এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭০৮, আহত ২৪২৬



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এপ্রিল মাসে দেশে ৬৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭০৮ জন নিহত এবং দুই হাজার ৪২৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

বুধবার (২২ মে) যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত, ৩৬ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ছয়টি দুর্ঘটনায় আটজন নিহত, দশজন আহত এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৭৩৩টি দুর্ঘটনায় ৭৬৩ জন নিহত এবং দুই হাজার ৪৭২ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ৩০৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন নিহত, ৩২৮ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৪৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, নিহতের ৩৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও আহতের ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে, ১৫৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত ও ৩০৫ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে, ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছে।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১০ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৬৯ জন চালক, ৬৩ জন পথচারী, ৫৮ জন পরিবহন শ্রমিক, ৪৬ জন শিক্ষার্থী, ৬ জন শিক্ষক, ১১৯ জন নারী, ৬৭ জন শিশু, ৩ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক , একজন আইনজীবী, ৩ জন প্রকৌশলী ও ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছে- একজন পুলিশ সদস্য, ৩ জন সেনাবাহিনী সদস্য, একজন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ১২৩ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৫৮ জন পথচারী, ৯৩ জন নারী, ৪৯ জন শিশু, ৩৬ জন শিক্ষার্থী, ৩৩ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬ জন শিক্ষক, ৩ জন প্রকৌশলী ও আটজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

ওই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৯৮৮টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ৩৪ দশমিক ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ বাস, ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৫ দশমিক ৩২ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ বিবিধ কারণে, চাকায় ওড়না পেচিয়ে শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৪৩ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ২৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৪২ দশমিক ৪৫ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে।

এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

   

চুয়াডাঙ্গায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে যুবক নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চুয়াডাঙ্গা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চুয়াডাঙ্গায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে টুটুল খান (২৬) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অপর মোটরসাইকেল চালকসহ এক আরোহী।

সোমবার (৩ জুন) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কিরণগাছি গ্রামের মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত টুটুল সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের খোকন মন্ডলের ছেলে। আহতরা হলেন- একই উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের বহালগাছি গ্রামের তুফান মণ্ডলের ছেলে আবুল হোসেন (৫৬) ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের আহাদ আলীর ছেলে মিলন হোসেন (২৪)।

স্থানীয়রা জানান, টুটুল ও তার চাচাতো ভাই মিলন হোসেন মোটরসাইকেলে করে ঘোরাঘুরি করছিলেন। এসময় কিরণগাছি গ্রামের মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর মোটরসাইকেলের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুই মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনই পড়ে গিয়ে আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক টুটুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মেহবুবা মুস্তারি মৌ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টুটুল নামের এক যুবককে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। বাকি দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে জানান, দুই মোটরসাইকেলের মুখোমখি সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত দুজন বর্তমানে সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে, সোমবার (৩ জুন) সকালে আলমডাঙ্গা উপজেলার কেশবপুরে ট্রাক্টর চাপায় সামিউল ইসলাম (৬) নামের এক শিশু নিহত হয়। এ নিয়ে একই দিন চুয়াডাঙ্গা জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হলো।

;

সড়কে অনিয়মের অভিযোগে জনরোষে ঠিকাদার, ডিসির হস্তক্ষেপ



মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লক্ষ্মীপুরে প্রায় সাড়ে ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের শহর সংযোগ সড়ক উন্নয়ন কাজে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয়দের রোষানলে পড়ে কাজ বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তদন্তে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ত্রুটি পেয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে। সিডিউল অনুযায়ী কাজটি সম্পন্ন করতে অবশেষে হস্তক্ষেপ করেছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন। এতে রোববার (২ জুন) রাত ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহানের উপস্থিতিতে ফের কাজ শুরু হয়। তবে সড়কটির কাজ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, সওজ বিভাগ ও ঠিকাদার যোগসাজশে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে কাজটি চলছে।

এর আগে একইদিন সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ডিসিসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) এবি ছিদ্দিক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু এক জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ডিসি ও এএসপি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, সড়কটি প্রায় ৫ ইঞ্চি কার্পেটিং হবে। অনিয়মের সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ তদারকির মাধ্যমেই কাজ সম্পন্ন হবে। এতে জেলা প্রশাসন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও সওজের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তদারকি করবেন।


এদিকে অভিযোগ উঠেছে সড়কটি প্রশস্তকরণে জমি অধিগ্রহণে আবুল খায়ের নামে একজন সার্ভেয়ারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যিনি সওজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার নন। তাকে ২০০৯ সালের ২৩ মার্চ মাস্টাররুলে ট্রেসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে চাকরি স্থায়ীকরণে চেয়ে ২০১৭ সালে নিজেকে চেইনম্যান হিসেবে দাবি করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন খায়ের। কিন্তু সেই খায়েরকে এখন সওজ বিভাগ সার্ভেয়ার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।

সড়ক প্রশস্তকরণে আবুল খায়ের ভূমি ও দোকান-ভবন মালিকদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ সড়ক ৩৬ ফুট প্রশস্তকরণের কথা হলেও কোথাও কোথাও ৩১ ফুটে গিয়ে আটকে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভবন অপসারণ করার কথা থাকলেও তা করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।


অন্যদিকে সড়ক উন্নয়ন কাজে লক্ষ্মীপুর সওজের তদারকি নেই বলে অভিযোগ বাজার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের। ঠিকাদারের সঙ্গে অনৈতিক যোগসাজশে সওজ বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে। এনিয়ে রোববার সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য জানতে গেলে তিনি দায় সারা বক্তব্য দেন। তার দাবি, ঠিকাদারকে অনুরোধ করে কাজটি সম্পন্ন করাচ্ছেন তিনি। সড়কের দু’পাশে ৬ ফুট করে ১২ ফুট ড্রেন নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা ৩ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। আবার সড়কের তমিজ মার্কেট এলাকায় পুরাতন ড্রেনের সঙ্গে নতুন ড্রেন সংযুক্ত করে দিয়েছে। সড়কটির চৌধুরী সুপার মার্কেট এলাকায় মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই ড্রেন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

সওজ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়কটির দক্ষিণ তেমুহনী থেকে উত্তর তেমুহনী ও ঝুমুর থেকে সওজ কার্যালয় পর্যন্ত ২০২০ সালে ১৯ ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়। এ কাজটি পেয়েছেন এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও মেসার্স সালেহ আহমেদ জেবি। এর প্রধান হলেন ইস্কান্দার মির্জা শামীম। ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও তা হয়নি। এরমধ্যে ৩ বার প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। ২০২৪ সালে এসে শহর সংযোগ (দক্ষিণ তেমুহনী-উত্তর তেমুহনী) সড়কের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ফুটপাতের জন্য ১৩ কোটি ৩২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

জানা গেছে, প্রকল্পটিতে সড়কটি ৩৬ ফুট প্রশস্ত হবে। একই সঙ্গে সড়কের দুই পাশে ৬ ফুট করে ড্রেন নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়। সড়কে ৮০ শতাংশ পাথর ও ২০ শতাংশ বালু দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার উল্টো কাজ করছেন। তারা ২০ শতাংশ পাথর কমিয়ে বালু দিয়ে সাবগ্রেড তৈরি করছে। এছাড়া সাবগ্রেড তৈরির পর কার্পেটিংয়ের জন্য ৪৫ দিন অপেক্ষা করতে হলেও তা করা হয়নি। সাবগ্রেড তৈরির ২ দিন না যেতেই কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করা হয়। স্থানীয় ঠিকাদার, বাজার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা বিষয়টি আমলে নিয়ে শুক্রবার (৩১ মে) রাতে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে চলমান কাজ বন্ধের জন্য দাবি তোলে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন টিপু ঘটনাস্থল উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। তবে সওজ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউই তাকে বিস্তারিত কোনো তথ্য উপস্থাপন করেনি। পরে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম এসে কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এরপর দু’দিন কাজ বন্ধ ছিল।

জমি অধিগ্রহণে ভূমি-ভবন ও দোকান মালিকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে চেইনম্যান আবুল খায়ের বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। কেউ কোনো অভিযোগ দিতে পারবে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার তারেক মাহামুদ বলেন, সড়কের কাজে কোনো দুর্নীতি হচ্ছে না। মানুষ না বুঝেই অভিযোগ তুলছে। নিম্নমানের কোনো পাথরও ব্যবহার করা হচ্ছে না। সড়কের জেন্টাল পার্ক, নুরুল ইসলাম চত্বর, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে এখনো ভবন অপসারণ করা হয়নি। ভবন না ভাঙলে আমরা জায়গা পাবো কোথায়। এজন্য যতটুকু জায়গা পেয়েছে ততটুকুতেই কাজ চলমান রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইস্কান্দার মির্জা শামীম বলেন, প্রাক্কলনটি ছিল ২০১৮ সালের মালামালের মূল্যে। এরমধ্যে জমি অধিগ্রহণে ২ বছর চলে যায়। এতে মালামালের দাম বেড়ে গেলে কাজে অনাগ্রহ প্রকাশ করি। এরপরও কর্তৃপক্ষের অনুরোধে কাজ শুরু করি। কাজ করতে গিয়ে আমাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। কাজটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলি। পরে জেলা প্রশাসন ও সওজ বিভাগের অনুরোধে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এ কাজে আমার ক্ষতি হবে।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল যাই। জানতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু জানায়নি।

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, সড়কের বিভিন্ন স্থানে আমরা জমি বুঝে পাইনি। এজন্য নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। তদন্তে গিয়ে কিছু ত্রুটি পাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। সেসব ত্রুটি সম্পন্নের জন্যই কাজ বন্ধ করা হয়েছিল।

৬ ফুটের ড্রেনে ৩ ফুট কেন, ফুটপাত থাকার কথা থাকলেও অনেকাংশে তা দেখা যাচ্ছে না এসব প্রশ্নে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে পুরাতন ড্রেনের সঙ্গে নতুন ড্রেনের সংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, জমি নিয়ে সমস্যা থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই কাজটি করা হয়েছে।

সার্ভেয়ারের দায়িত্ব দেওয়া চেইনম্যান খায়েরের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে তিনি সাংবাদিকদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, একজন ঠিকাদারের অভিযোগ, ফেসবুকে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ নিয়েই আমি সড়ক উন্নয়ন কাজ এলাকায় এসেছি। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। সঠিকভাবে তদারকির মাধ্যমেই নির্দিষ্ট নিয়মে কাজ সম্পন্ন হবে। কোনো ধরনের দুর্নীতি করার সুযোগ নেই।

জমি অধিগ্রহণে চেইনম্যান খায়েরের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

;

বদলে গেছে আল্পনাদের জীবন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বদলে গেছে আল্পনাদের জীবন

বদলে গেছে আল্পনাদের জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

দমিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে বহুবার। কিন্তু আল্পনা থেমে যাননি। সমস্ত কটাক্ষ উপেক্ষা করে তিনি আজ স্থানীয়দের কাছে 'ডাক্তার আপা' হিসেবে পরিচিত। কেয়ার বাংলাদেশের সৌহার্দ্য প্রকল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে ধাত্রী হিসেবে কাজ করছেন তিনি। নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন, পাশাপাশি অন্যদেরও তিনি আয়ের পথ দেখাচ্ছেন।

বর্তমানে কেয়ার বাংলাদেশের সৌহার্দ্য প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সেবাদানকারী (এলএসপি) হিসেবে কাজ করছেন তিনি। গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত “সেলিব্রেটিং অ্যান্ড লঞ্চিং লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডারস নেটওয়ার্ক: সাপোর্টিং এ স্মার্ট বাংলাদেশ” শীর্ষক অনুষ্ঠানে নিজের জীবন বদলে ফেলার গল্প শোনান আল্পনা।

অনুষ্ঠানে সৌহার্দ্য প্রকল্পের আওতায় “উদ্যোক্তা তৈরি” শীর্ষক প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষিত স্থানীয় সেবাদানকারীরা (এলএসপি) তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

আয়োজকেরা জানান, সৌহার্দ্য প্রকল্প বেসরকারি খাতের সঙ্গে স্থানীয় সেবাদানকারীদের সম্পৃক্ততা জোরদার করতে কাজ করছে। এই প্রকল্প প্রায় ২ হাজার ৩০০ স্থানীয় সেবাদানকারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে, যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার পরিবারের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।

এই প্রকল্প ৪৫০ জন স্থানীয় সেবাদানকারীর জন্য “উদ্যোক্তা তৈরি” প্রশিক্ষণের আয়োজন করে যেন তাদের দক্ষ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা যায় এবং তাদের আয়মূলক কাজের পরিধি উন্মুক্ত করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, আমরা খুবই খুশি যে এলএসপিরা রোগ, সঠিক টিকা এবং চিকিৎসা সম্পর্কে জানে। তারাই সৌহার্দ্য দ্বারা আলোকিত মানুষ। তাদের পুষ্টির বিষয়ে আরও অবগত হওয়া উচিত, যাতে অন্যরা তাদের অনুসরণ করতে পারে।

কেয়ার বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রাম দাস বলেন, সৌহার্দ্য প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার দরিদ্র ও অতি দরিদ্র জনগণ তাদের জীবন-জীবিকার উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক উপকারভোগী বিশেষ করে নারীরা বৈচিত্র্যময় কর্মসংস্থান, টেকসই কৃষি ও বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে আর্থিক অবস্থার উন্নতি করেছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে সৌহার্দ্য প্রকল্প "স্থানীয় সেবাদানকারী নেটওয়ার্ক" এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে, এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা স্থানীয় সেবাদানকারীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসবে। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সেবাদানকারীদের ভিজ্যুয়াল পরিচিতির জন্য “এলএসপি লোগো” এর উন্মোচন করা হয়। উল্লেখ্য যে, এই লোগোটি গাইবান্ধার মমিনুল ইসলাম নামক একজন স্থানীয় সেবাদানকারী তৈরি করেছেন, তিনি প্রায় ৩৫০ জন স্থানীয় সেবাদানকারীর সাথে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। লোগো প্রতিযোগিতার বিজয়ী এবং দুই রানার্স-আপকে অনুষ্ঠানে চেক প্রদান করা হয়।

উদ্বোধনী বক্তব্যে সৌহার্দ্য এক্টিভিটির চিফ অব পার্টি মার্ক নসবা বলেন, আমরা সবাই মিলে শুধু স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে অবদান রাখছি না বরং টেকসই উন্নয়ন ও সহনশীলতার পথও প্রশস্ত করছি। আসুন আমরা সকলের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে একসাথে কাজ করি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৌহার্দ্য ৩ প্লাস প্রকল্পের সিনিয়র টিম লিডার-প্রোগ্রাম, জনাব আব্দুল মান্নান মজুমদার। তার উপস্থাপনায় তিনি স্থানীয় সেবাদানকারীদের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক বা এলএসপি বিজনেস নেটওয়ার্ক মডেলের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেন ও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন।

বিশেষ অতিথি কেয়ার-এর আঞ্চলিক ডিরেক্টর রমেশ সিং তাঁর ভাষণে বলেন, “আজ একটি ঐতিহাসিক দিন, কারণ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের স্থানীয় সেবাদানকারীরা সফলভাবে তাদের উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। আমরা সাত ধরনের সেবাদানকারীর একটি নেটওয়ার্ক চালু করেছি যারা ভবিষ্যতে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে কেয়ার বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ে যাবে।”

যেহেতু সৌহার্দ্য ৩ প্লাস প্রকল্প শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই কেয়ার বাংলাদেশ উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে আন্তর্জাতিক সংস্থা, ব্যাংক, কর্পোরেট সেক্টর এবং সরকারকে এই সম্প্রদায়ের উন্নতির অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।

;

কালিয়া পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নড়াইল
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নড়াইলের কালিয়া পৌরসভার মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সোমবার (৩ জুন) সকালে কাউন্সিলরদের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পৌরসভার ১০ জন কাউন্সিলর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত অভিযোগে প্যানেল মেয়র আসলাম ভূঁইয়া বলেন, কালিয়া পৌরসভার মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরা হাট-বাজার ইজারা বন্দোবস্তের মাধ্যমে গত ১৪২৮ বঙ্গাব্দে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা, ১৪২৯ বঙ্গাব্দে ৪ লাখ ৪ হাজার ৫০১ টাকা, ১৪৩০ বঙ্গাব্দে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা ইজারা গ্রহীতাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ভাবে গ্রহণ করেছেন। টাকার মোট পরিমাণ ২০ লাখ ৬৭ হাজার ৬০১। এ টাকা তিনি পৌরসভায় জমা দেননি। এছাড়া ১৪৩১ বঙ্গাব্দে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ টাকা অনাদায়ী রয়েছে।

এদিকে, ভ্যানহাটের সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা না দিয়ে মেয়র ব্যক্তিগত ক্ষমতা প্রয়োগে দ্বিতীয় দরদাতাকে ইজারা দিয়েছেন। এছাড়া নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিগত পছন্দের লোক দিয়ে সাতটি হাট-বাজার খাজনা আদায় করে সেই টাকা মেয়র নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। পৌরসভার দু’টি করে রোলার এবং ট্রাক ব্যক্তিগত ভাবে ভাড়া দিয়ে সেই টাকাও আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে মেয়রের বিরুদ্ধে।

অপরদিকে, কাউন্সিলরদের না জানিয়ে বিভিন্ন জায়গা বন্দোবস্ত প্রদান করা এবং উন্নয়নমূলক কাজে কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত না করে মেয়রের ইচ্ছেমতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া পৌরসভার কমিউনিটি সেন্টারের সামনের জায়গা দখল করে ব্যক্তিগত মার্কেট নির্মাণ করছেন তিনি। মাস্টাররোলেও অপ্রয়োজনীয় কর্মচারীদের নিয়োগ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত-প্যানেল মেয়র আসলাম ভূঁইয়াসহ ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অশোক কুমার ঘোষ, ২ নম্বর ওয়ার্ডের তপন কুমার দত্ত, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সবুর শেখ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রদীপ বর্মন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাহাবুব শেখ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এহসানুল হক রানা, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সরদার মুজিবর রহমান এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর শাহানাজ পারভীন রীতা ও নাসরীন বেগম বলেন, কালিয়া পৌরসভার মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরার দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে পৌরসভার যে ক্ষতি হয়েছে; আমরা তা মেনে নেবো না। আত্মসাতকৃত টাকাও পৌরসভায় জমা দিতে হবে। আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হলে মাসিক সভা, বাজেট সভাসহ সব ধরণের কার্যক্রম আমরা বর্জন করব।

এ ব্যাপারে কালিয়া পৌরসভার মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা উদ্দেশ্যমূলক। কোনো ধরণের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি। হাট-বাজার ইজারাসহ পৌরসভার যেসব উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে, তা কাউন্সিলরদের জানিয়ে করা হয়েছে। সেইসব আলোচনা সভার প্রমাণ পৌর পরিষদে রয়েছে। এছাড়া রোলার এবং ট্রাক ভাড়ার টাকা নিয়ম মতো পৌরসভায় জমা হয়ে থাকে। আর মাস্টাররোলে যেসব কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তা পৌরসভার কাজের গতি বাড়ানোর স্বার্থেই দেয়া হয়েছে। বরং কয়েকজন কাউন্সিলর ব্যক্তিগত ভাবে তাদের সুবিধা নিতে না পারায় আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন।

;