গাইবান্ধা কারাগারে নারী হাজতিকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের অভিযোগ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভিতরে কারারক্ষীর সঙ্গে এক নারী কয়েদির ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখে ফেলায়’ অপর এক নারী হাজতিকে বিবস্ত্র করে এবং হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা গোপন রাখতে প্রাণনাশসহ দেওয়া হচ্ছে সম্ভ্রমহানির হুমকিও। অভিযোগের পর ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী হাজতি (৩৪) দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের। তিনি প্রায় ৫ বছর ধরে মাদক মামলায় গাইবান্ধা হাজতে রয়েছেন।

গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভিতরে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অসুস্থ ওই নারী হাজতির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা, জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী হাজতির মা। সেই অভিযোগের একটি কপি এসেছে বার্তা২৪.কমের হাতে।

ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন গাইবান্ধা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন। এছাড়া অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন নারী কয়েদী রেহেনা ও আলেফা। কারারক্ষী তহমিনা, সাবানা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফা।

গত ১৬ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, হাজতি (৩৪) একটি মামলায় প্রায় ৫ বছর যাবত গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে অবস্থানকালে কিছুদিন আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম এবং অপর এক মহিলা কয়েদির মধ্যে ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখে ফেলেন’। এতেই সুবেদার আশরাফুল ও ওই মহিলা কয়েদি ভুক্তভোগীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তারা ঘটনার বিষয়ে কাউকে বললে কারাগারের ভিতরেই তাকে খুন-জখমে হত্যা করে আত্মহত্যায় মৃত্যু কিংবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মর্মে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করতে থাকে। ভুক্তভোগী হাজতি বারবার তাদেরকে (সুবেদার আশরাফুল ও ওই নারী কয়েদি) ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বলবে না মর্মে জানানোর পরেও সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি কারাগারের ভিতরে ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া সুবেদার আশরাফুল ভুক্তভোগীকে জিম্মি করতে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে কু-প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্তসহ হাত এবং পরনের কাপড় ধরে টানা-হেঁচড়াসহ একাধিকবার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। পরে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দিয়েও সুবেদার আশরাফুলের কামনা চরিতার্থে ব্যর্থ হয়ে তার সহযোগীরা ভুক্তভোগী হাজতির স্বামীকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে নেয়। অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী হাজতির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে তার সংসার ভেঙে দেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

ভুক্তভোগী হাজতি এসব ঘটনা জেল সুপারকে অবগত করবে মর্মে জানালে, সুবেদার আশরাফুল দাবি করেন, জেলার সাহেব তার লোক, তিনি (সুবেদার) নিজের টাকা খরচ করে জেলারকে এই কারাগারে বদলি করে এনেছেন। জেলার তার (সুবেদারের) কোন বিচার করতে পারবেন না দাবি করে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেন। এসবের এক পর্যায়ে চলতি বছরের গত ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা, আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা পরিকল্পিতভাবে জেলা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভিতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে সীমার মাথায়, কোমরে বুকে, পিঠে, দুইপায়ের হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে এলোপাথাড়ি মারপিট করতে থাকে। মহিলা কয়েদি মেঘলা ভুক্তভোগীর ডানহাতে কামড় দিয়ে মাংস ছিঁড়ে নেন বলে অভিযোগ করা হয়।

শুধু তাই নয়, সুবেদার আশরাফুল, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফাগং কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভিতরে প্রবেশ করে ভুক্তভোগী হাজতিকে টেনে-হেঁচড়ে বের করে মহিলা ইউনিটের বারান্দা হতে সেলের ভিতরে নিয়ে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ও দুই পা রশি দিয়ে বেঁধে বিবস্ত্র করে লাঠি দিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর স্থান (দুই উরু), পায়ের পাতায় পেটাতে থাকে। এ সময় নির্যাতনকারীরা এসবের কোনও ঘটনা কারাগারের বাহিরে প্রকাশ হলে ভুক্তভোগী হাজতিকে মারপিটে হত্যা করে হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে বলে চালাবে মর্মে আবারও হুমকি দেয়।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্যাতিতা হাজতির মা একাধিকবার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গাইবান্ধা কারাগারে গেলেও মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। অবশেষে ভুক্তভোগী হাজতি গাইবান্ধা আদালতে হাজিরার তারিখে আদালতে গেলে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা। ওইদিন ভুক্তভোগী হাজতি মায়ের কাছে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের অভিযুক্ত প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিষয়টির সাথে আমি জড়িত না। আমার নামটা কেন আসতেছে বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনাটি একমাস আগের। তিনি দাবি করেন, ঘটনাটি এখানকার আরেক প্রধান কারারক্ষী মোস্তফার ডিউটির সময়ের। কিন্তু আমার নাম কেন হচ্ছে আমি বিষয়টি জানি না।

আগের প্রধান কারারক্ষী মোস্তফার নাম বর্তমান কারারক্ষী উল্লেখ করলেও তার বক্তব্য নিতে পারেনি বার্তা২৪.কম।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অপর অভিযুক্ত মহিলা কারারক্ষী তহমিনা আক্তার মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেদিন যা ঘটেছিল তার বিপরীত ঘটনা তুলে ধরে অভিযোগ করা হয়েছে। এসময় তিনি কারাগারের আরেফিন নামের এক নারী কারারক্ষী ও তার স্বামীর মদদে এই বন্দি এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন বলে দাবি করেন।

এছাড়া এই বন্দি একাধিক মামলার আসামি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রশাসনের ওপর হাত তোলার একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঘটনার দিনও সাবানা নামের এক নারী কারারক্ষীর গায়ে হাত তুলেছিলেন বলেও দাবি করেন কারারক্ষী তহমিনা।

এসব ব্যাপারে গাইবান্ধা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী বার্তা২৪.কমকে বলেন, গতকাল এডিসি তদন্তে এসেছিলেন। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারাগারের ভিতরের ব্যাপারে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে একটি ব্যাপার তৈরি হয়েছে। যা ফোনে বলা সম্ভব নয়। তবে ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে গতকাল বিষয়টি তদন্ত করেছি। খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেব। এর পরেই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন জেলা প্রশাসন।

   

নওগাঁয় খাদ্যগুদামের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁর মহাদেবপুরে সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ভালো মানের চাল বের করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের চাল গুদামে প্রবেশ করার অপরাধে খাদ্যগুদামের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত আরো ২-৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমদ বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- নওগাঁ শহরের খাস-নওগাঁ মহল্লার বাসীন্দা খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম (৪৬), বদলগাছী থানার দ্বাড়িশন গ্রামের বাসীন্দা ও উপ-খাদ্য পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম (৪৯) এবং মহাদেবপুর থানার চকগোবিন্দপুর গ্রামের বাসীন্দা খাদ্য গুদামের শ্রমিক সর্দার আজমের আলী (৫২)।

জানা যায়, মহাদেবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাজের হাসান গত দুই বছর থেকে কর্মরত আছেন। গত ১৭ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে মহাদেবপুর উপজেলার ইউএনও কামরুল হাসান সোহাগ এলএসডির ১নং গুদামের দক্ষিণ পার্শ্বে একটি ট্রাক দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। এসময় তিনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাজের হাসানকে ফোনে ডেকে নেন। এরপর সেখানে উপ-খাদ্য পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম এবং আজমের আলীকে দেখতে পান। উক্ত ট্রাক হতে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের ৩০০ বস্তা চাল ১নং গুদামের ১০৯/১০১১৫৫৬ নং ধামালে খামালজাত করা হয়েছে। আর বাকি ১২০ বস্তা চাল গুদামজাত করার অপেক্ষায় ট্রাকের উপরে আছে। ইউএনও বিষয়টি মোহাজের হাসানের কাছে গুদামের ভেতরে চাল ঢুকানোর জন্য কোন সরকারি নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চান। মোহাজের হাসান সাফ জানিয়ে দেন এমন কোন নির্দেশনা নেই।

এ বিষয়ে রাশেদুল ইসলাম ও আজমের আলী চালের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এবং তার জ্ঞাতসারেই চালের বস্তাগুলো পরিবর্তন করা হচ্ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ইউএনও নির্দেশক্রমে মোট ৪২০ বস্তা (প্রতিটি বস্তা ৩০ কেজি) চালসহ ট্রাক থানায় পাঠানো হয়। সেই সাথে ১ নং গুদামটি সিলগালা করা হয়।

মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমদ বলেন, আতিকুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম ও আজমের আলীসহ অজ্ঞাত আরো ২-৩ জন মিলে পরস্পর যোগসাজসে অধিক মুনাফা লাভের আশায় ভালো মানের চাল গুদামের মধ্য থেকে বের করে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের চাল গুদামের মধ্যে ঢুকানোর চেষ্টা করছিল। অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

;

পাচারের শিকার ভারত থেকে দেশে ফিরল ২০ নারী-শিশু



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতে পাচারের শিকার ২০ নারী-শিশুকে উদ্ধারের পর স্বদেশ প্রত্যাবাসন আইনে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষে তাদেরকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ভাল কাজের প্রলোভনে দালালের খপ্পরে পড়ে বিভিন্ন সময় এরা দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারতে পাচার হয়েছিল। বাংলাদেশে ফেরার পর আইনি সহায়তায় তাদেরকে ৩টি মানবাধিকার সংস্থা গ্রহণ করেছে। সীমান্তে হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।

এদিকে পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করলেও কোনোভাবে থামছে না এসব কার্যক্রম। তবে পাচার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে সচেতনতায় কমাতে পারে পাচার কার্যক্রম। আর ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের আইনি সহায়তা নিয়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চোখে-মুখে ঘরে ফেরার আনন্দ বলে দেয় বন্দী জীবন থেকে তাদের মুক্তির স্বাদ। কেউ প্রেমিকের প্রতারণা, কেউ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন আবার কেউ ভালো কাজের আশায় দালালের হাত ধরে পাড়ি জমায় ভারতে। তবে ভারতে গিয়ে বুঝতে পায় তারা সবাই নিজের অজান্তে বিক্রি হয়েছে দালালের হাতে। কিন্তু যখন বোঝে তখন আর কিছু করার উপায় থাকে না। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নানান ঝুঁকিমূলক ও অসামাজিক কাজে তাদের ব্যবহার করা করে পাচারকারীরা। ভাগ্যের জোরে কিছু সংখ্যক ফিরে আসলেও অনেকের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা রয়েছে অজানা।

পাচার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, উদ্ধারের সংখ্যা মাত্র ৩০ শতাংশ। পাচারকারীদের বেশি টার্গেট থাকে অসহায় পরিবার ও স্বামীহীন নারীদের ওপর।  এমন পাচারের শিকার ২০ নারী-শিশুকে উদ্ধারের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠায় কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তারা। পাচারের শিকার এসব বাংলাদেশিদের এক এক জনের জীবনে রয়েছে লোমহর্ষক কাহিনি।

ফেরত আসা কিশোরী রহিমা (ছদ্মনাম) জানান, ডান্সার বানানোর কথা বলে ভারতে নিয়ে বিক্রি করে প্রেমিক। পরে বুঝতে পেরে সে পুলিশের হাতে ধরা দেয়। বন্দিদশা থেকে ফেরত আসতে পারবে, এটা সে ভাবতেও পারেনি। এ ভুল পথে আর পা বাড়াবে না সে।

ফেরত আসা নারী মমতাজ (ছদ্মনাম) জানান, সে হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে এক মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে। কিন্তু মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার বাবা মামলা করেন। পরে সে জেল থেকে বের হলে মেয়েটির বাবা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভারতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে তাকে পুলিশ আটক করেছিল। দুই বছর পর সে বাড়ি ফিরছে।

ফেরত আসা এক কিশোরীর অভিভাবক বলেন, মেয়েকে ফিরে পেয়ে তিনি খুশি। তবে পাচারের ঘটনায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানায়। কিন্তু টাকা দিতে পারেনি বলে সহযোগিতা পায়নি।

মানবাধিকার সংস্থা জাস্টিস এন্ড কেয়ারের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার এস,এস, মুহিত হোসেন জানান, ফেরত আসা ২০ জনের মধ্যে ৩ জন পুরুষ ও ১৭ জন, নারী-শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে ৭ জনকে জনকে জাস্টিস এন্ড কেয়ার, ৮ জনকে রাইটস যশোর ও ৫ জনকে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি গ্রহণ করেছে আইনি সহায়তা দিতে।

পাচার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের পরিচালক বিদোষ চন্দ্র বর্মন জানান, পাচার প্রতিরোধে সরকার বিভিন্নভাবে কাজ করছে। তবে সবার সহযোগিতায় পাচার প্রতিরোধ সম্ভব।

;

স্মার্টকার্ড উদ্বোধন করতে কুয়েতে যাচ্ছেন ইসি হাবিব



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড উদ্বোধন করতে কুয়েতে যাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান।

বুধবার (১ মে) কুয়েতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি। ফিরবেন আগামী ৭ মে। তার সঙ্গে যাবেন একান্ত সচিব আসমা দিলারা জান্নাত ও ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব রওশন আরা বেগম। এই সফরের ব্যয় করা হবে স্মার্টকার্ড তথা আইডিইএ প্রকল্প থেকে।

এর আগে যুক্তরাজ্য, ইতালি, সংযুক্ত আবর আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতারে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি।

;

যুক্তরাষ্ট্র নিজের চেহারা আয়নায় না দেখে সবক দেয়: প্রধানমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের চেহারা আয়নায় না দেখে, মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশকে সবক দেয়। মার্কিন কোনো পুলিশের গায়ে কোনো রাজনৈতিক দল হাত তুললে, কী করতো সেখানকার পুলিশ? কদিন আগে যুদ্ধের বিরোধীতা করায় সাধারণ মানুষের আন্দোলনে কি জুলুমটাই না করলো আমেরিকার পুলিশ। এটা তো মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর জবাব কী?

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের কিছু রাজনৈতিক দেউলিয়াতাপূর্ণ, যারা একেবারে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া— এদের কিছু বক্তব্য আর আমাদের দেশের কিছু আছে বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন, সেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবি অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গীবত গাচ্ছে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যে, এদেশের অতি বাম, অতি ডান সবই এখন এক হয়ে গেছে, এটা কীভাবে হলো আমি জানি না। এই দুই মেরু এক হয়েও সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের?

তিনি বলেন, করোনার সময় আমরা বিনা পয়সায় ভেকসিন দিয়েছি। পৃথিবীর ধনী দেশগুলো দেয়নি কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে। টেস্ট আমরা বিনা পয়সায় করেছি, কোনও ধনী দেশও করেনি। আমরা দুই হাতে পানির মতো টাকা খরচ করে মানুষকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নিয়েছি। খুব কম দেশই সেটা করতে পেরেছে। আমরা সেখানে সাফল্য অর্জন করেছি। মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়েছি, শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছি, স্বাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি, মানুষের আয়ুস্কাল বৃদ্ধি করেছি, মানুষের ঘরের কাছে চিকিৎসাসেবা নিয়ে গেছি, শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আছে। সব দিক থেকেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, পিছিয়ে আছি কোথায় আমরা? মাথাপিছু আয় আমরা বৃদ্ধি করেছি, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার অতিমারি, এরপর আসে ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন, সারা বিশ্বব্যাপী মূদ্রাস্ফীতি— এই সমস্যার কারণেই কিন্তু আমরা নয়, সারা পৃথিবী, এমনকি উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও আমরা আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি। ২০০৮ সালর নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা এক ধাপ উপরে তুলবো। রূপকল্প ২০২১ আমরা ঘোষণা দেই, দিন বদলের সনদ আমরা ঘোষণা দেই। আজকে দিন বদল ঘটেছে।

তিনি বলেন, সব সময় আমারা লক্ষ্য রেখেছি তৃণমূলের মানুষ, তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা। আজকে কেউ বলতে পারছে না যে, গ্রামে দারিদ্য আছে। এখন বলে— শহরে দারিদ্র। এখন অদ্ভুত এক হিসাব হয়ে গেছে, দারিদ্রের হার শহরে বেড়ে গেছে, গ্রামে না। অথচ এক সময় গ্রামের মানুষ একবেলা ভাত খেতে পেতো না, মাথা গোজার ঠাই ছিল না, রোগের চিকিৎসা পেতো না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। আমাদের উন্নয়নের তৃণমূল মানুষের দিকে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি। ইতোমধ্যে কয়েকচি জেলা-উপজেলা গৃহহীন, ভূমিহীন মৃক্ত ঘোষণা দিয়েছি। অল্প কিছু বাকি আছে, সেগুলোও শিগগিরই হয়ে যাবে। বাংলাদেশের কোনও মানুষই ঠিকানাবিহীন থাকবে না।

তিনি বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে অগ্রযাত্রা টা সহজভাবে আমরা করতে পারবো। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলে, ভোটের অধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলে তাদের জন্মটা কোথায়? অবৈধ ভাবে হত্যা কু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলকারী, তাদের পকেট থেকে বের হওয়া যে রাজনৈতিক দল তাদের কাছে এখন গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, ভোটের অধিকারের কথা শুনতে হয়, যারা হ্যা, না ভোট দিয়ে যারা ভোট চুরি শুরু করেছিলো। এরপরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ প্রত্যেকটা নির্বাচনই তো আমরা দেখেছি। কিভাবে জনগণের ভোট নিয়ে খেলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশি দূর যেতে হবে না ২০০১ সালের যে নির্বাচন সে নির্বাচনেও তো চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগ কে হারানো হয়েছিলো। আমরা শতাংশ হিসেবে বেশি ভোট পেয়েছি কিন্তু আসন পাইনি। কারণ আমি রাজি হয়নি আমার দেশের গ্যাস অন্য দেশকে বেচবো। আজকে গ্যাসের জন্য যে হাহাকার, আমি যদি তখন রাজি হতাম তাহলে কি আমাদের দেশে কোন ইন্ডাস্ট্রি চলতো? ফার্টিলাইজার সেন্টার চলতো, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তো, হতো না। কিন্তু খালেদা জিয়া কিন্তু সে মুচলেকা দিয়েছিলো। খালেদা জিয়া কথা দিয়েছিলো ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বিক্রি করবে। আমি শুধু বলেছিলাম, আল্লাহ জন বুঝে ধন দেয়। খালেদা জিয়া খালেদা জিয়া কথা দিয়েছে গ্যাস বিক্রি করবে, গ্যাস পাবেই না। তাদের আমলে কিন্তু কুপ খনন করে গ্যাস পায়নি।

আমাদের অধিনে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলার কে তারা? যাদের জন্মই হয়েছে ভোট চুরির মধ্য দিয়ে তারা আবার প্রশ্ন করে কিভাবে? জনগণ বলুক, দেশের মানুষ তো ভোট দিতে পেরে খুশি। হ্যা, এলাকায় এলাকায় স্থানীয়ভাবে কিছু সমস্যা হয়। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে ২০২৪ সালের নির্বাচনের চেয়ে সুষ্ঠুভাবে কবে হয়েছে বাংলাদেশে।

;