কোরবানির ঈদ মানেই খুশির ঈদ। আর কামারদের জন্য এটি কঠোর পরিশ্রমের সময়। তাদের শালায় লোহা পেটানোর টুংটাং শব্দ আমাদের মনে করিয়ে দেয় আসছে সেই বিশেষ দিন। এই শব্দ আমাদের গ্রামীণ জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতীক। কামারশালার শব্দে আমাদের মনে খুশির সুর বেজে ওঠে এবং কোরবানির ঈদের আগমনী বার্তা আমাদের হৃদয়ে এনে দেয় আনন্দের অনুভূতি।
শহর কিংবা গ্রামে, কামারদের ব্যস্ততাে এ সময়ে তুঙ্গে থাকে। প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে কোরবানি পশুর প্রস্তুতি শুরু হয়। ঈদের আগে কামাররা সারাদিন ব্যস্ত থাকে ছুরি, চাপাতি এবং অন্যান্য ধারালো যন্ত্রপাতি তৈরিতে। তাদের হাতের কাজের নিপুণতা ঈদের আনন্দে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। কামারশালার এই শব্দ কেবল একটি সুর নয়, এটি ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। গ্রামবাংলার চিরাচরিত এই দৃশ্য আমাদের শিকড়ের সাথে গভীরভাবে যুক্ত। কোরবানির পশু জবাই করার জন্য প্রয়োজনীয় ধারালো সরঞ্জাম তৈরির কাজ যেন কামারদের উৎসবের প্রস্তুতি। ছোট ছোট শিশুদের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক, তারা দেখে কীভাবে কামাররা কঠোর পরিশ্রম করে। এভাবে কামারদের পরিশ্রম ও দক্ষতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় তাদের গুরুত্ব।
যদিও শহরে এখন আর তেমন একটা কামালশালা চোখে পড়ে না। কিন্তু খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার এলাকায় গেলে কানে ভেসে আসে সেই চিরায়িত কামালশালার টুংটাং শব্দ। শব্দ ধরে একটুি সামনে এগুলেই সেই শব্দের সাথে যুক্ত হয় কামারের হাপর টানার ফস ফস শব্দ। দু’দিন পর কোরবানির ঈদ তাইতো একবিন্দু বিরাম দেয়ার জো নেই তাদের। বাঁ পায়ের আঙুলে হাপরের দঁড়ি আর এক হাতে সাড়াশি ধরে অন্য হাতে লোহাকে বস মানাতে পেটাচ্ছেন কামার রিপন শীল। কথা হয় তার সাথে।
তিনি জানান, সারা বছর তেমন কাজের চাপ থাকে না। তবে এই সময়ে এসে বিশ্রাম নিতে পারি না। এটাই আমদের মূল মৌসুম। তাই খেয়ে না খেয়ে কাজ করতে হয়। দুদিন পর আমার আমাদের হাত খালি হয়ে যাবে। এবার যথেষ্ট কাজ রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ চাপাতি, ছুরি, বটিতে পাইন দিচ্ছে। নতুন করে তৈরির কাজ আছে বেশ।
কামারশালার পাশেই দাঁড়িয়ে দেখছেন ওই এলাকার মো. মনোয়ার হোসেন লাভলু। তিনি জানান, আমার চাপাতি, ছুরিসহ কোরবানির পশু জবাইয়ের সকল সরঞ্জামাদী রয়েছে। এবার শুধু সেগুলোকে পাইন দিয়ে শান দিতে হবে। তাই কামারের কাছে আসলাম। এসে দেখি, অনেক ভিড়। আমি প্রায় ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে ওদের কাজ দেখছি। ভালই লাগছে। তবে আমার কাজ ওরা বিকালে দেবে। এখন পেরে উঠবে না।
খুলনা মহানগরীর মধ্যে নতুন বাজার, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, লবনচরা বউ বাজার, শেখ পাড়া তেঁতুলতলার মোড়, গল্লামারি, সোনাডাঙ্গা বউ বাজার, মিস্ত্রি পাড়া, খালিশপুর, দৌলতপুরে ছোট বড় কামারশালা রয়েছে। আর এসব কামালশালায় আকার, ধরণ এবং মান ভেদে চাপাতি, ছুরি, বটির দামের তারতাম্য রয়েছে। এসব জায়গায় ৮০০ টাকা থেকে ২৫শ টাকার চাপাতি রয়েছে।এছাড়া ১শ থেকে ৩শ টাকার ছুরি ও বটি রয়েছে।