আম সুরক্ষায় কীটনাশকের বিকল্প ফ্রুট ব্যাগিং!



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিতে আম চাষ রাজশাহী অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই পদ্ধতি আম চাষিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি মূলত আমের গায়ে বিশেষ ব্যাগ পরিয়ে দিয়ে চাষ করা হয়, যা ফলকে কীটপতঙ্গ, রোগ এবং অতিবৃষ্টির ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি পরিবেশ সংরক্ষণ ও ফলের গুণগত মান রক্ষায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে আমের সুরক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে একটি কার্যকর সমাধান প্রদান করছে। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষিরা ফলের গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারেন এবং একই সাথে পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাবও হ্রাস করতে সক্ষম হন।

বর্তমানে, বালাই নাশকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলচাষিরা সঠিক জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে এক মৌসুমে ফল বাগানে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি স্প্রে করে থাকেন। এর ফলে পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এই অবস্থার উত্তরণে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

চাষিরা আম সংগ্রহ করার পর থেকে পরের মৌসুমে আম সংগ্রহ করা পর্যন্ত ১৫-৬২ বার বালাইনাশক ব্যবহার করেন। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষেত্র বিশেষে ২-৫ বার স্প্রে করলেই ভালো মানের আম সংগ্রহ করা সম্ভব। অতিরিক্ত স্প্রে যেমন জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি আমের উৎপাদন ব্যয়বহুল করে তোলে। অতিরিক্ত স্প্রে করার ফলে উপকারী ও বন্ধু পোকামাকড়ের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। বালাইনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের পরিবেশবান্ধব সমাধানের অন্যতম উপায় হলো ব্যাগিং প্রযুক্তি।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুর ফল বিভাগের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (এইচআরসি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন বলেন, ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি বলতে ফল গাছে থাকা অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে বা বয়সে বিশেষ ধরনের ব্যাগ দ্বারা ফলকে আবৃত করাকে বুঝায়। ব্যাগিং করার পর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত ব্যাগটি গাছেই ফলের সাথে লাগানো থাকে। তবে এই ব্যাগ বিভিন্ন ফলের জন্য বিভিন্ন রং এবং আকারের হয়ে থাকে। আমের জন্য দুই ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। রঙিন আমের জন্য সাদা ব্যাগ আর অন্যান্য জাতের জন্য বাদামি রং এর ব্যাগ ব্যবহার করা হয়।

আম সুরক্ষায় কীটনাশকের বিকল্প ফ্রুট ব্যাগিং

তিনি বলেন, আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন নিশ্চিত করার জন্য বর্তমানে বালাইনাশকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত স্প্রে যেমন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তেমনি আমের উৎপাদন ব্যয়ও বেশি। এই অবস্থায় আমে ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে বালাইনাশকের ব্যবহার ও খরচ অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হবে। এই ব্যাগিং পদ্ধতিতে প্রায় ৩০ থেকে জাত ভেদে ৭০ ভাগ বালাইনাশক কম হয়।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, সকল জাতের আমের জন্য ব্যাগিং করার সময় এক নয়। যেমন বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৬, বারি আম-৭, খিরসাপাত এবং ল্যাংড়া জাতের আমে ব্যাগিং করা হয় ৪০-৪৫ দিন বয়সের গুটিতে। আমের অন্যান্য জাতগুলি যেমন বারি আম-৩, বারি আম-৪, বারি আম-৮, ফজলি ও আশ্বিনা জাতে ব্যাগিং করা হয় গুটির বয়স ৬০-৬৫ দিন হলে। আমের প্রাকৃতিক ঝরা বন্ধ হলে এবং ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ শুরু হওয়ার পূর্বেই ব্যাগিং করতে হবে। ব্যাগিং করার পূর্বে অবশ্যই কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। নির্দিষ্ট বয়সের এবং আকারের দাগমুক্ত আমে ব্যাগিং করতে হবে। একটি পুষ্মমঞ্জুরীতে অনেকগুলো আম থাকলে প্রথমেই ফল পাতলা করতে হবে। এরপর সবচেয়ে ভালো, দাগমুক্ত একটি অথবা দুটি আমে ব্যাগিং করতে হবে। তবে বড় জাতের আমের ক্ষেত্রে প্রতি পুষ্মমঞ্জুরীতে একটির বেশি ফল রাখা উচিত নয়।

তিনি আরও বলেন, ব্যাগিং করা উৎপাদিত আম গাছ থেকে সংগ্রহ করার সাথে সাথে খাওয়া যাবে না। সংগ্রহের সাথে সাথে বা ২/১ দিনের মধ্যে খেলে কম মিষ্টি লাগবে। এই আমগুলো যতবেশি ঘরে রেখে খাওয়া যাবে ততই মিষ্টতা বাড়বে। সাধারণভাবে দেখা গেছে যে, জাতভেদে ব্যাগিংয়ের আম সংগ্রহের ৬-৭ দিন পর ভালোভাবে নরম হয় এবং খেতে সুস্বাদু হয়। কোন অবস্থাতেই শুধুমাত্র রঙ বিবেচনা করে আম কাটা ঠিক হবে না। জাতভেদে আমগুলো ৯-১৪ দিন পর্যন্ত ঘরে রেখে খাওয়া যাবে।

আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আরএইচআরসি) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ব্যাগযুক্ত ফলগুলি নন-ব্যাগযুক্ত ফলগুলির তুলনায় অনেক ভালো। এ প্রযুক্তি পোকামাকড় এবং রোগের ক্ষতি কমাতে এবং আমের ফলের গুণ-মান ত্রুটিগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে। ফল ব্যাগিং পদ্ধতি ফল ও গাছের সুরক্ষার জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি।

কৃষকরা বলছেন, 'ফ্রুট ব্যাগিং' পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে তারা আমের ফলন ও গুণগত মানের ব্যাপক উন্নতি দেখতে পাচ্ছেন। কীটনাশক ব্যবহার না করেও আমের সুরক্ষা নিশ্চিত হওয়ায় তারা খুশি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ফলের উপর পোকামাকড়ের আক্রমণ কমে যাওয়ায় ফলের রঙ, আকার ও স্বাদে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। পরিবেশবান্ধব এই প্রযুক্তি আম চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ফলকে তাজা ও দাগমুক্ত রাখে। তিনি এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভালো সুফল পেয়েছেন। তিনি ৩২ হাজার আমের ব্যাগিং করেছেন। যেখানে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ টাকা।

রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আম এই অঞ্চলের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ফল ফসলের মধ্যে একটি। তবে গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলটি বিকাশের সব পর্যায়ে কীটপতঙ্গ এবং রোগের আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিটি আতঙ্ক দূর করার জন্য চাষি এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি উচ্চ আশা তৈরি করেছে।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন বলেন, এ প্রযুক্তিটি ব্যয়বহুল হওয়ায় ব্যক্তি পর্যায়ে এখনো তেমন জনপ্রিয়তা পায় নি। তবে যারা রপ্তানির জন্য আম উৎপাদন করছেন, তারা প্রয়োজনের তাগিদেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। বাণিজ্যিক বাগানগুলোতে এ পদ্ধতিতে জনপ্রিয়তা বেশি পেয়েছে। আর যে কোনো ভালো প্রযুক্তির সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ আন্তরিক। তবে সব চাষিই যে এ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করবে এমনটা না। তবে সময়ে সঙ্গে প্রয়োজনের তাগিদেই এ পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

   

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফল-মিষ্টি পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অন্যান্য উৎসবের ন্যায় প্রধানমন্ত্রী তার শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফল-মিষ্টি পাঠিয়েছেন।

সোমবার (১৭ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। 

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ফলমূল এবং মিষ্টান্ন হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ.বি.এম. সরওয়ার-ই-আলম সরকার।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ এক এক করে বক্তব্য রাখেন। এ.বি.এম. সরওয়ার-ই-আলম সরকার এর বক্তব্য শেষে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ এর বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে প্রেরিত ফলমূল ও মিষ্টান্ন মুক্তিযোদ্ধাগণের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ তাদের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তারা বলেন. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা মুক্তিযোদ্ধারা মূল্যায়ন তো করেনি বরং নানভাবে তাঁদের হয়রানি করেছে এবং অসম্মানিত করেছে। এটা করেই স্বৈরশাসকরা থেমে যায়নি, তারা ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে এদেশের গৌরবময় ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। তাঁরা আরও উল্লেখ করেন, জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরিয়ে এনেছেন। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সম্মানের স্থানে আসীন করেছেন। যার ফলে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে তারা সবচেয়ে সন্তুষ্ট আছেন বলে তাঁরা মনে করেন।

সব শেষে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব তার বক্তব্যের মাধ্যমে বাঙালি জাতির সূর্যসন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে বিজয়ী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সকল মাপকাঠি পূর্ণ করেছেন। সামনের দিনগুলোতে তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধশালী এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

;

সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে চায় চট্টগ্রামের আড়তদাররা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
চামড়া সংরক্ষণের জন্য আড়তগুলোতে এনে রাখা হয়েছে লবণ

চামড়া সংরক্ষণের জন্য আড়তগুলোতে এনে রাখা হয়েছে লবণ

  • Font increase
  • Font Decrease

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গেল বছরের মতো এবারও সাড়ে ৩ লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের প্রথম এবং প্রধান উপকরণ হলো লবণ।

এখন লবণ কেনা, চামড়াজাত করার জন্য গুদাম ভাড়া এবং শ্রমিক ঠিক করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতি।

কোরবানির সময়ে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার অন্য কোনও উপায় নেই। অতি প্রয়োজনীয় এই লবণ নিয়ে এবার বেশ স্বস্তিতে কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। দামও গত বছরের চেয়ে বস্তাপ্রতি (৭৪ কেজি বস্তা) কমেছে প্রায় ১০০ টাকা।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ করলেও এক লাখ চামড়া নেয় চট্টগ্রামের রিফ লেদার ট্যানারি। বাকি চামড়া বিক্রি করতে ঢাকার ট্যানারির ওপর নির্ভর করতে হয়। এবারও রিফ লেদার গত বছরের মত চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে এক লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০-৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে। ফলে এটাই চামড়া সংগ্রহের মৌসুম।

রেওয়াজ অনুযায়ী পরের দুই দিনও কিছু পশু কোরবানি চলবে। ওই সময় পাড়া-মহল্লা থেকে কাঁচা চামড়া কিনে বা সংগ্রহ করে মৌসুমী ক্রেতারা তা বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ত সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করবে।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, গতবছর চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদে প্রায় তিন লাখ ৪৫ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম আমরা (আড়তদাররা)। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি ছিল গরুর চামড়া। এবার গরু, ছাগল, মহিষ মিলে সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট আছে আমাদের। এখন আমাদের লবণ ক্রয়, লোকবল ঠিক করা-গুদাম ঠিক করাসহ সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, লোকসান গুণতে গুণতে আমাদের এই ব্যবসা (কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী) থেকে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে গেছে। অনেকেই এই ব্যবসা গুটিয়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। আগে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ছিল ১১২জন। আমাদের সমিতির বাইরে ছিল আরো ১০-১২জনের মতো। এখন আমাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১২ জন থাকলেও গত দুই বছরে ৩০-৪০ জনের বেশি কেউ চামড়া ক্রয় করে না। প্রতি বছর লোকসান দিতে দিতে ঋণের বোঝা বইতে বইতে অনেকেই এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। তাছাড়া আমাদের চট্টগ্রামে আগে মদিনা ট্যানারি ও রিফ লেদার ট্যানারি নামে দুটি ট্যানারি ছিল। বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) না থাকায় ছয় বছর আগে মদিনা ট্যানারি বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবছর গরমের তীব্রতা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি, যেটা চামড়া সংগ্রহের জন্য অনূকূলে নয়। চামড়া রেখে দিলে খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ থাকবে চামড়া সংগ্রহ করার পর যাতে দ্রুত আড়তে নিয়ে আসে অথবা লবণ দিয়ে স্থানীয় ভাবে মজুদ করে রাখা হয়।

তিনি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামটি সংরক্ষণের পরের দাম, যা অনেক কোরবানিদাতা কিংবা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বোঝেন না। তারা মনে করেন সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আড়তদাররা চামড়া কিনবেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাই তাদেরকে বেশি দামে চামড়া ক্রয় না করার অনুরোধ জানান তিনি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির চামড়া স্থানীয়ভাবে ৭ থেকে ১০ দিন সংরক্ষণ করতে হবে। চামড়া যেন বর্ডার ক্রস না করে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। সংরক্ষণ করতে গিয়ে চামড়া যেন নষ্ট না হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে কাজে লাগাতে হবে।

৬৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন হয়েছে জানান বিসিক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-মহাপরিদর্শক নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, এবার ৭ সাড়ে হাজার মেট্রিক টন লবণ প্রয়োজন। সাড়ে ২১ হাজার লবণ মজুদ রয়েছে আমাদের। লবণের কোন সংকট নেই। চামড়া সংরক্ষণের জন্য আমরা গত বছর ২০ টন লবণ বিনামূল্যে সরবরাহ দিয়েছি। এ বছর ২৫ টন লবণ বিনামূল্যে দেব।

এর আগে, ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩ টাকা বেড়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

চট্টগ্রামে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গতবছর যা ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ছিল।

;

বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার পাঁচ জামাত অনুষ্ঠিত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার নির্ধারিত ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সোমবার (১৭ জুন) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ১০টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ইমামতির মাধ্যমে পঞ্চম ও শেষ ঈদুল আজহার জামাতটি অনুষ্ঠিত হয়।

শেষ জামাতে মুকাব্বির হিসেবে ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মোঃ আক্তার মিয়া।

শেষ জামাতে নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের বিশেষ খুতবা। এসময় দেশের সার্বিক উন্নয়ন কামনা, মুসলিম উম্মাহর প্রতি শান্তি কামনাসহ কবরবাসীর প্রতি শান্তি কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে দোয়া করা হয়। নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা কোলাকুলির পাশাপাশি একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।


বায়তুল মোকাররমে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লি আকরাম আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ সবার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পেরে ভাল লাগছে। এখন বাসায় গিয়ে কোরবানি দিব। আল্লায় এই কোরবানিতে সন্তুষ্ট হলে সেই উসিলায় যেন সমাজে মানুষে মধ্যে থাকা হিংসা বিদ্বেষ গুলোও কোরবানি হয়ে যায়।

এদিকে, পঞ্চম জামাতের আগে সকাল ৭টায় প্রথম জামাত, ৮টায় দ্বিতীয় জামাত, ৯টায় তৃতীয় জামাত, ১০ টায় চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

;

শোলাকিয়ায় লাখো মানুষের ঢল, দেশের শান্তি কামনা করে দোয়া



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কিশোরগঞ্জ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে ১৯৭তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ঈদ জামাতে আসে মানুষ। 

সোমবার (১৭ জুন) সকাল ৯ টায় লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে জামাত হয়৷ কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা থাকায় ঈদুল আজহার জামাতে দূরের মানুষ কম আসেন৷

উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন ঈদগাহ শোলাকিয়ায়র জামাতে ইমামতি করেন কিশোরগঞ্জ মারকায মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান।

শোলাকিয়া ঈদগাহের রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরু হওয়ার আগে শটগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু করা হয়। নামাজ শেষে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা হয়। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহর দয়া কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। ঈদ জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ড্রোন ক্যামেরা, বাইনোকুলারসহ দুই প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাব, বিপুল সংখ্যক পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়াও মাঠে ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হয়। প্রতিটি মুসল্লিকে তল্লাশি করে মাঠে প্রবেশ করানো হয়।

অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন ছিল। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও প্রস্তুত রাখা হয়। স্কাউটস সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

দূরের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ টু কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব-টু কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং মুসল্লিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের দুজন কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম, স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক ও আবির রহমান নামে এক জঙ্গি নিহত হন। জঙ্গি হামলার পর থেকেই প্রতি বছর ঈদেরদিন শোলাকিয়ায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

;