লামা বন বিভাগের গাছ চুরি করে বিক্রি, বন কর্মকর্তাসহ বহিষ্কার ৩
![ছবি: বার্তা ২৪](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/May/18/1716005121117.jpg)
ছবি: বার্তা ২৪
বান্দরবানের লামা বন বিভাগের সৃজিত বাগানের গাছ বিক্রিতে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন তৈন রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা খান জুলফিকার আলী, বিট কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ও বাগান মালি অলক কুমার সেন।
গাছ বিক্রির ঘটনা ও সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল।
বন বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ বন সংরক্ষক মোহাম্মদ হোছাইন এর নেতৃত্বে তদন্ত টিম বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে আসেন। তিনজন বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত প্রায় ১৫ জনের টিম তৈন রেঞ্জের কাঁকড়ারঝিরি আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন।
স্থানীয়রা জানায়, গত মার্চের মাঝামাঝিতে কাঁকড়াঝিরি এলাকায় বন বিভাগের সৃজিত বাগানের গাছ কাটা শুরু হয়। সংঘবদ্ধ চোর চক্র গহিন বনের মধ্য থেকে বিশাল বিশাল সেগুন গাছ কেটে নিয়ে গেছে। যে-সব গাছের বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত। কাঠগুলো পাচার করতে এক্সক্যাভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে চোরাই রাস্তা তৈরি করা হয়। সেসময় খবরটি তৈন রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা ও বাগান মালিকে জানিয়েছিল স্থানীয়রা। কিন্তু তারা সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে চোরাই রাস্তা ব্যবহার করে কাটা গাছের কাঠগুলো লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর ও কাঠালছড়া হয়ে চকরিয়ার মালুমঘাটের দিকে নিয়ে যায় চোরাকারবারিরা।
গত এপ্রিলে কাঁকড়াঝিরি এলাকার দুই ও তিন যুগের বেশি বয়সী সেগুনসহ অন্যান্য প্রজাতির মূল্যবান গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ এপ্রিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আরিফুল হক বেলাল। ঘটনার সত্যতা পেয়ে ওই দিনই বাগানের মালিকে ক্লোজড করা হয়। একই সঙ্গে সিনিয়র বন কর্মকর্তা হাবিব উল্লাহকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়। কেটে নেয়া গাছগুলো থেকে গড়ে ১০ ঘনফুটের বেশি কাঠ ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা খান জুলফিকার আলী জানান, এসব গাছ বিক্রি নয়, চুরি হয়ে গেছে। গত ছয় মাস আগে তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যোগদান করেছেন। সেই থেকে স্থানীয় বন বিট কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ও বাগান মালি অলক বাবু এতদিন গাছ চুরি সম্পর্কে তাকে কিছুই জানান নি। এছাড়া, সাময়িক বহিস্কার সংক্রান্ত কোনো নোটিশ পাননি বলেও জানান তিনি।
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল বলেন, ৪ ও ৬ ধারায় ঘোষিত খাস ভূমিতে বন বিভাগের সৃজিত বাগানের সেগুনসহ অন্যান্য মূল্যবান বিভিন্ন প্রজাতির ১৮৭টি গাছ কাটা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। এ ঘটনায় চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত দুই-তৃতীয়াংশ কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ছয়টি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া গাছ বিক্রির ঘটনায় জড়িতের অভিযোগে তিনজনকে সাময়িক বহিস্কারও করা হয়েছে। কেটে নেয়া গাছগুলোর কাঠ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষা কাঁকড়াঝিরি এলাকার খাস ভূমিতে সেগুনসহ অন্যান্য প্রজাতির বনজ গাছের বাগান সৃজন করা হয়। পরে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে ওই এলাকার ফাঁকা স্থানে একই প্রজাতির বনজ গাছের বাগান সৃজন করে বন বিভাগ। ১০ বছরের ব্যবধানে সৃজিত বাগানের মধ্যে প্রথম ধাপে ৬০০ একর ও পরবর্তী ধাপে ৪৫০ একর খাস ভূমিতে বাগান সৃজন করা হয়। যা লামা বন বিভাগের তৈন রেঞ্জের আওতাভুক্ত।