দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের মানববন্ধন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি চাকরিজীবীরা রেশনিং ব্যবস্থা, বাসস্থানসহ অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা পান। কিন্তু দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা এমন অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। তাই এই শিল্পের শ্রমিকদের বাচাঁর মতো মজুরিসহ মর্যাদাপূর্ন জীবন মানের কথা বিবেচনা করে শ্রমিকদের জন্য অনতিবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়েছে আরএমজি ওয়ার্কার্স ফোরাম নামের একটি শ্রমিক সংগঠন।

শুক্রবার (১৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করার দাবিতে আরএমজি ওয়ার্কার্স ফোরামের উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে শ্রমিক নেতা আরএমজি ওয়ার্কার্স ফোরামের সভাপতি বিলকিস বেগম বলেন, তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিকগণ দ্রব্যেমূল্যের বৃদ্ধির কারণে পুষ্টিকর খাবার, সন্তানের সু-শিক্ষা ও চিকিৎসা সহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারছেনা। তাদের বাঁচার মত মজুরী, রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানাচ্ছি।

শ্রমিক নেতা বিলকিস বেগম বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ইন্সস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস (বিলস) এর গবেষণায় ঢাকা এবং চট্টগ্রামের ৪৫৭ জন পোশাক শিল্পের শ্রমিক, ৬ জন মালিক, ৫ জন ম্যানেজার ও ৫ জন সুপারভাইজার এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে জীবনযাত্রার মান যেমন বাড়ি ভাড়া, খাবার খরচ, চিকিৎসার খরচ ও অন্যান্য নিত্য নৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় খরচের দিকটি বিবেচনায় রেখে এ সিদ্ধান্ত উপনীত হন যে, শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী ২৩,০০০/- টাকা দিতে হবে কিন্তু মজুরি বোর্ড তা করে নাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। আরএমজি ওয়ার্কার্স ফোরাম ২০১৮ সাল থেকে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে আসছে। আরএমজি ওয়ার্কার্স ফোরাম বাংলাদেশে ১০০টিরও বেশী কারখানার শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এবং যার মধ্যে প্রায় ৭৪টি কারখানার ইউনিয়ন প্রতিনিধি রয়েছেন।

আরএমজি ওয়ার্কার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক উর্মি আক্তার বলেন, বর্তমান নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারনে জীবনযাত্রার মান একেবারেই নিম্নমুখী। এই কয় বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, বাড়ি ভাড়া, এবং জীবনযাত্রার ব্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। কিন্তু এ সেক্টরে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য বাঁচার মত মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি।

উর্মি আক্তার বলেন, বর্তমানে একজন ব্যক্তির মাসিক খাবার খরচ বাবদ (যেমন -চাল, ডাল, আলু, তেল, লবন, সবজি ও মসলা) ৫,৩৩৯/- টাকা প্রয়োজন। যদি কোনো পরিবার পুরো মাসে একবারও মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও মুরগি না খায় তাহলেও খরচ ৮,১০৬/- টাকা। এ খরচের মধ্যে খাবারের সঙ্গে এক কক্ষের ঘরভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুত বিল, চিকিৎসা ব্যয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্য ক্রয়, সন্তানের পড়ালেখার খরচ, যাতায়াত, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের বিল আছে। সাথে গণপরিবহনের ভাড়াও বেড়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমে যাচ্ছে, সকল দৈনন্দিন খরচ মিটিয়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে যাচ্ছে।

সমাবেশে থেকে কিছু দাবী উত্থাপন করা হয়, দাবি গুলো হলো:

১) গামেন্টস শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

২) বাঁচার মত মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।

৩) দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৪) গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি পূর্নবিবেচনায় আনতে হবে।

৫) বছর বছর ঘরভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ করে তা শ্রমিক বান্ধব করতে হবে।

৬) প্রতিটি কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৭) সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

৮) শ্রমিকদের বাচ্চাদের সু-শিক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে।

৯) বায়ারদের ন্যয়সঙ্গত ব্যবসানীতি মেনে ন্যায্য দামে পোশাক কিনতে হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আরএমজি ওয়ার্কার্স ফোরামের সভাপতি বিলকিস বেগম, সাধারন সম্পাদক উর্মি আক্তার এবং সহ-সাধারন সম্পাদক লিলি বেগম সহ আরএমজি ওয়ার্কার্স ফোরামের অন্যান্য নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন কারখানার ইউনিয়নের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

   

ভর্তি স্কুলে, পরীক্ষা বাড়িতে, আড্ডা দিয়ে সময় পার শিক্ষকদের



ছাইদুর রহমান নাঈম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, ( কিশোরগঞ্জ)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অদ্ভুত এক স্কুলের সন্ধান মিলেছে কিশোরগঞ্জে। যে স্কুলের শিক্ষকরা অফিসে বসে করেন গল্পগুজব, আর শিক্ষার্থীরা আসে মাঝেমধ্যে। তারপরেও নিয়মিত হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হয় তাদের। শুধু এখানেই শেষ নয়, শিক্ষার্থীরা সুবিধামতো পরীক্ষাও দিতে পারে বাসায় বসে। উপবৃত্তি আর সরকারি সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রলোভনে ভর্তি করানোরও অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক। তার দাবি স্থানীয় একটা পক্ষ বিভিন্ন কারণে স্কুলটিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। এদিকে শিগগিরই তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

গত রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জনশূন্য বিদ্যালয়ের মাঠ। ভেতরেও সুনসান নীরবতা। মনে হলো পরীক্ষা চলছে। কিন্তু ভিতরে গিয়ে দেখা গেলো অন্যরকম চিত্র। অফিসকক্ষে তিনজন শিক্ষককে পাওয়া গেলো। কিন্তু ক্লাসরুমে নেই কোনো শিক্ষার্থী।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাইক লক্ষীয়া গ্রামের হাজী মো. মাছিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন নূরুল আফসার। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক মোট ছয়জন। প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী জোসনা আক্তার সহকারী শিক্ষক। অপর সহকারী শিক্ষক হোসনে আরা বেগম ঝরনার ছেলে মাহমুদুল হাসান রাসেল কমিটির সভাপতি। স্থানীয়রা স্কুলটিকে পারিবারিক স্কুল বলেও ট্রল করে থাকেন।

আবু কাউসার নামে একজন অভিভাবক জানান, তার মেয়ে পাকুন্দিয়া মডেল মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। প্রধান শিক্ষক সুপারিশ করে তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি দেখিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সে ক্লাস করে মাদ্রাসায়। শিক্ষক বলেছেন, মেয়ে মডেল মাদ্রাসায় পড়ুক, এখান থেকে সরকারি একটা সার্টিফিকেট নিয়ে রাখলে ভালো হবে। তিনি প্রধান শিক্ষককে প্রশ্ন করেন একই সময়ে যদি দুই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা হয় তখন কী করবো? শিক্ষক বললেন সঠিক সময়ে মাদ্রাসায় পরীক্ষা দেবে, আর স্কুলেরটা দেবে বাসায় বসে। যেই কথা সেই কাজ। বাসায় বসেই দিতে পারে পরীক্ষা।

ফয়সাল হক রাকিব নামে একজন জানান, স্কুলটিতে হাতে গুনে ১৫ জন শিক্ষার্থীও পাওয়া যাবে না। তবে স্কুলের খাতায় অনেক বেশি দেখা যাবে। আর বিভিন্ন কর্মকর্তারা যখন পরিদর্শনে আসেন তখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের ডেকে আনেন শিক্ষকেরা।

জালাল মিয়া নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানান, মাছিম উদ্দীন স্কুলের শিক্ষকরা উপবৃত্তির কথা বলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে। পরে আর ক্লাস করাতে দেখা যায় না। তিনি বলেন, স্কুলটা সবসময় খালিই থাকে। শিক্ষকরাও মাঝেমধ্যে এসে ঘুরেফিরে চলে যান।

জালালের সাথে কথা শেষ হতেই অমিত হাসান নামে এক যুবক জানান, বিভিন্ন সময়ে খেলাধুলা থাকলে শিক্ষার্থীদের দেখা গেলে শ্রেণিকক্ষে তেমন কাউকে দেখা যায় না।

হাজী মো. মাছিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল আফসার জানালেন, প্রাক প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির ক্লাস ছুটি হয়ে গেছে। কারো হাজিরা না থাকা প্রসঙ্গে বললেন, ভুলে হাজিরা খাতা ক্লাসে নেওয়া হয়নি। তবে দ্বিতীয় শ্রেণির হাজিরা খাতায় ছয়জন শিক্ষার্থীর হাজিরা দেখিয়েছেন তিনি।

অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা কোথায় জানতে চাইলে বললেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। যদিও তারা আর আসেনি সারাদিনেও।

শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান রাসেল বলেন, এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেনে পড়ে। তাদের রেজিস্ট্রেশন এখানে থাকলেও ক্লাস করে ঐখানে। তিনি বলেন, এই রকম সব স্কুলেই হয়। এছাড়াও কিন্ডার গার্টেনগুলোর তো পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম বলেন, বিষয়টি তিনি জানার পরেই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। ঐ প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯০ সনে। আর সরকারিকরণ হয় ২০১৩ সনে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়টির এমন দৈন্যদশা বলে জানান এলাকাবাসী। বিদ্যালয়টির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পার্শ্ববর্তী একাধিক মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি রয়েছে। শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দেয় হাজী মাছিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০ জন উল্লেখ করলেও এলাকাবাসী জানান, মোট শিক্ষার্থী ৩০ জনের বেশি হবে না।

;

ঈদকে পুঁজি করে লঞ্চে বাড়তি ভাড়া, ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ



মেহেদী হাছান মাহীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পরিবারের বড় ছেলে নওশাদ। গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ বঙ্গের দ্বীপাঞ্চলে। পড়াশোনা শেষে সরকারি বড়কর্তা হওয়ার আশায় কয়েকবছর ধরে থাকেন রাজধানী ঢাকায়। গত এক বছর বিশ্ববিদ্যালয় ও লাইব্রেরিতে চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তবে আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে মায়ের বায়না বড় ছেলে বাড়ি ফিরলেই সাধ্যের মধ্যে কেনা হবে কোরবানির পশু।

মায়ের আশা পূরণে শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুর দুইটায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আসেন নওশাদ। সাধ্যের মধ্যে পাননি কেবিন। তাই লঞ্চের ছাদে করে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যাত্রা পথে কোনো ভোগান্তি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বার্তা২৪.কমকে বলেন, কেবিনে করে যাওয়ার আশায় দুপুর দুইটায় এসে পৌঁছেছি সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। কেবিন ফাঁকা থাকলেও তিনগুণ দামের কারণে ছাঁদে করেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃষ্টি হলে কি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকদিন বাড়ি যাইনি। ফোনে মা অনেক কান্নাকাটি করছেন। বৃষ্টিতে ভিজে যেতে হলেও মায়ের ইচ্ছা পূরণ করা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছি না।

ডেকে আগের থেকে অনেকে কাঁথা বিছিয়ে রেখেছেন। 

একইরকম ভোগান্তির শিকার নাজমা পারভীন। সাভারের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন তিনি। ছয় মাস পূর্বেই স্বামীহারা হয়েছেন নাজমা পারভীন। ঈদের ছুটিতে দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভোলা হাকিমুদ্দিনের উদ্দেশ্যে উঠেছেন ফারহান-৪ লঞ্চে। কেবিনের ভাড়া অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি হওয়ায় মাদুর বিছিয়ে বসেছেন লঞ্চের দোতলার বারান্দায়। তিনি জানান, ছেলে মেয়ে নিয়ে বারান্দায় বসে যাওয়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কম টাকায় কেবিন না পাওয়ায় ডেকে বসে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটাও পারিনি। ডেকে আগের থেকে অনেকে কাঁথা বিছিয়ে রেখেছেন। বসতে চাইলে ১০০০ টাকা দাবি করেন। তাই, না পেরে দোতলার বারান্দায় করে যাচ্ছি। এখানে বসাতে লঞ্চের স্টাফরাও খারাপ ব্যবহার করছে। কোনওভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই বাঁচি।

দুইদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। আপনজনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য নিজ বাড়িতে ছুটে যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। আজ দুপুর থেকেই সরেজমিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘুরে নানা অনিয়ম দেখা গিয়েছে। লঞ্চের কেবিন ভাড়া বৃদ্ধি করলেও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি টার্মিনাল কর্তৃপক্ষকে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফারহান- ৪ এর এক স্টাফ বলেন, সারাবছর তেমন ব্যবসা না থাকায় ঈদের মৌসুমে একটু ভাড়া বাড়ানো হয়। তবে ডেকেতে এক অসাধু চক্র উঠে ব্যবসা করে। যাত্রীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, মালিকপক্ষের সিদ্ধান্তের উপরে আমাদের কিছুই করার নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিন নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রমকে তার অফিসে না পেয়ে একাধিকবার কল দিলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

;

কানাডায় উচ্চশিক্ষিত তরুণ বেচছেন গরু



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
গরুর পরিচর্যায় জুনায়েদ খান আফসার। ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

গরুর পরিচর্যায় জুনায়েদ খান আফসার। ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। মুখে একগুচ্ছ দাড়ি। শান্ত-সৌম্য চেহেরার ২৫ বছরের তরুণ জুনায়েদ খান আফসারকে দেখলেই বোঝা যায় উচ্চশিক্ষিত। কাছে গিয়ে আরও বিশদ জানতেই বিস্মিত হতে হলো। কেননা আফসার যে পড়াশোনা করে এসেছেন সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারের দেশ কানাডা থেকে। বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রী নেওয়া এই তরুণকেই কিনা পশুর হাটে আবিষ্কার করা গেল গরু বিক্রেতা হিসেবে! হ্যাঁ, চট্টগ্রাম নগরীর নূর নগর হাউজিং সোসাইটির মাঠে বসা প্রাণীর হাটে গরু বিক্রি করছেন আফসার।

ছোটকালে কোরবানের আগে বাড়িতে গরু কিনে আনলে সেটি নিজে কদিন ধরে লালন-পালন করতেন আফসার। সেই থেকে নিরীহ প্রাণীটির মায়ায় পড়ে যান আফসার। তখনই প্রতিজ্ঞা করে নেন-একদিন গরুর খামার দেবেন, মায়া-মমতায় পালন করবেন প্রাণীটিকে। অবশেষে আফসার মনের ভেতর বহুবছর ধরে পুষে রাখা সেই ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটান ২০২৩ সালের জুনে এসে।

সেই গল্পটা শোনা গেল আফসারের মুখ থেকেই। গরু বিক্রির ফাঁকে আফসার বার্তা২৪.কমকে জানান, দেশে এ লেভেল শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় পাড়ি জমান। সেখানে পড়াশোনার ফাঁকে শুরু করেন চাকরিও। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ড মার্কেটিংয়ের সেই চাকরি করে নিজের খরচ মেটানোর সঙ্গে বড় একটা অঙ্ক সঞ্চয়ও করেন। দেশে ফিরে নিজের সেই উপার্জিত অর্থ কাজে লাগানোর চিন্তা করেন। সেই চিন্তা তাঁকে ফেরত নিয়ে যায় সেই ছোটকালের ভালোবাসার কাছে। গরুর প্রতি সেই ভালো লাগা থেকে ২০২৩ সালের জুনে দুটি খামার শুরু করেন। এর মধ্যে ‘জুনায়েদ জাভেদ এগ্রো’ নামের একটি খামার গড়ে তোলেন গাজীপুরে।

এবারের কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৩০টি গরু মোটাতাজা শুরু করেন খামারটিতে। সেই খামারে বেড়ে তোলা গরুগুলোকেই আফসার নিয়ে এসেছেন চট্টগ্র্রামের এক কিলোমিটার এলাকায় বসা এই হাটে। আফসারের আরেকটি খামার সাভারে। তবে সেটি পুরোটাই দুগ্ধ খামার। ২০টি গাভি থেকে দুধ সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করা হয় বাজারে। আফসারের বাড়ি চট্টগ্রামে হলেও বেশিরভাগ সময় থাকা হয় ঢাকায়। তাই ঢাকার অদূরেই খামার দেওয়া।

নূর নগর হাউজিং সোসাইটির মাঠের প্রাণীর হাটে প্রবেশ করলেই হাতের ডান পাশে চোখ পড়বে জুনায়েদ জাভেদ এগ্রোর বেশ কয়েকটি ব্যানার। সেই ব্যানারের নিচেই পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে ৩০টি গরু। শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের বিশাল আকৃতির একটি ষাড়। আফসার ভালোবেসে সেই ষাড়ের নাম দিয়েছেন ‘চেয়ারম্যান।’ চেয়ারম্যানের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সাদা রঙের ‘মেম্বার’ও। আফসার সাদা কালোর ডোরাকাটার চেয়াম্যানের দাম হাঁকিয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। আর মেম্বারের দাম দিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকা।

কানাডায় উচ্চশিক্ষিত তরুণ বেচছেন গরু।  ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

গরুর নাম চেয়ারম্যান ও মেম্বার রাখার কারণ কি-এমন প্রশ্নে হাসলেন আফসার। সেই হাসি থামিয়ে বললেন, ‘এই নাম গরুগুলোর আচরণ দেখে দেওয়া। সাদা-কালো রঙের গরুটি চেয়ারম্যানের মতোই রাশভারী। তাই তাকে চেয়ারম্যান নামেই ডাকি আমি। আর তারই কিছু ছোট আকারের গরুটির নাম দিয়েছি মেম্বার। কারণ মেম্বার তো প্রভাবে চেয়ারম্যানের চেয়ে একটু ছোটই হন!’

আফসারের অন্য ২৮টি গরুও বেশ বড়। সেগুলোর ওজন ৩৫০ থেকে ৭০০ কেজির মধ্যে। এই গরুগুলোর দাম হাঁকা হয়েছে পৌনে দুই লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত।

আফসার অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সন্তান। তাদের আছে পারিবারিক ব্যবসাও। পড়াশোনা শেষে কানাডা ফেরত সন্তানকে বাবা সেই ব্যবসায় যুক্ত হতে বলেছিলেন। কিন্তু আফসারের স্বপ্ন যে ছিল ভিন্ন। ইচ্ছে ছিল উদ্যোক্তা হবেন, গড়ে তুলবেন গরুর খামার। সেই অদম্য ইচ্ছেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ নয়, আফসারকে নিয়ে যায় খামারের দমবন্ধ পরিবেশেই।

সেটি আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে আফসার বলেন, ‘এই খামার গড়তে আমার ৮০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এর মধ্যে বাবা দিয়েছেন প্রায় ৩০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশই আমার চাকরি থেকে জমানো টাকা। অনেকেই তো অনেক কিছু করেন, আমি না হয় ছোটকালের ভালো লাগার কাছেই ফেরত গেলাম। এতে একদিকে গরুগুলোকে মায়া-মমতায় বড় করতে পারছি। আবার তাদের বিক্রি করে ভালো একটা আয়ও করতে পারছি।’

কথা শেষ হতেই গরুগুলোর কাছে ফিরে যান আফসার। পরম মমতায় গরুগুলোর গায়ে পড়া বালি মোছেন, খাইয়ে দেন ভুসি-পানি। অন্যকেউ গেলে যেখানে ‘চেয়ারম্যান-মেম্বার’ তেড়ে আসে, সেখানে আফসারকে কাছে পেলে যেন গরুগুলোও শান্ত-অবিচল। উচ্চশিক্ষিত তরুণের প্রাণী-প্রেম দেখে বাহবা দেন হাটে আসা মানুষেরাও।

;

নিষিদ্ধ জঙ্গি ‘আনসার আল ইসলাম'র ২ সদস্য গ্রেফতার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা ইউনিয়ন এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম'র ২ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছের‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় তাদের কাছ থেকে একাধিক জিহাদি বই উদ্ধারসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়।

শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুর পৌনে একটার দিকে শিকলবাহার একটি পরিত্যক্ত একতলা ঘর থেকে জঙ্গিবাদী মিটিং করার সময় 'শাহাদাত' গ্রুপের এ দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের সময় র‍্যাবের উপস্তিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ৫-৬ জন পালিয়ে যায়।

গ্রেফতাররা হলেন- পঞ্চগড়ের ফজলুল হকের ছেলে মো. আসাদুজ্জামান আসিফ (২২) ও পাবনার ফরিদপুর এলাকার গোলাম মওলার ছেলে মোহাম্মদ আহাদ (২১)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৭ এর জেষ্ঠ্য সহকারি পরিচালক (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ শরিফ-উল আলম।

তিনি জানান, গত ২৩ মে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর একটি দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলিস্থান ও সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আনসার আল ইসলাম এর ৩ জন শীর্ষ স্থানীয় সদস্যকে গ্রেফতার করে। যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের ফলে আনসার আল ইসলাম এর কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়লে আনসার আল ইসলামের নামে নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা এবং চলমান রাখার জন্য গ্রেফতাররা আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা শতাধিক। যোগাযোগের জন্য তারা ব্যবহার করে ‘End To End Encrypted’ বিভিন্ন মেসেঞ্জার এবং মোবাইল অ্যাপ। 'বিপ' নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তাদের কাছে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যা প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

পরে গোয়েন্দা নজরদারি এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায় ‘শাহাদাত’ গ্রুপটি সালাহউদ্দিন নামক এক প্রবাসীর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। যিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাবের একটি আভিযানিক দল কর্ণফুলীর শিকলবাহা ইউনিয়ন এলাকার একটি পরিত্যক্ত একতলা ঘর থেকে জঙ্গিবাদী মিটিং পরিচালনাকালীন, “শাহাদাত” গ্রুপের দুইজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে। ওই ঘর থেকে জব্দ করা হয় একাধিক জিহাদি বই এবং অন্যান্য আলামত। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে ৫-৬ জন পালিয়ে যায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুই জন জানান, তারা 'আনসার আল ইসলাম' এর মতাদর্শে পরিচালিত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নতুন গোপনীয় অ্যাপস এর মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতো এবং সংগঠনের সকল নির্দেশনা এই অ্যাপসের মাধ্যমে প্রদান করতো।

;