নতুন গ্রুপের আড়ালে সদস্য সংগ্রহ করে আসছিল ইসমাইল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এজন্য ‘শাহাদাত’ নামে নতুন একটি গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

আনসার আল ইসলামের রিক্রুটিং শাখার প্রধান মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন (২৫), দুই আঞ্চলিক প্রশিক্ষক জিহাদ হোসেন ওরফে হুজাইফা (২৪) ও আমিনুল ইসলামকে (২৫) গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

শুক্রবার (২৪ মে) র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর গুলিস্তান ও নারায়নগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, তারা ‘আনসার আল ইসলামের’ সদস্য। আফগানিস্থানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামে’ যোগাদান করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়েছে। তাদের সদস্য সংগ্রহসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা ব্যহত হচ্ছে। এরপর আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘শাহাদাত’ নামে নতুন গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা শতাধিক। ইসমাইল আনসার আল ইসলামের রিক্রুটিং শাখার প্রধান এবং ‘শাহাদাত’ গ্রুপেরও প্রধান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।


ইসমাইলের বরাতে কমান্ডার আরাফাত জানান, এই গ্রুপটি সালাহউদ্দিন নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তারা আনসার আল ইসলামের নাম ব্যবহার না করে ‘শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা বিভিন্ন সময়ে মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো এবং সংগঠনের সদস্যদের শারীরিক কসরত প্রশিক্ষণ দিতো। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত বিশেষত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরাসহ ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নির্ধারণ করেছে বলে জানা যায়।

তাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নতুন গোপনীয় এ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতো এবং সংগঠনের সকল প্রকার নির্দেশনা এই এ্যাপসের মাধ্যমে প্রদান করতো।

তিনি আরও বলেন, এ সংগঠনের অধিকাংশই মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক। সাধারণ লেখাপড়ায় শিক্ষিত উগ্র মনোভাবাপন্ন লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য দেশ বিরোধিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। এ সংগঠনে মাদ্রাসা শিক্ষক সদস্যগণ অত্যন্ত সু-কৌশলে মাদ্রাসা পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রদের এ বিষয়ে অনুপ্রানিত করতো।

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতার ইসমাইল নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিসে অধ্যয়নরত। ১ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্রে সে তার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে সংগঠনের রিক্রুটিং শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

গ্রেফতার জিহাদ একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। সেও প্রায় ১ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপে বিদেশে অবস্থানরত একজন জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয় সূত্রে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে। এরপর থেকে তার মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। পরবর্তীতে সে সংগঠনে আঞ্চলিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পায়।

গ্রেফতার আমিনুল পেশায় একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। প্রায় ৬ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয়সূত্রে সেও সংগঠনে যোগ দেয়। পরে সে তার নিজ এলাকায় দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এক পর্যায়ে সে সংগঠনে আঞ্চলিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পায়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সালাউদ্দিন বর্তমানে বিদেশে আছে। সংগঠনটির ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মী সংগ্রহের প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল। আমরা অধিকর তদন্তে প্রত্যেকের অবস্থান শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

   

সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করার আহ্বান কাদেরের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরবানির তাৎপর্য এবং মর্মার্থ অনুবাধন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার (১৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেওয়া এক শুভেচ্ছা ভিডিও বার্তায় এ আহবান জানান তিনি।

শুভেচ্ছা বার্তায় ওবায়দুল কাদের বলেন, বছর ঘুরে আবার এল ঈদ-উল-আজহা। ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। মহান আল্লাহ পাকের প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের নিদর্শনে ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। আমাদেরকে কোরবানির তাৎপর্য এবং মর্মার্থ অনুবাধন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করতে হবে। আর এ জন্য সকলকে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অর্জনের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভারসাম্যপূর্ণ, শোষণহীন, ন্যায়নিষ্ঠ এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন- তা সফল করতে প্রয়োজন নিষ্ঠা, সততা এবং ত্যাগ।

অকৃত্রিম ভালোবাসা ও ত্যাগের আদর্শ আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হলে প্রতিষ্ঠিত হবে প্রত্যাশিত শান্তি ও সৌহার্দ্য।

তিনি বলেন, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে একটি অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে কর্ম ও চিন্তায় ত্যাগ, আনুগত্য এবং সততা চর্চায় নিবেদিত হওয়ার আহবান জানাই। আহবান জানাই, ঐক্যের মন্ত্রে উজ্জ্বীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা অভিমুখে এগিয়ে যাওয়ার।

এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে পবিত্র ঈদে আমি দেশবাসী জনগণ, প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি সবাইকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা- ঈদ মোবারক।

;

রিমালে বিধ্বস্ত রেখামারীর বাসিন্দাদের ঈদ বলে কিছু নেই



সাদিকুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: নূর এ আলম

ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ২৬ মে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত রেখামারী গ্রামবাসীর জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে খরস্রোতা পশুর নদী প্রবল প্লাবনে ভাসিয়ে নিয়ে যায় দাকোপ উপজেলার অধীন বানিশান্তা ইউনিয়নের রেখামারী গ্রামের ঘরবসতি। তারপরে কেটে গেছে তিন সপ্তাহ। কিন্তু শেষ হয়নি রেখামারীবাসীর ভোগান্তি।

সরেজমিন ঘুরে বার্তা২৪.কমের প্রতিনিধি দেখেছেন লবণাক্ততা-প্রবণ এই এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তীব্র পানীয়জলের সংকটে ভুগছে। তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার নেই। নেই পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা। তারা হারিয়েছেন মাথাগোজার ঠাঁইটুকুও। ঘূর্ণিঝড় রিমাল অতিক্রমের তিন সপ্তাহ পরেও পরিস্থিতির নেই সামান্য উন্নতি।

এরই মধ্যে এসেছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ-উল-আজহা। অথচ ৫৮ বছর বয়সী ইনসান ব্যাপারীর কোনো উৎসাহ নেই তা নিয়ে। রিমালে নিঃস্ব জেলে ইনসান বলেন, “আগে থেকেই আমরা অতি দরিদ্র। আমাদের নিজেদের ঈদ বলে কিছু্ নেই! তবে আগের ঈদে এ গ্রামের পুরুষরা খুলনা শহরে ঘুরে ঘুরে কোরবানির পশুর মাংস সংগ্রহ করতো। কিন্তু এ বছর আমাদের ঘরের মাটির চুলাও তলিয়ে গেছে। কোথায় এবং কিভাবে আমরা মাংস রান্না করব?"


ঘূর্ণিঝড় রিমালে ইনসান ব্যাপারীর ঘরের ছাদ উড়ে গেছে। প্রবল স্রোতে তলিয়ে গেছে তার ঘরের মেঝের মাটি। ভেসে গেছে ঘরের সকল জিনিসপত্র।

ইনসানের মতো, রেখামারী গ্রামের ৬৫টি পরিবার ঘূর্ণিঝড় রিমালে কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে। পরিবারগুলো অতি-দরিদ্র এবং সুন্দরবনের মাছ এবং কাঁকড়া আহরণ ছাড়া তাদের বিকল্প আয়ের সংস্থানও নেই। এসব পরিবার যখন ঘূর্ণিঝড় এবং নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুর্যোগকালীন ত্রাণের প্রাপ্যতা তখন তাদের কাছে মৌলিক চাহিদা পূরণের সমতুল্য। দুর্ভাগ্যক্রমে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত রেখামারী গ্রামবাসীর কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছেনি।

“এখন পর্যন্ত আমাদের দেওয়া হয়েছে ১ কেজি মুড়ি, ১ কেজি চিড়া, আধা লিটার রান্নার তেল এবং আধা কেজি লবণ। গত কয়েকদিন ধরে একটি এনজিও আমাদের এক বেলা খাবার দিয়ে আসছে,” বলেন রেখামারী গ্রামের গৃহবধু রোকসানা বেগম।


খরস্রোতা পশুর নদীর তীরে দাঁড়িয়ে, ৪৬ বছর বয়সী রোকসানা নদীর তীরে ভেঙ্গে যাওয়া একটি অংশের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন সেখানে তার পরিবারের থাকার একটি ঘর ছিল।

যেদিন ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়ে সেদিন রোকসানা এবং তার স্বামী নজরুল সিকদার নিজেদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র আগলে রাখতে ঘরের ভিতরেই থেকে যান। যদিও তারা তাদের সন্তানদের পাঠিয়েছিলেন কাছের এই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে।

“আমাদের বাড়ির গোলপাতার ছাদ ইতিমধ্যেই উড়ে গেছে। নদীর জলের উচ্চতা তখন আমার বুক পর্যন্ত উঠে গেল। আমাদের বিছানাসহ সব জিনিসপত্র জলে ভাসমান। জোয়ারের প্রবল স্রোত যখন বাড়তে থাকলো, তখন আর সেই ঘরে থাকতে পারিনি। সাঁতরে কাছাকাছি এক উঁচু জমিতে গিয়ে আশ্রয় নিই। কারণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে আর কোন ফাঁকা জায়গা ছিলনা। পরের দিন (২৭শে মে) যখন আমরা এই জায়গায় ফিরে আসি ততক্ষণে আমাদের সহায় সম্বল সব ভেসে গেছে।” এভাবেই রোকসানা সেই কঠিন সময়ের কথা বর্ণনা করছিলেন।

জানালেন, গৃহস্থালীর সামগ্রীর মধ্যে ছিল একটি বিছানা, একটি ৮০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার সিস্টেম, একটি মাটির চুলা এবং একটি আধা-পাকা পায়খানা। সব ভেসে চলে গেছে।


ঘূর্ণিঝড়ের পরে রোকসানার পরিবারের একটি ৫০০ লিটারের প্লাস্টিকের পানির ট্যাঙ্ক [বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য] খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে একদিন পর কয়েকজন প্রতিবেশী নদীতে ভাসমান অবস্থায় তা উদ্ধার করে। পানির ট্যাঙ্কটি পুনঃস্থাপন করা ব্যয়বহুল। তাই রোকসানার পরিবার সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছে।

বাস্তুহীন রোকসানা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে এখন বাবা আনোয়ার মুন্সীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে আনোয়ারের টিনশেড ঘরের মাটির মেঝেও ভেঙে গিয়েছে। একই সাথে ঘরে থাকা বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখার পাত্রগুলোরও কোন খোঁজ নেই।

যেদিন আমরা আনোয়ারের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম, সেদিন সেই আঙ্গিনায় নদীর লবনাক্ত পানি ভর্তি কিছু পুরানো প্লাস্টিকের পাত্র দেখতে পাই।

আনোয়ারের স্ত্রী রাজিয়া বেগম জানালেন যে, এই পানি ব্যবহার করলে হাত পা ও মুখ জ্বালা করে।

তবুও, রেখামারী গ্রামের পরিবারগুলো লবনাক্ত নদীর পানি পাত্রে জমা করে রেখেছে এই মনে করে যে হয়তো কোন সংস্থা তাদের পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে সাহায্য করবে।

এমনিতেই পয়ঃপরিষ্কার এবং কাপড় ধোয়ার জন্য গ্রামবাসী সরাসরি নদীর পানিই ব্যবহার করেন। বর্তমানে তীব্র পানির সংকটে গ্রামবাসীরা, বিশেষ করে নারীরা তাদের ঘর থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন।

নূর এ আলম

“আমাদের পায়খানাটি ভেসে গেছে। এখন আমরা বাঁশের উঁচু মাচা পুরানো কাপড় দিয়ে ঘিরে সেটিকে খোলা পায়খানা হিসেবে ব্যবহার করছি। আমরা এই অসহনীয় নোনা পানি দিয়ে নিজেদের ধুই। আমাদের এই জীবন খুব দুর্বিষহ,” রাজিয়া ব্যাখ্যা করে করে বলেন।

রেখামারী গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনে সংকট আরো ঘণীভূত হয়ে পড়ে যখন বন বিভাগ সুন্দরবনে প্রবেশে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উল্লেখ্য যে সুন্দরবনই এই গ্রামবাসীর আয়ের প্রধান উৎস।

রোকসানা এবং রাজিয়ার মতো গ্রাম্যবধু কুলসুম খাতুন জানান কীভাবে তার পরিবার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

কোন চিহ্ন অবশিষ্ট না রেখে ঘূর্ণিঝড় রিমাল কুলসুমের নদীর ধারের ঘরটি সম্পূর্ণভাবে ভেসে নিয়ে গেছে। এখন নতুন করে ঘর বানাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। অথচ সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধ। টাকাও নেই আয়ের পথও বন্ধ।

“আমার স্বামীর জাইল্যা (জেলেদের) কার্ড না থাকায় আমরা কোন খাদ্য সহায়তা পাইনি। একারণে এখন আমার স্বামী দিনমজুরি দিতে খুলনা শহরে যায়, বললেন ২৬ বছর বয়সী এই গৃহবধু।"

সচরাচর ইউনিয়ন পরিষদই তৃণমূল পর্যায়ে দুর্গত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে। রেখামারী গ্রামের পরিস্থিতি নিয়ে বানিশান্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায়কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানালেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

“প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। আমরা ঈদের আগেই সেই চাল বিতরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি,”

ঈদের দুই দিন আগে ১৫ জুন বিকেলে সুদেবের সাথে কথা বার্তা২৪ এর এই প্রতিবেদককের।

তিনি আরও বলেন, রেখামারী গ্রামবাসী অতিদরিদ্র এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ পর্যাপ্ত নয়। তিনি এনজিও এবং অন্যান্য সমাজসেবীদের ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ঘূর্ণিঝরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকার অনুরোধ জানান ।

;

ঈদ জামাতে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে দোয়া



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সারাদেশে আজ উদযাপিত হচ্ছে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম এবং প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১৭ জুন) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাতটায়। ঈদের প্রথম জামাতে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে দোয়া করা হয়।

এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। জামাত শেষ হতে সময় লেগেছে আট মিনিট। জামায়াত শেষে খুতবা পেশ করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় দোয়া ও মোনাজাত।

এদিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আসেন। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা চেক অতিক্রম করে লম্বা লাইন ধরে প্রবেশ করেন মুসল্লিরা।


এ জামাত ছাড়াও বায়তুল মোকাররমে ঈদের আরও চারটি জামাত পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় জামাত হবে ৮টায়, তৃতীয়টি ৯টায়, চতুর্থটি সকাল ১০টায় এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। হাফেজ মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন। তৃতীয় জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী, চতুর্থ জামাতে মিরপুরের জামেয়া আরাবিয়ার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ইমামতি করবেন।

এসব ইমামের মধ্যে কেউ অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন হাইকোর্ট মাজার মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সাবেক মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. আতাউর রহমান মোকাব্বির থাকবেন।

এদিন ঈদের নামাজ আদায় শেষে দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা কোলাকুলির পাশাপাশি একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

;

জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় এ জামাত শুরু হয়। জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার নামাজে ইমামতি করেছেন বায়তুল মোকাররমের জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন। এরপর দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে প্রীতির বন্ধনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সবাই।

জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের হাজারো মানুষ। ঈদের জামাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন। এসময় দীর্ঘ সারি দেখা যায় সেখানে।

সিটি কর্পোরেশন থেকে জানানো হয়, এবার জাতীয় ঈদগাহের ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের জামাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। ঈদগাহে নারীদের জন্যও ছিল আলাদা নামাজের ব্যবস্থা।

পল্টন মোড়, মৎস্য ভবন ও হাইকোর্টের সামনে দি‌য়ে তিন‌টি চেকপোস্টের মধ্য দি‌য়ে ঈদগাহ ময়দানে ঢুকেন মুসল্লিরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রান্ত দিয়েও দীর্ঘ লাইনে ঈদগাহ ময়দানে আসেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

ঈদ জামাতে প্রবেশের মুখে র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তীক্ষ্ণ নজরদারি ছিল। জামাতে আসা মুসল্লিদের তিন জায়গায় তল্লাশি করার পরই ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

;