বিমানের গলার কাঁটা লিজে আনা দুই প্লেন
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে মিশর থেকে লিজে আনা বোয়িং ৭৭৭ ২০০ ইআর উড়োজাহাজ। এরই মধ্যে লিজে আনা এই দুটি বোয়িং এর জন্য রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনসকে ৩০০ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে।
বিষয়টি শুধু এখানেই থেমে নেই। অসম চুক্তি করে আনা এয়ারলাইনস দুটিকে ফেরত পাঠাতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনস পড়েছে নতুন সমস্যায়। চুক্তি অনুযায়াী উড়োজাহাজ দুটি যে অবস্থায় আনার কথা ছিল সেই অবস্থায় ফেরত দিতে হবে, অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দেক আহমেদকেও এক হাত নেন বিমান সচিব মহিবুল হক। এ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করলেও প্রতিমন্ত্রীর তোপের হাত থেকে রক্ষা পাননি।
বিমানের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ৫ বছর আগে লিজে আনা একটি উড়োজাহাজ কোনোভাবেই সেই অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এটি একটি অসম্ভব কাজ। অথচ বিমানের ওই সময়কার কর্তাব্যক্তিরা এই চুক্তিটি সম্পন্ন করেছিলেন অবলীলায়।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে ইজিপ্ট এয়ার থেকে লিজে আনা হয় বোয়িং ৭৭৭ ২০০ ইআর এর দুটি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে একটি উড়োজাহাজ আসে ওই বছরের মার্চে আরেকটি যুক্ত হয় মে মাসে। এক বছরের মাথায় একটি বোয়িংয়ের একটি ইঞ্জিন বিকল হয়। পরে উড়োজাহাজটি সচল করতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে ভাড়া করে আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় এর ইঞ্জিনটিও নষ্ট হয়। ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনটিও ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নষ্ট হয়ে যায়।
এ অবস্থায় নষ্ট ইঞ্জিনটি ঠিক করতে তা পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ইঞ্জিনের অভাবে মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকায় লিজে আনা উড়োজাহাজের জন্য ভাড়া গুনতে থাকে বিমান। এরপর বিষয়টি নজরে আসে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির। ২০১৭ সালের জুনে ঘটনা তদন্তে সংসদীয় কমিটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্তে উঠে আসে এই উড়োজাহাজ বাবদ বিমানের লোকসান হয়েছে ৩০৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কমিটি এই চুক্তিকে বিমানের স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে তার প্রতিবেদনে বলে, উড়োজাহাজ দুটি লিজে আনার চুক্তির সব শর্তই ছিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আর বিমানের বিপক্ষে।
যদিও সম্প্রতি উড়োজাহাজ দুটি ডি চেকের মাধ্যমে পুনরায় তা ইজিপ্ট এয়ারে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু উড়োজাহাজ দুটি যন্ত্রাংশ না পাওয়ায় তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে মিশরে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, অনেক খুচরা যন্ত্রাংশ এখন বহু এয়ারলাইনসেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একদিকে যেমন এসব যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি তা মিললেও বহু দামে তা কিনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বসিয়ে রেখে ভাড়া গুনতে হচ্ছে আর তাই বোয়িং দুটি এখন বিমানে গলার কাটায় পরিণত হয়েছে।
বিমানের প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, বোয়িং দুটি ইজিপ্ট এয়ার এ বছরের বেশি ফেলে রেখেছিল। আমরা যে অবস্থায় উড়োজাহাজ দুটি পেয়েছিলাম তার থেকে অনেক ভালো অবস্থায় নিয়ে গিয়েছি।
এ বিষয়ে বিমানের শাকিল মেরাজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, উড়োজাহাজ দুটি ফেরত পাঠাতে সব ধরনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করছি, দ্রুততর সময়ে তা ফেরত সম্ভব হবে।