‘মাদক মামলার আসামিদের সাজা বহালে ব্যবস্থা নিতে হবে’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলন ও জেলা প্রশাসকগণের মাসিক সমন্বয় সভা

চট্টগ্রাম বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলন ও জেলা প্রশাসকগণের মাসিক সমন্বয় সভা

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেছেন, মাদক মামলার রায়ে যে সকল আসামির ৫ থেকে ৭ বছর সাজা হয়, আপিলের পরও তাদের সাজা যাতে বহাল থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সোমবার (২৪ জুন) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত চোরাচালান নিরোধ আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা, বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা, বিভাগীয় বিনিয়োগ উন্নয়ন সহায়তা কমিটির সভা, বিভাগীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন টাস্কফোর্স সভা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণের সাথে সমন্বয় সভা, বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলন ও জেলা প্রশাসকগণের মাসিক সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় পৃথক পৃথক সভার আয়োজন করেন। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগের জেলা প্রশাসকগণের মধ্যে ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০২৪-২৫’ স্বাক্ষরিত হয়। বিগত সভার কার্যক্রম ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনারের একান্ত সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম অনীক চৌধুরী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফখরুল ইসলাম।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, মাদক একটি বড় সমস্যা। মাদকের ছোবল থেকে আমাদের শিশু-কিশোর ও যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে। হেরোইন, ইয়ারা ও ফেন্সিডিলসহ যারা মাদক নিয়ে আটক হয় তাদের মধ্যে কেউ মামলা থেকে খালাস পায়, আবার কারও কারও নির্দিষ্ট মেয়াদে সাজা হয়। মাদক মামলার রায়ে যে সকল আসামির ৫ থেকে ৭ বছর সাজা হয়, আপিলের পরও তাদের সাজা যাতে বহাল থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং মামলার সাজা ও খালাসের রায়ের কপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বাদীকে দিতে হবে। কাস্টমস অ্যাক্ট আইন ও ফৌজদারি আইনের মামলাগুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন কতটুকু তা প্রতিমাসে প্রতিবেদন আকারে জানাতে হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। ১৮ বছরের নিচে যে সকল শিশু-কিশোর ড্যান্ডি (মিথাইল মেথাক্রাইলেট) ও মাদক সেবন করে তাদের বিচারের জন্য আলাদা শিশু আদালত রয়েছে। তাদেরকে সংশোধনের জন্য সমাজসেবার সহযোগিতায় গাজীপুরে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে প্রেরণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি সকল ধরনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ইভটিজিং, খুন ও ধর্ষণের ঘটনা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। ইতোপূর্বে কিশোর গ্যাংয়ের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে আসা মাদক, অস্ত্রের চোরাচালান, তেল পাচার রোধ ও চোরাচালান রোধে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথে টহল আরও জোরদার করতে পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও নৌ-পুলিশসহসংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটতে পারবে না। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তদারকি বাড়াতে হবে। একইসাথে রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর প্রতিও নজর রাখতে হবে।

সভায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরেআলম মিনা বলেন, সম্মিলিত উদ্যোগের কারণে বিভাগের প্রত্যেক জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে মাদক সেবন ও উদ্ধারের পর পুলিশ বাদী হয়ে যে সকল মামলা দায়ের করা হয় সেগুলোর রায়ের সাজা ও আপিলের বিষয়টি তদারকি করার জন্য পুলিশের আলাদা একটি ইউনিট রয়েছে। এ বিভাগে ৮০ শতাংশ আসামির সাজা হয় মাদকের মামলায় আর অন্যান্য বাদীর মামলায় সাজা হয় ২০ শতাংশ আসামির। চামড়ার দাম আরও বৃদ্ধি করতে ব্যবসায়ীদেও দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি ভারত থেকে আসা নিন্মমানের চিনি ও বিপিসি’র নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন ডিআইজি।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোয়ায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৃথক সভাগুলোতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরেআলম মিনা, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবদুল মান্নান মিয়া, বিজিবির চট্টগ্রাম রিজিয়নের পরিচালক (লজিস্টিক) লে. কর্নেল মো. শরীফ উল্লাহ, বিডার পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন, নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান (চট্টগ্রাম), শাহীন ইমরান, (কক্সবাজার), মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন (রাঙামাটি), মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সুরাইয়া জাহান (লক্ষ্মীপুর), খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান (কুমিল্লা), মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার (ফেনী), মো. কামরুল হাসান (চাঁদপুর), মো. সহিদুজ্জামান (খাগড়াছড়ি), শাহ মোজাহিদ উদ্দিন (বান্দরবান), শারমিন আক্তার (নোয়াখালী), রেলওয়ে পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদ হোসেন মোল্লা, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের পিপি হরিপদ চক্রবর্তী, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের উপ-কমিশনার (কুমিল্লা) মো. কেফায়েত উল্লাহ মজুমদার, যুগ্ম কমিশনার (চট্টগ্রাম) মো. মারুফুর রহমান, সহকারী পরিচালক আবদুল মতিন তালুকদার, পণ্য পরিবহন মালিক গ্রুপের সদস্য গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

পৃথক সভাগুলোতে বিভাগের বিভিন্ন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি, র‌্যাব-পুলিশ-কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।