আগুনে চরম ভোগান্তিতে অসুস্থ শিশু ও অভিভাবকরা
![ছবি: বার্তা ২৪](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Apr/19/1713522546692.jpg)
ছবি: বার্তা ২৪
রাজধানীর আগারগাঁও শিশু হাসপাতালে লাগা আগুনের খবরে বিভিন্ন তলার ওয়ার্ড ও আইসিইউতে চিকিৎসা নেওয়া শিশুদের নিয়ে নিচে নামেন অভিবাবকরা।
আগুনের আতঙ্ক ও মানুষের দৌড়াদৌড়িতে ঘটনার সময় এক বিভীষিকার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় শিশু হাসপাতালে জুড়ে। আগুন নিভে গেলেও এখন চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন চিকিৎসার শিশু ও তাদের অভিভাবকরা।
আগুনের কারণে ওয়ার্ডের স্থান না পেয়ে তারা হাসপাতালে বাইরের ফ্লোরে শিশুদের নিয়ে অবস্থান করছেন।
হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগুন লাগার পর পর হাসপাতাল ভবন ধোঁয়ায় অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন যে যেভাবে পেরেছে চিকিৎসারত শিশুকে নিয়ে হাসপাতালের ভবন থেকে বের হয়ে যান।
শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা শিশু হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির পঞ্চম তলায় আগুন লাগে। সেই ফ্লোরে যেতেই বাতাসে ভেসে আসে পোড়া গন্ধ। এছাড়া পঞ্চম তলায় হাসপাতালের সকল আসবাবপত্র পুড়ে গিয়েছে।
এদিকে হাসপাতালের নিচে দেখা যায়, আগুনের কারণে আতঙ্কে নিচে নামা অভিভাবকরা তাদের শিশুদের নিয়ে হাসপাতালের ভবনের বাহিরের গাড়ি পার্কিং-এ অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে অনেক শিশু গুরুতর রোগে আক্রান্ত, ফলে তারা বিনা চিকিৎসায় অবস্থান করছেন। এছাড়া বাহিরের গরমে অনেক শিশু আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
হাসপাতাল ভবনের চতুর্থ তলায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ মাসের শিশু সন্তান হাবিবুর রহমানের চিকিৎসা চলছিলো। আগুন লাগার পর তার মা হাজেরা আক্তার দ্রুত নিচে নামেন।
তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে আমার শিশুকে নিয়ে এই হাসপাতালে আসি। প্রচন্ড জ্বরের কারণে হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। আজ দুপুরের দিকে হঠাৎ হাসপাতালে মানুষের দৌড়াদৌড়ি লক্ষ্য করি। এর কিছুক্ষণ পরই দেখি কালো ধোঁয়ায় বিল্ডিং অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে গেছে। এর মাঝে কয়েকজন আগুন করে চিৎকার করছে। পরে দ্রুত আমার শিশুকে নিয়ে নিচে নামি। নিচে নেমেছি প্রায় দুই ঘণ্টার উপর হয়ে গেছে। এই গরমের মধ্যে আমার বাচ্চা কান্না করছে। কিন্তু এখনো উপরে সব ঠিকঠাক হয়নি কখন যে যেতে পারবো বুঝতে পারছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে তো আমার বাচ্চা আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।
পাতলা পায়খানা জনিত রোগের কারণে গত সাত দিন ধরে ঢাকা শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিল পাঁচ মাসের শিশু আয়াত। গতকাল তাকে আইসিউ থেকে চতুর্থ তলার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। আগুন লাগার সাথে সাথে আয়াতের মা নীলা কোন রকমে ৫ মাসের শিশু বাচ্চাকে নিয়ে নিচে নামেন।
আগুন লাগার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নীলা বলেন, হঠাৎ দৌড়াদৌড়ি আর ধোঁয়া কারণে ভয় পেয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসি। আমার বাচ্চাটা এক সপ্তাহ আইসিইউতে ছিলো, সে এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। তাকে নিয়ে এই গরমে বাহিরে আছি। আবার অসুস্থ হয়ে যায় কিনা ভয়ে আছি। গরমে বাচ্চা কান্না করছে।
তিনি বলেন, তবে আমাদের বাচ্চাদের খুব বেশি সমস্যা না হলেও পাঁচতলার আইসিইউ-তে যেসব বাচ্চারা ছিল তাদের সমস্যা হয়েছে। অনেক বাচ্চা আছে যাদেরকে অক্সিজেন ছাড়া নিচে নামানো হয়। তারা এখন কোথায় আছে জানিনা তবে তাদের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল।
এদিকে রাজধানীর আগারগাঁও শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউতে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ধারণা ফায়ার সার্ভিসের।
আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর আমাদের ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালায়। তবে আমরা কোনো ভুক্তভোগীকে পাই নি। আগুন লাগার পরপরই আইসিইউতে থাকা সবাইকে সরিয়ে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বজনরা।
আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা ধারণা করছি আইসিইউর ভেতরে এসি ছিলো। সেটা থেকে হয় তো আগুন লেগেছে। তবে তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।