পানির সংকটে হাহাকার, গোসলও করতে পারছেনা শিশুরা
তীব্র গরমে বিদ্যুৎ সংকটের পাশাপাশি উত্তর বাড্ডা এলাকায় চরম পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে রান্না করতে পারছেন না গৃহিণীরা। সুপেয় পানির হাহাকার পড়েছে এলাকা জুড়ে। কয়েকদিন ধরে গোসল করতে পারছে শিশুরাও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রমজানের আগে থেকেই পানির সংকট ওই এলাকায়। দিনে একবার পানি আসলেও তা দুর্গন্ধ যুক্ত। ফলে খাওয়ার অনুপযোগী পানি খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে অনেকে। বার বার যোগাযোগ করা হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
সোমবার ( ২৯ এপ্রিল) সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার ও মিশরি পাড়া এলাকায় পানির জন্য হাহাকার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ইব্রাহিমপুর, মণিপুর, মাটিকাটা, নন্দীপাড়া ও সোলমাইদ এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পানির সংকট রয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পানির অভাবে নাজুক অবস্থা শিশুদের। সারারাত অপেক্ষা করেও পানি না পেয়ে দোকান থেকে কিনে পানি খাচ্ছেন অনেকে। কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে কলস ও বোতলে করে পরিবারের জন্য পানি আনছে নারী ও শিশুরা।
পানি না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন গৃহিণীরা। সুপেয় পানির অভাবে রান্না হচ্ছে না বাসায়। এতে পানির অভাবে নাজুক অবস্থার পাশাপাশি শিশুদের খাদ্য অভাব দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা বৃদ্ধ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও।
স্থানীয়রা বলছেন শুধু বাড্ডা এলাকায় প্রায় দুই হাজার বাড়িতে এমন সংকট চলছে ৬ মাস ধরে। বিশেষ করে রমজান মাস থেকে পানির সংকট ভয়াবহ অবস্থায় চলে গেছে। এতে প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
উত্তর বাড্ডা মিছরি পাড়া এলাকার আমেনা খাতুন বলেন, কাল সারারাত অপেক্ষা করেছি পানির জন্য। রান্না করতে না পেরে দোকান থেকে কলা রুটি কিনে বাচ্চাদের খাওয়াতে হয়েছে। এভাবে প্রায় ৬ মাস থেকে আমরা ভুগছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মাঝে মাঝে পানি আসলেও তা দুর্গন্ধ থাকায় খাওয়ার অনুপযোগী। খেলেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে সবাই।
একই এলাকার শাহাবুদ্দিন মাসুদ বলেন, পানির অভাবে আমরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। টানা ১ সপ্তাহ ধরে পানি নাই। রাতে পানি আসে কিন্তু খাওয়ার অনুপযোগী। শিশুরা খেতে না পেরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কয়েক জন শিশু অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাও নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রত্যেকটিতে রয়েছে পানির সংকট। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য অঞ্চল ৮ এর মিছরি পাড়া, উত্তর সিটির ২১,২২,২৩ নং ওয়ার্ডসহ আশেপাশের এলাকা। এছাড়া অঞ্চল-২ এর নবাবগঞ্জ, ঢুরি আঙুলি লেন, জাফরাবাদ ও কাটাসুর, অঞ্চল-৪ এর বড়বাগ, মণিপুর, আগারগাঁও ও মিরপুর ১২। অঞ্চল-১০ এর ইব্রাহিমপুর, পূর্ব শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১১ এর মদিনা নগর, বাইগারটেক, মাটিকাটা এবং উত্তরা ১৫, ১৬, ১৭ নম্বর সেক্টরে পানির সমস্যা রয়েছে। জোন-৫ এর গুলশান ১, গুলশান ২ এর ৮৩ নম্বর সড়ক এবং মালিবাগ বাজার রোড এলাকায় ও বাড্ডা এলাকা। অঞ্চল-৬ এর বনশ্রীর এফ ব্লক ও নন্দীপাড়া, অঞ্চল-৭ এর রসুলপুর, পাগলা, শাহী মহল্লা, নুরবাগ, আদর্শনগর, নামা শ্যামপুর, নিশ্চিন্তপুর, দেলপাড়া, শান্তিধারা ও দৌলতপুরেও রয়েছে পানির সমস্যা।
সমস্যা বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম কুমার মন্ডল বলেন , সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি। কেন সংকট। সমাধান ও সরবরাহ এসব বিষয় আমি দেখি না।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার মুখপাত্র এ এম মোস্তফা তারেক বলেন, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে কোনো সংকট নেই । জলবায়ুগত কারণে কিন্তু এলাকা ভিত্তিক কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা প্রায় ২০০টি পয়েন্টে বিনামূল্যে পানি সরবরাহ করছি ।
দীর্ঘদিনের সমস্যা এবং সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন , দীর্ঘদিনের সমস্যা হলে তো অভিযোগ পেতাম। তাও যদি সংকট থাকে যে ১ টি এলাকার কথা বলছেন সেখান থেকে আসাদের হট লাইন নম্বরে অভিযোগ দিতে বলেন । আমরা আমাদের মোবাইল টিমের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিব ।