19/1560941502748.jpg

ভুক্তভোগী জা‌হিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত বছরের ২৮ নভেম্বর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আঙুলের ছাপ দিয়ে ছবি তুলে এসে‌ছিলাম। পাসপোর্ট দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২১ দিন পরে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর। কিন্তু ৭ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও হাতে পাইনি পাসপোর্ট। এদিকে দুই মাস পর আমার ভারতে শিক্ষাসফর রয়েছে।

অভিযোগ করে জাহিদুল বলেন, গত সাত মাসে ৫/৬ বার পাসপোর্ট অফিসে এসে অবশেষে জানতে পারি আমার তুলনামূলক ভেরিফিকেশন দরকার। সেখানকার এক কর্মকর্তার সহকারী রফিক নামে একজন আমাকে বলেন, এই পাসপোর্ট পেতে ২ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। পাসপোর্ট অফিসের ইন্সপেকশন কর্মকর্তা হূমায়ুন কবির রিফাত আমাকে বলেন, আমার সঙ্গে নাকি অন্য আরেকজনের নাম, পিতার নাম ও মাতার নাম হুবহু মিলে যাওয়ায় তুলনামূলক পুলিশ ভেরিফিকেশন দরকার। তাই পাসপোর্ট পেতে ২ বছর লাগার কথা।

এই ভুক্তভোগী আরও বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, সেখানে আমার বাবার নাম, মায়ের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় পুলিশ একবার ভেরিফিকেশন করে পজে‌টিভ রিপোর্ট  দিয়েছে কিন্তু এখানে এসে অন্য সমস্যা। এদিকে আমার ন্যাশনাল আই‌ডি কার্ড, জন্ম‌ নিবন্ধন, কর্মস্থল সব আছে এবং আলাদাও। তাহলে ডি‌জিটাল যুগে এ সাম‌ান্য কারণে পাসপোর্ট পেতে এত সময় লাগবে কেন?

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/19/1560941523984.jpg

এমন আরেক ঘটনায় চার মাস ধরে ভুগছেন ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তার দেওয়া বয়স আর নাম মিলে গেছে আরেকজনের সঙ্গে। তাকেও ঝু‌লিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তি‌নি।

কর্মকর্তাদের কড়া পাহারায় এই ব্যক্তির সঙ্গে বে‌শি কথা বলা সম্ভব হয়‌নি। তবে তাকে টেনে নিয়ে পঞ্চমতলায় যাওয়ার সময় তি‌নি বলতে থাকেন, আমার কি এমন সমস্যা যে আমাকে এভাবে ঘোরাচ্ছেন। পু‌লিশ রিপোর্টেও তো সমস্যা নেই।

১২ বছর বয়সী মাইনুল ইসলাম শান্ত'র মা এসেছেন ছেলের পাসপোর্ট করাতে। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, আমার গ্রামের বা‌ড়ি খুলনা। আ‌মি ঢাকায় থা‌কি। ছেলে অসুস্থ। ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাব দেশের বা‌ইরে। সব কাগজ নিয়ে এসেছি, কাগজ জমা নিচ্ছে না। আমার ছেলের জন্ম‌ নিবন্ধন হয়েছে ২০১৪ সালে। এখন সে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করতে পারবে না বলে বারবার অ‌ফিস থেকে বের করে দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। তাদের কথা হচ্ছে ডি‌জিটাল জন্ম‌ নিবন্ধন লাগবে। এটা এখন আ‌মি কোথায় পা‌ব? ডি‌জিটাল জন্ম‌ নিবন্ধনে ১৭ ডি‌জিটের নম্বর থাকবে, শান্ত'র জন্ম নিবন্ধনেও ১৭ ডি‌জিটই আছে। এমন জন্ম নিবন্ধন দিয়ে আমার চেনা জানা অনেকে পাসপোর্ট ক‌রিয়েছেন। তাহলে আমার কি সমস্যা বুঝতে পার‌ছি না। তারা কি চায় প‌রিষ্কার করে বলেনও না। এভাবে শুধু শুধু চার পাঁচবার এসে‌ছি আর ঘুরে গে‌ছি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/19/1560941541750.jpg

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তার সহকারী রফিক বার্তা২৪কমকে বলেন, আমরা কী করতে পা‌রি? আমরা আমাদের মত কাজ করে যাই। সময় লাগলে আমাদের কী করার আছে?

সাংবাদিক পরিচয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে অফিসের ইন্সপেকশন কর্মকর্তা হূমায়ুন কবির রিফাত বার্তা২৪.কমকে বলেন, এসব আমাকে বলে লাভ নেই। এসব ডিজিটাল কাজ সেই ডিজিটাল ওয়ালারাই ভালো জানে। এসব ডিজিটাল ভোগান্তি। তবে পাসপোর্টের ব্যাপারে চিঠি ইস্যু করতে হবে বিষয়টি আমি দেখব।

এ সময় এক আবেদনকারী অ‌ভিযোগ করে বলেন, প্র‌তিবার রিফাত এভাবেই বলেন ভুক্তভোগীদের। তিন মাস আগেও তি‌নি বলে‌ছি‌লেন আমরা তুলনামূলক ভে‌রিফাই করবার জন্য চিঠি পা‌ঠিয়ে‌ছি। তবে আজও তি‌নি দেখবেন বলেই পা‌ঠিয়ে দিলেন।

সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উপসহকারী প‌রিচালক হেলাল উ‌দ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা চেষ্টা ক‌রি সময়মত চি‌ঠিগুলো পাঠানোর। কিন্তু এস‌বি (পু‌লিশ) অফিস থেকে রিপোর্ট আসতে অনেক সময় লা‌গিয়ে দেয়। পু‌লি‌শি রিপোর্ট সময়মত না আসলে আমাদের করার কিছুই থাকে না।

   

এমপি আনারের মাংস কেটে করা হয়েছে কিমা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহের একাংশ বুধবার (২২ মে) উদ্ধারের একদিন পর বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙ্গর থানার জিরেনগাছা ব্রিজ এলাকায় দেহের বাকি অংশ উদ্ধারে তল্লাশি চালায় সিআইডি।

মোট ছয়টি গাড়িতে পুলিশ ফোর্স নিয়ে এদিন রাতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত জিহাদকে নিয়ে কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গড়-পোলেরহাট এলাকার ব্যাপক তল্লাশি করে সিআইডি। তবে মরদেহের কোনো অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পুলিশ জানিয়েছে, এমপিকে হত্যার পরে তার শরীর থেকে মাংস এবং হাড় আলাদা করে ফেলে। মূলত পরিচয় নষ্ট করার জন্য এমপির মাংস কিমা করে তা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখে। আর হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে নেয়। পরে ওই ব্যাগগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে নানা ধরণের পরিবহন ব্যবহার করে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেলে দেয়। কিমা করার জন্য মুম্বাই থেকে কসাই এনে মাংস কাটায় হত্যাকারীরা।

পুলিশ আরও জানায়, অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারের (২৪) বক্তব্য যাচাই করতে এবং শরীরের বাকি অংশগুলো উদ্ধার করতে তার জন্য বারাসাত আদালতে রিমান্ড চাওয়া হবে।

পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন জিহাদ হাওলাদার একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। তার বাড়ি খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানায়। তার বাবার নাম জয়নাল হাওলাদার। তবে জিহাদ বসবাস করতো ভারতের মুম্বাই শহরে। সেখানে সে একটি মাংসের দোকানে কসাইয়ের কাজ করতো।

জানা গেছে পরিকল্পিত নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামানের কলকাতায় যাওয়ার দুই মাস আগেই জিহাদকে ডেকে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ স্বীকার করেছে, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে তিনিসহ চারজন এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

;

এমপি আনার হত্যার নেপথ্যে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তদন্তে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসছে।

তদন্তকারীদের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার সোনা ও হুন্ডির ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়। ওই বিরোধীদের জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে ভারতে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৩০ এপ্রিল কিলিং মিশন বাস্তবায়নকারী সৈয়দ আমানুল্লাহ ওরফে শিমুলকে নিয়ে ভারতের কলকাতায় যান মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন। নিউমার্কেট এলাকা থেকে ছুরি, চাপাতিসহ হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নিয়ে রাখেন নিউটাউন অভিজাত এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনসে। আগে থেকেই হত্যার ছক আঁকা থাকায় আমান দফায় দফায় রিহার্সেল করেন তার সহযোগীদের সঙ্গে।

তার অংশ হিসেবেই পরিকল্পিতভাবে ছোটবেলার বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহিন এমপি আনারকে ভারতে নিয়ে বিনিয়োগের টাকা ফেরত দিতে বলেন। এ নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। মৃতের পরিচয় যাতে বোঝা না যায় তাই তারা শরীরের হাড় ও মাংস আলাদা করে ফেলেন। এর পর হাড় ও মাংস টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে সব কিছু পলিথিন ব্যাগে ভরে ফ্ল্যাটের বাইরে গিয়ে ফেলে দেয়।

এমপি আনার খুনের ঘটনায় কলকাতার সিআইডি ইতোমধ্যেই তিন জনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের এক জন জুবেরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কী কারণে সেই সাক্ষাৎ সেই বিষয়ে জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। খুনের কিনারা করতে সিআইডির একটি দল বৃহস্পতিবারই ঢাকা আসে। তারা ঢাকায় আটকদের জেরা করবেন।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। প্রথমে তিনি উঠেছিলেন বরাহনগরের এক বন্ধুর বাড়িতে। সেখান থেকে দু’দিন পর নিখোঁজ হয়ে যান। তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে নিখোঁজ ডায়েরি করেন ওই বন্ধু। উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যেরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে যোগাযোগ করা হয় ভারত সরকারের সঙ্গে। তার পর সংসদ সদস্যের খোঁজ শুরু হয়।

সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, সংসদ সদস্য আনার কলকাতায় আসার অনেক আগেই এখানে চলে এসেছিলেন অভিযুক্তেরা। শহরে বসেই তারা খুনের ছক কষেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। দুই অভিযুক্ত কলকাতার সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে ছিলেন গত ২ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, ১২ তারিখ কলকাতায় আসেন সংসদ সদস্য আনার। অর্থাৎ, তার আসার অন্তত ১০ দিন আগে কলকাতায় এসে পড়েছিলেন ওই দুই অভিযুক্ত। তারা হোটেল ছাড়েন আজিম আসার এক দিন পরেই। গোয়েন্দাদের অনুমান, এই ১০ দিন ধরে শহরে থেকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন অভিযুক্তেরা।

;

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও নৌকার মাঝি মনির!



রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জীবন নামক শব্দে আছে অনেক উত্থান-পতন। দুঃখ-কষ্ট, আশা-হতাশা যার নিত্যসঙ্গী। তবু জীবন নৌকায় বসে বৈঠা হাতে পাড়ি দিতে হয় অকূল দরিয়া। আর জীবনের উত্থান পতনের করুণ পরিণতি মেনে নিয়ে, বাস্তব জীবনে নৌকার বৈঠা হাতেই বুড়িগঙ্গার ঘাটে কাটছে তার দিন রাত। ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে চলছে জীবন। তবে জীবনের সূত্রগুলোর সাথে এমন করুণ সমীকরণ মেলাতে পারেন না মনির।

স্বপ্নগুলো ভেঙে গেছে জীবন নদীর আছড়ে পড়া বড় বড় ঢেউয়ে। সেই ঢেউয়ের প্রভাবে পেয়েছেন ধোঁকা, লাঞ্ছনা, আর হতাশা। তাই তো জীবন বাঁচাতে দেশের সব থেকে বড় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও আজ সদরঘাটের মাঝি হয়েছেন মনির। মা, বউ ও একমাত্র মেয়ের মুখে ভাত তুলে দিতে নদীর ঢেউয়ের সাথে প্রতিদিন যুদ্ধ করছেন এ যুবক।

তবে জীবনের এমন করুণ পরিণতি না হলেও পারত আক্ষেপ মনিরের। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সহজিকরণ ও চাকরি ব্যবস্থায় দুর্নীতি না থাকলে আজ হয়ত নৌকার বৈঠা বাইতে হতো না এমন অভিযোগ মনিরের।

নৌকার বৈঠা হাতেই বুড়িগঙ্গার ঘাটে কাটছে তার দিন রাত

কেন এমন অভিযোগ মনিরের?

কারণ জানতে চাইতেই আক্ষেপের সুরে মনির বলেন, বাবা ছিলেন কৃষক। নুন আনতে পান্তা ফুরাতো পরিবারে। ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে কাজ করতাম। তবে বুক ভরা স্বপ্ন ছিল। পড়ালেখা করে ভালো চাকরি করব। পরিবারের হাল ধরব। তবে সে স্বপ্নের পথে বার বার বাধা এনেছে অভাব অনটন আর আর্থিক দৈন্য। তবুও সব প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে এইচএসসি পাস করি ৪ দশমিক ৫৬ জিপিএ পেয়ে। স্বপ্ন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। শিক্ষক ও আশেপাশের মানুষজন বলত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই নাকি জীবনে আর পিছনে তাকাতে হয় না। চাকরি মেলে। স্বপ্নের জীবন পাওয়া যায়। সে স্বপ্ন বুকে লালন করে সুযোগ পাই ভর্তির। তবে টাকার অভাবে ভর্তির সুযোগ কাজে আসছিল না। বাবা একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে আমাকে ভর্তি করিয়েছিলেন স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

মনির বলেন, ভর্তির পর ৫-৬ মাস আমার রাস্তায় কেটেছে। ঢাকার কিছু চিনতাম না। আর সবার মতো আমার টাকাও ছিল না। অনেক চেষ্টা করেছি হলে একটা সিটের জন্য। স্যারদের বললে বড় ভাইদের সাথে যোগাযোগ করতে বলত। চেষ্টা করেও পাইনি স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট। ক্লাস বাধ্যতামূলক থাকায় রাতে ইটভাটায় কাজ নিয়েছিলাম। তবে কাজ করে দিনে ক্লাস করতে পারতাম না। এভাবেই থমকে গিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সুযোগ। পরে ২০১৪ সালে বরিশালের বিএম কলেজ থেকে ডিগ্রি শেষ করে প্রায় ২০০ চাকরিতে আবেদন করি। ইন্টারভিউ দিয়েছি প্রায় ৪০টা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তবে বার বার উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাইনি।

রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নৌকায় মানুষ পারাপার করছেন মনির

প্রতিটা সেক্টরে হয়ত টাকা, নয়তো মামা-চাচা না থাকায় চাকরি বঞ্চিত হয়েছি আমি। বাবা মারা যাওয়ার পর কোন দিশা না পেয়ে আমি পরিবার বাঁচাতে হাতে তুলে নিই নৌকার বৈঠা।

মনিরের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার বিসারকান্দি গ্রামে। সেখানে তার তিন বছরের মেয়ে, বউ ও মা থাকেন। বাবার মৃত্যুর পর তাদের মুখে দুবেলা ভাত তুলে দিতে দিনরাত পড়ে থাকেন বুড়িগঙ্গার ঘাটে। দিন শেষে আয় হয় ৩০০-৪০০ টাকা, তা দিয়ে নিজের খরচ শেষে পাঠান গ্রামে।

আর্থিক দৈন্যের জীবনে কিছুটা স্বস্তি আনতে ছোটবেলা থেকে সমাজের সাথে যুদ্ধ করেছেন মনির। তবে সমাজের ব্যতিক্রম নিয়মের কাছে হারতে হয়েছে বারবার। সফলতার পথে বহুদূর পাড়ি দিয়েও ফিরে এসে এখন মনিরের আক্ষেপ বাংলাদেশের পড়ালেখা গরিবের জন্য নয়!

;

গরমে ৪ হাজার মুরগির মৃত্যু, প্রতিবাদে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
গরমে ৪ হাজার মুরগির মৃত্যু

গরমে ৪ হাজার মুরগির মৃত্যু

  • Font increase
  • Font Decrease

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পোল্ট্রি খামারে প্রায় ৪ হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভয়াবহ লোডশেডিং ও প্রচণ্ড গরমে মুরগিগুলো মারা গেছে বলে দাবি করেছেন খামার মালিকরা। মারা যাওয়া প্রতিটি মুরগির ওজন দেড় থেকে দুই কেজি ছিল বলে জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব খামারিরা নরসিংদী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর পলাশের তালতলী সাব জোনাল অফিসের সামনে মরা মুরগি নিয়ে অবস্থান করে অফিস ঘেরাও করে রাখে। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পল্লী বিদ্যুতের কর্তা ব্যক্তিরা খামারিদের দেখে অফিসের মূল গেটে তালা লাগিয়ে ভিতরে বসে থাকে।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিনই প্রচণ্ড গরম পড়েছে। পাশাপাশি ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে পুরো এলাকা। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুতের জন্য বার বার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া পাননি খামার মালিকরা।

‘মুরগিগুলো চোখের সামনে একে একে মারা যায়’ মন্তব্য করে খামার মালিক মহসিন জানায়, আমার খামারে প্রায় ৩ হাজার মুরগি মারা গেছে। এছাড়াও আমার স্বজন ও আশে পাশের খামারিদেরও মুরগি মারা গেছে। খুব কষ্ট করে মুরগিগুলো লালন-পালন করেছি। এ গরমের মধ্যে যদি অতিরিক্ত লোডশেডিং হয় তাহলে কীভাবে? বার বার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে ফোন দেওয়ার পরও লোডশেডিং কমছে না। সরকারের কাছে আমরা ক্ষতিপূরণ চাই। তা না হলে আমাদের পথে বসতে হবে।

পলাশ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, অতি গরমের কারণে উপজেলার চরসিন্দুরে কিছু মুরগি মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি তবে আজকের পল্লীবিদ্যুৎ ঘেরাও এর সংবাদ পাইনি। এ মুহুর্তে খামারিদের জন্য কোন প্রণোদনা নেই। তবে আমরা খবর নিচ্ছি কার কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে বিদ্যুৎতের লোডশেডিংয়ের কারণে।

লোডশেডিংয়ে মুরগি মারা যাওয়ার বিষয়ে ঘোড়াশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মো. আকবর হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। জিনারদী ইউনিয়নের কিছু অংশ আমার অধিনে হলেও তালতলী জোনাল অফিস আমার অধিনে নয়। লোডশেডিং কমানোর ব্যাপারে আসলে আমাদের কিছু করার নেই, আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছি ততটুকুই দিচ্ছি। এর বাহিরে কিছু করার নেই।

এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা যদি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতর বরাবর আবেদন করে আর যদি বরাদ্দ থাকে তাহলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

;