কুষ্টিয়ায় জমে উঠেছে বিসিক উদ্যোক্তা মেলা
কুষ্টিয়ায় জমে উঠেছে বিসিক উদ্যোক্তা মেলা। প্রতিদিন মেলায় আগত দর্শনার্থীদের পদ চারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। এতে করে বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। বিসিক উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পাট, তাঁত, চামড়া, মৃৎ ও হস্তশিল্পের পছন্দের পণ্য ক্রেতারা কিনে নিচ্ছেন। বাজারের দামের তুলনায় একটু কমে বিসিক উদ্যোক্তারা মেলায় বাহারী পণ্য বিক্রি করছেন। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ দোকানের থেকে মেলায় বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এদিকে নানান ধরনের পণ্য কিনতে প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সের মানুষের সমাগম ঘটছে বিসিক উদ্যোক্তা মেলায়।
নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে গত ৫ মে কুষ্টিয়া জেলা কালেক্টরেট চত্বরে জেলা প্রশাসন ও কুষ্টিয়া জেলা বিসিক কার্যালয়ের উদ্যোগে ১০ দিনব্যাপী বিসিক উদ্যোক্তা মেলা শুরু হয়।
মেলায় পাট, তাঁত, চামড়া, মৃৎ ও হস্তশিল্পে উৎপাদিত পণ্যের ৪৪টি স্টল বসেছে। কুষ্টিয়া ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের স্টল এ মেলায় বসিয়েছেন।
মেলায় প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটছে। এখান থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দের পণ্য কিনছেন। স্থানীয় উদ্যোক্তারা অন্য জেলার উদ্যোক্তাদের পণ্যের সাথে পরিচিত হচ্ছেন। অনেকে মেলায় এসে এসব পণ্য দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন।
সাফল্য বুটিকস ও হ্যান্ডিক্রাফ্টের উদ্যোক্তা সম্পা খাতুন বলেন, আমি বিসিকের প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হই। এখন আমি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষক। সেই সাথে কাপড় ও পাট পণ্য উৎপাদন করে দেশের উদ্যোক্তা মেলায় অংশগ্রহণ করে আসছি। কুষ্টিয়ায় স্টল দিয়েছি। এখানে বেচা-কেনা বেশ ভালো হচ্ছে। আশা করছি ১০ দিনে অন্তত লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারব। আমার প্রতিষ্ঠানে বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা, অসহায় নারী, প্রতিবন্ধীরা কাজ করছেন। মেলার স্টলে আমাদের পণ্য দেখে কুষ্টিয়ার ২/৪ জন উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। আমি তাদের উদ্বুদ্ধ করেছি। প্রশিক্ষণ দিয়ে আমি তাদের উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করব। তারা উদ্যোক্তা হলে তাদের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি তাদের প্রতিষ্ঠানে আরো মানুষ কাজ করতে পারবেন।
কুষ্টিয়ার উদ্যোক্তা আবদুস সামাদ অংকন ও রিপন শেখ বলেন, আমরা এ মেলায় ঘুরতে এসেছি। এখানে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের পণ্য দেখলাম। কিনলামও কিছু।
কারুযোগ নামের প্রতিষ্ঠানটি পাট দিয়ে নানান ধরনের পাটপণ্য তৈরি করেছে। এ পণ্য অফলাইন ও অনলাইনে বিক্রি করেন। মেলায় অংশ নিয়েছেন তারা। পণ্য বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। শ্রম ও মেধাকে যুগলবন্দী করে এখন আমি হস্তশিল্পে জায়গা করে নিয়েছি বলেও জানান প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা।
রাঙামাটি থেকে জুম বাজার থেকে আসা উদ্যোক্তা ইয়াসিন আরাফাত টিপু বলেন, কুষ্টিয়া বিসিক উদ্যোক্তা মেলার প্রথম দিকে ক্রেতা কম ছিল। দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি ছিল। এখন মেলা শেষের দিকে। তাই বেচা বিক্রি অনেক বেড়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি মেলার বাকি দিনগুলোতে কেনাবেচা বেশ ভালো হবে। লাখ দুয়েক টাকা হবে সেল। আমাদের এখানে ওয়ান পিস ৫শ' টাকা, থ্রি পিস ১২শ' টাকা, ফতুয়া ৩শ' টাকা, সুতির লুঙ্গি ৪শ' টাকা, বাঁশের মগ ২৫০ টাকা এবং কাঠের চিরুনি ১শ' টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শাপলা সুলতানা বলেন, বিসিক উদ্যোক্তা মেলায় তাঁত, মৃৎ, পাট, চামড়া ও হস্তশিল্পের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখানে পছন্দের পণ্যের দাম বাজারের তুলনায় একটু কম। তাই সুলভ মূল্যে এখান থেকে হস্তশিল্পের বিভিন্ন পণ্য কিনেছি। প্রতিবছর এ ধরনের মেলার আয়োজন করা হলে আমরা স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনতে পারব। তাই প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
পরিবার পরিজন নিয়ে মেলায় কেনাকাটা করতে আসা কুষ্টিয়া সদর উপজেলা রোড এলাকার রেশমী খানম মহুয়া বলেন, কয়েকবার এ মেলায় এসেছি কালেকশনও বেশ ভালো আছে। মেলায় তবে বাজারের থেকে তুলনামূলক ভাবে দাম একটু বেশি বলে মনে করেন তিনি। দাম সমন্বয় কিংবা বাজার থেকে একটু কম দাম হলে ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়তো।
শহরের মিলপাড়া এলাকার তরুণী মনিকা পারভীন বিউটি বলেন, এখানে হস্তশিল্পে উৎপাদিত পণ্য খুবই আকর্ষণীয় ও মানসম্পন্ন। চাহিদাও বেশ ভালো। আমি নিজেও বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তবে প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে বড় করে শুরু করতে পারছি না। আমার মতো অনেকেই উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অপূর্ণই থেকে যায়। তবে আমি উদ্যোক্তা হয়ে পাটজাত পণ্য উৎপাদন করতে চাই এবং পোষাকের সমাহার নিয়ে কাজ করতে চাই। দেশের সোনালী আঁশের সুদিন ফিরিয়ে এনে বড় উদ্যোক্তা হব এটিই আমার এ্যাম্বিশন।
অঙ্গন বুটিকস এন্ড ব্যাগ হাউজের স্বত্বাধিকারী আসমা খাতুন বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে ২০-২৫ জন নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের এখানে কাপড়ের তৈরি ট্রাভেল ব্যাগ, বাচ্চাদের তৈরি পোশাক এবং নকশী কাঁথার চাহিদা বেশ। দাম হিসেবে নকশিকাঁথার বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে বেচাকেনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিসিক কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের ডিজিএম আসানুজ্জামান মুকুল বলেন, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে এ মেলার মূখ্য উদ্দেশ্য। পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে দিচ্ছে এ মেলা। উদ্যোক্তা সৃষ্টি হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বিসিক দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে এ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় উদ্যোক্তা ও ক্রেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনেকেই নতুন উদ্যোক্তা হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা আগ্রহীদের উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করছি। আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। তাদের উদ্যোক্তা হতে সবধরণের সহযোগিতা করা হবে।