২০০‘র বেশি ঘরের ইলেকট্রিক কাজ করলেন জন্মান্ধ রিপন, অন্ধত্ব জয়ের গল্প



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, নোয়াখালী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরহাজারী ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের তের বাড়ি সমাজের মরহুম আব্দুস সোবহানের ছেলে ইমরোজ হোসেন রিপন (৩৬)। সে একজন জন্মান্ধ যুবক।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধাই নয়, এমনটা প্রমাণ করতে জীবনের প্রথম দিন থেকে শুরু হয় লড়াই। মনের আলোয় উদ্ভাসিত এ যুবক পেশায় একজন ইলেকট্রিক ও প্লাম্বার মিস্ত্রি। পাশাপাশি বাড়ির পাশে করছেন ছোট্র একটি ইলেকট্রিক দোকান। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কারো কাছে হাত না পেতে করছেন ইলেকট্রিক ও পাইপ ফিটারের কাজ। স্থানীয় এলাকাবাসী তার এমন প্রয়াসে অনুপ্রাণিত। সে যেন নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা।

১৯৮৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন রিপন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সে চতুর্থ। বর্তমানে তার মা দুই ছেলের সাথে আমেরিকায় থাকেন। আমেরিকা প্রবাসী বড় বোন সুমনা ও ডাক্তার শাহজান আক্তার এবং ছোট ভাই শিপনের সহযোগিতায় বাবার দিয়ে যাওয়া ঘরে এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছে রিপন।

নিজ গ্রামে বিদ্যুতায়ন শুরু হলে নিজের মধ্যে ইলেকট্রিকের কাজ শেখার স্বপ্ন জাগে। কিন্তু এতে বাধা দেন মা-বাবাও স্থানীয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরা। এরপর একা একা নিজেদের বসত ঘরে ইলেকট্রিকের কাজ শিখতে চেষ্টা চালায় রিপন। এক পর্যায়ে এ নিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে তার মা-বাবা। এ কারণে ইলেকট্রিকের কাজ করার যন্ত্রপাতি লুকিয়ে রাখতেন। পরে ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে যান। সেখানে একাকী দীর্ঘ চেষ্টার পর আয়ত্ত করে ইলেকট্রিক, প্লাম্বার ও সোলারের কাজ। এরপর তিনি গত ১৮ বছরে নিজ গ্রামে বেশ কয়েকটি মসজিদসহ ১৫০-২০০টি ঘরের ইলেকট্রিক কাজ সম্পন্ন করেন। এছাড়াও টুকিটাকি অসংখ্য মেরামতের কাজ করেছেন।

নিজের গ্রামের সকল রাস্তার সাথে তার নাড়ির সম্পর্ক। কারো সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তাঘাটে চলাফেরা করেন। একা একা যান নিজের দোকানে। গোসল থেকে খাবার সবই করেন নিজে হাতে কারো সাহায্য ছাড়া। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি রিপন। তবে তিনি সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পেতেও তেমন আগ্রহী নয়।

রিপনের স্ত্রী শাহিনা আক্তার বলেন, স্বামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও অন্যদের থেকে সে পুরোপুরি আলাদা। সে নিজের সকল কাজ নিজে করতে পারে।

তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.জাহাঙ্গীর আলম শিপন বলেন,দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা যে স্বপ্ন পূরণের জন্য বাধা নয় তার উজ্জল দৃষ্টান্ত রিপন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও অবিরাম কাজের পিছনে ছুটে চলেছেন। দৃষ্টি তার সামনে এগোনোতে কোনো বাধা হতে পারেনি, উল্টো সে এক অনুপ্রেরণার নাম। ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী রিপন কারো বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। তার এ উদ্যম ও মনের শক্তি সমাজের প্রতিটি মানুষের কর্মজীবনকে প্রভাবিত করবে এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।  তাকে খুব দ্রুত একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে।

   

এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ২২.৪৫%



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫শ ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিলেন ১৮.৪৮ জন। এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ২২.৬৩ জন। এ হিসাবে এপ্রিল মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ২২.৪৫%। এই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮টি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কেউ বেঁচে নেই। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশে ৬শ ৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬শ ৭৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৯শ ৩৪ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৩ জন এবং শিশু ১শ ৮ জন। তবে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, এ সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। এতে মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, ২ হাজার ১ শত ১৯ কোটি ১১ লাখ টাকার।

রোববার (১২ মে) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩শ ১৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২শ ৫৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৮.১৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৭ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১শ ১৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৬.৬৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন, ৯৬ জন অর্থাৎ ১৪.১৩ শতাংশ। এ সময়ে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত, ৬৮ জন আহত হয়েছেন (একটি লঞ্চে আগুন ধরলে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে ৬০ জন আহত হন)। ৩৮টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- এপ্রিল মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২শ ৫৯ জন (৩৮.১৪ শতাংশ), বাস যাত্রী ৩৪ জন (৫ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-ড্রামট্রাক আরোহী ৬৫ জন (৯.৫৭ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-পাজেরো জিপ আরোহী ৪৫ জন (৬.৬২ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজিচালিত অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১শ ৩১ জন (১৯.২৯ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-পাওয়ারটিলার) ২২ জন (৩.২৪ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ১০ জন (১.৪৭ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২শ ৩৫টি (৩৪.৯৭ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২শ ৬৬টি (৩৯.৫৮ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৮৭টি (১২.৯৪ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৭৯টি (১১.৭৫ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং ৫টি (০.৭৪ শতাংশ) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন

দুর্ঘটনাগুলোর ১শ ৭৪টি (২৫.৮৯ শতাংম) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২ম ৬২টি (৩৯ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১শ ২০টি (১৭.৮৫ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৯৭টি (১৪.৪৩ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৯টি (২.৮২ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি- ড্রামট্রাক- তেলবাহী ট্যাঙ্কার-সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক-বুলডোজার-রেডিমিক্স গাড়ি ২৪.৩৪ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো জিপ ৫.৮১ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১০.৮৬ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৯.৮২ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজিচালিত অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা-টেম্পু) ১৯.৪৬ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র-চাঁন্দের গাড়ি-পাওয়ার টিলার-ধানকাটা মেশিন গাড়ি) ৫.৩৯ শতাংশ, বাইসাইকেল-রিকশা ২.৩৫ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ১.৯৩ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ১ হাজার ১শ ৮৭টি। (বাস ১শ ২৯টি, ট্রাক ১শ ৫৭টি, কাভার্ডভ্যান ১৮টি, পিকআপ ভ্যান ৪৯টি, ট্রাক্টর ২০টি , ট্রলি ১৯টি, লরি ১১টি, ড্রাম ট্রাক ৮টি, তেলবাহী ট্যাংকার ৩টি, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ১টি, বুলড্রোজার ১টি, এপিবিএন গাড়ি ১টি, রেডিমিক্স গাড়ি ১টি, মাইক্রোবাস ২৩টি, প্রাইভেটকার ৩৮টি, অ্যাম্বুলেন্স ৫টি, পাজেরো জিপ ৩টি, মোটরসাইকেল ৩শ ৫৪টি, থ্রি-হুইলার ২শ ৩১টি (ইজিবাইক-সিএনজিচালিত অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা-টেম্পু), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৬৪টি (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র-চাঁন্দের গাড়ি-পাওয়ার টিলার-ধানকাটা মেশিন গাড়ি), বাইসাইকেল-রিকশা-রিকশাভ্যান ২৮টি এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২৩টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৫.৩৫ শতাংশ, সকালে ২৪.৮৫ শতাংশ, দুপুরে ২০.৫৩ শতাংশ, বিকেলে ১৫ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১০.২৬ শতাংশ এবং রাতে ২৩.৯৫ শতাংশ।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯.০৪ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬.১৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৭৩ শতাংশ, প্রাণহানি ১১.৪৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯.৬৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১৭.৪১ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.২৮ শতাংশ, প্রাণহানি ১১.৬০ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৬৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৮.৭৭ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.০৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.১১ শতাংশ, প্রাণহানি ১০.২৬ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৪১ শতাংশ, প্রাণহানি ৮.৩৩ শতাংশ ঘটেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১টি ৩২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং ঢাকা বিভাগে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১শ ৭৬ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৪৩টি দুর্ঘটনায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম শরীয়তপুর ও বান্দরবান জেলায়। এই ২টি জেলায় স্বল্পমাত্রার ৫টি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া যায়নি। রাজধানী ঢাকায় ৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৬৬ জন আহত হয়েছেন।

নিহতদের পেশাগত পরিচয়

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ৯ জন, চিকিৎসক ১ জন, সাংবাদিক ৪ জন, প্রকৌশলী ৩ জন, আইনজীবী ৩ জন, শ্রম ও কর্মসংস্থান ব্যুরো’র সহকারী পরিচালক ১ জন, গ্রামপুলিশ ২ জন, বাউল শিল্পী ১ জন, যন্ত্রশিল্পী ১ জন, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা ৬ জন, পিকেএসএফ-এর ১ জন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারী ১২ জন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক ১ জন, মসজিদের ইমাম ৪ জন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৬ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩১ জন, উপজেলা চেয়ারম্যান ১ জনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৩ জন, পরিবহন শ্রমিক নেতা ৩ জন, পোশাক শ্রমিক ৬ জন, বালু শ্রমিক ৮ জন, নির্মাণ শ্রমিক ১৩ জন, ধানকাটা শ্রমিক ৪ জন, নিরাপত্তা রক্ষী ৫ জন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১ জন, রাজমিস্ত্রি ৩ জন, প্রতিবন্ধী ২ জন এবং চুয়েটের ২ জন, বাশেমুপ্রবি’র ১ জন, বিদেশি ছাত্রী ১ জনসহ দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসা ও কলেজের ১শ ২৪ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ

সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো হচ্ছে- ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ২. বেপরোয়া গতি ৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা ৪. বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল ৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না-জানা ও না-মানার প্রবণতা ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি ১০. গণপরিবহনখাতে চাঁদাবাজি।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সুপারিশ

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন যে সুপারিশগুলি করেছে, সেগুলি হচ্ছে-

১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা ২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা ৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করা ৬. পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা ৮. রেল ও নৌপথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা ১০. ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করা।

দুর্ঘটনা পর্যালোচনা ও মন্তব্য

গত মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫শ ৭৩ জন নিহত হয়েছিলেন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ১৮.৪৮ জন। এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ২২.৬৩ জন। এই হিসাবে এপ্রিল মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ২২.৪৫ শতাংশ। এই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮টি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কেউ বেঁচে নেই।

এপ্রিল মাসের সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ২ হাজার ১ শত ১৯ কোটি ১১ লাখ ৯৬ হাজার টাকার মতো। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সঙ্গে আরো ৩০ শতাংশ যোগ করতে হবে।

iRAP (International Road Assessment Program) method অনুযায়ী হিসাবটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় যত সংখ্যক যানবাহন বা সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, তার তথ্য না পাওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংসের আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, সংবাদমাধ্যমে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা তার চেয়ে আরো অনেক বেশি। ইদানিং মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের পেছনে বেপরোয়া যানবাহনের ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এটি প্রতিরোধ করতে হলে মহাসড়কে যানবাহন দাঁড়ানো নিষিদ্ধ করতে হবে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানাচ্ছে, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। তাই, গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার। বেপরোয়া যানবাহন, সড়কের সমস্যা এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। এজন্য সরকারি উদ্যোগে সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জীবনমুখী সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।

এছাড়া পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে, নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকার কারণে বাস এবং পণ্যবাহী যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তাদের মধ্যে জীবনবোধ ঠিকমতো কাজ করে না। পণ্যবাহী যানবাহন চালকদের মধ্যে এই প্রবণতা প্রকট। তারা সবসময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন এবং বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালান। ফলে, দুর্ঘটনায় পতিত হন। পরিবহন চালকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

এ বাদেও মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর-যুবক। এরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের দুর্ঘটনায় ফেলছে।

মোটরসাইকেল বেপরোয়া চালানোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে। মোটকথা, দেশে টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

;

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কোন বোর্ডে পাসের হার কত



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।

রোববার (১২ মে) বেলা ১১টার দিকে প্রকাশ করা হয় ফলাফল। এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ ও পরিসংখ্যান তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, যশোর বোর্ডে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ ছাড়া ঢাকায় ৮৯ দশমিক ৩২, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৫, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩, ময়মনসিংহে ৮৪ দশমিক ৯৭, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪০ এবং সিলেটে ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

এছাড়া মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে ৭৯ দশমিক ৬৬ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৭৮ দশমিক ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

২০২৪ সালের এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ৪৮ হাজার।

এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১২ মার্চ শেষ হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয় ২০ মার্চ। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিলের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৪ মার্চ এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২১ মার্চ শেষ হয়। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ও ভোকেশনালের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১২ এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২১ মার্চ শেষ হয়।

সারা দেশে ২৯ হাজার ৭৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৩ হাজার ৭০০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়। আর বিদেশের আট কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

কোভিডের পর এবারই প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস, পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়মানুযায়ী, এবারো পরীক্ষা শেষ হওযার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হলো।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফল মিলছে। ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোনে এসএমএস করেও জানা যাচ্ছে ফল।

;

জিপিএ–৫ এবং পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জিপিএ–৫ এবং পাসের হারে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা। মেয়েদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। 

প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী, চলতি বছর উত্তীর্ণ ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ৮ লাখ ৬৫ হাজার ও ছাত্র ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ জন। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ২০ লাখ ৩৭ হাজার ২৪২ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৯৯৯৪১৭ জন ও ছাত্রী ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৮২৫ জন। 

এবার এক লাখ ৮১ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে ছেলেরা পেয়েছে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। আর মেয়েরা পেয়েছে ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন। ছেলেদের চেয়েও মেয়েরা ১৫ হাজার ৪২৩ বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে।

এখন পর্যন্ত জানা গেছে, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২, রাজশাহী বোর্ডে ৮৯ দশমিক ২৫, কুমিল্লা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ২৩, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮২ দশমিক ৮০, বরিশাল বোর্ডে ৮৯ দশমিক ১৩, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৪০, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৮৪ দশমিক ৯৭, সিলেট বোর্ডে ৭৩ দশমিক ৩৫, যশোর বোর্ডে ৯২ দশমিক ৩২।

এরআগে, আজ রোববার সকাল ১০টার পর গণভবনে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন।

ফলাফর ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ২০ লাখ ৩৮ হাজার ১৫০ জন পরীক্ষার্থী। ছাত্রসংখ্যা ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৪ জন, আর ছাত্রী সংখ্যা ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮৬ জন। কেন ছাত্ররা কম? সে কারণটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে, কি কারণে ছাত্ররা কমে যাচ্ছে? পাসের হারেও দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরাই অগ্রগামী।

;

মাদ্রাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ২০৬ শিক্ষার্থী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মাদ্রাসা বোর্ডে মোট কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদ্রাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ২০৬ শিক্ষার্থী। আর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৪ হাজার ৭৮ জন শিক্ষার্থী।

রোববার (১২ মে) ১০টি শিক্ষা বোর্ডে এক যোগে ফলাফল প্রকাশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রীর হাতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা। ৮টি সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ও ময়মনসিংহে ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

;