মিশ্র বহরে বিমানের ক্ষতি ১৮০০ কোটি টাকা



ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দরকার। আর তাই বিমানও নতুন উড়োজাহাজ সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে বিমান তার বহরের জন্য এয়ারবাস নাকি বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ কিনবে।

আর এই আলোচনার মধ্যে নতুন একটি তথ্য উঠে এসেছে। তথ্যমতে বিমান যদি মিশ্র বহরে যায় (বোয়িং ও এয়ারবাস) তাহলে প্রতিষ্ঠানটির এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা লোকসান হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং বলছে, এ নিয়ে বোয়িংয়ের বিস্তারিত সমীক্ষা রয়েছে। তাদের সমীক্ষা বলছে, বিমান যদি মিশ্র বহর তৈরি করে আগামী ২০ বছরে ১৫০ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ক্ষতি হবে। মূলত প্রশিক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ, স্পেয়ার পার্টস ও বৈমানিকদের প্রশিক্ষণের জন্যই এই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে। একটি বহরে যদি ১০টি বোয়িং ৭৮৭ এবং ১০টি এয়ারবাস এ৩৫০ উড়োজাহাজ থাকে সেক্ষেত্রে বৈমানিক বেশি লাগবে।

বোয়িংয়ের কথা, যেসব এয়ারলাইন্সের মিশ্র বহর রয়েছে তাদের হিসেব ভিন্ন। যেমন মিশ্র ফ্লিটের খরচ বাঁচাতে ইন্ডিগো এয়ারবাস কিনছে। যেহেতু তাদের বহরে আগে থেকেই এয়ারবাস রয়েছে। তবে বিমানের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। বোয়িং বলছে, বিমান কেন মিশ্র বহর তৈরি করে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি অর্থ খরচ করবে।

এয়ারবাস বলছে, বেবিচকের নিরীক্ষা অনুযায়ী ২০২২ সালে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো প্রায় এক কোটি আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিচালনা করেছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮৫ লাখের কিছু বেশি। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আকাশপথের যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। নতুন এই যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা অর্জন করতে হলে বিমানের বহু সংখ্যক উড়োজাহাজ প্রয়োজন।

মূলত গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর বাংলাদেশ সফরের সময় থেকে বিমানের এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কেনার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর থেকে উড়োজাহাজ বেচতে বোয়িংয়ের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। বোয়িং অনেক আগে থেকে নতুন উড়োজাহাজ বিক্রি করতে বিমানের সাথে দেনদরবার করে আসছিল। তবে যখন দেখলো যে, বিমান এয়ারবাসের উড়োজাহাজ পেতে অনেকখানি এগিয়েছে, তখন তাদের তরফেও বিমানে আসা-যাওয়া বেড়ে যায়। বোয়িংয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও বিমানের সাথে বৈঠক করেন।

এদিকে, এয়ারবাস কেনার বিষয়ে বিমান এরই মধ্যে প্রস্তাব যাচাই-বাছাই ও দরকষাকষিসহ পুরো প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে একটি কমিটি করে দিয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিমান অগ্রসর হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এয়ারবাস কেনার বিষয়ে বিমান অনেকদূর এগিয়েছে।

বোয়িংয়ের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান উয়্যার, ইউরেশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অশ্বিন নাইডু ও বোয়িং বিক্রয় পরিচালক কান্তি ভুবনাগিরি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।

ঢাকায় ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত কয়েকদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী ফ্রান্স সফরের আগে এ বিষয়ে চুক্তি হবে বলে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন।

বোয়িং বলছে, বিমান যদি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার দিয়ে যাত্রী পরিবহন করে তাহলে এতে বছরে তাদের ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি লাভ হবে। এছাড়া ড্রিমলাইনের তাদের ৬ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমবে ৩০ শতাংশ এবং বোয়িংয়ের অন্য প্রতিযোগির চেয়ে কম দাম পাওয়া যাবে তাদের উড়োজাহাজ।

বিমান চারটি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ও দুটি ৭৭৭ ফ্রেইটার (ওয়াইড বডি মালবাহী) উড়োজাহাজ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে।

বোয়িংয়ের নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়ে সব ধরনের প্রমাণ তারা দিয়েছেন বিমানকে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে যদি আরও নিশ্চিত হতে হয় সেজন্য প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজন বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় আনারও প্রস্তাব করেন তারা।

সম্প্রতি বিমানের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ড ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে বোয়িং বলছে, এটা হতেই পারে। তবে তারা বিশ্বাস করেন না যে, এটি পণ্যের মান সংক্রান্ত কোনো ইস্যু। কারণ একটি উড়োজাহাজ বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলাচল করে। এ কারণে উইন্ডশিল্ড দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফাটল সৃষ্টি হতেই পারে।

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটিতে বর্তমানে শুধুমাত্র বোয়িংয়ের উড়োজাহাজই রয়েছে ১২টি। প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই উড়োজাহাজগুলো কেনা হয়।

লাভ-লোকসান কি প্লেনের কারণেই হয়

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বোয়িংয়ের এই উড়োজাহাজগুলোর শতভাগ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এই ফ্লিট অনুযায়ী আমরা নতুন রুট চালু করতে পারিনি, এছাড়া বিমানের বৈমানিকসহ অন্যান্য জনবলের ঘাটতি রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এসব-ই হয়েছে বিমানের দুর্বল পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার কারণে।

কি বলছে বিমান

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলছেন, বিশ্বের বড় বড় এয়ারলাইন্সে বোয়িং ও এয়ারবাস উভয় কোম্পানির উড়োজাহাজ থাকে। তাছাড়া এয়ারবাস কেনা হলে এককভাবে বোয়িংয়ের ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে।

‘নতুন উড়োজাহাজ এলে বিমানের নেটওয়ার্ক সম্পসারণ করা হবে। কানাডায় আরও ফ্লাইট বাড়ানো, নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুসহ আরও নতুন রুট চালু করা হবে,’ যোগ করেন তিনি।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

তবে বিমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিমানকে নতুন কোম্পানির উড়োজাহাজের জন্য বৈমানিক, কেবিন ক্রু ও প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে। আর বিমান এখনো তাদের বর্তমান সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না।

   

ঈদের দিনও রিকশার প্যাডেল চালাতে হয় তাদের!



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ঈদের দিনও রিকশার প্যডেল চালাতে হয় তাদের!

ঈদের দিনও রিকশার প্যডেল চালাতে হয় তাদের!

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদের খুশি-আনন্দ পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে পারে না সবাই। কেউ কেউ পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাড়িতে যান। আবার কেউ বাড়তি রোজগারের আশায় ঘর ও পরিবার ছেড়ে পড়ে থাকেন কংক্রিটের এই মায়াহীন শহরের বুকে। অন্যের আনন্দে রোজগার বাড়ে তাদের।

এমনই একজন রহিম মিয়া। বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও। তিন ছেলে মেয়েসহ পাঁচ জনের সংসার। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মাত্র তিনি নিজেই। রাজধানী শ্যমলী এলাকার একটি রিকশা গ্যরেজে থাকেন তিনি। পরিবেশের জন্য সদস্যরা থাকেন বাড়িতে।

রহিম মিয়া পেশায় একজন রিকশাচালক। রিকশা চালিয়ে উপার্জিত টাকায় পরিবার চলে তার। ধর্মীয় বড় উৎসব ঈদুল আজহা হলেও পরিবারের কাছে ফেরেননি তিনি। ঈদের দিন সড়কে বের হলেই ভালো রোজগারের আশায় পরিবার ছেড়ে রাজধানীতেই থেকে গেছেন। শুধু রহিম মিয়াই নয়, নিম্নবিত্ত পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারের খেটে খাওয়া শত শত মানুষ বাড়তি রোজগারের আশায় পরিবার রেখে ঈদ করছেন ইট-কংক্রিটের এই নগরীর রাস্তায়।


রহিম মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, রিকশা চালিয়ে খাই মামা। ময়মনসিংহের গফরগাঁও এ আমার বাড়ি। বাড়িতে দুই ছেলে এক মেয়ে ও আপনাগো মামি থাকে। আমি রিকশা চালিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাই মামা, সেই টাকাই সংসার চলে।

ঈদ করতে বাড়িতে যান নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাগো কি আর ঈদ আছে। একদিন বসে থাকলেই লস। এক বেলা না খেয়ে থাকলে কেউ খাবার দিবে না। ঈদের দিন রাস্তায় খুব বেশি গাড়ি থাকে না। অনেকের রিকশায় ঘুরতে বের হয়। ভাড়াও একটু বেশি হয়। তাই আর বাড়িতে যাইনি।

রহিমের আশা, নগরীর উচ্চবিত্তরা ঈদ আনন্দে ঘুরতে বের হলে কিছু বাড়তি রোজগার হবে তাদের। নগরীর মানুষ যত বেশি আনন্দ উপভোগ করতে রাস্তায় বের হবে, ঘুরতে যাবে এত বেশি রোজগার হবে তাদের।

এখন পর্যন্ত কত টাকা রোজগার হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকালে নামাজের আগে ও পরে কয়েকজন যাত্রী পেয়েছি। এখন পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মতো ভাড়া হয়েছে।


টাঙ্গাইলের বাসিন্দা আমান। রাজধানীর বুকে দীর্ঘদিন রিকশা চালান তিনি। আমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঈদের দিন রিকশা চালালে বেশি ভাড়া হয়। অনেকে বকশিসও দেন। সবাই ঘুরতে বের হয়। রাস্তায় গাড়ি কম থাকে তাই আমাদের ভালো হয়। বেশি টাকা ইনকামের আশায় সময় বাড়িতে যায় না।

আরেক রিকশাচালক জীবন। এক মেয়ে ও বৌকে নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের একটি বস্তিতে থাকেন তিনি। রিকশা চালিয়ে পরিবার চালান জীবন। পরিবারের একটু স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপনের জন্য জীবনের স্ত্রী করেন অন্যের বাসায় গৃহিণীর কাজ।

জীবন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বউ মেয়ে নিয়ে ঢাকায় থাকি। ঈদ করতে বাড়িতে গিয়ে আর কি হবে। ঢাকায় থাকলে ঈদের দিনও রিকশা চালালে ভালো উপার্জন হয়। আর আপনাগো মামি যে বাসায় কাজ করে সেখান থেকে আমাদের কোরবানির গোস্ত দেয়। আমরা সেগুলো রান্না করে খেতে পারি। কিনে খাওয়ার সামর্থ্য তো আমাদের নেই।

;

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদুল আজহা উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সোমবার (জুন ১৭) সকালে গণভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সরকার প্রধান।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ, যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।


এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গেও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। গণভবনে অতিথিদের সেমাই, মিষ্টি, মৌসুমি ফল দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

;

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফল-মিষ্টি পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অন্যান্য উৎসবের ন্যায় প্রধানমন্ত্রী তার শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফল-মিষ্টি পাঠিয়েছেন।

সোমবার (১৭ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। 

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ফলমূল এবং মিষ্টান্ন হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ.বি.এম. সরওয়ার-ই-আলম সরকার।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ এক এক করে বক্তব্য রাখেন। এ.বি.এম. সরওয়ার-ই-আলম সরকার এর বক্তব্য শেষে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ এর বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে প্রেরিত ফলমূল ও মিষ্টান্ন মুক্তিযোদ্ধাগণের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ তাদের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তারা বলেন. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা মুক্তিযোদ্ধারা মূল্যায়ন তো করেনি বরং নানভাবে তাঁদের হয়রানি করেছে এবং অসম্মানিত করেছে। এটা করেই স্বৈরশাসকরা থেমে যায়নি, তারা ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে এদেশের গৌরবময় ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। তাঁরা আরও উল্লেখ করেন, জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরিয়ে এনেছেন। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সম্মানের স্থানে আসীন করেছেন। যার ফলে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে তারা সবচেয়ে সন্তুষ্ট আছেন বলে তাঁরা মনে করেন।

সব শেষে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব তার বক্তব্যের মাধ্যমে বাঙালি জাতির সূর্যসন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে বিজয়ী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সকল মাপকাঠি পূর্ণ করেছেন। সামনের দিনগুলোতে তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধশালী এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

;

সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে চায় চট্টগ্রামের আড়তদাররা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
চামড়া সংরক্ষণের জন্য আড়তগুলোতে এনে রাখা হয়েছে লবণ

চামড়া সংরক্ষণের জন্য আড়তগুলোতে এনে রাখা হয়েছে লবণ

  • Font increase
  • Font Decrease

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গেল বছরের মতো এবারও সাড়ে ৩ লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের প্রথম এবং প্রধান উপকরণ হলো লবণ।

এখন লবণ কেনা, চামড়াজাত করার জন্য গুদাম ভাড়া এবং শ্রমিক ঠিক করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতি।

কোরবানির সময়ে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার অন্য কোনও উপায় নেই। অতি প্রয়োজনীয় এই লবণ নিয়ে এবার বেশ স্বস্তিতে কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। দামও গত বছরের চেয়ে বস্তাপ্রতি (৭৪ কেজি বস্তা) কমেছে প্রায় ১০০ টাকা।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ করলেও এক লাখ চামড়া নেয় চট্টগ্রামের রিফ লেদার ট্যানারি। বাকি চামড়া বিক্রি করতে ঢাকার ট্যানারির ওপর নির্ভর করতে হয়। এবারও রিফ লেদার গত বছরের মত চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে এক লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০-৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে। ফলে এটাই চামড়া সংগ্রহের মৌসুম।

রেওয়াজ অনুযায়ী পরের দুই দিনও কিছু পশু কোরবানি চলবে। ওই সময় পাড়া-মহল্লা থেকে কাঁচা চামড়া কিনে বা সংগ্রহ করে মৌসুমী ক্রেতারা তা বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ত সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করবে।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, গতবছর চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদে প্রায় তিন লাখ ৪৫ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম আমরা (আড়তদাররা)। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি ছিল গরুর চামড়া। এবার গরু, ছাগল, মহিষ মিলে সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট আছে আমাদের। এখন আমাদের লবণ ক্রয়, লোকবল ঠিক করা-গুদাম ঠিক করাসহ সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, লোকসান গুণতে গুণতে আমাদের এই ব্যবসা (কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী) থেকে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে গেছে। অনেকেই এই ব্যবসা গুটিয়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। আগে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ছিল ১১২জন। আমাদের সমিতির বাইরে ছিল আরো ১০-১২জনের মতো। এখন আমাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১২ জন থাকলেও গত দুই বছরে ৩০-৪০ জনের বেশি কেউ চামড়া ক্রয় করে না। প্রতি বছর লোকসান দিতে দিতে ঋণের বোঝা বইতে বইতে অনেকেই এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। তাছাড়া আমাদের চট্টগ্রামে আগে মদিনা ট্যানারি ও রিফ লেদার ট্যানারি নামে দুটি ট্যানারি ছিল। বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) না থাকায় ছয় বছর আগে মদিনা ট্যানারি বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবছর গরমের তীব্রতা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি, যেটা চামড়া সংগ্রহের জন্য অনূকূলে নয়। চামড়া রেখে দিলে খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ থাকবে চামড়া সংগ্রহ করার পর যাতে দ্রুত আড়তে নিয়ে আসে অথবা লবণ দিয়ে স্থানীয় ভাবে মজুদ করে রাখা হয়।

তিনি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামটি সংরক্ষণের পরের দাম, যা অনেক কোরবানিদাতা কিংবা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বোঝেন না। তারা মনে করেন সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আড়তদাররা চামড়া কিনবেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাই তাদেরকে বেশি দামে চামড়া ক্রয় না করার অনুরোধ জানান তিনি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির চামড়া স্থানীয়ভাবে ৭ থেকে ১০ দিন সংরক্ষণ করতে হবে। চামড়া যেন বর্ডার ক্রস না করে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। সংরক্ষণ করতে গিয়ে চামড়া যেন নষ্ট না হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে কাজে লাগাতে হবে।

৬৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন হয়েছে জানান বিসিক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-মহাপরিদর্শক নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, এবার ৭ সাড়ে হাজার মেট্রিক টন লবণ প্রয়োজন। সাড়ে ২১ হাজার লবণ মজুদ রয়েছে আমাদের। লবণের কোন সংকট নেই। চামড়া সংরক্ষণের জন্য আমরা গত বছর ২০ টন লবণ বিনামূল্যে সরবরাহ দিয়েছি। এ বছর ২৫ টন লবণ বিনামূল্যে দেব।

এর আগে, ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩ টাকা বেড়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

চট্টগ্রামে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গতবছর যা ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ছিল।

;