আশ্র‍য় কেন্দ্রে খাদ্য সংকট, অনাহারে দিনপার বন্যাদুর্গতদের

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম,সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আশ্র‍য় কেন্দ্রে খাদ্য সংকট, অনাহারে দিনপার বন্যাদুর্গতদের

আশ্র‍য় কেন্দ্রে খাদ্য সংকট, অনাহারে দিনপার বন্যাদুর্গতদের

সিলেট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো খাদ্য সংকট রয়েছে। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছেনি শুকনো ও রান্না করা খাবার। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামছে না। তাই বাধ্য হয়ে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ছেন না।

বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের ঘরে নেই প্রয়োজনীয় খাবার। দিন আনে দিন খান এই রকম মানুষের হাতে টাকা-পয়সাও তেমন নেই। পানিবন্দি থাকায় রোজগারের পথ অনেকটা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষরা।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে সিলেট নগরীর বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে এসব অভিযোগ পাওয়া যায়।

সিলেট নগরীর কিশোরী মোহন (বালক) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় শতাধিক পরিবার। ৩ দিন আগে তাদেরকে শুকনো খাবার হিসেবে দেয়া হয়েছিল চিড়ামুড়ি।তাও আবার ২৫০ গ্রাম করে। তাদের একেকটি পরিবারের রয়েছেন ৫-৮জন সদস্য। ফলে এই খাবার তাদের জন্য পর্যাপ্ত নন বলে জানান মানুষজন।

জানা যায়, এই আশ্রয় কেন্দ্রে সিলেট সিটি করপোরেশন ১৫ ওয়ার্ডের বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। কেন্দ্রটিতে প্রায় ৫০০-৬০০জন মানুষ অবস্থান করছেন।


তবে, সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে,বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আসার পর থেকে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে রান্না করা খাবার দেয়ার জন্য। বুধবার সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

১৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল গফুর বলেন, তিনদিন ধরে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। আশ্রয় নেয়ার পর থেকে আমাদের ২৫০ গ্রাম করে চিড়ামুড়ি দেয়া হয়েছে।আর কোনো খাবার পাইনি। আমরা আছি কি না মরছি কেউই খোঁজ নেয় না।

যতরপুর এলাকার সুফিয়া বেগম বলেন, ঈদের আগের দিন রাতে বাসায় খাটের মধ্যে বসেছিলাম। রাত ১২টার পর হটাৎ করে ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করে। কোনো রকম ঘরের যা যা পরছি নিয়ে পাশের একটি উঁচু ভবণে আশ্রয় নিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, ঈদের দিন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক কষ্টে আশ্রয় কেন্দ্রে এসে উঠি।কিন্তু এখানে এসেও শান্তি নেই।খাবার না খেয়ে শুধু চিড়ামুড়ি খেয়ে কোনো রকম দিন পারছি।

একই এলাকার রিকশা চালক মাহবুবুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘুমের ঘরে পানি প্রবেশ করে। খাটের ওপর ঘুমে ছিলাম। পাশে একজনের নতুন বিল্ডিংয়ে সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন আশ্রয় কেন্দ্রে আছি।কিন্তু এখানে খাবার নেই।পকেট ফাঁকা টাকা-পয়সা কিছুই নেই। কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

তিনি বলেন, ঈদের আগে একবার পানি উঠেছিল ঘরে দৌঁড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিলাম এখানে। দ্বিতীয় ধাপে এবারও ঘরে কোমর সমান পানি। যা ছিল সব শেষ। পানি কমলে বাসায় ফিরবো।কিন্তু দুশ্চিন্তায় কিছুই ভালো লাগছে না। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই।এখন সেটাও করতে পারছি না। বাসায় ফিরলেই বাসার মালিক বাসাভাড়া জন্য চাপ দেবে।কষ্টের মধ্যে যে আছি সেটা শুনার পরও একটা টাকা কম নেবে না। গরীব মানুষ খুব খারাপ অবস্থায় আছি।

এদিকে বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টি ওয়ার্ডে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছেন প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।এছাড়া সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ১৩টি উপজেলায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭জন মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। ৬২৭ টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন ১৭ হাজার২৮৫জন। ১৩টি উপজেলায় ১হাজার ৩২৩টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, বরইকান্দি, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে বুধবার(১৯জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর গত ২৪ ঘন্টা ১০০মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো.সজিব হোসেন।

আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান,দুপুর ১২টা পর্যন্ত কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৮৯ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার, জকিগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ৫০সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর পানি ৯৭সেন্টিমিটার, শেরপুর ১৮সেন্টিমিটার, গোয়াইনঘাটের সারি গোয়াইন নদীর পানি ৭সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।