পণ্যের ওজন নিয়ন্ত্রণে রিমোটের ব্যবহার, ঠকানো হতো ব্যবসায়ীদের
![ছবি: বার্তা২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Mar/17/1710663674768.jpg)
ছবি: বার্তা২৪.কম
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার পশ্চিম বাজার এলাকার মৃত রুক্কু মিয়ার ছেলে সিরাজুল ইসলাম ওরফে সজিব (৩৩)। পেশায় ইলেকট্রিক মেকানিক। তবে অনলাইন থেকে বিশেষ কিছু সার্কিট সংগ্রহ করে ডিজিটাল ওজন মেশিন কারসাজির মাধ্যমে রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ওজন কম বেশি করার কৌশল রপ্ত করেন। আর এই কৌশল ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীর কাপ্তান বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারী বাজারে পণ্য বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ীদের পণ্যের ওজন কমিয়ে দিতেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে পাইকারী পণ্য বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ঠকিয়ে আসছিলেন সজিব ও তার চক্রের সদস্য।
সম্প্রতি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দূরে বসে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা একটি অভিনব ও নতুন ধরনের প্রতারণা। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে রাজধানীর পাইকারী বাজারগুলোতে এসে প্রতারিত হতেন।
গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিরাজুল ইসলাম ওরফে সজিব (৩৩), মো. মনির (৩৫), মো. লিটন (৩৮), মোঃ আলাউদ্দিন খাঁন (২৮)।
অভিযানে চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় পাঁচটি ডিজিটাল ওজন মেশিন, সাতটি রিমোট কন্ট্রোল, তাতালসহ ওজন মেশিন কারসাজি করার বিভিন্ন সরঞ্জাম।
রোববার (১৭ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।
তিনি বলেন, আমরা নতুন ধরনের একটি অপরাধ চক্রকে গ্রেফতার করেছি। এর আগে আমরা শুধু শুনতাম পণ্য পাইকারী বিক্রি করতে এসে অনেকেই ওজনে গড়মিল পেতেন। অনেক সময় ক্রেতারাও এমন অভিযোগ করতেন। পরবর্তীতে এমন অভিযোগকে সামনে রেখে কাজ শুরু করে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। সেই অভিযানেই তাদের হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে ডিবি সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, রমজান মাস চলছে। সামনে ঈদ। ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাজার মোটামুটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। আমরা অভিযানে নেমে দেখলাম ঢাকার পাইকারী বাজারগুলোতে ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে। আমরা অভিযানে নেমে রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ওজনে কম দেওয়া চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত করতে গিয়ে আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটি একটি প্রতারণার নতুন ধরন।
গোয়েন্দা প্রধান বলেন, সজিব পেশায় একজন টেলিভিশন মেকানিক। সে অনলাইন থেকে বিশেষ সার্কিট ও রিমোট অন-লাইনে সংগ্রহ করে ডিজিটাল ওজন মেশিনে কারসাজি করে। ফলে ২০০ কেজি পণ্যের ওজন দূরে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো কমানো যেতো। এগুলো সে বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মেকানিক সজিব প্রতিটি মেশিন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। এই চক্রের কাছে ওজন কম দেওয়ার সাংকেতিক শব্দ হলো ‘গাপসি’। এর অর্থ হলো ওজনে কম দিতে হবে। এই সকল মেশিন কাপ্তান বাজারে অসাধু পাইকারী মুরগী বা মাংস বিক্রেতারা ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। তবে তাদের টার্গেট থাকে নতুন পণ্য বিক্রেতা ও পাইকারী ক্রেতারা। তবে তারা পুরাতন পাইকারী ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করত না।
রমজানে বাজারে পণ্যের মূল্যের কারসাজি প্রতিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পণ্যের মূল্য কারসাজির বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদফতর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে কাজ করছে। কোথাও অনিয়মের অভিযোগ পেলেই গোয়েন্দা পুলিশ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।