দুর্নীতির মচ্ছব বন্ধে বিশেষ কমিশন গঠন করুন: মেনন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতির বিস্তার রোধ করা না গেলে ‘হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

তিনি বলেন, দুর্নীতির মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই বিশেষ কমিশন গঠন করুন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৪ জুন) দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ সব কথা বলেন রাশেদ খান মেনন।

এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি দেশের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বিএনপি আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। বিএনপি আমলের দুর্নীতির বিশ্ব সূচকে আমাদের সেই কলঙ্ক দূর হলেও ওই সূচকে বাংলাদেশ এখনো শীর্ষ ১০-এর মধ্যে রয়েছে। বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সম্প্রতি যে চিত্র বেরিয়ে আসছে, তা দেশের ভাবমূর্তি কেবল নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি করছে। এ কথা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সাবেক পুলিশ প্রধান ও সেনা প্রধানের দুর্নীতির চিত্র ‘হিমশৈলের ক্ষুদ্র উপরিভাগ’ মাত্র।

এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এই বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে। দুর্নীতির এই মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই বিশেষ কমিশন গঠন করুন। দুর্নীতিবাজদের অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও বিচার করে কঠিনতম শাস্তি দিন। ঋণখেলাপি অর্থ আত্মসাৎকারীদের জন্য ‘ট্রাইব্যুনাল গঠন’ করুন।

সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি জানি, উন্নয়নের বেদনা আছে। সেই বেদনা যদি চোখের সামনে দেশের সম্পদ লুট করার কারণে হয়, তবে সেটা গ্রহণ করা যায় না। ওই লুটের টাকাকে ‘যখন সাদা করার জন্য সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের চেয়ে অর্ধেক কর দিয়ে সাদা করার প্রস্তাব করা হয়’, তখন সেটা সততার জন্য তিরস্কার ও অসততার জন্য পুরস্কারের শামিল হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, এ সম্পর্কে যে সব যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তা কেবল আশার নয়, এ প্রসঙ্গে সরকারের অতীত অবস্থানের বিপরীত। খালেদা জিয়ার জন্য যেটা অনৈতিক, বর্তমানেও সেটা অনৈতিক। আশা করি, অর্থমন্ত্রী এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে সংসদকে এর দায়ভার থেকে রেহাই দেবেন।

সংসদ সদস্য মেনন বলেন, এক নিষ্ঠুর অলিগার্করা দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই অলিগার্কির স্বার্থ রক্ষার্থে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধগতি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিংখাতে লুট ও নৈরাজ্য এবং খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত করেছে।

এর থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল বর্তমান সময়ের জরুরি কর্তব্য। কিন্তু সেই লক্ষ্যে বাজেটে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় না।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনি ইশতেহারের কথা বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, তার থেকে বাজেট প্রস্তাবনা যোজন যোজন দূরে এবং সাংঘর্ষিক। বাজেটে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বৈশ্বিক সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই একই বৈশ্বিক সংকটে শ্রীলঙ্কা, ভারত মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশ পারছে না কেন, সে কথা বলার প্রয়োজন ছিল। অর্থমন্ত্রী অবশ্য বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৬ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার আশা দিয়েছেন। আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবো। ৬ মাস পর এই সংসদে এ ব্যাপারে পর্যালোচনা উত্থাপনের জন্য আমি প্রস্তাব করছি।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, মূল্যস্ফীতির অভিঘাত সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হয়। এর ফলশ্রতিতে যে বিষয়টি সাধারণ মানুষকে সর্বাপেক্ষা পীড়িত করছে, তা হচ্ছে উচ্চ দ্রব্যমূল্য। আমি সংসদে কাউকে কাউকে ঢোক গিলে বলতে শুনেছি, মানুষ কষ্টে আছে। মানুষ শুধু কষ্টে নেই, তাদের সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা কমিয়ে দিতে হচ্ছে!