নকল ওষুধ তৈরি চক্রের ৫ সদস্যকে গেফতার করেছে ডিবি
![ছবি: বার্তা ২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Apr/01/1711971526640.jpg)
ছবি: বার্তা ২৪.কম
বাজারে বন্ধ থাকা কোম্পানির এন্টিবায়োটিক ওষুধ টার্গেট করে আটা, ময়দা দিয়ে নকল জীবনরক্ষাকারী ওষুধ তৈরি করতো একটি চক্র। পরে সেগুলোর মোড়কজাত থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসপত্র নকল করে আসল এন্টিবায়োটিক বলে বাজারজাত করতো চক্রটি। এমনই এক ওষুধ নকল করা প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ( ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধানের তথ্য মতে, এই চক্রটি রাজধানীর কাছে সাভারের একটি কারখানায় নকল এন্টিবায়োটিকগুলো তৈরি করা হতো। পরে তা ট্রাক বা পিকআপ ভ্যানে ভরে নিয়ে যাওয়া হতো বরিশালে। সেখানে গুদামজাত করে পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হতো। চক্রটি ৮ বছর ধরে এভাবেই নকল এন্টিবায়োটিক তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে এ বিষয়ে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান ডিবির (ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ) প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গ্রেফতাররা হলেন- শাহীন (৩৪), শহীদুল ইসলাম (৪০), সিরাজুল ইসলাম (৩৬), হৃদয় (২০), হুমায়ুন (৩৬)। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৯৬ হাজার পিস নকল এন্টিবায়োটিক জব্দ করা হয়। এর বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। জব্দ করা এসব নকল এন্টিবায়োটিক আটা, ময়দা, সুজি ও বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ডিবি বলছে, চক্রটি বাজারে থাকা ও বাজার থেকে বিলুপ্ত এমন ওষুধের মধ্যে 'রিলামক্স-৫০০' ট্যাবলেট, 'মক্সিকফ-২৫০', 'সিপ্রোটিম-৫০০' এমজি, 'অ্যামোক্সিস্লিন', 'জিম্যাক্স', 'মোনাস-১০' নকল করে বাজারে ছাড়তো। তারা কাফকা ফার্মাসিউটিক্যালস, ডক্টর টিমস ফার্মাসিউটিক্যালস, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস, কুমুদিনী ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধ নকল করে এ সব বানাতো।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতার শহীদুল অনেকদিন ধরে বরিশাল কোতোয়ালি থানা এলাকার নথুল্লাবাদ এলাকায় নকল বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক মজুত করে শাহিনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করে আসছিল। হুমায়ুন রাজীব অপসোনিন কোম্পানির বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ফার্মেসিতে নকল এন্টিবায়োটিক বিক্রয় করতেন। এছাড়াও সিরাজুল ইসলাম ও হৃদয় বেশি মুনাফার জন্য শহীদুলকে সহায়তা করতেন। কারখানায় নকল ওষুধ তৈরি করে সেগুলো কুমিল্লার আবু বক্কর ও শহীদুলের মাধ্যমে বিভিন্ন কুরিয়ারের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করতেন।
তিনি বলেন, মূলত কুমিল্লার আবু বক্বর এসব নকল ওষুধ তৈরি করে শহীদুলকে দিতেন। তিনি সেগুলো বরিশালে গুদামজাত করে পরে অন্যদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। যেসব ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশে নেই এবং যে ওষধুগুলো বাজারে নেই, সেগুলোই তারা তৈরি করে বাজারজাত করতেন। আমরা তাদের কাছ থেকে দুই কোটি টাকার নকল ওষুধ জব্দ করেছি। এর আগেও তারা কোটি কোটি টাকার নকল ওষুধ তৈরি করে বিক্রি করেছে।
তিনি আরও বলেন, এই চক্রটি গত আট থেকে ১০ বছর ধরে এই ভেজাল ওষুধ তৈরি করেছে। যারা এসব ওষুধ উৎপাদন করে, আমরা তাদেরও খুঁজছি। এদের নামে এখন পর্যন্ত ১৫টি মামলা রয়েছে। আমরা তিনজনকে আগেই গ্রেফতার করেছি। তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও এই ব্যবসা শুরু করে।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৮০টি ইউনানী ওষুধ কোম্পানির ভেজাল ওষুধ তৈরির বিষয়ে তথ্য তারা ওষুধ প্রশাসনকে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে ডিবি।