২০০ বছরের পুরনো ফুলচৌকি মসজিদ, নেই সংস্কার



ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ফুলচৌকি মসজিদ / ছবি: বার্তা২৪

ফুলচৌকি মসজিদ / ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ফুলচৌকি মসজিদ। মুঘল আমলে নির্মিত বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি। উত্তরের বিভাগীয় জেলা রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ফুলচৌকি গ্রামে মসজিদটির অবস্থান। গ্রামের নামেই নামকরণ হয়েছে মসজিদটির।

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তালিকাভুক্ত এই মসজিদটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হলেও দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কার হয়নি। চাকচিক্যে ভাটা পড়েছে। পথের ধুলা-বালিতে বদলে গেছে রঙ। এমন অবস্থায় দূর থেকে মিনার না দেখে বোঝার উপায় নেই এটি মসজিদ।

প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এ স্থাপনার সংস্কার ও প্রচারের অভাবে কমে গেছে পর্যটকদের আনাগোনাও। তবে এ মসজিদে নিয়িমিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়। তাই মসজিদটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/10/1560182800070.jpg

১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত মসজিদটির জীর্ণতার মাঝেও আছে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ। দূর থেকে যতটা না সুন্দর দেখায়, তার চেয়েও বেশি সুন্দর কাছে থেকে দেখতে।

মসজিদটি আয়তকার এবং প্রতিটি কোণায় গোলাকার কিউপলা যুক্ত স্তম্ভ রয়েছে। যার নিচের অংশ কলসাকৃতি। মসজিদের সামনে খোলা অঙ্গন (সাহান) অনুচ্চ প্রাচীর বা বেষ্টনী দ্বারা আবৃত।

মসজিদের প্রবেশদ্বারের পূর্বপাশ ঘেঁষে একটি পরিকল্পিত ফুল বাগান ছিল। বাগানটিতে সৌন্দর্যময় স্থাপত্য রাখা হয়েছিল। বর্তমানে স্থানীয়রা সেই জায়গাটি কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত করছে। মসজিদের পাশে ইমামের থাকার জন্য মিনার বিশিষ্ট একটি কক্ষ বা ঘরও আছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/10/1560182834035.jpg

এই মসজিদ প্রাঙ্গণে শায়িত আছেন বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রাণপুরুষ শহীদ নবাব নুরুউদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জং। তিনি দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের (২য়) আপন চাচাতো ভাই ও ভগ্নিপতি। ইংরেজ শাসন উৎখাতে তিনি ১৭৬০ থেকে ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্যবার সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

জমিদারির লোভে 'দিবা ও নিশি' নামক দুইজন বিশ্বাসঘাতকের ষড়যন্ত্রে নুরুউদ্দিন বর্তমান লালমনিরহাটের আদিতমারীর মোগলহাটে বৃটিশ সেনাদের অতর্কিত হামলায় আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে তাঁর নির্মাণাধীন রাজধানী ফুলচৌকিতে নেওয়া হয়। আহত অবস্থায় ১৭৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ফুলচৌকির নিজ বাসভবনে মারা যান।

এখানে আরও অনেক যোদ্ধার সঙ্গে ঘুমিয়ে আছেন রংপুরের একজন ঐতিহাসিক ও নবাব নুরুউদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জংয়ের বংশধর হায়দার আলি চৌধুরী। তার বিখ্যাত ইতিহাস খ্যাত বই ‘পলাশী যুদ্ধোত্তর আযাদী সংগ্রামের পাদপীঠ’।

 https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/10/1560182929810.jpg

ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ফুলচৌকি মসজিদটি রংপুর শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে মিঠাপুকুরের গড়েরমাথা নামক স্থান হয়ে পশ্চিম দিকে বিরামপুর-দিনাজপুর সড়কে শুকুরেরহাট হয়ে সেখান থেকে আরও ২ কিলোমিটার পশ্চিমে ফুলচৌকি গ্রামে এর অবস্থিত।

ফুলচৌকি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী আজহার আলী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা জন্মের পর থেকে এই মসজিদ দেখে আসতেছি। বাপ-দাদারাও দেখেছেন। মসজিদটি প্রায় দুইশ’ বছরের পুরনো হলেও সরকার থেকে কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। আমরা স্থানীয়রা টাকা-পয়সা দিয়ে মসজিদের কাজ করি।’

মসজিদটিতে নিয়মিত মুসল্লি ইব্রাহিম ব্যাপারী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গ্রামবাসীরা পুরনো এই মসজিদটির সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এবং সরকারি দফতরে অনেকবার সহযোগিতা চেয়েছেন, কিন্তু কেউ কোনো সহযোগিতা করেননি।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/10/1560182975585.jpg

এ ব্যাপারে ময়েনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুল আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে এখানে সরকারিভাবে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে মসজিদটির সংস্কারের তেমন কোনো বরাদ্দ আসেনি। এলাকাবাসীরা মিলে মসজিদটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এটি সংস্কার করে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো হলে দূর দূরান্তের দর্শনার্থীরাও আসবে।’

   

এমপি আনারের মাংস কেটে করা হয়েছে কিমা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহের একাংশ বুধবার (২২ মে) উদ্ধারের একদিন পর বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙ্গর থানার জিরেনগাছা ব্রিজ এলাকায় দেহের বাকি অংশ উদ্ধারে তল্লাশি চালায় সিআইডি।

মোট ছয়টি গাড়িতে পুলিশ ফোর্স নিয়ে এদিন রাতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত জিহাদকে নিয়ে কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গড়-পোলেরহাট এলাকার ব্যাপক তল্লাশি করে সিআইডি। তবে মরদেহের কোনো অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পুলিশ জানিয়েছে, এমপিকে হত্যার পরে তার শরীর থেকে মাংস এবং হাড় আলাদা করে ফেলে। মূলত পরিচয় নষ্ট করার জন্য এমপির মাংস কিমা করে তা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখে। আর হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে নেয়। পরে ওই ব্যাগগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে নানা ধরণের পরিবহন ব্যবহার করে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেলে দেয়। কিমা করার জন্য মুম্বাই থেকে কসাই এনে মাংস কাটায় হত্যাকারীরা।

পুলিশ আরও জানায়, অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারের (২৪) বক্তব্য যাচাই করতে এবং শরীরের বাকি অংশগুলো উদ্ধার করতে তার জন্য বারাসাত আদালতে রিমান্ড চাওয়া হবে।

পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন জিহাদ হাওলাদার একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। তার বাড়ি খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানায়। তার বাবার নাম জয়নাল হাওলাদার। তবে জিহাদ বসবাস করতো ভারতের মুম্বাই শহরে। সেখানে সে একটি মাংসের দোকানে কসাইয়ের কাজ করতো।

জানা গেছে পরিকল্পিত নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামানের কলকাতায় যাওয়ার দুই মাস আগেই জিহাদকে ডেকে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ স্বীকার করেছে, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে তিনিসহ চারজন এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

;

এমপি আনার হত্যার নেপথ্যে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তদন্তে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসছে।

তদন্তকারীদের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার সোনা ও হুন্ডির ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়। ওই বিরোধীদের জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে ভারতে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৩০ এপ্রিল কিলিং মিশন বাস্তবায়নকারী সৈয়দ আমানুল্লাহ ওরফে শিমুলকে নিয়ে ভারতের কলকাতায় যান মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন। নিউমার্কেট এলাকা থেকে ছুরি, চাপাতিসহ হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নিয়ে রাখেন নিউটাউন অভিজাত এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনসে। আগে থেকেই হত্যার ছক আঁকা থাকায় আমান দফায় দফায় রিহার্সেল করেন তার সহযোগীদের সঙ্গে।

তার অংশ হিসেবেই পরিকল্পিতভাবে ছোটবেলার বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহিন এমপি আনারকে ভারতে নিয়ে বিনিয়োগের টাকা ফেরত দিতে বলেন। এ নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। মৃতের পরিচয় যাতে বোঝা না যায় তাই তারা শরীরের হাড় ও মাংস আলাদা করে ফেলেন। এর পর হাড় ও মাংস টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে সব কিছু পলিথিন ব্যাগে ভরে ফ্ল্যাটের বাইরে গিয়ে ফেলে দেয়।

এমপি আনার খুনের ঘটনায় কলকাতার সিআইডি ইতোমধ্যেই তিন জনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের এক জন জুবেরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কী কারণে সেই সাক্ষাৎ সেই বিষয়ে জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। খুনের কিনারা করতে সিআইডির একটি দল বৃহস্পতিবারই ঢাকা আসে। তারা ঢাকায় আটকদের জেরা করবেন।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। প্রথমে তিনি উঠেছিলেন বরাহনগরের এক বন্ধুর বাড়িতে। সেখান থেকে দু’দিন পর নিখোঁজ হয়ে যান। তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে নিখোঁজ ডায়েরি করেন ওই বন্ধু। উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যেরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে যোগাযোগ করা হয় ভারত সরকারের সঙ্গে। তার পর সংসদ সদস্যের খোঁজ শুরু হয়।

সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, সংসদ সদস্য আনার কলকাতায় আসার অনেক আগেই এখানে চলে এসেছিলেন অভিযুক্তেরা। শহরে বসেই তারা খুনের ছক কষেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। দুই অভিযুক্ত কলকাতার সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে ছিলেন গত ২ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, ১২ তারিখ কলকাতায় আসেন সংসদ সদস্য আনার। অর্থাৎ, তার আসার অন্তত ১০ দিন আগে কলকাতায় এসে পড়েছিলেন ওই দুই অভিযুক্ত। তারা হোটেল ছাড়েন আজিম আসার এক দিন পরেই। গোয়েন্দাদের অনুমান, এই ১০ দিন ধরে শহরে থেকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন অভিযুক্তেরা।

;

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও নৌকার মাঝি মনির!



রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জীবন নামক শব্দে আছে অনেক উত্থান-পতন। দুঃখ-কষ্ট, আশা-হতাশা যার নিত্যসঙ্গী। তবু জীবন নৌকায় বসে বৈঠা হাতে পাড়ি দিতে হয় অকূল দরিয়া। আর জীবনের উত্থান পতনের করুণ পরিণতি মেনে নিয়ে, বাস্তব জীবনে নৌকার বৈঠা হাতেই বুড়িগঙ্গার ঘাটে কাটছে তার দিন রাত। ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে চলছে জীবন। তবে জীবনের সূত্রগুলোর সাথে এমন করুণ সমীকরণ মেলাতে পারেন না মনির।

স্বপ্নগুলো ভেঙে গেছে জীবন নদীর আছড়ে পড়া বড় বড় ঢেউয়ে। সেই ঢেউয়ের প্রভাবে পেয়েছেন ধোঁকা, লাঞ্ছনা, আর হতাশা। তাই তো জীবন বাঁচাতে দেশের সব থেকে বড় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও আজ সদরঘাটের মাঝি হয়েছেন মনির। মা, বউ ও একমাত্র মেয়ের মুখে ভাত তুলে দিতে নদীর ঢেউয়ের সাথে প্রতিদিন যুদ্ধ করছেন এ যুবক।

তবে জীবনের এমন করুণ পরিণতি না হলেও পারত আক্ষেপ মনিরের। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সহজিকরণ ও চাকরি ব্যবস্থায় দুর্নীতি না থাকলে আজ হয়ত নৌকার বৈঠা বাইতে হতো না এমন অভিযোগ মনিরের।

নৌকার বৈঠা হাতেই বুড়িগঙ্গার ঘাটে কাটছে তার দিন রাত

কেন এমন অভিযোগ মনিরের?

কারণ জানতে চাইতেই আক্ষেপের সুরে মনির বলেন, বাবা ছিলেন কৃষক। নুন আনতে পান্তা ফুরাতো পরিবারে। ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে কাজ করতাম। তবে বুক ভরা স্বপ্ন ছিল। পড়ালেখা করে ভালো চাকরি করব। পরিবারের হাল ধরব। তবে সে স্বপ্নের পথে বার বার বাধা এনেছে অভাব অনটন আর আর্থিক দৈন্য। তবুও সব প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে এইচএসসি পাস করি ৪ দশমিক ৫৬ জিপিএ পেয়ে। স্বপ্ন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। শিক্ষক ও আশেপাশের মানুষজন বলত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই নাকি জীবনে আর পিছনে তাকাতে হয় না। চাকরি মেলে। স্বপ্নের জীবন পাওয়া যায়। সে স্বপ্ন বুকে লালন করে সুযোগ পাই ভর্তির। তবে টাকার অভাবে ভর্তির সুযোগ কাজে আসছিল না। বাবা একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে আমাকে ভর্তি করিয়েছিলেন স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

মনির বলেন, ভর্তির পর ৫-৬ মাস আমার রাস্তায় কেটেছে। ঢাকার কিছু চিনতাম না। আর সবার মতো আমার টাকাও ছিল না। অনেক চেষ্টা করেছি হলে একটা সিটের জন্য। স্যারদের বললে বড় ভাইদের সাথে যোগাযোগ করতে বলত। চেষ্টা করেও পাইনি স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট। ক্লাস বাধ্যতামূলক থাকায় রাতে ইটভাটায় কাজ নিয়েছিলাম। তবে কাজ করে দিনে ক্লাস করতে পারতাম না। এভাবেই থমকে গিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সুযোগ। পরে ২০১৪ সালে বরিশালের বিএম কলেজ থেকে ডিগ্রি শেষ করে প্রায় ২০০ চাকরিতে আবেদন করি। ইন্টারভিউ দিয়েছি প্রায় ৪০টা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তবে বার বার উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাইনি।

রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নৌকায় মানুষ পারাপার করছেন মনির

প্রতিটা সেক্টরে হয়ত টাকা, নয়তো মামা-চাচা না থাকায় চাকরি বঞ্চিত হয়েছি আমি। বাবা মারা যাওয়ার পর কোন দিশা না পেয়ে আমি পরিবার বাঁচাতে হাতে তুলে নিই নৌকার বৈঠা।

মনিরের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার বিসারকান্দি গ্রামে। সেখানে তার তিন বছরের মেয়ে, বউ ও মা থাকেন। বাবার মৃত্যুর পর তাদের মুখে দুবেলা ভাত তুলে দিতে দিনরাত পড়ে থাকেন বুড়িগঙ্গার ঘাটে। দিন শেষে আয় হয় ৩০০-৪০০ টাকা, তা দিয়ে নিজের খরচ শেষে পাঠান গ্রামে।

আর্থিক দৈন্যের জীবনে কিছুটা স্বস্তি আনতে ছোটবেলা থেকে সমাজের সাথে যুদ্ধ করেছেন মনির। তবে সমাজের ব্যতিক্রম নিয়মের কাছে হারতে হয়েছে বারবার। সফলতার পথে বহুদূর পাড়ি দিয়েও ফিরে এসে এখন মনিরের আক্ষেপ বাংলাদেশের পড়ালেখা গরিবের জন্য নয়!

;

গরমে ৪ হাজার মুরগির মৃত্যু, প্রতিবাদে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
গরমে ৪ হাজার মুরগির মৃত্যু

গরমে ৪ হাজার মুরগির মৃত্যু

  • Font increase
  • Font Decrease

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পোল্ট্রি খামারে প্রায় ৪ হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভয়াবহ লোডশেডিং ও প্রচণ্ড গরমে মুরগিগুলো মারা গেছে বলে দাবি করেছেন খামার মালিকরা। মারা যাওয়া প্রতিটি মুরগির ওজন দেড় থেকে দুই কেজি ছিল বলে জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব খামারিরা নরসিংদী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর পলাশের তালতলী সাব জোনাল অফিসের সামনে মরা মুরগি নিয়ে অবস্থান করে অফিস ঘেরাও করে রাখে। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পল্লী বিদ্যুতের কর্তা ব্যক্তিরা খামারিদের দেখে অফিসের মূল গেটে তালা লাগিয়ে ভিতরে বসে থাকে।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিনই প্রচণ্ড গরম পড়েছে। পাশাপাশি ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে পুরো এলাকা। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুতের জন্য বার বার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া পাননি খামার মালিকরা।

‘মুরগিগুলো চোখের সামনে একে একে মারা যায়’ মন্তব্য করে খামার মালিক মহসিন জানায়, আমার খামারে প্রায় ৩ হাজার মুরগি মারা গেছে। এছাড়াও আমার স্বজন ও আশে পাশের খামারিদেরও মুরগি মারা গেছে। খুব কষ্ট করে মুরগিগুলো লালন-পালন করেছি। এ গরমের মধ্যে যদি অতিরিক্ত লোডশেডিং হয় তাহলে কীভাবে? বার বার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে ফোন দেওয়ার পরও লোডশেডিং কমছে না। সরকারের কাছে আমরা ক্ষতিপূরণ চাই। তা না হলে আমাদের পথে বসতে হবে।

পলাশ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, অতি গরমের কারণে উপজেলার চরসিন্দুরে কিছু মুরগি মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি তবে আজকের পল্লীবিদ্যুৎ ঘেরাও এর সংবাদ পাইনি। এ মুহুর্তে খামারিদের জন্য কোন প্রণোদনা নেই। তবে আমরা খবর নিচ্ছি কার কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে বিদ্যুৎতের লোডশেডিংয়ের কারণে।

লোডশেডিংয়ে মুরগি মারা যাওয়ার বিষয়ে ঘোড়াশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মো. আকবর হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। জিনারদী ইউনিয়নের কিছু অংশ আমার অধিনে হলেও তালতলী জোনাল অফিস আমার অধিনে নয়। লোডশেডিং কমানোর ব্যাপারে আসলে আমাদের কিছু করার নেই, আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছি ততটুকুই দিচ্ছি। এর বাহিরে কিছু করার নেই।

এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা যদি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতর বরাবর আবেদন করে আর যদি বরাদ্দ থাকে তাহলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

;