যাত্রাবাড়ীতে দম্পতি খুন; ঘাতকরা পরিচিত কেউ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জনতা ব্যাংকের সাবেক গাড়ি চালক শফিকুর রহমানকে নিজ বাসার গ্যারেজে ও তার স্ত্রীকে দ্বিতীয় তলার বেডরুমে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দুজনের সুরতহাল প্রতিবেদন বলছে ঘাতকরা ঘাড়ে ও কান টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে।

গতকাল বুধবার দিনগত রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোমেনবাগ বটতলা এলাকায় বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ভোরে বাড়িতে ঢুকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। এই দম্পতির এক সন্তান মো. ইমন পুলিশের বিশেষ শাখার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। ঈদের ছুটিতে তিনি গতকালই (বুধবার) ঢাকার বাড়ি থেকে বাইরে যান। তাদের একমাত্র মেয়ে থাকেন শ্বশুর বাড়িতে। হত্যার কারণ এখনো অজানা।

বিজ্ঞাপন

পুলিশের ধারণা দীর্ঘ সময় পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আর স্বজনকদের ধারণা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ঘাতকরা।।

বৃহস্পতিবার মোমেনবাগের আড়াবাড়ি বটতলার ওই বাড়িতে কথা হয় নিহত দম্পতির ছেলে মো. ইমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'বৃহস্পতিবার ভোরে আমার বাবা-মা কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা আমাদের খুবই পরিচিত। কিন্তু কারা এটি ঘটিয়েছে জানি না। আমাদের গ্রামের বাড়ি ফেনির দাগনভূইয়ায়। জমি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে ঝামেলা আছে। সে কারণেও হতে পারে।'

এই ঘটনা কোন ডাকাতি বা চুরির জন্য হয়নি বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জমি সংক্রান্ত বিরোধকে প্রাধান্য দিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক তদন্ত শুরু করা হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানা গেছে।

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, 'তাদের পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধকে আমরা তদন্তের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিচ্ছি। তবে এটা শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলা যায় না। যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাদের একজন দেশের বাইরে থাকেন।'

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, 'প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ডাকাতি বা চুরির ঘটনা বলা যাচ্ছে না কারণ ওই নারীর গলায় স্বর্ণের চেইন ও মোবাইল ফোন অক্ষত পাওয়া যায়নি। তবে বাসার ভেতর সব আলমারি খোলা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জমিসংক্রান্ত বিরোধসহ বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে আমাদের তদন্ত চলছে, তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে হত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।'

নিহত শফিকুর রহমান জনতা ব্যাংকের সাবেক গাড়িচালক। তার সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে ফেনির দাগনভূইয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ চাচাতো ভাইয়ের ছেলেদের। তার নামে ওই জমি বিরোধের চারটি মামলা করেছে চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী নূর জাহান। মামলাগুলোর মধ্যে দুটি খারিজ হয়ে গেছে আর দুটি মামলা চলমান। এই বিষয়ে শফিকুর রহমানের আপন ভাই মফিজুর রহমান বলেন, 'যাদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ তারা আমাদের শরিক ও ভাগীদার হলেও খুবই দুষ্ট প্রকৃতির লোক। আমাদের চাচাতো ভাইয়ের এক ছেলে শফিকুর ভাইয়ের থেকে জোর করে কিছু জমি কিনতে চেয়েছে কয়েকবার কিন্তু ভাই সেটা দেয়নি। এটা নিয়েই একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়েছে তারা।'

পাশের নির্মাণাধীন ভবন দিয়ে ঢুকে ওৎ পেতে থাকে খুনিরা: 
শফিকুর রহমানের বাড়ির ডান পাশেই একটি সাততলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। তার মরদেহ গ্যারেজের যে পাশে পড়ে ছিল সেই পাশ ঘেঁষেই নির্মাণ করা হচ্ছে ভবনটি। নির্মাণাধীন এই ভবনের প্রথম তলায় উঠলে সহজেই শফিকুর রহমানের বাড়ির সীমানা প্রাচীর দিয়ে নিচ তলার গ্যারেজে নামা যায়। শফিকুর রহমান প্রতিদিন ফজরের নামজ পড়তে মসজিদে যান এবং নামজ শেষে এসে পানি তোলার জন্য মোটর ছাড়েন। বৃহস্পতিবার ভোরেও তিনি পার্শ্ববর্তী মসজিদে নামাজ আদায় করে বাড়ি ফেরেন এবং মোটর চালু করতে যান। মোটর চালু করার সময় তাকে পেছন থেকে আঘাত করে খুনিরা। সেসময় তার হাতে ও ঘারে কোপ লাগে। এরপর শব্দ হলে তাকে সেখান থেকে টেনে গ্যারেজের কোনায় নিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা যাত্রাবাড়ী থানার এক উপপরিদর্শক বলেন, 'ধারণা করা যায় নির্মাণাধীন এই ভবন দিয়ে ভেতরে ঢোকে খুনিরা। তারপর শফিক সাহেব নামাজ থেকে আসার সময় পর্যন্ত ওৎ পেতে থাকেন।'

মামলার ছায়া তদন্তে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, 'পুরো ঘটনাটিতে অংশ নিয়েছে তিন থেকে চারজন। খুবই ঠান্ডা মাথায় তারা সময় নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। খুনিরা এই বাড়ির সবকিছু জানে ও চেনে। তারা নিচতলা দিয়ে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় দুটো খুন করে ছাদ দিয়ে বের হয়ে গেছে। মার্ডারের ধরন দেখে আমরা ধারণা করছি খুনি ও ভুক্তভোগী একে অপরকে খুব ভালোভাবে চেনে।'