চেয়ারে বসা নিয়ে দুই শিশুর ঝগড়া, হামলায় প্রাণ গেল নবজাতকের

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বসার চেয়ার নিয়ে দুই শিশুর ঝগড়ার জেরে স্বজনদের হামলায় ২০ দিন বয়সী এক নবজাতক নিহত হয়েছে। নিহত নবজাতকের নাম কবির হোসেন। এই ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মঙ্গলবার (২১ মে) রাত সাড়ে আটটায় আদাবরের নবোদয় হাউজিং কাঁচাবাজারের পেছনে ৬ নম্বর রোডে এ ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার ভোরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে আদাবর থানা পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার নবোদয় কাঁচাবাজারের পেছনে ফাঁকা মাঠে ময়মনসিংহের তাড়াইল উপজেলার নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীর পক্ষে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা। সভা উপলক্ষে আনা চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে নিহত শিশুর বড় ভাই তিন বছর বয়সী ফয়সালের সঙ্গে ছয় বছর বয়সী এক শিশুর ঝগড়া হয়। এ সময় তাদের নিবৃত্ত করতে নিহত শিশুর বড় বোন মনি এগিয়ে আসেন। এবং ফয়সালকে নিয়ে বাসায় ফিরে যান আর ছয় বছরের শিশুটিকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এর কিছু সময় পরেই ওই শিশুটির মামা হিরা এসে মনিকে মারধর করে। হিরার মারধরের হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মা মিতু বেগম। এই সময় মিতুর কোলে ছিল ২০ দিন বয়সী কবির। মিতু এগিয়ে আসলে হিরা তার মাকেও মারধর করেন। মারধরের এক পর্যায়ে তার দেওয়া একটা ঘুষি কবিরের নাক-মুখে লাগে। এমনকি হিরার পরিবারের হামলায় গুরুতর আহত হয় বয়োবৃদ্ধ ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ৭০ সত্তরোর্ধ্ব মনোয়ারাও।


স্থানীয়রা জানান, শিশুর কান্নাকে কেন্দ্র করে কোনো কিছু যাচাই না করেই অতর্কিত হামলা চালায় হিরা ও তার বোনেরা। কয়েক দফায় নবজাকের মা মিতু ও তার মেয়েকে মারধর করা হয়। হিরা ছাড়াও হামলায় জড়িত ছিলো জুমা, সুমা ও খুকি নামের তার তিন বোন ও বোন জামাইরা। স্থানীয়দের কাছে হিরার পরিবার মাদক কারবারি ও ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত। হিরার নামে অন্তত ১২টি ছিনতাই মামলা রয়েছে। তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নামে মাদক ও হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এই পরিবারের হামলা শিকার হয়ে একাধিক নারী এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।

বুধবার (২২ মে) বিকেলে নবোদয় হাউজিং এলাকায় নিহত নবজাতকের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙাচোরা একটি টিনের ঘরে পরিবারটির বসবাস। নানি মনোয়ারার পাশে ঘুমিয়ে আছে তিন বছর বয়সী ফয়সাল। ঘরের দরজায় প্রতিবেশীদের মাঝে বসে আছেন মিতু। সন্তান হারানো কবিরের শোকে কাতর। সঙ্গে যোগ হয়েছে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে মারধরের যন্ত্রণা।

নিহত শিশুর মা মিতু বেগম জানান, গতকাল মাঠে একটি অনুষ্ঠানের চেয়ারে বসা নিয়ে আমার তিন বছর বয়সী ছেলের সঙ্গে প্রতিবেশী একজনের ছেলের ঠেলাঠেলি হয়। এই ঘটনা মিটিয়ে দিয়ে আমার মেয়ে ছেলেকে নিয়ে বাসায় আসে। এরপর ওই শিশুটির মামা এবং খালারা মিলে বেশ কয়েকজন কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য নিয়ে এসে আমার ও পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা করে। হামলায় আমার কোলে থাকা ২০ দিন বয়সী ছেলে কবির নিহত হয়।

মিতু আরও বলেন, ঘটনার পর থানায় গেলে পুলিশ মেডিকেলে যেতে বলে। আমরা মেডিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এসে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে রাত সাড়ে বারোটায় বাসায় ফিরি। রাতে আমার কোলের শিশুকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ায়। ভোর চারটার দিকে আবার দুধ খাওয়ানোর জন্য তুলতে গিয়ে দেখি আমার ছেলে নড়াচড়া করছে না। আমি চিৎকার দিলে সবাই ঘুম থেকে ওঠে যায়। তখন দেখি আমার বুকের ধন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর বেঁচে নেই। সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের মরদেহ নিয়ে থানায় গেলে বাসায় পুলিশ আসে। আমার ছোট্ট শিশুটির মরদেহ নড়াচড়া দিলেই তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে অনবরত। মানুষ নামের হায়েনা মাদক ব্যবসায়ীরা আমার শিশুটিকে এভাবে মেরে ফেললো। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

এ বিষয়ে আদাবর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, ঘটনা শোনার পর ভোরেই ঘটনাস্থলে যাই। শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত শিশুটির বাবা ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে।