সংযোগ সড়কের তিনটি ছোট গাছ কেটে চরম বিপাকে পড়েছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সদর ইউনিয়নের শালমারা ও শালকী গ্রামের বাসিন্দারা। মামলা থেকে হয়রানি ও রক্ষা পেতে শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকটে স্মারকলিপি দিয়েছেন ওই দুই গ্রামের অর্ধশত ভুক্তভোগী।
স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএনও কাবেরী রায়।
স্মারকলিপি ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, বালিয়াকান্দির সদর ইউনিয়নের শালমারা ও শালকী গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবারের যাতায়াতের সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গুনপাড়া খালের ওপর ২০২২ সালে একটি কালভার্টসহ রাস্তা তৈরি করে দেয়। কালভার্টের সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখে ছোট তিনটি গাছ থাকায় সাধারণ পথচারীদের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটছিল। ওই গ্রামের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মাঠ থেকে সরাসরি বাড়িতে নিতে পারছিল না। ফলে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে হোসনে আরা নামের একজন ভুক্তভোগী সংযোগ সড়কের সামনে থেকে গাছ অপসারণের জন্য ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বরে তৎকালীন ইউএনও বরাবর একটি আবেদন করেন।
সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউএনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর বিশ্বাসকে নির্দেশ দেন। ইউএনওর নির্দেশে ইউপি চেয়ারম্যান খাস জমির ওপর লাগানো সেই গাছ তিনটি কেটে নেওয়ার জন্য গাছের মালিক দাবিদার নারুয়া ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে আব্দুর রহমান টুকুকে মৌখিক নির্দেশ দিয়ে আসে। কিন্তু আব্দুর রহমান টুকু প্রায় দুই বছর পার হয়ে গেলেও গাছগুলো কেটে নেয়নি। এরমধ্যে দুটি গাছ মরে যায়।
দীর্ঘদিনেও গাছ কেটে না নেওয়ায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে শালমারা ও শালকী গ্রামের প্রায় অর্ধশত ভুক্তভোগী গাছগুলো কেটে খালের পাশে ফেলে রাখে।
এরপরই গাছের দাবিদার আব্দুর রহমান টুকু শালমারা শালকী গ্রামের চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে রাজবাড়ী আদালতে মামলা করে দেন। মামলাটি এখন বিচারাধীন। মামলা ও হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৫০ জন গ্রামবাসী স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন ইউএনওর কাছে।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী সাইদুর রহমান, ইমদাদুল হক, মো: আহসান, মো. সাঈদ শেখ, রইচ উদ্দিন প্রমুখ।
সাইদুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে জানান, তিনি একজন কৃষক। কালভার্টের সংযোগ সড়কের সামনে গাছ থাকায় তিনি কোনো ফসল ভ্যানে করে বাড়িতে নিতে পারতেন না। তার মতো প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন কৃষক ওই কালভার্টটি ব্যবহার করেন। খাস জমিতে গাছ লাগিয়ে গাছের মালিকানা দাবি করেন পাশের নারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রহমান টুকু। তাকে বারবার বলার পরও তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি। এমনকি একজন জনপ্রতিনিধি বলার পরও তিনি সেটা মানেননি। উপায়ন্তর না পেয়ে তারা নিজেরাই দুটি মরা মেহগনি গাছসহ একটি তালগাছ কেটে খালের পাশেই রেখে দেন। গাছ কাটার পরই তিনি গোলাম মোস্তফা গোলাপের পরামর্শে আদালতে মামলা করে দেন।
স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বার্তা২৪.কম-কে জানান, ঘটনাটি বিচারাধীন। আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি জানতে আব্দুর রহমান টুকুর ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন দিলে তার ছেলে তানভীর রহমান রিসিভ করেন। তিনি বার্তা২৪.কম-কে জানান, মামলার আসামিগণসহ গ্রামের বেশ কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক তাদেরকে না জানিয়েই ইলেকট্রনিক করাত দিয়ে তিনটি গাছ কেটে ফেলেন। এর আগে তারা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছ কাটার লিখিত কোনো নির্দেশ পাননি।
গাছগুলো খাস জমিতে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তাদের বাড়ির সামনে প্রবাহিত খালের পাড়ে গাছগুলো। যার যার বাড়ির সামনের খালের জায়গা তারা তারা ব্যবহার করে থাকেন। সেই হিসেবে গাছগুলো তাদের। খাস জমির বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।